শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে হাঁটতে হবে

ভারত-চীন সীমান্তে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় গত সোমবার দু’দেশের সেনাদের সংঘর্ষ হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা মারা গেছে, আহত হয়েছে শতাধিক। আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সংঘর্ষে চীনের ৪৭ জন মারা গেছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে। চীনা গণমাধ্যমে উল্লিখিত সংঘর্ষের খবর ততটা গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ পায়নি। তারা হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য প্রকাশ করেনি। ভারত সংঘর্ষের জন্য চীনকে দায়ী করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগ করে বলেছে, গালওয়ান উপত্যকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা মেনে চলার বিষয়ে দু’দেশের যে ঐকমত্য হয়েছিল সেটা চীন মানেনি। অন্যদিকে চীন বলছে, ভারতীয় সৈন্যরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে বেআইনি কাজ চালাচ্ছিল। উক্ত সংঘর্ষে কোন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি বলে দু’পক্ষই দাবি করেছে।

বৃহৎ দুই প্রতিবেশী ভারত ও চীনের মধ্যে লাদাখ উপত্যকা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তবে সেই উত্তেজনা যে সংঘর্ষে রূপ নেবে সেটা অনেকের ধারণাতে ছিল না। অতীতে দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। তবে গত ৪৫ বছরে দু’দেশের সেনাবাহিনী পরস্পরের বিরুদ্ধে একটি গুলিও ব্যবহার করেনি। গত কয়েক দশকে দু’দেশ বিভিন্ন সময়ে এমন সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরেছিল যে তারা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়াবে না। এমন সমঝোতা ছিল বলেই গত সোমবার কোন দেশই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেনি। তবে আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াই সংঘর্ষ যে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে সেটা দু’পক্ষের হতাহতের সংখ্যা থেকে ধারণা করা যায়।

ভারত-চীনের বিরোধ শুধু লাদাখ উপত্যকা নিয়ে নয়। দু’দেশের বিস্তৃত অভিন্ন সীমান্তের আরও অনেক এলাকা নিয়ে বিরোধের কথা শোনা যায়। এর সঙ্গে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাবও আছে। তাদের বিরোধের ইতিহাস যেমন দীর্ঘ, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ইতিহাসও দীর্ঘ। গত সোমবারের আগ পর্যন্ত গত ৪৫ বছর তারা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ায়নি। সোমবারের সংঘর্ষ শান্তির জন্য মঙ্গলজনক নয়। এ সংঘর্ষের চূড়ান্ত রূপ কী হবে সেটি নিয়ে অনেকে হিসাব-নিকাশ করছেন। আবার উক্ত সংঘর্ষে বা দু’দেশের বিরোধকে অনেকে উসকেও দিতে চাচ্ছে। আবার শান্তির পক্ষের লোকও কম নয়। আমরা বিশ্বাস করি, শান্তির পক্ষের লোকই সঠিক পথে রয়েছেন। আমরা শান্তির পক্ষে অবস্থান করতে চাই। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে অনেক ইস্যুতেই বিরোধ থাকতে পারে। সেই বিরোধ কখনও কখনও তুঙ্গে অবস্থান করে। তবে বিচক্ষণ রাষ্ট্র মাত্রই বিরোধকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে। রাষ্ট্রের সুবিবেচক নেতারা এমন কোন পদক্ষেপ নেবেন না যাতে করে কোন দেশ ঝগড়া-বিবাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। আমরা বিশ্বে শান্তি দেখতে চাই। যুদ্ধের মাধ্যমে তার দেখা মিলবে না। লাদাখে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দু’দেশ সর্বোচ্চ সংযম দেখাবে সেটা আমাদের প্রত্যাশা। কারও কোন উসকানিতে তারা ভুল পথে পা বাড়াবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। দু’দেশকেই আন্তরিকভাবে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে হাঁটতে হবে।

বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন ২০২০ , ৪ আষাঢ় ১৪২৭, ২৫ শাওয়াল ১৪৪১

ভারত-চীন সীমান্ত সংঘাত

শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে হাঁটতে হবে

ভারত-চীন সীমান্তে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় গত সোমবার দু’দেশের সেনাদের সংঘর্ষ হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা মারা গেছে, আহত হয়েছে শতাধিক। আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সংঘর্ষে চীনের ৪৭ জন মারা গেছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে। চীনা গণমাধ্যমে উল্লিখিত সংঘর্ষের খবর ততটা গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ পায়নি। তারা হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য প্রকাশ করেনি। ভারত সংঘর্ষের জন্য চীনকে দায়ী করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগ করে বলেছে, গালওয়ান উপত্যকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা মেনে চলার বিষয়ে দু’দেশের যে ঐকমত্য হয়েছিল সেটা চীন মানেনি। অন্যদিকে চীন বলছে, ভারতীয় সৈন্যরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে বেআইনি কাজ চালাচ্ছিল। উক্ত সংঘর্ষে কোন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি বলে দু’পক্ষই দাবি করেছে।

বৃহৎ দুই প্রতিবেশী ভারত ও চীনের মধ্যে লাদাখ উপত্যকা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তবে সেই উত্তেজনা যে সংঘর্ষে রূপ নেবে সেটা অনেকের ধারণাতে ছিল না। অতীতে দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। তবে গত ৪৫ বছরে দু’দেশের সেনাবাহিনী পরস্পরের বিরুদ্ধে একটি গুলিও ব্যবহার করেনি। গত কয়েক দশকে দু’দেশ বিভিন্ন সময়ে এমন সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরেছিল যে তারা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়াবে না। এমন সমঝোতা ছিল বলেই গত সোমবার কোন দেশই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেনি। তবে আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াই সংঘর্ষ যে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে সেটা দু’পক্ষের হতাহতের সংখ্যা থেকে ধারণা করা যায়।

ভারত-চীনের বিরোধ শুধু লাদাখ উপত্যকা নিয়ে নয়। দু’দেশের বিস্তৃত অভিন্ন সীমান্তের আরও অনেক এলাকা নিয়ে বিরোধের কথা শোনা যায়। এর সঙ্গে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাবও আছে। তাদের বিরোধের ইতিহাস যেমন দীর্ঘ, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ইতিহাসও দীর্ঘ। গত সোমবারের আগ পর্যন্ত গত ৪৫ বছর তারা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ায়নি। সোমবারের সংঘর্ষ শান্তির জন্য মঙ্গলজনক নয়। এ সংঘর্ষের চূড়ান্ত রূপ কী হবে সেটি নিয়ে অনেকে হিসাব-নিকাশ করছেন। আবার উক্ত সংঘর্ষে বা দু’দেশের বিরোধকে অনেকে উসকেও দিতে চাচ্ছে। আবার শান্তির পক্ষের লোকও কম নয়। আমরা বিশ্বাস করি, শান্তির পক্ষের লোকই সঠিক পথে রয়েছেন। আমরা শান্তির পক্ষে অবস্থান করতে চাই। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে অনেক ইস্যুতেই বিরোধ থাকতে পারে। সেই বিরোধ কখনও কখনও তুঙ্গে অবস্থান করে। তবে বিচক্ষণ রাষ্ট্র মাত্রই বিরোধকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে। রাষ্ট্রের সুবিবেচক নেতারা এমন কোন পদক্ষেপ নেবেন না যাতে করে কোন দেশ ঝগড়া-বিবাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। আমরা বিশ্বে শান্তি দেখতে চাই। যুদ্ধের মাধ্যমে তার দেখা মিলবে না। লাদাখে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দু’দেশ সর্বোচ্চ সংযম দেখাবে সেটা আমাদের প্রত্যাশা। কারও কোন উসকানিতে তারা ভুল পথে পা বাড়াবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। দু’দেশকেই আন্তরিকভাবে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে হাঁটতে হবে।