৭৯-এ প্রবীর মিত্র

চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি দুই পায়ের হাঁটুতে ব্যথা নিয়ে ভুগছেন। রাজধানীর কলাবাগানে মেজ ছেলে নিপুণের বাসায় আছেন তিনি। নিপুণই জানালেন গেল দুই বছর যাবত তার বাবা কানেও এখন খুব কম শুনছেন। মেশিন ব্যবহার করেও কাজ হচ্ছে না। চলচ্চিত্রের গুণী এই অভিনেতা দেখতে দেখতে জীবন চলার পথে আজ ৭৯ বছরে পা রাখতে যাচ্ছেন। তার ছেলে নিপুণ জানান, বাবার জন্মদিনকে ঘিরে তেমন কোন আয়োজন নেই। প্রবীর মিত্র’র ছোট ভাই সুবীর কুমারমিত্র দিনটিতে তারসঙ্গে দেখা করতে আসবেন বলে জানান। তবে নিপুণের ভাষ্যমতে চলচ্চিত্র পরিবারের তেমন কেউই তার খোঁজখবর রাখেন না, দেখা করতেও যান না। এই নিয়ে মিত্র পরিবারের কোন দুঃখও নেই বটে। এই সময়ে যে মানুষটি তার পাশে থেকে সময় দেবার কথা ছিল। যে মানুষটি তাকে সার্বক্ষণিক দেখ ভালো’র কথা ছিল সেই মানুষটিই তাকে ছেড়ে পরপারে চলে গেলেন ২০০০ সালে। সেই মানুষটি তার স্ত্রী অজন্তা মিত্র। স্ত্রীকে হারানোর শোক বয়ে বেড়ান আজও প্রবীরমিত্র। কিন্তু তারপরও আরো এক শোকের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। তার ছোট ছেলে আকাশ ২০১২ সালে মারা যায়। স্ত্রী এবং সন্তান হারানোর বেদনা নীরবে সয়ে সয়ে আজ জীবনের এমন এক সময়ে এসে উপস্থিত হয়েছেন প্রবীর মিত্র যখন নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য অভিনয় করাটা খুব জরুরি, তখন দুই পায়ের হাটুতে সমস্যা দেখা দিলো আরো প্রকট হয়ে। ঘরের মধ্যেই সময় কাটাতে হচ্ছে তাকে। ১৯৮২ সালে প্রবীর মিত্র মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘বড় ভালো লোক ছিলো’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এরপর আরো বহু চলচ্চিত্রে তিনি অনবদ্য অভিনয় করেছেন। তবে ভাগ্যে জুটেনি আর কোন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। একুশে পদকও পাননি নিবেদিত এই অভিনেতা। প্রবীরমিত্র বলেন, ‘দর্শকের ভালোবাসাই আমার কাছে সবসময়ই অমূল্য অর্জন। দর্শকের ভালোবাসাই আমাকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। এই ভালোবাসার মাঝেই বেঁচে থাকতে চাই আমি।’ নায়ক হিসেবে প্রবীর মিত্রের প্রথম চলচ্চিত্র ছিলো জহির রায়হানের শেষ সহকারী শেখ নজরুল ও ইলতুত মিস পরিচালিত ‘চাবুক’। এতে প্রবীর মিত্রের নায়িকা ছিলেন কবরী। সর্বশেষ প্রবীর মিত্র এসডি রুবেল পরিচালিত ‘বৃদ্ধাশ্রম’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এরপর আর কোন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি তিনি। এখনো অভিনয়ে আগ্রহ আছে আপনার? প্রশ্ন শুনে একটু মন খারাপ হলো তার। একটু থেমে বললেন প্রবীর মিত্র, ‘ অভিনয়টাই তো পারি, আর তো কিছু পারিনা। অভিনয়তো আজীবন করে যেতে চাই। কিন্তু আমার এই অবস্থায় কে আমাকে দিয়ে অভিনয় করাবে? তবে হ্যাঁ, যদি বসে বসে অভিনয় করানোর কোন ব্যবস্থা থাকে তবে আমি অভিনয় করতে পারব। আবার অল্প একটু হেঁটে হেঁটে অভিনয় করার সুযোগ থাকলে অভিনয় করতে পারব। আমার তো শুধু হাঁটুতেই সমস্যা, বাকিটুকু তো আমি পুরোপুরি সুস্থ।’

মঙ্গলবার, ১৮ আগস্ট ২০২০ , ২৭ জিলহজ ১৪৪১, ০৩ ভাদ্র ১৪২৭

৭৯-এ প্রবীর মিত্র

বিনোদন প্রতিবেদক |

image

চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি দুই পায়ের হাঁটুতে ব্যথা নিয়ে ভুগছেন। রাজধানীর কলাবাগানে মেজ ছেলে নিপুণের বাসায় আছেন তিনি। নিপুণই জানালেন গেল দুই বছর যাবত তার বাবা কানেও এখন খুব কম শুনছেন। মেশিন ব্যবহার করেও কাজ হচ্ছে না। চলচ্চিত্রের গুণী এই অভিনেতা দেখতে দেখতে জীবন চলার পথে আজ ৭৯ বছরে পা রাখতে যাচ্ছেন। তার ছেলে নিপুণ জানান, বাবার জন্মদিনকে ঘিরে তেমন কোন আয়োজন নেই। প্রবীর মিত্র’র ছোট ভাই সুবীর কুমারমিত্র দিনটিতে তারসঙ্গে দেখা করতে আসবেন বলে জানান। তবে নিপুণের ভাষ্যমতে চলচ্চিত্র পরিবারের তেমন কেউই তার খোঁজখবর রাখেন না, দেখা করতেও যান না। এই নিয়ে মিত্র পরিবারের কোন দুঃখও নেই বটে। এই সময়ে যে মানুষটি তার পাশে থেকে সময় দেবার কথা ছিল। যে মানুষটি তাকে সার্বক্ষণিক দেখ ভালো’র কথা ছিল সেই মানুষটিই তাকে ছেড়ে পরপারে চলে গেলেন ২০০০ সালে। সেই মানুষটি তার স্ত্রী অজন্তা মিত্র। স্ত্রীকে হারানোর শোক বয়ে বেড়ান আজও প্রবীরমিত্র। কিন্তু তারপরও আরো এক শোকের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। তার ছোট ছেলে আকাশ ২০১২ সালে মারা যায়। স্ত্রী এবং সন্তান হারানোর বেদনা নীরবে সয়ে সয়ে আজ জীবনের এমন এক সময়ে এসে উপস্থিত হয়েছেন প্রবীর মিত্র যখন নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য অভিনয় করাটা খুব জরুরি, তখন দুই পায়ের হাটুতে সমস্যা দেখা দিলো আরো প্রকট হয়ে। ঘরের মধ্যেই সময় কাটাতে হচ্ছে তাকে। ১৯৮২ সালে প্রবীর মিত্র মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘বড় ভালো লোক ছিলো’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এরপর আরো বহু চলচ্চিত্রে তিনি অনবদ্য অভিনয় করেছেন। তবে ভাগ্যে জুটেনি আর কোন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। একুশে পদকও পাননি নিবেদিত এই অভিনেতা। প্রবীরমিত্র বলেন, ‘দর্শকের ভালোবাসাই আমার কাছে সবসময়ই অমূল্য অর্জন। দর্শকের ভালোবাসাই আমাকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। এই ভালোবাসার মাঝেই বেঁচে থাকতে চাই আমি।’ নায়ক হিসেবে প্রবীর মিত্রের প্রথম চলচ্চিত্র ছিলো জহির রায়হানের শেষ সহকারী শেখ নজরুল ও ইলতুত মিস পরিচালিত ‘চাবুক’। এতে প্রবীর মিত্রের নায়িকা ছিলেন কবরী। সর্বশেষ প্রবীর মিত্র এসডি রুবেল পরিচালিত ‘বৃদ্ধাশ্রম’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এরপর আর কোন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি তিনি। এখনো অভিনয়ে আগ্রহ আছে আপনার? প্রশ্ন শুনে একটু মন খারাপ হলো তার। একটু থেমে বললেন প্রবীর মিত্র, ‘ অভিনয়টাই তো পারি, আর তো কিছু পারিনা। অভিনয়তো আজীবন করে যেতে চাই। কিন্তু আমার এই অবস্থায় কে আমাকে দিয়ে অভিনয় করাবে? তবে হ্যাঁ, যদি বসে বসে অভিনয় করানোর কোন ব্যবস্থা থাকে তবে আমি অভিনয় করতে পারব। আবার অল্প একটু হেঁটে হেঁটে অভিনয় করার সুযোগ থাকলে অভিনয় করতে পারব। আমার তো শুধু হাঁটুতেই সমস্যা, বাকিটুকু তো আমি পুরোপুরি সুস্থ।’