ইতালিতে এক পাচারকারী গ্রেপ্তার : রেড এলার্ট ৬ জনের বিরুদ্ধে

লিবিয়ায় মানব পাচারের মামলায় ইতালিতে এক পাচারকারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার নাম জাফর ইকবাল। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের রেড নোটিশপ্রাপ্ত ৬ জনের মধ্যে ২ জনকে আটক করা হয়েছে। এর আগে আরও একজনকে বিমানবন্দর দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

পলাতক অন্য চারজনকে ধরতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির নানামুখী তৎপরতা অব্যাহত আছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল এসব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের কাছে অপরাধীর নানা কৌশলের ছবিসহ অন্যান্য আলামত রয়েছে।

সিআইডির প্রধান কার্যালয়ের ডিআইজি আবদুল্লাহেল বাকী ইতালিতে এক মানব পাচারকারী গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাকে দেশে ফিরে আনার জন্য ইতোমধ্যে সিআইডির তৎপরতা শুরু করা হয়েছে বলে জানান।

সিআইডির একজন কর্মকতা গতকাল সংবাদকে জানান, লিবিয়ার মানব পাচারের ২৫টি মামলা প্রথম থেকে সিআইডি তদন্ত করছে। সিআইডি গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত মানব পাচারকারী চক্রের ১৭১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। চিহ্নিত পাচারকরারী চক্রের পলাতক ৬ সদস্যের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করেন। রেড নোটিশপ্রাপ্তরা হলো- মিন্টু মিয়া, তানজিমুল ওরফে তানজিদ, জাফর ইকবাল, নজরুল ইসলাম, মো. শাহাদাত হোসেন ও স্বপন। তার মধ্যে অভিযুক্ত জাফর ইকবাল ইতালি থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে। গত ১০ জানুয়ারি সিআইডি প্রধান কার্যালয় এ তথ্য জানতে পেরেছে। গতকাল সিআইডির ঊর্ধ্বতন একজন অফিসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর আগে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পার হয়ে পালানোর সময় শাহদাত হোসেন নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সিআইডি সূত্র জানায়, গত বছর ১৮ অক্টোবর বাংলাদেশ পুলিশ ইন্টারপোলের কাছে ৬ মানব পাচারকারীকে গ্রেপ্তারে প্রথম সহায়তা চেয়েছিল। গত বছর ২৭ নভেম্বর ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে। পলাতক ৬ জন মানব পাচারে সংশ্লিষ্টতা থাকায় তাদের বিরুদ্ধে এ রেড নোটিশ জারি করা হয়।

গত বছর ২৬ মে লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার পর সিআইডি, ডিবি, র‌্যাব এবং পিবিআই মিলে ২শ’র বেশি মানব পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৪২ জন মানব পাচারকারী ইতোমধ্যে আদালতে নিজেদের জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তারা মানব পাচারের কাহিনী তুলে ধরেছেন।

২০১৯ সালের মে মাস থেকে বিভিন্ন সময় ৩৮ বাংলাদেশিকে লিবিয়ায় পাচার করেছিল। তাদের ইতালি ও স্পেনে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ার বেনগাজীতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর মুক্তিপণের জন্য ২৬ বাংলাদেশিকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনা নিয়ে মানব পাচারের বিরুদ্ধে ২৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সিআইডি ও ভুক্তভোগীর স্বজনরা এসব মামলা দায়ের করেছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার জয়েন্ট কমিশনার (জেসি) মাহবুব আলম বলেছেন, মানব পাচাররের ঘটনায় ডিবি মোট ১৫ পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছেন। গ্রেপ্তারকৃতরা মানব পাচারে কারা জড়িত তাদের সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছেন। ডিবিতে তদন্ততাধীন ৪টি মামলা তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে। শীঘ্রই আদালতে চার্জশিট দেয়া হবে বলে তিনি জানান। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে।

অন্যদিকে মানব পাচারের শিকার বিদেশ ফেরত জানু মিয়া বলেছেন, তার পেটে গুলির চিহ্ন, পিঠে, হাতে-পায়ে গুলি ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে সে ভারতে যায়। ভারত থেকে দুবাই হয়ে মিসর এবং সেখান থেকে লিবিয়া যান। তাকে প্রথমে লিবিয়ার বেনগাজীতে রাখা হয়। সেখানে তার মতো আরও অনেক বাঙালির দেখা পায়। লিবিয়ায় যাওয়ার পর তাদের পরিবারের কাছে ৪ থেকে ৫ হাজার ডলার করে দাবি করছে। সেখানে দালাল তানজিরুল বেনগাজী থেকে ত্রিপোলি নেয়ার জন্য টাকা দাবি করছে। টাকা দিলে নিরাপদে নেয়া হবে। আর নাহলে পথে পথে বিপদ আছে বলেও ভয় দেখাত। এভাবে তার মতো আরও অনেকেই মানব পাচারকারীদের হাতে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন।

মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী ২০২১ , ২৮ পৌষ ১৪২৭, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

লিবিয়ায় মানব পাচার

ইতালিতে এক পাচারকারী গ্রেপ্তার : রেড এলার্ট ৬ জনের বিরুদ্ধে

বাকী বিল্লাহ ও সাইফ বাবলু

লিবিয়ায় মানব পাচারের মামলায় ইতালিতে এক পাচারকারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার নাম জাফর ইকবাল। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের রেড নোটিশপ্রাপ্ত ৬ জনের মধ্যে ২ জনকে আটক করা হয়েছে। এর আগে আরও একজনকে বিমানবন্দর দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

পলাতক অন্য চারজনকে ধরতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির নানামুখী তৎপরতা অব্যাহত আছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল এসব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের কাছে অপরাধীর নানা কৌশলের ছবিসহ অন্যান্য আলামত রয়েছে।

সিআইডির প্রধান কার্যালয়ের ডিআইজি আবদুল্লাহেল বাকী ইতালিতে এক মানব পাচারকারী গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাকে দেশে ফিরে আনার জন্য ইতোমধ্যে সিআইডির তৎপরতা শুরু করা হয়েছে বলে জানান।

সিআইডির একজন কর্মকতা গতকাল সংবাদকে জানান, লিবিয়ার মানব পাচারের ২৫টি মামলা প্রথম থেকে সিআইডি তদন্ত করছে। সিআইডি গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত মানব পাচারকারী চক্রের ১৭১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। চিহ্নিত পাচারকরারী চক্রের পলাতক ৬ সদস্যের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করেন। রেড নোটিশপ্রাপ্তরা হলো- মিন্টু মিয়া, তানজিমুল ওরফে তানজিদ, জাফর ইকবাল, নজরুল ইসলাম, মো. শাহাদাত হোসেন ও স্বপন। তার মধ্যে অভিযুক্ত জাফর ইকবাল ইতালি থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে। গত ১০ জানুয়ারি সিআইডি প্রধান কার্যালয় এ তথ্য জানতে পেরেছে। গতকাল সিআইডির ঊর্ধ্বতন একজন অফিসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর আগে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পার হয়ে পালানোর সময় শাহদাত হোসেন নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সিআইডি সূত্র জানায়, গত বছর ১৮ অক্টোবর বাংলাদেশ পুলিশ ইন্টারপোলের কাছে ৬ মানব পাচারকারীকে গ্রেপ্তারে প্রথম সহায়তা চেয়েছিল। গত বছর ২৭ নভেম্বর ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে। পলাতক ৬ জন মানব পাচারে সংশ্লিষ্টতা থাকায় তাদের বিরুদ্ধে এ রেড নোটিশ জারি করা হয়।

গত বছর ২৬ মে লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার পর সিআইডি, ডিবি, র‌্যাব এবং পিবিআই মিলে ২শ’র বেশি মানব পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৪২ জন মানব পাচারকারী ইতোমধ্যে আদালতে নিজেদের জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তারা মানব পাচারের কাহিনী তুলে ধরেছেন।

২০১৯ সালের মে মাস থেকে বিভিন্ন সময় ৩৮ বাংলাদেশিকে লিবিয়ায় পাচার করেছিল। তাদের ইতালি ও স্পেনে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ার বেনগাজীতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর মুক্তিপণের জন্য ২৬ বাংলাদেশিকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনা নিয়ে মানব পাচারের বিরুদ্ধে ২৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সিআইডি ও ভুক্তভোগীর স্বজনরা এসব মামলা দায়ের করেছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার জয়েন্ট কমিশনার (জেসি) মাহবুব আলম বলেছেন, মানব পাচাররের ঘটনায় ডিবি মোট ১৫ পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছেন। গ্রেপ্তারকৃতরা মানব পাচারে কারা জড়িত তাদের সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছেন। ডিবিতে তদন্ততাধীন ৪টি মামলা তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে। শীঘ্রই আদালতে চার্জশিট দেয়া হবে বলে তিনি জানান। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে।

অন্যদিকে মানব পাচারের শিকার বিদেশ ফেরত জানু মিয়া বলেছেন, তার পেটে গুলির চিহ্ন, পিঠে, হাতে-পায়ে গুলি ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে সে ভারতে যায়। ভারত থেকে দুবাই হয়ে মিসর এবং সেখান থেকে লিবিয়া যান। তাকে প্রথমে লিবিয়ার বেনগাজীতে রাখা হয়। সেখানে তার মতো আরও অনেক বাঙালির দেখা পায়। লিবিয়ায় যাওয়ার পর তাদের পরিবারের কাছে ৪ থেকে ৫ হাজার ডলার করে দাবি করছে। সেখানে দালাল তানজিরুল বেনগাজী থেকে ত্রিপোলি নেয়ার জন্য টাকা দাবি করছে। টাকা দিলে নিরাপদে নেয়া হবে। আর নাহলে পথে পথে বিপদ আছে বলেও ভয় দেখাত। এভাবে তার মতো আরও অনেকেই মানব পাচারকারীদের হাতে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন।