অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের করোনায় মৃত্যু

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম করোনায় মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

গতকাল রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ছেলে সুমন মাহবুব।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভোরে হার্ট অ্যাটাক হলে তাকে দ্রুত আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার হৃদযন্ত্র স্বাভাবিকভাবে কাজ করছিল না বলে জানান চিকিৎসকরা। তবে গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে আগের তুলনায় তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটতে শুরু করে। পরে গত ২০ সেপ্টেম্বর তার করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। তবে এরপর আবার তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।

তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ছেলে সুমন মাহবুব সাংবাদিকতা পেশায় ও মেয়ে শিশির কনা আইন পেশায় রয়েছেন।

২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং একই সঙ্গে পদাধিকারবলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা-ের বিচারের জন্য সংবিধানের ৫ম, ৭ম ও ১৩তম, ১৬তম সংশোধনী মামলা, মানবতাবিরোধী অপরাধে দ-প্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামী, দেলওয়ার হোসেন সাঈদী, কাদের মোল্লা, মো. কামারুজ্জামান, আলী আহসান মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ অনেকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাপিলেট ডিভিশনে মামলা পরিচালনা করেছেন। হাইকোর্ট ডিভিশনে বিডিআর বিদ্রোহ হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে দায়িত্ব পালন করেছেন মাহবুবে আলম।

সুপ্রিম কোর্টের এ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ১৯৯৮ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে ২০০১ সালের ৪ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মাহবুবে আলম সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ১৯৯৩-৯৪ সালে সম্পাদক ও ২০০৫-২০০৬ সালে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক শোকবার্তায় বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মাহবুবে আলম ছিলেন প্রথম সারির যোদ্ধা। তার মৃত্যু বাংলাদেশের আইন অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। রাষ্ট্রপতি শোকবার্তায় মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনায় তার আন্তরিকতা ও দক্ষতা জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোকবার্তায় বলেন, দেশের আইন অঙ্গনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মাহবুবে আলমের অবদান জাতি সব সময় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, তিনি একজন প্রথিতযশা আইনজীবী হিসেবে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক আইনি বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ভূমিকা রেখেছেন এবং সব সময় ন্যায়নিষ্ঠ থেকে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, যা অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৯ মহররম ১৪৪২, ১০ আশ্বিন ১৪২৭

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের করোনায় মৃত্যু

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম করোনায় মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

গতকাল রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ছেলে সুমন মাহবুব।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভোরে হার্ট অ্যাটাক হলে তাকে দ্রুত আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার হৃদযন্ত্র স্বাভাবিকভাবে কাজ করছিল না বলে জানান চিকিৎসকরা। তবে গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে আগের তুলনায় তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটতে শুরু করে। পরে গত ২০ সেপ্টেম্বর তার করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। তবে এরপর আবার তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।

তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ছেলে সুমন মাহবুব সাংবাদিকতা পেশায় ও মেয়ে শিশির কনা আইন পেশায় রয়েছেন।

২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং একই সঙ্গে পদাধিকারবলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা-ের বিচারের জন্য সংবিধানের ৫ম, ৭ম ও ১৩তম, ১৬তম সংশোধনী মামলা, মানবতাবিরোধী অপরাধে দ-প্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামী, দেলওয়ার হোসেন সাঈদী, কাদের মোল্লা, মো. কামারুজ্জামান, আলী আহসান মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ অনেকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাপিলেট ডিভিশনে মামলা পরিচালনা করেছেন। হাইকোর্ট ডিভিশনে বিডিআর বিদ্রোহ হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে দায়িত্ব পালন করেছেন মাহবুবে আলম।

সুপ্রিম কোর্টের এ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ১৯৯৮ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে ২০০১ সালের ৪ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মাহবুবে আলম সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ১৯৯৩-৯৪ সালে সম্পাদক ও ২০০৫-২০০৬ সালে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক শোকবার্তায় বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মাহবুবে আলম ছিলেন প্রথম সারির যোদ্ধা। তার মৃত্যু বাংলাদেশের আইন অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। রাষ্ট্রপতি শোকবার্তায় মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনায় তার আন্তরিকতা ও দক্ষতা জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোকবার্তায় বলেন, দেশের আইন অঙ্গনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মাহবুবে আলমের অবদান জাতি সব সময় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, তিনি একজন প্রথিতযশা আইনজীবী হিসেবে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক আইনি বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ভূমিকা রেখেছেন এবং সব সময় ন্যায়নিষ্ঠ থেকে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, যা অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।