পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে

দিন দিন পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ৭৯ কোটি ১৩ লাখ ডলার আয় হয়েছে যা টাকার অঙ্কে ৬ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। এতে রপ্তানি আয়ে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় অবস্থানে ওঠে এসেছে এই খাতটি। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে যা ১৪ শতাংশ বেশি। আর চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।

রপ্তানি উন্নয়ন বুরে‌্যর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে পাট খাতে বিশেষ করে কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে আয় ছিল ৬ হাজার ৪১৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ৭ হাজার ২৯০ কোটি ৪০ লাখ টাকায়। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এটি আরও বেড়ে ৭ হাজার ৬৮৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা দাঁড়ায়। অন্যদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮ হাজার ৯৬ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আয় হয় ৬ হাজার ৭৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৬ হাজার ৭২৬ কোটি টাকার। এই সময়ে মূলত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণে দ্বিতীয় অবস্থানে ওঠে আসতে পেরেছে পাট খাত।

সম্প্রতি করোনাভাইরাসজনিত রোগসৃষ্ট কভিড-১৯-এর বিস্তার রোধকল্পে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিকালীন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন দফতর-সংস্থাগুলোর কার্যক্রম পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পাট খাতের এ অর্জনের বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করা হয়। সভায় বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া সভাপতিত্ব করেন। সভায় দেশের পাট রপ্তানি খাতের অবদান আরও বাড়ানো এবং উৎপাদন ধরে রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়। বিশেষ করে করোনাকালীন সংকট মোকাবিলায় মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ থাকবে বলে জানানো হয়। এ বিষয়ে লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, পাটচাষিদের উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি পাট শিল্পের সম্প্রসারণে সব ধরনের সহায়তা করবে সরকার। পাটের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ, পাট ক্রয়-বিক্রয় সহজীকরণের জন্য এসএমএসভিত্তিক পাট ক্রয়-বিক্রয় ব্যবস্থাকরণ, কাঁচা পাট ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিকরণ, পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা ও অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধিকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

সভায় জানানো হয়, সরকার মানসম্মত পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি ও পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে পাট অধিদপ্তরের আওতায় ‘উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মেয়াদে বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি দেশের ৪৬টি জেলার ২৩০টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাটচাষের উন্নত কলাকৌশল সম্পর্কে চাষিদের প্রশিক্ষিত করা এবং সার্বিকভাবে গুণগত মানসম্মত পাট ও পাটবীজ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের ৩৯০ টন পাটবীজ বিনা মূল্যে বিতরণসহ সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।

পাট অধিদফতরের তথ্য থেকে দেখা যায়, পাট খাতের রপ্তানি আয়ে এখন সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে পাটজাত পণ্য। একসময় কাঁচা পাটের অবদান খুব ভালো হলেও ক্রমেই তা অবনতি হচ্ছে। পাশাপাশি বৈশ্বিক কাঁচা পাটের বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। সেখানে পাটজাত পণ্য বেশ ভালো করছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কাঁচা পাট উৎপাদন ছিল ৭৫ লাখ ৫ হাজার বেল যা পরবর্তী অর্থবছরগুলোয় ছিল যথাক্রমে ৮৫ লাখ বেল, ৮৮ লাখ ৮৯ হাজার, ৯২ লাখ বেল এবং গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৭৩ লাখ ১৫ হাজার বেল। অন্যদিকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কাঁচা পাট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ১ হাজার বেল এবং আয় ছিল ৮১৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১১ লাখ ৭৪ হাজার বেল বিক্রি করে আয় ছিল ১ হাজার ৫০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পরের ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ১৬ লাখ ৩৯ হাজার বেল। যা থেকে আয় আসে ১ হাজার ৩৪২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার বেলের মাধ্যমে ১ হাজার ২৯৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ লাখ ২৫ হাজার বেল রপ্তানিতে আয় ৮৫৯ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪ লাখ ৭৫ হাজার বেল রপ্তানি হয়েছে। এছাড়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরে পাটজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ছিল ৫ হাজার ৬০২ কোটি, পরের ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ৬ হাজার ২৪০ কোটি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬ হাজার ৪৩০ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬ হাজার ৮০১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৫ হাজার ২২০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

শনিবার, ২৩ মে ২০২০ , ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২৯ রমজান ১৪৪১

পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

দিন দিন পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ৭৯ কোটি ১৩ লাখ ডলার আয় হয়েছে যা টাকার অঙ্কে ৬ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। এতে রপ্তানি আয়ে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় অবস্থানে ওঠে এসেছে এই খাতটি। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে যা ১৪ শতাংশ বেশি। আর চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।

রপ্তানি উন্নয়ন বুরে‌্যর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে পাট খাতে বিশেষ করে কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে আয় ছিল ৬ হাজার ৪১৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ৭ হাজার ২৯০ কোটি ৪০ লাখ টাকায়। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এটি আরও বেড়ে ৭ হাজার ৬৮৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা দাঁড়ায়। অন্যদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮ হাজার ৯৬ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আয় হয় ৬ হাজার ৭৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৬ হাজার ৭২৬ কোটি টাকার। এই সময়ে মূলত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণে দ্বিতীয় অবস্থানে ওঠে আসতে পেরেছে পাট খাত।

সম্প্রতি করোনাভাইরাসজনিত রোগসৃষ্ট কভিড-১৯-এর বিস্তার রোধকল্পে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিকালীন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন দফতর-সংস্থাগুলোর কার্যক্রম পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পাট খাতের এ অর্জনের বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করা হয়। সভায় বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া সভাপতিত্ব করেন। সভায় দেশের পাট রপ্তানি খাতের অবদান আরও বাড়ানো এবং উৎপাদন ধরে রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়। বিশেষ করে করোনাকালীন সংকট মোকাবিলায় মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ থাকবে বলে জানানো হয়। এ বিষয়ে লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, পাটচাষিদের উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি পাট শিল্পের সম্প্রসারণে সব ধরনের সহায়তা করবে সরকার। পাটের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ, পাট ক্রয়-বিক্রয় সহজীকরণের জন্য এসএমএসভিত্তিক পাট ক্রয়-বিক্রয় ব্যবস্থাকরণ, কাঁচা পাট ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিকরণ, পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা ও অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধিকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

সভায় জানানো হয়, সরকার মানসম্মত পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি ও পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে পাট অধিদপ্তরের আওতায় ‘উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মেয়াদে বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি দেশের ৪৬টি জেলার ২৩০টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাটচাষের উন্নত কলাকৌশল সম্পর্কে চাষিদের প্রশিক্ষিত করা এবং সার্বিকভাবে গুণগত মানসম্মত পাট ও পাটবীজ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের ৩৯০ টন পাটবীজ বিনা মূল্যে বিতরণসহ সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।

পাট অধিদফতরের তথ্য থেকে দেখা যায়, পাট খাতের রপ্তানি আয়ে এখন সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে পাটজাত পণ্য। একসময় কাঁচা পাটের অবদান খুব ভালো হলেও ক্রমেই তা অবনতি হচ্ছে। পাশাপাশি বৈশ্বিক কাঁচা পাটের বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। সেখানে পাটজাত পণ্য বেশ ভালো করছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কাঁচা পাট উৎপাদন ছিল ৭৫ লাখ ৫ হাজার বেল যা পরবর্তী অর্থবছরগুলোয় ছিল যথাক্রমে ৮৫ লাখ বেল, ৮৮ লাখ ৮৯ হাজার, ৯২ লাখ বেল এবং গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৭৩ লাখ ১৫ হাজার বেল। অন্যদিকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কাঁচা পাট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ১ হাজার বেল এবং আয় ছিল ৮১৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১১ লাখ ৭৪ হাজার বেল বিক্রি করে আয় ছিল ১ হাজার ৫০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পরের ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ১৬ লাখ ৩৯ হাজার বেল। যা থেকে আয় আসে ১ হাজার ৩৪২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার বেলের মাধ্যমে ১ হাজার ২৯৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ লাখ ২৫ হাজার বেল রপ্তানিতে আয় ৮৫৯ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪ লাখ ৭৫ হাজার বেল রপ্তানি হয়েছে। এছাড়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরে পাটজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ছিল ৫ হাজার ৬০২ কোটি, পরের ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ৬ হাজার ২৪০ কোটি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬ হাজার ৪৩০ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬ হাজার ৮০১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৫ হাজার ২২০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।