করোনা মোকাবিলায় সরকার দেশব্যাপী আর ‘লকডাউন’র কথা ভাবছে না। দেশে করোনা সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলায় নিজ নিজ মন্ত্রণালয়কে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এসব কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে তা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

গতকাল সচিবালয়ে করোনা মহামারী সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ওই নির্দেশনা দেয়া হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তার সভাপতিত্বে সভায় সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব ও সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলায় সরকার সারাদেশে লকডাউনের কথা ভাবছে না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘কারণ লকডাউনে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অর্থনীতি সচল রাখতেই সরকার এমন ভাবনা থেকে সরে এসেছে। অর্থনীতি সচল রেখেই করোনার সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যদি (সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ) আসে আমরা টোটাল প্রোগ্রামকে ভাগ করে নিলাম। ওয়ার্ক প্ল্যান রেডি করে নিতে হবে। ক্লিনিক্যাল সাইডটা আমাদের এক্সপার্টরা রেডি করবেন, যদি রোগটা বিস্তার করে, কিভাবে তার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান হবে। সাপ্লিমেন্টারি ক্লিনিক্যাল সাইট, যেহেতু শীতের সময় অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা বেশি থাকবে, সেটাও ইমিডিয়েটলি সবাইকে সচেতন করে দেয়া এবং তারও একটা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান রেডি করা।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পরবর্তী অবস্থা পর্যালোচনা করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সভায় বলা হয়েছে, অক্টোবর-নভেম্বরে শীতের প্রকোপ বাড়লে কোভিডের সংক্রমণ আবার বাড়তে পারে। সেটি হবে কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভ। কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীরও নির্দেশনা রয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে কোভিডের সেকেন্ড ওয়েব মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নেই আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এজন্যই মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নিজ নিজ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবে এবং তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানাবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পরবর্তীতে সেগুলোকে সমন্বয় করে চূড়ান্ত পরিকল্পনা করবে।

সবাই যাতে মাস্ক পরে সেজন্য ব্যাপক প্রোমোশনাল ক্যাম্পেইন চালাতে হবে উল্লেখ করে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘সবাই যাতে দূরত্বটা বজায় রাখে স্বাস্থ্য নির্দেশিকা সবাই যাতে মেনে চলে। এনফোর্সমেন্ট সাইড, মাঠ প্রশাসন, স্থানীয় সরকার, পুলিশ, সেনাবাহিনী- এটা কীভাবে করবে, সেই ওয়ার্ক প্ল্যান করা হবে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘পিআইডি, তথ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মসজিদগুলোকে ব্যবহার করে মানুষকে আরও সচেতন করা হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের ইউনিয়ন পর্যন্ত কর্মচারী আছে, তারা এ বিষয়ে কাজ করবেন। গণমাধ্যমেরও একটা বড় ভূমিকা আছে। সাত থেকে ১০ দিন সময় দিয়েছি এ সময়ে তারা কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করবে।’

বিদেশ যেসব লোকজন দেশে আসছে এবং বিদেশে যাচ্ছে তাদের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এ ব্যাপারে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা করা হবে, যাতে বাইরে থেকে আর ভাইরাস না আসে। বিমানবন্দরে সশস্ত্র বাহিনীর বড় টিম আছে, তারা দেখাশোনা করছেন।’

বিদেশফেরত যাত্রীদের প্রবেশের বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহফুজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখন যেটা করছি কোলাবরেশন উইথ সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং ফরেন মিনিস্ট্রির সঙ্গে। এয়ারপোর্টে এবং বিভিন্ন এন্ট্রিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লোকজন থাকে। বিদেশ ফেরত অনেকে সার্টিফিকেট নিয়ে আসেন যে, তারা কোভিড ফ্রি। যারা নিয়ে আসেননি তারা কতদিন সেখানে হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন, সেই একটা সার্টিফিকেট নিয়ে আসেন। যাদের এ রকম কোন সার্টিফিকেট নেই, কোন কিছু নেই এবং যাদের সন্দেহ হয়, তাদের আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যাই। ঢাকাতে দিয়াবাড়ি ও হাজী ক্যাম্পে (কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা) আছে।’

লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহফুজুর রহমান আরও বলেন, ‘করোনা যখন পিকে ছিল তখন সাড়ে তিন হাজারের মতো প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ক্যাপাসিটি (ধারণক্ষমতা) ছিল। সেখানে দেড় হাজারের ওপরে ওঠেনি। এজন্য আমরা এটাকে কমিয়ে দুই হাজারের মতো রেখেছি। এতে আমাদের সাশ্রয় হচ্ছে। যদি পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায়, তাহলে আমরা কোয়ারেন্টিন সুবিধা আবার সাড়ে তিন হাজারে নিয়ে যাব। বিদেশ ফেরত যারা করোনামুক্ত ও ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার সনদ নিয়ে আসবেন, তাদের কোয়ারেন্টিনে নেয়া লাগে না।’