চলছে চরম নৈরাজ্য

কোন রুটিন নেই ষ শিক্ষকদের মর্জিমতো যখন তখন ক্লাস কখনও দিনভর কখন রাতে

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে চলছে চরম নৈরাজ্য। দু’একটি ছাড়া বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়েই ‘ফ্যাকাল্টি মেম্বার’রা নিজেদের মর্জিমাফিক যখন খুশি তখন ক্লাস নিচ্ছেন। অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার পাশাপাশি গ্রেডিংও দেয়া হচ্ছে, এই পাঠদান কার্যক্রমে সরকারের যথাযথ নজরদারি নেই। মূলত করোনাকালীন ছুটির মধ্যে টিউশন ফিসহ নানা অজুহাতে অর্থ আদায়ের লক্ষ্যেই নামকাওয়াস্তে অনলাইন শিক্ষা অব্যাহত রাখা হয়েছে বলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ।

অনেক শিক্ষক দিনের বেলা না নিয়ে সন্ধ্যা ও রাতে ক্লাস নিচ্ছেন; কখনও কখনও মধ্যরাত অবদি গড়াচ্ছে ‘কথিত’ অনলাইন ক্লাস। এতে পাঠলাভে নাবিশ^াস উঠছে শিক্ষার্থীদের। কোন কোন শিক্ষক বারবার শ্রেণী কার্যক্রমের সময়সূচি পরিবর্তন করছেন, এতে অনেক শিক্ষার্থী শ্রেণী কার্যক্রমে সংযুক্ত হতে পারছে না। এতে শিক্ষার্থীদের মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে।

এছাড়াও করোনাকালে সাধারণ ছুটির কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। দুর্বল ও ব্যয়বহুল ইন্টারনেট সংযোগ, সংযোগ না থাকা, স্মার্ট ফোন সেটের সীমাবদ্ধতাসহ নানা কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত। সব বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি অনলাইন শিক্ষা শুরু করতে পারেনি। বিশ^বিদ্যালয়গুলো মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক ও জুম প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছে। কিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পরীক্ষাও নিচ্ছে, যা যথাযথভাবে মানসম্মত হচ্ছে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

শিক্ষাবিদরা বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির আগে যে রুটিন অনুযায়ী ক্যাম্পাসে ক্লাস নেয়া হতো, অনলাইনেও ওই রুটিন অনুযায়ী ক্লাস নেয়া উচিত।

ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘অনলাইন শিক্ষার নামে যা হচ্ছে- এটাকে পাঠদান বলা যাবে না, এটাকে বলা উচিতÑ টিউশন ফি দাও গ্রেড নাও, সেমিস্টার বিরতি থেকে রক্ষা পাও। তবে বিশ^বিদ্যালয়ের মালিকদের জন্য এই চর্চা লাভজনক। ভালোভাবে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম করার সক্ষমতা বেশির ভাগ বিশ^বিদ্যালয়ের নেই। কিন্তু তারা করোনা পরিস্থিতিতে নামকাওয়াস্তে অনলাইন শিক্ষার নামে টিউশন ফি আদায়ের সুযোগ পাচ্ছে। এতে পাঠদান না হলেও শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি পরিশোধ করতে হচ্ছে, কেউ কেউ না পড়ে টিউশন ফি’র বিনিময়ে গ্রেডিং পাচ্ছে, সেমিস্টার ব্রেক (বিরতি) থেকেও রেহাই পাচ্ছে। বিশ^বিদ্যালয়গুলো আয় অব্যাহত আছে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ ও দেশের একমাত্র ডিজিটাল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’র (বিডিইউ) উপাচার্য প্রফেসর ড. মুনাজ আহমেদ নূর সংবাদকে বলেছেন, ‘সন্ধ্যা বা রাতের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অনলাইনে ক্লাস নিলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু রুটিন থাকতে হবে, রুটিন ছাড়া ক্লাস নিলে অনেক শিক্ষার্থী পাঠলাভে বঞ্চিত হবে। পাঠদান অসম্পূর্ণ রেখে পরীক্ষা নেয়া যাবে না, মূল্যায়ন পদ্ধতিও যথাযথ হতে হবে।’

বেসরকারি ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ‘বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় সমিতি’র সাবেক সহ-সভাপতি আবুল কাসেম হায়দার সংবাদকে বলেন, ‘পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের তুলনায় বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম ভালো হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে, পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে, রেজাল্টও দেয়া হচ্ছে।’

অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম মানসস্মত হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইউজিসির গাইডলাইন অনুযায়ী সবকিছু করা হচ্ছে। ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে।’

সন্ধ্যা বা মধ্যরাতে অনলাইন শ্রেণী কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের নানা রকম হয়রানির বিষয়ে আবুল কাসেম হায়দার বলেন, ‘সাধারণত বিবিএ, এমবিএ, এলএলবি ও এলএলএম’র ক্লাস রাতে নেয়া হয়। এখন সারাদেশেই ইন্টারনেট কানেকশন ভালো, ক্লাসে সংযুক্ত হতে কারোর সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৬০/৬৫টি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। এরমধ্যে ৫৭টি বেসরকারি ও বাকি আটটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের হার ৬০-৭০ শতাংশ। দেশে মোট ১০৭টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় থাকলেও বর্তমানে ৯৫টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে।

এদিকে করোনাকালে সাধারণ ছুটির প্রথম থেকেই সফলভাবে অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে সরকারি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’ (বিডিইউ)। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়েও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এছাড়া ঢাকা কলেজসহ বেশ কয়েকটি সরকারি কলেজে অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা।

বিডিইউ উপাচার্য ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, ‘করোনাকালে যদি ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হয় তাহলে পাশে বসে আর কিছু করা যাবে না। তাই বলে আমাদের বসে থাকলে চলবে না। আপাতত অনলাইন শিক্ষা অব্যাহত রাখতে হবে। নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার না করলে দেশের দুই কোটি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে।’

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বড় অংশই করোনাকালে সাধারণ ছুটিতে নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। অনেক শিক্ষক গ্রামের বাড়ি থেকেই সুবিধাজনক সময়ে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। এতে সব শিক্ষার্থীকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না, এ কারণে অনেক ক্লাস রাতে নেয়া হচ্ছে, কিন্তু ইন্টারনেটের নেটওয়ার্ক সমস্যা ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে কখনও কখনও মধ্যরাত অবদি গড়াচ্ছে অনলাইন শিক্ষা। গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা নিরবচ্ছিন্ন অনলাইন শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী ‘রায়হান’ বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারীতে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা পরপর ক্লাস হচ্ছে। অনেক শিক্ষক নির্ধারিত সময়ে ক্লাস নিচ্ছেন না, এসব ক্লাস আবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টার মধ্যে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু ইন্টারনেট সংযোগের নানা রকম বিরম্বনার কারণে শিক্ষকদের লেকচার ঠিকমতো বুঝা যায় না। এ কারণে আমি এক সেমিস্টার গ্যাপ দিয়েছি।’

ঢাকার মিরপুরে গড়ে ওঠা ‘প্রাইম ইউনিভার্সিটি’র মার্কেটিং ও ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী হারুন ও রফিক জানায়, তাদের বিশ^বিদ্যালয়ে রুটিন অনুযায়ী কোন ক্লাস হয় না। শিক্ষকদের যখন মর্জি হয়, তখন কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভার্চুয়াল যোগাযোগ করে অনলাইন ক্লাস শুরু করেন। বেশির ভাগই ক্লাস হয় সন্ধ্যা ও রাতে, প্রায়ই রাত ১২টা পর্যন্ত গড়ায় অনলাইন শিক্ষা। এতে শিক্ষার্থীদের বড় অংশেরই জানার সুযোগ হয় না, কখন ক্লাস হয়। আবার সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকরা যোগাযোগও রাখেন না। এসব কারণে অনলাইন শিক্ষায় খুব একটা আগ্রহ নেই প্রাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের।

বেসরকারি প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুন হান্নান চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘দেশে করোনা সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় আমরাও নিয়মিত অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমরা নিজস্ব একটি ফ্ল্যাটফর্ম তৈরি করে ক্লাস নিচ্ছি। এতে ফ্যাকাাল্টি শিক্ষকদের ইচ্ছেমতো যখন খুশি ক্লাস নেয়া বন্ধ হয়েছে। করোনা মহামারীর আগে যে সময়সূচি অনুযায়ী ক্যাম্পাসে ক্লাস নেয়া হতো, এখন অনলাইনেও ওই শিডিউল (সূচি) অনুযায়ী ক্লাস নেয়া হচ্ছে। আমাদের বিশ^বিদ্যালয়ে সন্ধ্যা বা রাতে ক্লাস নেয়ার সুযোগ নেই।’

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএ’র শিক্ষার্থী আলম টিটু বলেন, ‘শিক্ষকদের সুবিধা অনুযায়ী ক্লাস হচ্ছে, তবে রুটিন ছাড়া। প্রকৃতপক্ষে এসব অনলাইন ক্লাসে কেউ উপকৃত হচ্ছে না। কারণ অনলাইনে একাডেমিক ডিসকাশন না করে বেশির ভাগই ক্ষেত্রেই অনির্দিষ্ট বিষয়ে ডিসকাশন (আলোচনা) হচ্ছে। নামমাত্র এসব ক্লাসের জন্য সবাইকে নিয়মিত টিউশন ফি পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফি বকেয়া থাকলে অনলাইন ক্লাসে লিংক (যুক্ত থাকা) পেতে ভোগান্তি হচ্ছে।’

অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া ও মূল্যায়নের অনুমতি নেই

দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ১৬ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্রে জানা গেছে, অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সুযোগ নিয়ে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ, গ্রেডিং দেয়া (মূল্যায়ন) ও ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিল।

এরপর গত ৬ এপ্রিল ইউজিনি দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ, মূল্যায়ন ও শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। করোনাকালে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষার্থীদের গ্রেডিং ‘বিধিসম্মত নয়’ জানিয়ে এসব কার্যক্রম বন্ধ রাখারও আহ্বান জানায় ইউজিসি।

ওই সময় কমিশনের নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ‘সেমিস্টার ফাইনাল ছাড়া গ্রেড প্রদান, মূল্যায়ন এবং কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই স্নাতক প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, যা বিধিসম্মত নয়। ইউজিসি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, কিছু কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির পরামর্শ অমান্য করে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এমনকি দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে কিছু কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সামার সেমিস্টারে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ ধরনের কার্যক্রম কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

পরবর্তীতে গত ৭ মে বিশ^বিদ্যালয়গুলোকে শর্তসাপেক্ষে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষার অনুমতি দিয়ে একটি গাইডলাইন প্রকাশ করে ইউজিসি। নকল ঠেকানোসহ কয়েকটি শর্তে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা ও ভর্তির অনুমতি পায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ইউজিসি বলেছে, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় নকল বা অসদুপায় অবলম্বন করতে না পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চলমান সেমিস্টারের শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে সন্তোষজনকভাবে পরিচালনা করেছে তাদের দুটি বিকল্প নির্দেশনা দিয়েছে ইউজিসি।

প্রথম বিকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী যারা চলমান সেমিস্টারের কোর্সসমূহের অসমাপ্ত পাঠ্যসূচির অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং ল্যাবরেটরিভিত্তিক সব কোর্সের ব্যবহারিক ক্লাস করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শ্রেণীকক্ষে সম্পন্ন করতে হবে। অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব সক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের উপযোগী ডিজিটাল পদ্ধতিতে যে কোন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সহায়তা নিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় সব পর্যায়ের পরীক্ষা ও মূল্যায়ন চলমান নিয়ম অনুযায়ী গ্রহণ করবে।

দ্বিতীয় বিকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, যারা চলমান সেমিস্টারের কোর্সসমূহের অসমাপ্ত পাঠ্যসূচির অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব সক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের উপযোগী ডিজিটাল পদ্ধতিতে যে কোন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সহায়তা নিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। চলমান সেমিস্টারে তত্ত্বীয় কোর্সের বিভিন্ন বিষয়ে রেজিস্ট্রিকৃত শিক্ষার্থীদের অনলাইনের মাধ্যমে ওইসব বিষয়ের অসমাপ্ত পাঠ্যসূচি (যা ৩০ শতাংশের মতো) সন্তোষজনকভাবে সম্পন্ন হয়ে গেলে অনলাইনের কার্যক্রম শুরুর আগে চলমান সেমিস্টারের বিভিন্ন বিষয়ে ইতোপূর্বে ক্লাস উপস্থিতি, পারফরমেন্স, ক্লাস টেস্ট, মিডটার্ম পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে যে মূল্যায় করা হয়েছে তার নম্বর এবং অনলাইনের পঠিত অংশের উপর এসাইনমেন্ট, কেস স্টাডি, ভাইভা (ভিডিও ডিভাইস অন থাকা অবস্থায়), ভার্চুয়াল প্রেজেন্টেশন নিয়ে যথাযথ স্বচ্ছতা ও মান নিশ্চিত করে মূল্যায়ন সম্পন্ন করে ফলাফল প্রকাশ করা যাবে। মূল্যায়নের জন্য প্রয়োজন হলে আগের সেমিস্টারগুলোর ফলাফল বিবেচনায় আনা যেতে পারে। সব ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রকাশ করতে হবে। ল্যাবরেটরিভিত্তিক সব কোর্সের ব্যবহারিক ক্লাস গ্রহণ, এর উপর পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরপরই অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ করে সরাসরি শ্রেণীকক্ষে সম্পন্ন করতে হবে।

বিকল্প প্রস্তাব দুটির যে কোন একটি গ্রহণ করতে হলে চলমান সেমিস্টারে অনলাইনে নেয়া ক্লাসে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকতে হবে।

বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৪ মহররম ১৪৪২, ০৫ আশ্বিন ১৪২৭

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন শিক্ষা

চলছে চরম নৈরাজ্য

কোন রুটিন নেই ষ শিক্ষকদের মর্জিমতো যখন তখন ক্লাস কখনও দিনভর কখন রাতে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে চলছে চরম নৈরাজ্য। দু’একটি ছাড়া বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়েই ‘ফ্যাকাল্টি মেম্বার’রা নিজেদের মর্জিমাফিক যখন খুশি তখন ক্লাস নিচ্ছেন। অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার পাশাপাশি গ্রেডিংও দেয়া হচ্ছে, এই পাঠদান কার্যক্রমে সরকারের যথাযথ নজরদারি নেই। মূলত করোনাকালীন ছুটির মধ্যে টিউশন ফিসহ নানা অজুহাতে অর্থ আদায়ের লক্ষ্যেই নামকাওয়াস্তে অনলাইন শিক্ষা অব্যাহত রাখা হয়েছে বলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ।

অনেক শিক্ষক দিনের বেলা না নিয়ে সন্ধ্যা ও রাতে ক্লাস নিচ্ছেন; কখনও কখনও মধ্যরাত অবদি গড়াচ্ছে ‘কথিত’ অনলাইন ক্লাস। এতে পাঠলাভে নাবিশ^াস উঠছে শিক্ষার্থীদের। কোন কোন শিক্ষক বারবার শ্রেণী কার্যক্রমের সময়সূচি পরিবর্তন করছেন, এতে অনেক শিক্ষার্থী শ্রেণী কার্যক্রমে সংযুক্ত হতে পারছে না। এতে শিক্ষার্থীদের মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে।

এছাড়াও করোনাকালে সাধারণ ছুটির কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। দুর্বল ও ব্যয়বহুল ইন্টারনেট সংযোগ, সংযোগ না থাকা, স্মার্ট ফোন সেটের সীমাবদ্ধতাসহ নানা কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত। সব বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি অনলাইন শিক্ষা শুরু করতে পারেনি। বিশ^বিদ্যালয়গুলো মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক ও জুম প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছে। কিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পরীক্ষাও নিচ্ছে, যা যথাযথভাবে মানসম্মত হচ্ছে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

শিক্ষাবিদরা বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির আগে যে রুটিন অনুযায়ী ক্যাম্পাসে ক্লাস নেয়া হতো, অনলাইনেও ওই রুটিন অনুযায়ী ক্লাস নেয়া উচিত।

ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘অনলাইন শিক্ষার নামে যা হচ্ছে- এটাকে পাঠদান বলা যাবে না, এটাকে বলা উচিতÑ টিউশন ফি দাও গ্রেড নাও, সেমিস্টার বিরতি থেকে রক্ষা পাও। তবে বিশ^বিদ্যালয়ের মালিকদের জন্য এই চর্চা লাভজনক। ভালোভাবে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম করার সক্ষমতা বেশির ভাগ বিশ^বিদ্যালয়ের নেই। কিন্তু তারা করোনা পরিস্থিতিতে নামকাওয়াস্তে অনলাইন শিক্ষার নামে টিউশন ফি আদায়ের সুযোগ পাচ্ছে। এতে পাঠদান না হলেও শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি পরিশোধ করতে হচ্ছে, কেউ কেউ না পড়ে টিউশন ফি’র বিনিময়ে গ্রেডিং পাচ্ছে, সেমিস্টার ব্রেক (বিরতি) থেকেও রেহাই পাচ্ছে। বিশ^বিদ্যালয়গুলো আয় অব্যাহত আছে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ ও দেশের একমাত্র ডিজিটাল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’র (বিডিইউ) উপাচার্য প্রফেসর ড. মুনাজ আহমেদ নূর সংবাদকে বলেছেন, ‘সন্ধ্যা বা রাতের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অনলাইনে ক্লাস নিলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু রুটিন থাকতে হবে, রুটিন ছাড়া ক্লাস নিলে অনেক শিক্ষার্থী পাঠলাভে বঞ্চিত হবে। পাঠদান অসম্পূর্ণ রেখে পরীক্ষা নেয়া যাবে না, মূল্যায়ন পদ্ধতিও যথাযথ হতে হবে।’

বেসরকারি ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ‘বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় সমিতি’র সাবেক সহ-সভাপতি আবুল কাসেম হায়দার সংবাদকে বলেন, ‘পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের তুলনায় বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম ভালো হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে, পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে, রেজাল্টও দেয়া হচ্ছে।’

অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম মানসস্মত হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইউজিসির গাইডলাইন অনুযায়ী সবকিছু করা হচ্ছে। ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে।’

সন্ধ্যা বা মধ্যরাতে অনলাইন শ্রেণী কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের নানা রকম হয়রানির বিষয়ে আবুল কাসেম হায়দার বলেন, ‘সাধারণত বিবিএ, এমবিএ, এলএলবি ও এলএলএম’র ক্লাস রাতে নেয়া হয়। এখন সারাদেশেই ইন্টারনেট কানেকশন ভালো, ক্লাসে সংযুক্ত হতে কারোর সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৬০/৬৫টি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। এরমধ্যে ৫৭টি বেসরকারি ও বাকি আটটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের হার ৬০-৭০ শতাংশ। দেশে মোট ১০৭টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় থাকলেও বর্তমানে ৯৫টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে।

এদিকে করোনাকালে সাধারণ ছুটির প্রথম থেকেই সফলভাবে অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে সরকারি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’ (বিডিইউ)। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়েও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এছাড়া ঢাকা কলেজসহ বেশ কয়েকটি সরকারি কলেজে অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা।

বিডিইউ উপাচার্য ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, ‘করোনাকালে যদি ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হয় তাহলে পাশে বসে আর কিছু করা যাবে না। তাই বলে আমাদের বসে থাকলে চলবে না। আপাতত অনলাইন শিক্ষা অব্যাহত রাখতে হবে। নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার না করলে দেশের দুই কোটি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে।’

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বড় অংশই করোনাকালে সাধারণ ছুটিতে নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। অনেক শিক্ষক গ্রামের বাড়ি থেকেই সুবিধাজনক সময়ে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। এতে সব শিক্ষার্থীকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না, এ কারণে অনেক ক্লাস রাতে নেয়া হচ্ছে, কিন্তু ইন্টারনেটের নেটওয়ার্ক সমস্যা ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে কখনও কখনও মধ্যরাত অবদি গড়াচ্ছে অনলাইন শিক্ষা। গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা নিরবচ্ছিন্ন অনলাইন শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী ‘রায়হান’ বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারীতে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা পরপর ক্লাস হচ্ছে। অনেক শিক্ষক নির্ধারিত সময়ে ক্লাস নিচ্ছেন না, এসব ক্লাস আবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টার মধ্যে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু ইন্টারনেট সংযোগের নানা রকম বিরম্বনার কারণে শিক্ষকদের লেকচার ঠিকমতো বুঝা যায় না। এ কারণে আমি এক সেমিস্টার গ্যাপ দিয়েছি।’

ঢাকার মিরপুরে গড়ে ওঠা ‘প্রাইম ইউনিভার্সিটি’র মার্কেটিং ও ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী হারুন ও রফিক জানায়, তাদের বিশ^বিদ্যালয়ে রুটিন অনুযায়ী কোন ক্লাস হয় না। শিক্ষকদের যখন মর্জি হয়, তখন কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভার্চুয়াল যোগাযোগ করে অনলাইন ক্লাস শুরু করেন। বেশির ভাগই ক্লাস হয় সন্ধ্যা ও রাতে, প্রায়ই রাত ১২টা পর্যন্ত গড়ায় অনলাইন শিক্ষা। এতে শিক্ষার্থীদের বড় অংশেরই জানার সুযোগ হয় না, কখন ক্লাস হয়। আবার সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকরা যোগাযোগও রাখেন না। এসব কারণে অনলাইন শিক্ষায় খুব একটা আগ্রহ নেই প্রাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের।

বেসরকারি প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুন হান্নান চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘দেশে করোনা সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় আমরাও নিয়মিত অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমরা নিজস্ব একটি ফ্ল্যাটফর্ম তৈরি করে ক্লাস নিচ্ছি। এতে ফ্যাকাাল্টি শিক্ষকদের ইচ্ছেমতো যখন খুশি ক্লাস নেয়া বন্ধ হয়েছে। করোনা মহামারীর আগে যে সময়সূচি অনুযায়ী ক্যাম্পাসে ক্লাস নেয়া হতো, এখন অনলাইনেও ওই শিডিউল (সূচি) অনুযায়ী ক্লাস নেয়া হচ্ছে। আমাদের বিশ^বিদ্যালয়ে সন্ধ্যা বা রাতে ক্লাস নেয়ার সুযোগ নেই।’

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএ’র শিক্ষার্থী আলম টিটু বলেন, ‘শিক্ষকদের সুবিধা অনুযায়ী ক্লাস হচ্ছে, তবে রুটিন ছাড়া। প্রকৃতপক্ষে এসব অনলাইন ক্লাসে কেউ উপকৃত হচ্ছে না। কারণ অনলাইনে একাডেমিক ডিসকাশন না করে বেশির ভাগই ক্ষেত্রেই অনির্দিষ্ট বিষয়ে ডিসকাশন (আলোচনা) হচ্ছে। নামমাত্র এসব ক্লাসের জন্য সবাইকে নিয়মিত টিউশন ফি পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফি বকেয়া থাকলে অনলাইন ক্লাসে লিংক (যুক্ত থাকা) পেতে ভোগান্তি হচ্ছে।’

অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া ও মূল্যায়নের অনুমতি নেই

দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ১৬ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্রে জানা গেছে, অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সুযোগ নিয়ে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ, গ্রেডিং দেয়া (মূল্যায়ন) ও ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিল।

এরপর গত ৬ এপ্রিল ইউজিনি দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ, মূল্যায়ন ও শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। করোনাকালে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষার্থীদের গ্রেডিং ‘বিধিসম্মত নয়’ জানিয়ে এসব কার্যক্রম বন্ধ রাখারও আহ্বান জানায় ইউজিসি।

ওই সময় কমিশনের নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ‘সেমিস্টার ফাইনাল ছাড়া গ্রেড প্রদান, মূল্যায়ন এবং কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই স্নাতক প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, যা বিধিসম্মত নয়। ইউজিসি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, কিছু কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির পরামর্শ অমান্য করে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এমনকি দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে কিছু কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সামার সেমিস্টারে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ ধরনের কার্যক্রম কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

পরবর্তীতে গত ৭ মে বিশ^বিদ্যালয়গুলোকে শর্তসাপেক্ষে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষার অনুমতি দিয়ে একটি গাইডলাইন প্রকাশ করে ইউজিসি। নকল ঠেকানোসহ কয়েকটি শর্তে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা ও ভর্তির অনুমতি পায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ইউজিসি বলেছে, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় নকল বা অসদুপায় অবলম্বন করতে না পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চলমান সেমিস্টারের শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে সন্তোষজনকভাবে পরিচালনা করেছে তাদের দুটি বিকল্প নির্দেশনা দিয়েছে ইউজিসি।

প্রথম বিকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী যারা চলমান সেমিস্টারের কোর্সসমূহের অসমাপ্ত পাঠ্যসূচির অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং ল্যাবরেটরিভিত্তিক সব কোর্সের ব্যবহারিক ক্লাস করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শ্রেণীকক্ষে সম্পন্ন করতে হবে। অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব সক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের উপযোগী ডিজিটাল পদ্ধতিতে যে কোন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সহায়তা নিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় সব পর্যায়ের পরীক্ষা ও মূল্যায়ন চলমান নিয়ম অনুযায়ী গ্রহণ করবে।

দ্বিতীয় বিকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, যারা চলমান সেমিস্টারের কোর্সসমূহের অসমাপ্ত পাঠ্যসূচির অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব সক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের উপযোগী ডিজিটাল পদ্ধতিতে যে কোন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সহায়তা নিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। চলমান সেমিস্টারে তত্ত্বীয় কোর্সের বিভিন্ন বিষয়ে রেজিস্ট্রিকৃত শিক্ষার্থীদের অনলাইনের মাধ্যমে ওইসব বিষয়ের অসমাপ্ত পাঠ্যসূচি (যা ৩০ শতাংশের মতো) সন্তোষজনকভাবে সম্পন্ন হয়ে গেলে অনলাইনের কার্যক্রম শুরুর আগে চলমান সেমিস্টারের বিভিন্ন বিষয়ে ইতোপূর্বে ক্লাস উপস্থিতি, পারফরমেন্স, ক্লাস টেস্ট, মিডটার্ম পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে যে মূল্যায় করা হয়েছে তার নম্বর এবং অনলাইনের পঠিত অংশের উপর এসাইনমেন্ট, কেস স্টাডি, ভাইভা (ভিডিও ডিভাইস অন থাকা অবস্থায়), ভার্চুয়াল প্রেজেন্টেশন নিয়ে যথাযথ স্বচ্ছতা ও মান নিশ্চিত করে মূল্যায়ন সম্পন্ন করে ফলাফল প্রকাশ করা যাবে। মূল্যায়নের জন্য প্রয়োজন হলে আগের সেমিস্টারগুলোর ফলাফল বিবেচনায় আনা যেতে পারে। সব ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রকাশ করতে হবে। ল্যাবরেটরিভিত্তিক সব কোর্সের ব্যবহারিক ক্লাস গ্রহণ, এর উপর পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরপরই অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ করে সরাসরি শ্রেণীকক্ষে সম্পন্ন করতে হবে।

বিকল্প প্রস্তাব দুটির যে কোন একটি গ্রহণ করতে হলে চলমান সেমিস্টারে অনলাইনে নেয়া ক্লাসে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকতে হবে।