রাতের আঁধারে একের পর এক বিনষ্ট ফসল, মাছ! অধরা দুর্বৃত্তরা

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সম্প্রতি একের পর এক ঘটছে ফসলি ক্ষেত বিনষ্টের ঘটনা। রাতের আধারে দুবৃর্ত্তরা নির্দয়ভাবে নষ্ট করে চলেছে ফলন্ত ক্ষেত। অথচ ক্ষতিকর এ কাজ করে দুর্বৃত্তরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এদিকে ধারদেনা করে ফসল চাষ করে পথে বসে যাচ্ছেন কৃষকেরা।

ভুক্তভোগী কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে, বিগত কয়েক মাস ধরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকের সবজি ক্ষেত কেটে দিচ্ছে। মাছের পুকুরগুলোতে কখনও কীটনাশক দিয়ে আবার গ্যাস বড়ি ব্যবহার করে মাছ নিধন করছে। কৃষকেরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করলেও সমাজের গুটি কয়েক দুষ্ট প্রকৃতির মানুষ দ্বারা স্বপ্ন ভাঙছে তাদের।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০ জুন বাবরা গ্রামের আলী বকসের ২ ছেলে কৃষক টিপু সুলতান ও শহিদুল ইসলামের দুই ভায়ের ১৫ কাঠা জমির কাঁদিওয়ালা কলাগাছ কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। একইভাবে ৩ জুলাই মল্লিকপুর গ্রামের মল্লিক ম-লের ছেলে সবজি চাষি মাজেদুল ম-লের বেথুলী মাঠের আড়াই বিঘা জমির ৩ শতাধিক ধরন্ত পেঁপে গাছ কেটে দেয়। এর ঠিক ৪ দিন পরে ৭ জুলাই পৌর এলাকার ফয়লা গ্রামের তাকের হোসেনের ছেলে আবু সাঈদের ১৫ শতক জমির ধরন্ত করলা ক্ষেত কেটে দেয়। ১৩ জুলাই বারোবাজারের ঘোপ গ্রামের মাহতাব মুন্সির ছেলে আব্দুর রশিদের দেড় বিঘা জমির সিমগাছে কীটনাশক স্প্রে করে পুড়িয়ে দেয়। ৯ আগস্ট তিল্লা গ্রামের সতীশ বিশ্বাসের ছেলে কৃষক বিকাশ বিশ্বাসের ১৫ শতক ধরন্ত করলা ক্ষেত কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। ২৮ আগস্ট সাইটবাড়িয়া গ্রামের মাছচাষী ইউপি সদস্য কবিরুল ইসলাম নান্নুর পুকুরে গ্যাস বড়ি দিয়ে প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার মাছ নিধন করে। এর আগে ২৫ আগস্ট বলরামপুর গ্রামের মাছচাষী মমরেজ আলীর পুকুরে একইভাবে বিষ দিয়ে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকার মাছের মেরে দেয়। ৬ সেপ্টেম্বর সাইটবাড়িয়া গ্রামের আনছার আলী মোল্যার ছেলে হতদরিদ্র কৃষক বাপ্পি মোল্যার ৯ শতক ধরন্ত বেগুন ক্ষেত কেটে দিয়ে সর্বশান্ত করে। সর্বশেষ গত ১৪ সেপ্টেম্বর পৌর এলাকার খয়েরতলা গ্রামের রফি বিশ্বাসের পুকুরে গ্যাস বড়ি প্রয়োগ করে লক্ষাধিক টাকার মাছ নিধন করে দুর্বৃত্তরা।

ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষী সাইটবাড়িয়া গ্রামের কবিরুল ইসলাম নান্নু জানান, ধারদেনার মাধ্যমে মাছ চাষ করেছিলাম। পুকুরের মাছও বেশ বড় হয়েছিল। কিন্তু রাতের আধারে কে বা কারা পুকুরে গ্যাস বড়ি দিয়ে পুকুরের সব মাছ মেরে দিয়েছে। সকালে পুকুর থেকে মরা মাছ তোলার সময় গ্যাস বড়ি পেয়েছিলাম। নান্নু আরও জানান, মাছ নিধনের পর আমি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুর রশিদ জানান, আমি একজন সবজি চাষি। মাঠে অন্য ফসলের সঙ্গে দেড় বিঘা জমিতে সিমের চাষ করেছিলাম। সতেজ গাছগুলো বানে উঠে লতিয়ে যাচ্ছিল। কিছুদিন পরেই সিম ধরা শুরু হতো। কিন্তু শত্রুতা করে কে বা কারা রাতের আধারে গাছ বিনাশকরা কীটনাশক স্প্রে করে আমার ক্ষেতের সব সিমগাছ পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, আমি তো কারও ক্ষতি করিনি। সে কারণে মনে করি আমার কোন শত্রু নেই। তাহলে যারা এভাবে ভরা ক্ষেত নষ্ট করছে তাদের লাভটা কি হয়েছে।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার ওসি মুহা. মাহাফুজুর রহমান মিয়া জানান, কৃষকের ভরা ক্ষেত কেটে দেয়ার মত ক্ষতি পুশিয়ে উঠার নয়। সম্প্রতি এমন ঘটনার কথা শুনছি।

কিন্ত দুষ্টু প্রকৃতির এ মানুষগুলোর বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তরা সন্দেহ করলেও তা অনুমান নির্ভর হওয়ায় কেউ অভিযোগ দিতে চান না। কেননা তারা তো সরাসরি দেখেননি কে এমন জঘন্য কাজ করেছে। ফলে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। তারপরও কৃষকের পরিশ্রমের ফসলহানির সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে পুলিশ কাজ করছে।

কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ জানান,কৃষকদের পরিশ্রমের ফসল যারা রাতের আধারে বিনষ্ট করছে তারা মনুষ্যত্বহীন পশুর মতো। সম্প্রতি এ এলাকায় ফসলহানির ঘটনা ঘটছে। ফসলহানিতে প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা পথে বসে যাচ্ছেন। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।

স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার বলেন, একজন কৃষকের ভরা ক্ষেত নষ্ট হলে কোনভাবেই এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেন না। যারা ক্ষেত নষ্ট করছে তাদের কোন লাভ হচ্ছে না। তবে যে কৃষকের ক্ষেত কাটা হচ্ছে তারা নিঃস্ব হচ্ছে। এটা এক ধরনের নৃশংসতা ফলে বিষয়টি সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে।

শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৮ মহররম ১৪৪২, ৩০ ভাদ্র ১৪২৭

রাতের আঁধারে একের পর এক বিনষ্ট ফসল, মাছ! অধরা দুর্বৃত্তরা

সাবজাল হোসেন, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)

image

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সম্প্রতি একের পর এক ঘটছে ফসলি ক্ষেত বিনষ্টের ঘটনা। রাতের আধারে দুবৃর্ত্তরা নির্দয়ভাবে নষ্ট করে চলেছে ফলন্ত ক্ষেত। অথচ ক্ষতিকর এ কাজ করে দুর্বৃত্তরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এদিকে ধারদেনা করে ফসল চাষ করে পথে বসে যাচ্ছেন কৃষকেরা।

ভুক্তভোগী কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে, বিগত কয়েক মাস ধরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকের সবজি ক্ষেত কেটে দিচ্ছে। মাছের পুকুরগুলোতে কখনও কীটনাশক দিয়ে আবার গ্যাস বড়ি ব্যবহার করে মাছ নিধন করছে। কৃষকেরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করলেও সমাজের গুটি কয়েক দুষ্ট প্রকৃতির মানুষ দ্বারা স্বপ্ন ভাঙছে তাদের।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০ জুন বাবরা গ্রামের আলী বকসের ২ ছেলে কৃষক টিপু সুলতান ও শহিদুল ইসলামের দুই ভায়ের ১৫ কাঠা জমির কাঁদিওয়ালা কলাগাছ কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। একইভাবে ৩ জুলাই মল্লিকপুর গ্রামের মল্লিক ম-লের ছেলে সবজি চাষি মাজেদুল ম-লের বেথুলী মাঠের আড়াই বিঘা জমির ৩ শতাধিক ধরন্ত পেঁপে গাছ কেটে দেয়। এর ঠিক ৪ দিন পরে ৭ জুলাই পৌর এলাকার ফয়লা গ্রামের তাকের হোসেনের ছেলে আবু সাঈদের ১৫ শতক জমির ধরন্ত করলা ক্ষেত কেটে দেয়। ১৩ জুলাই বারোবাজারের ঘোপ গ্রামের মাহতাব মুন্সির ছেলে আব্দুর রশিদের দেড় বিঘা জমির সিমগাছে কীটনাশক স্প্রে করে পুড়িয়ে দেয়। ৯ আগস্ট তিল্লা গ্রামের সতীশ বিশ্বাসের ছেলে কৃষক বিকাশ বিশ্বাসের ১৫ শতক ধরন্ত করলা ক্ষেত কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। ২৮ আগস্ট সাইটবাড়িয়া গ্রামের মাছচাষী ইউপি সদস্য কবিরুল ইসলাম নান্নুর পুকুরে গ্যাস বড়ি দিয়ে প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার মাছ নিধন করে। এর আগে ২৫ আগস্ট বলরামপুর গ্রামের মাছচাষী মমরেজ আলীর পুকুরে একইভাবে বিষ দিয়ে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকার মাছের মেরে দেয়। ৬ সেপ্টেম্বর সাইটবাড়িয়া গ্রামের আনছার আলী মোল্যার ছেলে হতদরিদ্র কৃষক বাপ্পি মোল্যার ৯ শতক ধরন্ত বেগুন ক্ষেত কেটে দিয়ে সর্বশান্ত করে। সর্বশেষ গত ১৪ সেপ্টেম্বর পৌর এলাকার খয়েরতলা গ্রামের রফি বিশ্বাসের পুকুরে গ্যাস বড়ি প্রয়োগ করে লক্ষাধিক টাকার মাছ নিধন করে দুর্বৃত্তরা।

ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষী সাইটবাড়িয়া গ্রামের কবিরুল ইসলাম নান্নু জানান, ধারদেনার মাধ্যমে মাছ চাষ করেছিলাম। পুকুরের মাছও বেশ বড় হয়েছিল। কিন্তু রাতের আধারে কে বা কারা পুকুরে গ্যাস বড়ি দিয়ে পুকুরের সব মাছ মেরে দিয়েছে। সকালে পুকুর থেকে মরা মাছ তোলার সময় গ্যাস বড়ি পেয়েছিলাম। নান্নু আরও জানান, মাছ নিধনের পর আমি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুর রশিদ জানান, আমি একজন সবজি চাষি। মাঠে অন্য ফসলের সঙ্গে দেড় বিঘা জমিতে সিমের চাষ করেছিলাম। সতেজ গাছগুলো বানে উঠে লতিয়ে যাচ্ছিল। কিছুদিন পরেই সিম ধরা শুরু হতো। কিন্তু শত্রুতা করে কে বা কারা রাতের আধারে গাছ বিনাশকরা কীটনাশক স্প্রে করে আমার ক্ষেতের সব সিমগাছ পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, আমি তো কারও ক্ষতি করিনি। সে কারণে মনে করি আমার কোন শত্রু নেই। তাহলে যারা এভাবে ভরা ক্ষেত নষ্ট করছে তাদের লাভটা কি হয়েছে।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার ওসি মুহা. মাহাফুজুর রহমান মিয়া জানান, কৃষকের ভরা ক্ষেত কেটে দেয়ার মত ক্ষতি পুশিয়ে উঠার নয়। সম্প্রতি এমন ঘটনার কথা শুনছি।

কিন্ত দুষ্টু প্রকৃতির এ মানুষগুলোর বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তরা সন্দেহ করলেও তা অনুমান নির্ভর হওয়ায় কেউ অভিযোগ দিতে চান না। কেননা তারা তো সরাসরি দেখেননি কে এমন জঘন্য কাজ করেছে। ফলে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। তারপরও কৃষকের পরিশ্রমের ফসলহানির সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে পুলিশ কাজ করছে।

কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ জানান,কৃষকদের পরিশ্রমের ফসল যারা রাতের আধারে বিনষ্ট করছে তারা মনুষ্যত্বহীন পশুর মতো। সম্প্রতি এ এলাকায় ফসলহানির ঘটনা ঘটছে। ফসলহানিতে প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা পথে বসে যাচ্ছেন। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।

স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার বলেন, একজন কৃষকের ভরা ক্ষেত নষ্ট হলে কোনভাবেই এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেন না। যারা ক্ষেত নষ্ট করছে তাদের কোন লাভ হচ্ছে না। তবে যে কৃষকের ক্ষেত কাটা হচ্ছে তারা নিঃস্ব হচ্ছে। এটা এক ধরনের নৃশংসতা ফলে বিষয়টি সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে।