চালের দাম বৃদ্ধির কারণ মজুদদারি

অটো রাইসমিলগুলোকে আইনের আওতায় আনার আহ্বান

বড় অটো রাইসমিলগুলোতে ধান-চাল মজুদের কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারপরও এসব অটো রাইসমিলগুলোকে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। কারণ বর্তমান আইন অনুযায়ী একেকটি মিলে যে পরিমাণ ধান-চাল মজুদ করার কথা বলা হয়েছে, সেই পরিমাণ মজুদ করলেও তাদের কাছে অনেক ধান-চাল মজুদ থাকবে। বিদ্যমান আইনে এই পরিমাণ মজুদ থাকা বৈধ। এজন্য এসব মিলে ধান-চাল মজুদ থাকলেও তাদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। গতকাল এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আয়োজিত ‘চালের দাম বাড়ছে কেন? কার লাভ, কার ক্ষতি’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সংলাপে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. নাজিরুল ইসলাম বলেন, দেশে পর্যাপ্ত ধান-চাল থাকার পরও চালের দাম বাড়ছে। এর প্রধান কারণ, মিলারদের কাছে প্রচুর পরিমাণ মজুদ আছে। সম্প্রতি আমরা গবেষণা করেছি। সেই গবেষণায় মাঠপর্যায়ে দেখা গেছে, এমন কোন মিল পাওয়া যায়নি, যে মিলে এক মাস চলতে পারে এই পরিমাণ ধান মজুদ নেই। সবার কাছেই মজুদ আছে। এই পরিমাণ মজুদের কথা আইনেই বলা হয়েছে। তাই তাদের ধরাও যাচ্ছে না। তাই বড় বড় অটো রাইসমিলের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে অথবা মজুদ আইন সংস্কার করতে হবে।

এসডিজি প্লাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংলাপের সভাপতিত্ব করেন। বাংলাদেশে ধান উৎপাদনের সঠিক প্রাক্কলনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই প্রাক্কলনের উপর ভিত্তি করেই নীতি নির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। সরকারের ধান-চাল মজুদ করার সক্ষমতা কম হওয়ার কারণে বেশিরভাগ সময়ই সরকারের পক্ষে বাজার প্রভাবিত করার সুযোগ থাকে না। এছাড়াও তুলনামূলক ছোট কৃষকের কাছে থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করতে হবে। ছোট ও মাঝারি কৃষকের টিকে থাকার সক্ষমতা কম, তাই তাদের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কৃষি খাতে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন ভর্তুকি ও উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সব সুবিধা কৃষক পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য সরকার বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে। ধান চাষে লাভবান না হওয়ায় ধানের উৎপাদন ক্রমাগত কমছে বলে মনে করেন শাইখ সিরাজ। কৃষি খাতে অনেকে ধান চাষ থেকে উচ্চমূল্যের ফল-ফসলের দিকে ঝুঁকে যাওয়ায় এবং চাষযোগ্য জমি কমে আসায় ধান চাষের ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি গুদামে ছোট কৃষকদের ফসল সংরক্ষণ করার সুযোগ করে দিতে হবে, যেন ফসল উঠার সঙ্গে সঙ্গে কৃষককে অল্প দামে ফসল বিক্রি না করতে হয়।

বাজারে চালের দাম বাড়লেও এই বাড়তি দামের কারণে কৃষক লাভবান হয় না বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআইডিএস)-এর সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. এম আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, কৃষক অনেক আগেই কম দামে ধান বিক্রি করে দেয়। বিআইডিএস সাবেক মহাপরিচালক ড. কাজী শাহাবুদ্দিন বলেন, সরকারের বর্তমানে খাদ্যশস্য মজুত পর্যাপ্ত নয় এবং এটি খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, সরকার প্রকৃত কৃষকের থেকে চাল না কিনে মিলারদের থেকে ক্রয় করছে, তাই কৃষক উপকৃত হচ্ছে না। মিলারদের ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের মজুতদারির কারণে বাজারে চালের অপর্যাপ্ততার কথা তুলে তিনি বলেন, প্রতিবছর বাম্পার ফলনের পরেও চালের দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। সরকারকে স্থানীয় পর্যায়ে ক্রয় কেন্দ্র করে সরাসরি কৃষক থেকে চাল ক্রয় করার পরামর্শ দেন তিনি। বাংলাদেশ অটো রাইসমিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম খোরশেদ আলম খান বলেন, মিলাররা মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকদের থেকে ১,০৫০ টাকায় ধান ক্রয় করেছে। চালের এই বাম্পার ফলনের কথার সঙ্গে দ্বিমত করে তিনি বলেন, এই মৌসুমের শুরু থেকেই সরবরাহ কম ছিল।

বাজারে চালের পর্যাপ্ততা নিয়ে বাংলাদেশ রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ আলম বাবু বলেন, চালের আমদানি শুল্ক কমানো হলেও সঠিক সময়ে এই নীতি গ্রহণ না নেয়ায় সেই পরিমাণ চাল আমদানি করা যায়নি। ধান ও চালের তথ্য বিষয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির উৎপাদনের ভুল প্রাক্কলন নিয়ে সংলাপে উপস্থিত বক্তাদের মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, উৎপাদনের প্রাক্কলন সঠিক ছিল এবং তিনি খাদ্য সংকটের সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন না। সংলাপে ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এবং ড মো. নাজিরুল ইসলাম, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল ও হাওড় অঞ্চলের মোট নয়টি জেলা (গাইবান্ধা, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, সুনামগঞ্জ, মেহেরপুর, নীলফামারি, রংপুর, সিরাজগঞ্জ ও কুড়িগ্রাম) থেকে প্রায় ৪০ জন কৃষক, কৃষাণী এবং কৃষি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ এই সংলাপে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

এছাড়া বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে কৃষিখাতে যতখানি উন্নতি হয়েছে, ততখানি কৃষকের উন্নতি হয়নি। অন্যদিকে উৎপাদনের প্রাক্কলনেও সমস্যা রয়েছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে রক্ষ্যা করাই এই খাতে মূল চ্যালেঞ্জ। আগামী বোরো ধান চাষের পরবর্তী সময়ে খাদ্য পরিস্থিতিকে নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। বর্তমানে চালের বাড়তি দাম যেন উৎপাদকের কাছে পৌঁছাতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে, চালের দাম যেন নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি না করে তা খেয়াল রাখতে হবে। কৃষক, কৃষি খাতের সঙ্গে যুক্ত সব পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি ‘কৃষিপণ্য মূল্য কমিশন’- এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই কমিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি প্রক্ষেপণ এবং স্বল্প-মধ্য মেয়াদি দাম নির্ধারণ করা সহজ হবে। এই কমিশনের মাধ্যমে বাজার সংকেত পাবে, নীতি নির্ধারকরা পদক্ষেপ নিতে পারবে এবং গবেষণাকে কার্যকরভাবে উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে।

আরও খবর
এলপি গ্যাসের দাম ব্যবসায়ীরাই নিয়ন্ত্রণ করবে
করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কমছে
বঙ্গবন্ধুর ১০ জানুয়ারির ভাষণে দেশ পরিচালনার সব দিকনির্দেশনা ছিল প্রধানমন্ত্রী
১৩২টি দেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রায় দিয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বঙ্গবন্ধুর খুনিসহ ৫২ জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল
ট্রাম্পের অপসারণ চান ৫৭ শতাংশ আমেরিকান
দেশে করোনায় একদিনে মৃত্যু ২৫ শনাক্ত ১০৭১
যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটা বস্তুনিষ্ঠ নয়
ইন্দোনেশিয়ায় বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার
পিকে হালদারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও ৪ জনকে দুদকে তলব
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলি নিহত ১
জকিগঞ্জ রহিমপুর খালের পাম্প হাউজ চার বছর ধরে বন্ধ

সোমবার, ১১ জানুয়ারী ২০২১ , ২৭ পৌষ ১৪২৭, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

চালের দাম বৃদ্ধির কারণ মজুদদারি

অটো রাইসমিলগুলোকে আইনের আওতায় আনার আহ্বান

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

বড় অটো রাইসমিলগুলোতে ধান-চাল মজুদের কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারপরও এসব অটো রাইসমিলগুলোকে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। কারণ বর্তমান আইন অনুযায়ী একেকটি মিলে যে পরিমাণ ধান-চাল মজুদ করার কথা বলা হয়েছে, সেই পরিমাণ মজুদ করলেও তাদের কাছে অনেক ধান-চাল মজুদ থাকবে। বিদ্যমান আইনে এই পরিমাণ মজুদ থাকা বৈধ। এজন্য এসব মিলে ধান-চাল মজুদ থাকলেও তাদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। গতকাল এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আয়োজিত ‘চালের দাম বাড়ছে কেন? কার লাভ, কার ক্ষতি’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সংলাপে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. নাজিরুল ইসলাম বলেন, দেশে পর্যাপ্ত ধান-চাল থাকার পরও চালের দাম বাড়ছে। এর প্রধান কারণ, মিলারদের কাছে প্রচুর পরিমাণ মজুদ আছে। সম্প্রতি আমরা গবেষণা করেছি। সেই গবেষণায় মাঠপর্যায়ে দেখা গেছে, এমন কোন মিল পাওয়া যায়নি, যে মিলে এক মাস চলতে পারে এই পরিমাণ ধান মজুদ নেই। সবার কাছেই মজুদ আছে। এই পরিমাণ মজুদের কথা আইনেই বলা হয়েছে। তাই তাদের ধরাও যাচ্ছে না। তাই বড় বড় অটো রাইসমিলের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে অথবা মজুদ আইন সংস্কার করতে হবে।

এসডিজি প্লাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংলাপের সভাপতিত্ব করেন। বাংলাদেশে ধান উৎপাদনের সঠিক প্রাক্কলনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই প্রাক্কলনের উপর ভিত্তি করেই নীতি নির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। সরকারের ধান-চাল মজুদ করার সক্ষমতা কম হওয়ার কারণে বেশিরভাগ সময়ই সরকারের পক্ষে বাজার প্রভাবিত করার সুযোগ থাকে না। এছাড়াও তুলনামূলক ছোট কৃষকের কাছে থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করতে হবে। ছোট ও মাঝারি কৃষকের টিকে থাকার সক্ষমতা কম, তাই তাদের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কৃষি খাতে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন ভর্তুকি ও উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সব সুবিধা কৃষক পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য সরকার বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে। ধান চাষে লাভবান না হওয়ায় ধানের উৎপাদন ক্রমাগত কমছে বলে মনে করেন শাইখ সিরাজ। কৃষি খাতে অনেকে ধান চাষ থেকে উচ্চমূল্যের ফল-ফসলের দিকে ঝুঁকে যাওয়ায় এবং চাষযোগ্য জমি কমে আসায় ধান চাষের ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি গুদামে ছোট কৃষকদের ফসল সংরক্ষণ করার সুযোগ করে দিতে হবে, যেন ফসল উঠার সঙ্গে সঙ্গে কৃষককে অল্প দামে ফসল বিক্রি না করতে হয়।

বাজারে চালের দাম বাড়লেও এই বাড়তি দামের কারণে কৃষক লাভবান হয় না বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআইডিএস)-এর সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. এম আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, কৃষক অনেক আগেই কম দামে ধান বিক্রি করে দেয়। বিআইডিএস সাবেক মহাপরিচালক ড. কাজী শাহাবুদ্দিন বলেন, সরকারের বর্তমানে খাদ্যশস্য মজুত পর্যাপ্ত নয় এবং এটি খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, সরকার প্রকৃত কৃষকের থেকে চাল না কিনে মিলারদের থেকে ক্রয় করছে, তাই কৃষক উপকৃত হচ্ছে না। মিলারদের ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের মজুতদারির কারণে বাজারে চালের অপর্যাপ্ততার কথা তুলে তিনি বলেন, প্রতিবছর বাম্পার ফলনের পরেও চালের দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। সরকারকে স্থানীয় পর্যায়ে ক্রয় কেন্দ্র করে সরাসরি কৃষক থেকে চাল ক্রয় করার পরামর্শ দেন তিনি। বাংলাদেশ অটো রাইসমিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম খোরশেদ আলম খান বলেন, মিলাররা মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকদের থেকে ১,০৫০ টাকায় ধান ক্রয় করেছে। চালের এই বাম্পার ফলনের কথার সঙ্গে দ্বিমত করে তিনি বলেন, এই মৌসুমের শুরু থেকেই সরবরাহ কম ছিল।

বাজারে চালের পর্যাপ্ততা নিয়ে বাংলাদেশ রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ আলম বাবু বলেন, চালের আমদানি শুল্ক কমানো হলেও সঠিক সময়ে এই নীতি গ্রহণ না নেয়ায় সেই পরিমাণ চাল আমদানি করা যায়নি। ধান ও চালের তথ্য বিষয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির উৎপাদনের ভুল প্রাক্কলন নিয়ে সংলাপে উপস্থিত বক্তাদের মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, উৎপাদনের প্রাক্কলন সঠিক ছিল এবং তিনি খাদ্য সংকটের সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন না। সংলাপে ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এবং ড মো. নাজিরুল ইসলাম, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল ও হাওড় অঞ্চলের মোট নয়টি জেলা (গাইবান্ধা, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, সুনামগঞ্জ, মেহেরপুর, নীলফামারি, রংপুর, সিরাজগঞ্জ ও কুড়িগ্রাম) থেকে প্রায় ৪০ জন কৃষক, কৃষাণী এবং কৃষি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ এই সংলাপে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

এছাড়া বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে কৃষিখাতে যতখানি উন্নতি হয়েছে, ততখানি কৃষকের উন্নতি হয়নি। অন্যদিকে উৎপাদনের প্রাক্কলনেও সমস্যা রয়েছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে রক্ষ্যা করাই এই খাতে মূল চ্যালেঞ্জ। আগামী বোরো ধান চাষের পরবর্তী সময়ে খাদ্য পরিস্থিতিকে নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। বর্তমানে চালের বাড়তি দাম যেন উৎপাদকের কাছে পৌঁছাতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে, চালের দাম যেন নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি না করে তা খেয়াল রাখতে হবে। কৃষক, কৃষি খাতের সঙ্গে যুক্ত সব পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি ‘কৃষিপণ্য মূল্য কমিশন’- এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই কমিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি প্রক্ষেপণ এবং স্বল্প-মধ্য মেয়াদি দাম নির্ধারণ করা সহজ হবে। এই কমিশনের মাধ্যমে বাজার সংকেত পাবে, নীতি নির্ধারকরা পদক্ষেপ নিতে পারবে এবং গবেষণাকে কার্যকরভাবে উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে।