৪৯ বছরেও ইছামতিতে সেতু নেই ! দুর্ভোগে ৪ গ্রামের মানুষ

বগুড়ার ধুনট উপজেলার পারধুনট-ঘুঘরাপাড়া গ্রামের বুক চিরে বহমান ইছামতি নদী। কালেরপাড়া ইউনিয়নের মাদারভিটা গ্রামে এই ইছামতি নদীতে সেতু না থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ৪ গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার। গ্রামগুলো হলো পার ধুনট, ঘুঘরাপাড়া, মাদার ভিটা ও পারুলকান্দি।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাদার ভিটা গ্রাম ইছামতী নদীর পূর্ব পাশে নদীতে সেতু না থাকায় দৈনন্দিন কাজে চরম ভোগান্তি শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে, কৃষি কাজে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চাষাবাদ করা, শিক্ষার্থীকে স্কুলে পাঠ গ্রহণে অসুবিধায় পড়া, অসুস্থ ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হতে হচ্ছে গ্রামবাসীর। যেকোন প্রয়োজনে নদীর পশ্চিম পাশে আসতে হলে তাদের কে নদীতে ভিজে পার হয়ে আসতে হয়।

নদীতে কোন বাঁশের সাঁকো বা নৌকা পারাপারের ব্যবস্থানা থাকায় শুষ্ক মৌসুমে তাদরকে হাটু পানি পার হয়ে আসতে হয়। বিশেষ করে মাদারভিটা গ্রামে শিক্ষার্থীদের নদীর পশ্চিম পাশে স্কুল ও ধুনট সদরের স্কুল কলেজগুলোতে আসতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আবার নদীর পশ্চিম রয়েছে পারধুনট ও ঘুঘরাপড়া গ্রাম। ২ গ্রামের মানুষের অধিকাংশই ফসলি জমি রয়েছে নদীর পূর্ব পাশে। সেতু না থাকায় ফসলি জমিগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি বহন করতে না পারায় দিয়ে চাষাবাদ করতে হয় আদি যুগের লাঙ্গলে। আবার উৎপাদিত ফসল ঠিকমতো ঘরে তুলতে পারে না তারা। নদীর পূর্ব পারে মাদার ভিটা গ্রামের এলাকাবাসীরা তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারে বিক্রি করতে না পেরে ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন পড়েছে।

গত বছরে এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো বানিয়ে যাতায়াতের কিছুটা সুবিধা করার চেষ্টা বরলেও সম্প্রতি ভারি বর্ষনের ফলে ভেঙ্গে গেছে সাঁকো। নদী পারাপার হয়ে ৪ গ্রামের মানুষ এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। দীর্ঘ দিনের এ কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে গ্রামবাসী স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের কাছে বহুবার সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন।

পার ধুনট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাবিলা খাতুন জানান, নদীতে সেতু না থাকায় আমি সময়মতো স্কুলে আসতে পারি না। সারাবছরই নদী পার হয়ে স্কুলে আসতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে স্বল্প পানি পার হয়ে স্কুলে আসতে হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি হলে স্কুলে যাওয়া অসুবিধা হয়ে যায়। নদী পার হয়ে স্কুলে আসা বা যাওয়ার সময় হাত থেকে বই খাতা পানিতে পড়ে ভিজে যায়।

জিমকল ইন্টারন্যাশনাল কেজি স্কুলের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার জানান, নদীর পানিতে ভিজে স্কুলে যাতায়াত করা অনকে অসুবিধা। নদীতে সেতু না থাকায় সময়মতো স্কুলে পৌঁছতে পারি না। বর্ষার সময় নদী ভরে যাওয়ায় স্কুলের পাঠ গ্রহণ থেকে কিছুটা বঞ্চিত হতে হয়।

মাদার ভিটা গ্রামের আবু হানিফ জানান, মাদার ভিটা গ্রামে ইছামতি নদীতে সেতু না থাকায় যুগ যুগ ধরে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে এলাকাবাসীর। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের স্কুল কলেজ যেতে এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের জরুরী চিকিৎসায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। প্রতিনিয়ত নদীতে ভিজে পার হয়ে কাজ করতে হয়। সেতু না থাকায় ২ পারের মানুষের কষ্টের শেষ নেই। তারা উৎপাদিত ফসল সময় মতো ঘরে তুলতে পারে না আবার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত তারা।

কালেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওর্য়াডের সদস্য রফিকুল ইসরাম জানান, এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে কথা হয়েছে। তারা সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকন জানান, মাদারভিটা গ্রামে ইছামতি নদীতে সেতু নির্মাণের জন্য সংসদ সদস্য আলহাজ হাবিবর রহমান মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছন। আশা করছি অতি শীঘ্রই সেতু নির্মাণের অনুমোদন পাবে।

শুক্রবার, ০৫ জুন ২০২০ , ২২ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ১২ শাওয়াল ১৪৪১

৪৯ বছরেও ইছামতিতে সেতু নেই ! দুর্ভোগে ৪ গ্রামের মানুষ

প্রতিনিধি, বগুড়া

image

ধুনট (বগুড়া) : কালেরপাড়ার মাদারভিটা গ্রামের ইছামতিতে সেতু না থাকায় এভাবেই জলে ভেঙে পারাপার হন গ্রামবাসী -সংবাদ

বগুড়ার ধুনট উপজেলার পারধুনট-ঘুঘরাপাড়া গ্রামের বুক চিরে বহমান ইছামতি নদী। কালেরপাড়া ইউনিয়নের মাদারভিটা গ্রামে এই ইছামতি নদীতে সেতু না থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ৪ গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার। গ্রামগুলো হলো পার ধুনট, ঘুঘরাপাড়া, মাদার ভিটা ও পারুলকান্দি।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাদার ভিটা গ্রাম ইছামতী নদীর পূর্ব পাশে নদীতে সেতু না থাকায় দৈনন্দিন কাজে চরম ভোগান্তি শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে, কৃষি কাজে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চাষাবাদ করা, শিক্ষার্থীকে স্কুলে পাঠ গ্রহণে অসুবিধায় পড়া, অসুস্থ ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হতে হচ্ছে গ্রামবাসীর। যেকোন প্রয়োজনে নদীর পশ্চিম পাশে আসতে হলে তাদের কে নদীতে ভিজে পার হয়ে আসতে হয়।

নদীতে কোন বাঁশের সাঁকো বা নৌকা পারাপারের ব্যবস্থানা থাকায় শুষ্ক মৌসুমে তাদরকে হাটু পানি পার হয়ে আসতে হয়। বিশেষ করে মাদারভিটা গ্রামে শিক্ষার্থীদের নদীর পশ্চিম পাশে স্কুল ও ধুনট সদরের স্কুল কলেজগুলোতে আসতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আবার নদীর পশ্চিম রয়েছে পারধুনট ও ঘুঘরাপড়া গ্রাম। ২ গ্রামের মানুষের অধিকাংশই ফসলি জমি রয়েছে নদীর পূর্ব পাশে। সেতু না থাকায় ফসলি জমিগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি বহন করতে না পারায় দিয়ে চাষাবাদ করতে হয় আদি যুগের লাঙ্গলে। আবার উৎপাদিত ফসল ঠিকমতো ঘরে তুলতে পারে না তারা। নদীর পূর্ব পারে মাদার ভিটা গ্রামের এলাকাবাসীরা তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারে বিক্রি করতে না পেরে ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন পড়েছে।

গত বছরে এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো বানিয়ে যাতায়াতের কিছুটা সুবিধা করার চেষ্টা বরলেও সম্প্রতি ভারি বর্ষনের ফলে ভেঙ্গে গেছে সাঁকো। নদী পারাপার হয়ে ৪ গ্রামের মানুষ এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। দীর্ঘ দিনের এ কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে গ্রামবাসী স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের কাছে বহুবার সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন।

পার ধুনট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাবিলা খাতুন জানান, নদীতে সেতু না থাকায় আমি সময়মতো স্কুলে আসতে পারি না। সারাবছরই নদী পার হয়ে স্কুলে আসতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে স্বল্প পানি পার হয়ে স্কুলে আসতে হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি হলে স্কুলে যাওয়া অসুবিধা হয়ে যায়। নদী পার হয়ে স্কুলে আসা বা যাওয়ার সময় হাত থেকে বই খাতা পানিতে পড়ে ভিজে যায়।

জিমকল ইন্টারন্যাশনাল কেজি স্কুলের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার জানান, নদীর পানিতে ভিজে স্কুলে যাতায়াত করা অনকে অসুবিধা। নদীতে সেতু না থাকায় সময়মতো স্কুলে পৌঁছতে পারি না। বর্ষার সময় নদী ভরে যাওয়ায় স্কুলের পাঠ গ্রহণ থেকে কিছুটা বঞ্চিত হতে হয়।

মাদার ভিটা গ্রামের আবু হানিফ জানান, মাদার ভিটা গ্রামে ইছামতি নদীতে সেতু না থাকায় যুগ যুগ ধরে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে এলাকাবাসীর। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের স্কুল কলেজ যেতে এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের জরুরী চিকিৎসায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। প্রতিনিয়ত নদীতে ভিজে পার হয়ে কাজ করতে হয়। সেতু না থাকায় ২ পারের মানুষের কষ্টের শেষ নেই। তারা উৎপাদিত ফসল সময় মতো ঘরে তুলতে পারে না আবার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত তারা।

কালেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওর্য়াডের সদস্য রফিকুল ইসরাম জানান, এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে কথা হয়েছে। তারা সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকন জানান, মাদারভিটা গ্রামে ইছামতি নদীতে সেতু নির্মাণের জন্য সংসদ সদস্য আলহাজ হাবিবর রহমান মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছন। আশা করছি অতি শীঘ্রই সেতু নির্মাণের অনুমোদন পাবে।