লালমনিরহাট কারাগারে হামলার হুমকি জঙ্গিদের

লালমনিরহাট কারাগারে হামলা চালিয়ে বন্দী জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি দিয়েছে জঙ্গিরা। চিরকুট ও টেলিফোনে এমন হুমকি পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছেন কারা অধিদফতর। এ হুমকির প্রেক্ষিতে যেকোন ধরনের হামলা মোকাবিলায় স্টাইকিং ফোর্স গঠনসহ ১৮ নির্দেশনা দিয়ে কারা অধিদফতর থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে জেলা কারাগারগুলোকে। এদিকে এ হুমকির নেপথ্যে জঙ্গিগোষ্ঠী নাকি অন্য কেউ- তা নিয়ে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা। জঙ্গি দমন ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করা পুলিশের বিশেষ ইউনিটগুলোও এ বিষয়ে খোঁজ নেয়া শুরু করেছে। এর আগে গাজীপুর থেকে একটি মামলায় ময়মনসিংহ হাজির করার জন্য প্রিজন ভ্যানে জঙ্গিদের নেয়ার সময় হামলা চালিয়ে ৩ জঙ্গিকে ছিনতাই করে জঙ্গিরা। পরে পুলিশ হামলায় জড়িত কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করলেও ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গিদের মধ্যে শীর্ষ নেতা ছালাউদ্দিনকে গ্রেফতার করা যায়নি।

লালমনিরহাটের কারাগারে হুমকির বিষয়ে জেলা পুলিশের কর্মকর্তা বলেন, কারাগারে হুমকির বিষয়ে পুলিশ অবগত আছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জেলায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারীও বাড়ানো হয়েছে।

কারাগার সূত্র জানায়, সম্প্রতি কারাগার থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সব কারাগারে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ। কারা সদর দফতর থেকে আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মোস্তফা কামাল পাশা দেশের সব কারাগারে সতর্ক অবস্থানের পাশাপাশি নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশনা দেন। এছাড়াও জঙ্গি, শীর্ষ সন্ত্রাসী, বিডিআর বিদ্রোহ মামলাসহ বিভিন্ন সংবেদনশীল মামলায় আটক বন্দীদের চলাচল ও গতিবিধি কঠোরভাবে নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন টেলিফোনে সংবাদকে বলেন, গত পরশু দিন লালমনিরহাটে হামলা চালিয়ে আসামি ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি দিয়ে চিরকুট পাঠানো হয়। এছাড়া টেলিফোনেও হুমকি দেয়া হয়। দেশের সব কারাগারে নব্য জেএমবি, পুরাতন জেএমবি, আল্লাহর দল, আনসারুল্লাহ বাংলাটিমসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যরা বিভিন্ন মামলায় বন্দী আছেন। এছাড়া শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন মামলার আসামিরাও আছেন। এ কারণে হামলার হুমকি গুরুত্ব দেশের সব জেল সুপারদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ডিআইজি প্রিজন্সদের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, দেখাগেলো লালমনিরহাটে কারাগারে হামলার হুমকি দেয়া হয়েছে কিন্তু অন্য কোথাও হামলা হতে পারে তাই শুধু লালমনিরহাটের কারাগারেই নয় দেশের সব কারাগারে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কারা অধিদফতর।

কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, নিরাপত্তার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কারা অধিদফতর থেকে আইজি প্রিজনসের নির্দেশনাসংবলিত একটি চিঠি ইস্যু করে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শ কর্নেল আবরার আহমেদ সব কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন ‘এতে যেকোন হামলা প্রতিরোধের ব্যবস্থা হিসেবে একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স তৈরি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে বিষয়সহ নানারকম বিষয় মাথায় রেখে দেশের সব কারাগারে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, গত রোববার দেশের কারাগারগুলোতে এ বিষয়ে এক চিঠি দেন আইজি প্রিজন্স। চিঠিতে সম্ভাব্য হামলা এড়াতে ১৮টি নির্দেশনা দেন তিনি। চিঠিতে আইজি প্রিজনস উল্লেখ করেন, ‘সম্প্রতি কিছু দুষ্কৃতকারী কারাগার থেকে বন্দী জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠায় ও টেলিফোন করে। কারাগার একটি স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান। দুষ্কৃতকারীদের অপতৎপরতা নস্যাৎ করে বন্দীর পলায়নসহ যে কোন দুর্ঘটনায় কঠোর হতে কারাগারের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রধান দায়িত্ব। সম্প্রতি কিছু কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শৈথিল্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে। যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে আগে থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। এমতাবস্থায় কারাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিম্নোক্ত কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।

আইজি প্রিজন্সের দেয়া নির্দেশনারগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রতিটি কারাগারে একজন ডেপুটি জেলার, একজন প্রধান কারারক্ষী ও পাঁচজন কারারক্ষীর সমন্বয়ে একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স গঠন করে সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিরোধের সদা প্রস্তুত থাকতে হবে, কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালন করতে হবে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে। কারাগারের বাইরের গেটে দায়িত্বপালনকারীদের বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট নিশ্চিত করে আগতদের মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি, ডিউটিতে সশস্ত্র সেন্ট্রি নিয়োগ দেয়া, অস্ত্র ও অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কারাগারের অস্ত্রাগার থেকে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে যাতে দ্রুত অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করা যায় সেজন্য প্রয়োজনীয় মহড়া আয়োজন, কারাগারের চারপাশের সীমানা প্রাচীর সুরক্ষিত রাখা ও অ্যালার্ম সিস্টেম পরীক্ষা করে প্রস্তুত করে রাখা, কারাগারে আটক জঙ্গি আইএস, শীর্ষ সন্ত্রাসী, বিডিআর ও বিভিন্ন সংবেদনশীল মামলায় আটক বন্দীদের চলাচল ও গতিবিধি কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে। যেসব কারাগারে এ ধরনের জঙ্গি বন্দী রয়েছেন সেসব এলাকায় পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়ে তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষারও নির্দেশ দেন আইজি প্রিজন্স।

এর আগে ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে দিনে-দুপুরে প্রিজন ভ্যানে গুলি চালিয়ে ও বোমা মেরে জঙ্গি মামলার তিন আসামিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। তারা হচ্ছেনÑ গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের (হাই সিকিউরিটি) আসামি রাকিব হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাসেল, কারাগারের পার্ট-১ এর সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তৌহিদ এবং কারাগারের পার্ট-২ এর মিজান ওরফে বোমা মিজান ওরফে জাহিদুল হাসান সুমন। এ ঘটনায় ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গি ছালাউদ্দিনকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি। যদিও ছালাউদ্দিন ভারতে আছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গি হামলার বিষয়ে পুলিশ অবগত রয়েছে। লালমনিরহাটসহ দেশের যেসব কারাগারে জঙ্গিসহ দুর্ধর্ষ আসামিরা বন্দী আছেন সেসব কারাগারের আশপাশে নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। জঙ্গি দমনে বিশেষ ইউনিটের ইন্টিলিজেন্সরাও এ বিষয় নিয়ে কাজ করছে। হুমকি জঙ্গিদের তফর থেকে এসেছে নাকি বিভ্রান্তি তৈরি করে অন্য কোন গোষ্ঠী অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে সে বিষয়েও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। পূর্ব অভিজ্ঞাতায় দেখা গেছে, জঙ্গিরা এক স্থানে হামলার পরিকল্পনা করে অন্য জায়গায় হামলা করেছে। কারণ বর্তমানে জঙ্গিরা নতুন কৌশল নিয়ে কাজ করছে। জঙ্গিরা খুলনা, সিলেট রংপুর, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার কিছু অঞ্চলে তাদের কার্যক্রম জোড়ালো করছে। রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি, ভাড়াটিয়া তথ্যের মাধ্যমে বসবাসকারীদের তথ্য পুলিশের কাছে চলে যাওয়ার কারণে জঙ্গিরা এখন ঢাকার বাইরে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে জোড়ালো করছে। এছাড়া রিক্রুটিং করার জন্য যখন যে অঞ্চলে তারা বেশি সাড়া পাচ্ছে সেখানে তাদের কার্যক্রম জোড়ালো করছে। মাঠ পর্যায়ের জঙ্গিদের ক্ষেত্রে নির্দেশনা হচ্ছে বস্তি, ব্যাচেলর ম্যাচগুলোকে ভিন্ন পরিচয় নিয়ে ভাড়া ভাড়া নেয়ার। এছাড়া ম্যাচ বা বস্তিতে ভাড়া নেয়ার জন্য নির্ধারিত সময়ের জন্য যে পরিমাণ অর্থ দরকার তা হামলার জন্য নির্ধারিত জঙ্গি সদস্যকে নিজে থেকেই সংগ্রহ করার উৎসা দেয়া হয়।

আরও খবর
সিটি মেয়রদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার তিন মাস আগেই নির্বাচন করতে হবে
পাঁচ কেজির উপরে ড্রোন উড়াতে অনুমতি লাগবে
পার্বত্য এলাকায় সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে : কাদের
ঢাকা আঙ্কারার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী প্রধানমন্ত্রী
ভুটানের সঙ্গে পিটিএ করবে বাংলাদেশ
অবৈধ নির্মাণসামগ্রী উচ্ছেদ অভিযান ও নিলাম
ডক্টরস ফর হেলথ-এর উদ্যোগে করোনা সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ
যশোরে নিহত তিন কিশোরের পরিবারকে কেন ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ নয় : হাইকোর্ট
এক পুলিশ ও চার সৈনিকের ১০ বছর করে কারাদণ্ড
চট্টগ্রামে বোয়ালখালীর সাবেক ওসি হিমাংশুসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
ধর্ষণচেষ্টার মামলা না তোলায় কিশোরীর বাবাকে অপহরণ
লাশ আটকে রেখে অতিরিক্ত বিল আদায়
শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করানোর ভিডিও ভাইরাল
অপরাধীদের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক থাকলে ব্যবস্থা ডিএমপি কমিশনার
যৌন নির্যাতনে অভিযুক্ত জবি শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার দাবি
তরুণ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে শিক্ষা নিতে হবে মেয়র আইভী

মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৫ মহররম ১৪৪২, ২৭ ভাদ্র ১৪২৭

লালমনিরহাট কারাগারে হামলার হুমকি জঙ্গিদের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

লালমনিরহাট কারাগারে হামলা চালিয়ে বন্দী জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি দিয়েছে জঙ্গিরা। চিরকুট ও টেলিফোনে এমন হুমকি পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছেন কারা অধিদফতর। এ হুমকির প্রেক্ষিতে যেকোন ধরনের হামলা মোকাবিলায় স্টাইকিং ফোর্স গঠনসহ ১৮ নির্দেশনা দিয়ে কারা অধিদফতর থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে জেলা কারাগারগুলোকে। এদিকে এ হুমকির নেপথ্যে জঙ্গিগোষ্ঠী নাকি অন্য কেউ- তা নিয়ে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা। জঙ্গি দমন ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করা পুলিশের বিশেষ ইউনিটগুলোও এ বিষয়ে খোঁজ নেয়া শুরু করেছে। এর আগে গাজীপুর থেকে একটি মামলায় ময়মনসিংহ হাজির করার জন্য প্রিজন ভ্যানে জঙ্গিদের নেয়ার সময় হামলা চালিয়ে ৩ জঙ্গিকে ছিনতাই করে জঙ্গিরা। পরে পুলিশ হামলায় জড়িত কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করলেও ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গিদের মধ্যে শীর্ষ নেতা ছালাউদ্দিনকে গ্রেফতার করা যায়নি।

লালমনিরহাটের কারাগারে হুমকির বিষয়ে জেলা পুলিশের কর্মকর্তা বলেন, কারাগারে হুমকির বিষয়ে পুলিশ অবগত আছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জেলায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারীও বাড়ানো হয়েছে।

কারাগার সূত্র জানায়, সম্প্রতি কারাগার থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সব কারাগারে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ। কারা সদর দফতর থেকে আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মোস্তফা কামাল পাশা দেশের সব কারাগারে সতর্ক অবস্থানের পাশাপাশি নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশনা দেন। এছাড়াও জঙ্গি, শীর্ষ সন্ত্রাসী, বিডিআর বিদ্রোহ মামলাসহ বিভিন্ন সংবেদনশীল মামলায় আটক বন্দীদের চলাচল ও গতিবিধি কঠোরভাবে নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন টেলিফোনে সংবাদকে বলেন, গত পরশু দিন লালমনিরহাটে হামলা চালিয়ে আসামি ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি দিয়ে চিরকুট পাঠানো হয়। এছাড়া টেলিফোনেও হুমকি দেয়া হয়। দেশের সব কারাগারে নব্য জেএমবি, পুরাতন জেএমবি, আল্লাহর দল, আনসারুল্লাহ বাংলাটিমসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যরা বিভিন্ন মামলায় বন্দী আছেন। এছাড়া শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন মামলার আসামিরাও আছেন। এ কারণে হামলার হুমকি গুরুত্ব দেশের সব জেল সুপারদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ডিআইজি প্রিজন্সদের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, দেখাগেলো লালমনিরহাটে কারাগারে হামলার হুমকি দেয়া হয়েছে কিন্তু অন্য কোথাও হামলা হতে পারে তাই শুধু লালমনিরহাটের কারাগারেই নয় দেশের সব কারাগারে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কারা অধিদফতর।

কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, নিরাপত্তার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কারা অধিদফতর থেকে আইজি প্রিজনসের নির্দেশনাসংবলিত একটি চিঠি ইস্যু করে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শ কর্নেল আবরার আহমেদ সব কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন ‘এতে যেকোন হামলা প্রতিরোধের ব্যবস্থা হিসেবে একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স তৈরি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে বিষয়সহ নানারকম বিষয় মাথায় রেখে দেশের সব কারাগারে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, গত রোববার দেশের কারাগারগুলোতে এ বিষয়ে এক চিঠি দেন আইজি প্রিজন্স। চিঠিতে সম্ভাব্য হামলা এড়াতে ১৮টি নির্দেশনা দেন তিনি। চিঠিতে আইজি প্রিজনস উল্লেখ করেন, ‘সম্প্রতি কিছু দুষ্কৃতকারী কারাগার থেকে বন্দী জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠায় ও টেলিফোন করে। কারাগার একটি স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান। দুষ্কৃতকারীদের অপতৎপরতা নস্যাৎ করে বন্দীর পলায়নসহ যে কোন দুর্ঘটনায় কঠোর হতে কারাগারের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রধান দায়িত্ব। সম্প্রতি কিছু কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শৈথিল্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে। যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে আগে থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। এমতাবস্থায় কারাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিম্নোক্ত কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।

আইজি প্রিজন্সের দেয়া নির্দেশনারগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রতিটি কারাগারে একজন ডেপুটি জেলার, একজন প্রধান কারারক্ষী ও পাঁচজন কারারক্ষীর সমন্বয়ে একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স গঠন করে সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিরোধের সদা প্রস্তুত থাকতে হবে, কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালন করতে হবে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে। কারাগারের বাইরের গেটে দায়িত্বপালনকারীদের বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট নিশ্চিত করে আগতদের মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি, ডিউটিতে সশস্ত্র সেন্ট্রি নিয়োগ দেয়া, অস্ত্র ও অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কারাগারের অস্ত্রাগার থেকে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে যাতে দ্রুত অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করা যায় সেজন্য প্রয়োজনীয় মহড়া আয়োজন, কারাগারের চারপাশের সীমানা প্রাচীর সুরক্ষিত রাখা ও অ্যালার্ম সিস্টেম পরীক্ষা করে প্রস্তুত করে রাখা, কারাগারে আটক জঙ্গি আইএস, শীর্ষ সন্ত্রাসী, বিডিআর ও বিভিন্ন সংবেদনশীল মামলায় আটক বন্দীদের চলাচল ও গতিবিধি কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে। যেসব কারাগারে এ ধরনের জঙ্গি বন্দী রয়েছেন সেসব এলাকায় পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়ে তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষারও নির্দেশ দেন আইজি প্রিজন্স।

এর আগে ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে দিনে-দুপুরে প্রিজন ভ্যানে গুলি চালিয়ে ও বোমা মেরে জঙ্গি মামলার তিন আসামিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। তারা হচ্ছেনÑ গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের (হাই সিকিউরিটি) আসামি রাকিব হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাসেল, কারাগারের পার্ট-১ এর সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তৌহিদ এবং কারাগারের পার্ট-২ এর মিজান ওরফে বোমা মিজান ওরফে জাহিদুল হাসান সুমন। এ ঘটনায় ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গি ছালাউদ্দিনকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি। যদিও ছালাউদ্দিন ভারতে আছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গি হামলার বিষয়ে পুলিশ অবগত রয়েছে। লালমনিরহাটসহ দেশের যেসব কারাগারে জঙ্গিসহ দুর্ধর্ষ আসামিরা বন্দী আছেন সেসব কারাগারের আশপাশে নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। জঙ্গি দমনে বিশেষ ইউনিটের ইন্টিলিজেন্সরাও এ বিষয় নিয়ে কাজ করছে। হুমকি জঙ্গিদের তফর থেকে এসেছে নাকি বিভ্রান্তি তৈরি করে অন্য কোন গোষ্ঠী অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে সে বিষয়েও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। পূর্ব অভিজ্ঞাতায় দেখা গেছে, জঙ্গিরা এক স্থানে হামলার পরিকল্পনা করে অন্য জায়গায় হামলা করেছে। কারণ বর্তমানে জঙ্গিরা নতুন কৌশল নিয়ে কাজ করছে। জঙ্গিরা খুলনা, সিলেট রংপুর, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার কিছু অঞ্চলে তাদের কার্যক্রম জোড়ালো করছে। রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি, ভাড়াটিয়া তথ্যের মাধ্যমে বসবাসকারীদের তথ্য পুলিশের কাছে চলে যাওয়ার কারণে জঙ্গিরা এখন ঢাকার বাইরে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে জোড়ালো করছে। এছাড়া রিক্রুটিং করার জন্য যখন যে অঞ্চলে তারা বেশি সাড়া পাচ্ছে সেখানে তাদের কার্যক্রম জোড়ালো করছে। মাঠ পর্যায়ের জঙ্গিদের ক্ষেত্রে নির্দেশনা হচ্ছে বস্তি, ব্যাচেলর ম্যাচগুলোকে ভিন্ন পরিচয় নিয়ে ভাড়া ভাড়া নেয়ার। এছাড়া ম্যাচ বা বস্তিতে ভাড়া নেয়ার জন্য নির্ধারিত সময়ের জন্য যে পরিমাণ অর্থ দরকার তা হামলার জন্য নির্ধারিত জঙ্গি সদস্যকে নিজে থেকেই সংগ্রহ করার উৎসা দেয়া হয়।