৮৫ লাখ টাকা তছরুপের সত্যতা পেল তদন্ত কমিটি

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারি সোলার সিস্টেম বিতরণের নামে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই সোলার সিস্টেম বিতরণে প্রায় ৮৫ লাখ টাকা তসরুপের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তালিকাভুক্ত উপকারভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত করতে গিয়ে এই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। 

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক এই দুর্নীতির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বরাবরে প্রেরণ করেছেন। এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে ব্যাপক গুঞ্জন চলছে। উপজেলার চেয়ারম্যানের লাগামহীন এ দুর্নীতির ঘটনায় আওয়ামী লীগের দলীয়ভাব প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে দলটির একাধিক নেতা মন্তব্য করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উলিপুর উপজেলায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ২য় পর্যায়ে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কাজে সোলার কর্মসূচির আওতায় ৪৭ লাখ ৮০ হাজার ৯শ’ ৪৯ টাকার ২২টি প্রকল্প ও গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি আর) কাজে সোলার কর্মসূচির আওতায় ৩৭ লাখ ১২ হাজার ৩শ’ ৫৬ টাকার ২০টি প্রকল্পের অনুমোদ দেন জেলা কমিটি। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু উল্লেখিত পরিমাণ অর্থের বিপরীতে বরাদ্দকৃত সোলার তালিকাভুক্ত উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ না করে রিস্ডা বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রিটন মিয়ার সাথে যোগসাজস করে বরাদ্দকৃত প্রকল্পের অর্থ তছরুপ করেন। এরই প্রতিকার চেয়ে জনৈক জয়নাল আবেদীন নামে তালিকাভুক্ত এক ব্যক্তি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ঢাকায় লিখিত অভিযোগ করেন। এরই প্রেক্ষিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের যুগ্ম-সচিব মো. আবু বকর সিদ্দিক দুর্নীতির বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর পত্র প্রেরণ করেন। জেলা প্রশাসক কুড়িগ্রাম স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. হাফিজুর রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটি চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি উলিপুর উপজেলার ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে তালিকাভুক্ত উপকারভোগীদের বাড়িতে সরেজমিন গিয়ে সোলারের কোন অস্তিত্ব পাননি। সরেজমিন তদন্তকালে কর্মকর্তারা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টুর কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইলে তিনি তদন্ত কর্মকর্তাদের সামনে নিজের ভুল স্বীকার করে লজ্জিত ও ক্ষমা প্রার্থনা করে ভবিষ্যতে এ রকম ভুল করবেন না বলে আত্মপক্ষ সমর্থন করে লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন।

এদিকে তদন্ত কর্মকর্তারা রিসডা বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রিটন মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি লিখিতভাবে বলেন,প্রকল্পের অনুমোদিত তালিকা তাদের হাতে আসলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পূর্বের তালিকা বাতিল করে তার নিজস্ব মনগড়া তালিকা মোতাবেক সোলার সিস্টেম স্থাপন করতে বাধ্য করেন। এদিকে তদন্তকারী কর্মকর্তারা দীর্ঘ তদন্ত শেষে জেলা প্রশাসকের দফতরে প্রতিবেদন দাখিল করলে, জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে পত্র প্রেরণ করেন। এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, আমি কোন দুর্নীতি করিনি, তালিকায় কয়েকটি নাম পরিবর্তন করে অন্যদের সোলার প্যানেল দিয়েছি। জেলা প্রশাসক মো. বেজাউল করিম মুঠোফোনে জানান, তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট অধিদফতরে প্রেরণ করা হয়েছে এখন ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিভাগের।

সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০১ মহররম ১৪৪২, ০৩ আশ্বিন ১৪২৭

উলিপুরে সোলার সিস্টেম বিতরণ

৮৫ লাখ টাকা তছরুপের সত্যতা পেল তদন্ত কমিটি

প্রতিনিধি, উলিপুর (কুড়িগ্রাম)

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারি সোলার সিস্টেম বিতরণের নামে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই সোলার সিস্টেম বিতরণে প্রায় ৮৫ লাখ টাকা তসরুপের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তালিকাভুক্ত উপকারভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত করতে গিয়ে এই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। 

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক এই দুর্নীতির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বরাবরে প্রেরণ করেছেন। এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে ব্যাপক গুঞ্জন চলছে। উপজেলার চেয়ারম্যানের লাগামহীন এ দুর্নীতির ঘটনায় আওয়ামী লীগের দলীয়ভাব প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে দলটির একাধিক নেতা মন্তব্য করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উলিপুর উপজেলায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ২য় পর্যায়ে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কাজে সোলার কর্মসূচির আওতায় ৪৭ লাখ ৮০ হাজার ৯শ’ ৪৯ টাকার ২২টি প্রকল্প ও গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি আর) কাজে সোলার কর্মসূচির আওতায় ৩৭ লাখ ১২ হাজার ৩শ’ ৫৬ টাকার ২০টি প্রকল্পের অনুমোদ দেন জেলা কমিটি। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু উল্লেখিত পরিমাণ অর্থের বিপরীতে বরাদ্দকৃত সোলার তালিকাভুক্ত উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ না করে রিস্ডা বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রিটন মিয়ার সাথে যোগসাজস করে বরাদ্দকৃত প্রকল্পের অর্থ তছরুপ করেন। এরই প্রতিকার চেয়ে জনৈক জয়নাল আবেদীন নামে তালিকাভুক্ত এক ব্যক্তি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ঢাকায় লিখিত অভিযোগ করেন। এরই প্রেক্ষিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের যুগ্ম-সচিব মো. আবু বকর সিদ্দিক দুর্নীতির বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর পত্র প্রেরণ করেন। জেলা প্রশাসক কুড়িগ্রাম স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. হাফিজুর রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটি চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি উলিপুর উপজেলার ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে তালিকাভুক্ত উপকারভোগীদের বাড়িতে সরেজমিন গিয়ে সোলারের কোন অস্তিত্ব পাননি। সরেজমিন তদন্তকালে কর্মকর্তারা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টুর কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইলে তিনি তদন্ত কর্মকর্তাদের সামনে নিজের ভুল স্বীকার করে লজ্জিত ও ক্ষমা প্রার্থনা করে ভবিষ্যতে এ রকম ভুল করবেন না বলে আত্মপক্ষ সমর্থন করে লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন।

এদিকে তদন্ত কর্মকর্তারা রিসডা বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রিটন মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি লিখিতভাবে বলেন,প্রকল্পের অনুমোদিত তালিকা তাদের হাতে আসলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পূর্বের তালিকা বাতিল করে তার নিজস্ব মনগড়া তালিকা মোতাবেক সোলার সিস্টেম স্থাপন করতে বাধ্য করেন। এদিকে তদন্তকারী কর্মকর্তারা দীর্ঘ তদন্ত শেষে জেলা প্রশাসকের দফতরে প্রতিবেদন দাখিল করলে, জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে পত্র প্রেরণ করেন। এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, আমি কোন দুর্নীতি করিনি, তালিকায় কয়েকটি নাম পরিবর্তন করে অন্যদের সোলার প্যানেল দিয়েছি। জেলা প্রশাসক মো. বেজাউল করিম মুঠোফোনে জানান, তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট অধিদফতরে প্রেরণ করা হয়েছে এখন ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিভাগের।