আমজাদ হোসেনের জন্মবার্ষিকী আজ

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম আমজাদ হোসেন। আজ ১৪ আগস্ট এই প্রয়াত দেশবরেণ্য চলচ্চিত্রকারের জন্মবার্ষিকী। ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) জামালপুর জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে চলচ্চিত্র নির্মাতা, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী ও লেখক। আমজাদ হোসেনের দুই পুত্র সাজ্জাদ হোসেন দোদুল ও সোহেল আরমান তার দুজনও পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার। বড় ছেলে দুদুল সংবাদকে বলেন, ‘আমরা এবার শুধু কেক কেটে বাবার জন্মদিন উদ্যাপন করব। বাবার জন্মদিনকে ঘিরে এফডিসিসহ বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা অনুষ্ঠান হয়, জামালপুরে ‘আমজাদ মেলা’ হয়। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে তেমন কোন আয়োজন নেই। আর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী থাকায় শোকের এ মাসে কখনোই বাবার জন্মদিন নিয়ে কোন বড় ধরনের আয়োজন থাকে না। প্রতি বছর ১ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর জামালপুরে আমজাদ হোসেন চর্চা কেন্দ্রের আয়োজনে ‘আমজাদ মেলা’র আয়োজন করা হয়। এই মেলায় জামালপুর শিল্পকলা একাডেমিতে বাবার চলচ্চিত্রগুলো সিনেমা হলের সময়সূচির অনুসারে প্রদর্শিত হয়, বাহিরে থাকে গরুর গাড়ির সাজসজ্জা। কারণ দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ গরুর গাড়িতে করে বাবার এই সিনেমাগুলো দেখতে আসত। আর সিনেমা হলের সামনে থাকত সারি সারি গরুর গাড়ি। এছাড়া মেলায় থাকে থিম সং, সাহিত্য কর্ণার, জন্মদিন উপলক্ষে প্রকাশনাসহ নানা আয়োজন।’

ছড়া দিয়ে সাহিত্যের অঙ্গনে আমজাদ হোসেনের প্রবেশ। তার প্রথম কবিতা ছাপা হয় বিখ্যাত দেশ (পত্রিকা) পত্রিকায়। ছোটদের জন্যও তিনি লিখেছেন বহু গল্প, ছড়া এবং উপন্যাস। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপন্যাস ও গল্প লিখেছেন। ১৯৬১ সালে ‘তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে তার যাত্রা শুরু হয়। তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘খেলা’। জহির রায়হানের সঙ্গে লিখেন সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’র চিত্রনাট্য।

১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান এই গুণী নির্মাতা। এছাড়া তিনি আরও ১৪ বার জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা। তার জনপ্রিয় সিনেমার মধ্যে রয়েছে- ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতাপুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’, ‘বাংলার মুখ’, ‘নয়নমণি’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ইত্যাদি।

তার উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘ধ্রুপদী এখন ট্রেনে’, ‘আমি এবং কয়েকটি পোস্টার’, ‘রক্তের ডালপালা’, ‘বেলায় অসময় ইত্যাদি’। জীবনীগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘মওলানা ভাসানীর জীবন ও রাজনীতি’, ‘নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জীবন ও রাজনীতি’, ‘মানবেন্দ্রনাথ রায়ের জীবন ও রাজনীতি’। ইতিহাসগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘বাংলাদেশের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস’ (প্রথম ও দ্বিতীয় খ-), ‘নকশালবাড়ী কৃষক আন্দোলন’, ‘বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস’, ‘বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস’ প্রভৃতি। ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর ৭৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন আমজাদ হোসেন। জামালপুরের পৌর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

শুক্রবার, ১৪ আগস্ট ২০২০ , ২৩ জিলহজ ১৪৪১, ৩০ শ্রাবণ ১৪২৭

আমজাদ হোসেনের জন্মবার্ষিকী আজ

বিনোদন প্রতিবেদক |

image

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম আমজাদ হোসেন। আজ ১৪ আগস্ট এই প্রয়াত দেশবরেণ্য চলচ্চিত্রকারের জন্মবার্ষিকী। ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) জামালপুর জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে চলচ্চিত্র নির্মাতা, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী ও লেখক। আমজাদ হোসেনের দুই পুত্র সাজ্জাদ হোসেন দোদুল ও সোহেল আরমান তার দুজনও পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার। বড় ছেলে দুদুল সংবাদকে বলেন, ‘আমরা এবার শুধু কেক কেটে বাবার জন্মদিন উদ্যাপন করব। বাবার জন্মদিনকে ঘিরে এফডিসিসহ বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা অনুষ্ঠান হয়, জামালপুরে ‘আমজাদ মেলা’ হয়। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে তেমন কোন আয়োজন নেই। আর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী থাকায় শোকের এ মাসে কখনোই বাবার জন্মদিন নিয়ে কোন বড় ধরনের আয়োজন থাকে না। প্রতি বছর ১ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর জামালপুরে আমজাদ হোসেন চর্চা কেন্দ্রের আয়োজনে ‘আমজাদ মেলা’র আয়োজন করা হয়। এই মেলায় জামালপুর শিল্পকলা একাডেমিতে বাবার চলচ্চিত্রগুলো সিনেমা হলের সময়সূচির অনুসারে প্রদর্শিত হয়, বাহিরে থাকে গরুর গাড়ির সাজসজ্জা। কারণ দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ গরুর গাড়িতে করে বাবার এই সিনেমাগুলো দেখতে আসত। আর সিনেমা হলের সামনে থাকত সারি সারি গরুর গাড়ি। এছাড়া মেলায় থাকে থিম সং, সাহিত্য কর্ণার, জন্মদিন উপলক্ষে প্রকাশনাসহ নানা আয়োজন।’

ছড়া দিয়ে সাহিত্যের অঙ্গনে আমজাদ হোসেনের প্রবেশ। তার প্রথম কবিতা ছাপা হয় বিখ্যাত দেশ (পত্রিকা) পত্রিকায়। ছোটদের জন্যও তিনি লিখেছেন বহু গল্প, ছড়া এবং উপন্যাস। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপন্যাস ও গল্প লিখেছেন। ১৯৬১ সালে ‘তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে তার যাত্রা শুরু হয়। তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘খেলা’। জহির রায়হানের সঙ্গে লিখেন সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’র চিত্রনাট্য।

১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান এই গুণী নির্মাতা। এছাড়া তিনি আরও ১৪ বার জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা। তার জনপ্রিয় সিনেমার মধ্যে রয়েছে- ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতাপুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’, ‘বাংলার মুখ’, ‘নয়নমণি’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ইত্যাদি।

তার উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘ধ্রুপদী এখন ট্রেনে’, ‘আমি এবং কয়েকটি পোস্টার’, ‘রক্তের ডালপালা’, ‘বেলায় অসময় ইত্যাদি’। জীবনীগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘মওলানা ভাসানীর জীবন ও রাজনীতি’, ‘নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জীবন ও রাজনীতি’, ‘মানবেন্দ্রনাথ রায়ের জীবন ও রাজনীতি’। ইতিহাসগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘বাংলাদেশের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস’ (প্রথম ও দ্বিতীয় খ-), ‘নকশালবাড়ী কৃষক আন্দোলন’, ‘বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস’, ‘বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস’ প্রভৃতি। ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর ৭৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন আমজাদ হোসেন। জামালপুরের পৌর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।