ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বরূপে ফিরে আসুক প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে একটাই চাওয়া এটি তার পুরনো গৌরব ফিরে পাক। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে আমাদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, বাংলাদেশে সর্বোচ্চ সম্মানজনক বিশ্ববিদ্যালয়, কাজেই আমরা চাই এর পুরনো গৌরব আবারও ফিরে আসুক।

গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালি হিসেবে আমাদের রাজনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকার, মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার এবং আমাদের স্বাধীনতা অর্জন- প্রতিটি সংগ্রামের সূতিকাগার হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সংগ্রাম করেছে প্রতিটি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে, অর্থাৎ পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর যে সামরিক শাসকরা একের পর ক্ষমতা দখল করতে শুরু করে। পঁচাত্তরের পর দেখেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শুধু অস্ত্রের ঝনঝনানি। সেখানে অস্ত্র, বোমাবাজি, মেধাবী ছাত্রদের বিপথে নিয়ে যাওয়া, শিক্ষার মান নষ্ট করে দেয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেটা ছিল প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই পরিবেশ নষ্ট হয়। সেটাই আমরা হতে দেখেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবেই একটা জাতিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল সেই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট, জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে। আমাদের আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সব একে একে ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আবার এর প্রতিবাদও শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই। কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। এই প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, এমনকি ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন যে নির্বাচন বিএনপি করেছিল, খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিল, সেই আন্দোলন যখন শুরু হয়, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিরাট ভূমিকা রেখেছিল। তার ফলে মাত্র দেড় মাসের মধ্যে খালেদা জিয়াকে পদত্যাগ করতে হয়। এরপর নির্বাচন হয় জুন মাসের ১২ তারিখে, তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, দ্বিতীয় হচ্ছে শিক্ষার মান উন্নত করা এবং শিক্ষার পরিবেশ ঠিক করার ওপর গুরুত্ব দেই। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি, জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের মানুষ একটি সুন্দর জীবন পাবে, উন্নত ভবিষ্যৎ পাবে, ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত একটি বাংলাদেশ পাবে। কিন্তু একটি শিক্ষিত জাতি ছাড়া এটি কখনই সম্ভব নয়। তাই শিক্ষাকে আমরা সবসময় গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এটা একান্তভাবে অপরিহার্য। কারণ, বিশ্বের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। তাই বিজ্ঞান-প্রযুক্তি শিক্ষাকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের ছেলেদের প্রথম দুটো কম্পিউটার কিনে দিয়ে বলেছিলাম, তোমরা দ্রুত শুরু করো। এখন শুনলে অবাক লাগবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হতে পেরে তিনি নিজে সত্যিই গর্বিত বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘শুধু আমি নই, আমার পরিবারের সবাই, আমার ছোট ভাই শেখ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। আমার ছোট্ট ভাইটি শেখ রাসেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুলের ছাত্র ছিল। আমার স্বামীও এই বিশ্বিবিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন এবং একটি হলের ভিপিও ছিলেন। এছাড়া আমাদের পরিবারের অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে করোনাভাইরাসে সারাবিশ্ব স্থবির। আমিও ঘরে অনেকটা বন্দী। মাঝে মাঝে মনে হয়, ২০০৭ সালে যখন গ্রেপ্তার হয়েছিলাম, তখন একটা ছোট কারাগারে ছিলাম এখনও মনে হয় বড় কারাগারে আছি। যার কারণে আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত হতে না পারাটা সত্যিই আমার জন্য অনেক কষ্টের, খুব দুঃখের। মনটা পড়ে আছে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে।’

প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘এ পরিস্থিতি থাকবে না। ইতোমধ্যে আমরা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ভারত থেকে উপহার স্বরূপ পেয়েছি, যেটি এসে পৌঁছে গেছে। এজন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আর আমরা যেটা টাকা দিয়ে কিনেছি, সেটা ২৫-২৬ তারিখের মধ্যে এসে পৌঁছাবে। কাজেই কীভাবে ভ্যাকসিন দেয়া হবে সেসব পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছি। অর্থাৎ, করোনা মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাব, সেটাই আমরা আশা করি।’

image
আরও খবর
সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়তে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে সরকারি দল
মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘গণ্ডি’
আরণ্যক নাট্যদলের প্রযোজনা ‘কহে ফেসবুক’
টাকা দিলেই জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস সার্টিফিকেট
চীনের মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে প্রতিমন্ত্রী
পিকে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধা ও মেয়ে অনিন্দিতা রিমান্ডে
ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ ৩ জন গ্রেপ্তার
দেশকে নতজানু রাখার পরিকল্পনা রুখে দিতে হবে মির্জা ফখরুল
অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বাধা
চৌমুহনী পৌর নির্বাচন হত্যার আসামি গ্রেপ্তার

শুক্রবার, ২২ জানুয়ারী ২০২১ , ৮ মাঘ ১৪২৭, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বরূপে ফিরে আসুক প্রধানমন্ত্রী

সংবাদ ডেস্ক

image

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে একটাই চাওয়া এটি তার পুরনো গৌরব ফিরে পাক। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে আমাদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, বাংলাদেশে সর্বোচ্চ সম্মানজনক বিশ্ববিদ্যালয়, কাজেই আমরা চাই এর পুরনো গৌরব আবারও ফিরে আসুক।

গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালি হিসেবে আমাদের রাজনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকার, মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার এবং আমাদের স্বাধীনতা অর্জন- প্রতিটি সংগ্রামের সূতিকাগার হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সংগ্রাম করেছে প্রতিটি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে, অর্থাৎ পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর যে সামরিক শাসকরা একের পর ক্ষমতা দখল করতে শুরু করে। পঁচাত্তরের পর দেখেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শুধু অস্ত্রের ঝনঝনানি। সেখানে অস্ত্র, বোমাবাজি, মেধাবী ছাত্রদের বিপথে নিয়ে যাওয়া, শিক্ষার মান নষ্ট করে দেয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেটা ছিল প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই পরিবেশ নষ্ট হয়। সেটাই আমরা হতে দেখেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবেই একটা জাতিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল সেই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট, জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে। আমাদের আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সব একে একে ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আবার এর প্রতিবাদও শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই। কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। এই প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, এমনকি ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন যে নির্বাচন বিএনপি করেছিল, খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিল, সেই আন্দোলন যখন শুরু হয়, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিরাট ভূমিকা রেখেছিল। তার ফলে মাত্র দেড় মাসের মধ্যে খালেদা জিয়াকে পদত্যাগ করতে হয়। এরপর নির্বাচন হয় জুন মাসের ১২ তারিখে, তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, দ্বিতীয় হচ্ছে শিক্ষার মান উন্নত করা এবং শিক্ষার পরিবেশ ঠিক করার ওপর গুরুত্ব দেই। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি, জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের মানুষ একটি সুন্দর জীবন পাবে, উন্নত ভবিষ্যৎ পাবে, ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত একটি বাংলাদেশ পাবে। কিন্তু একটি শিক্ষিত জাতি ছাড়া এটি কখনই সম্ভব নয়। তাই শিক্ষাকে আমরা সবসময় গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এটা একান্তভাবে অপরিহার্য। কারণ, বিশ্বের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। তাই বিজ্ঞান-প্রযুক্তি শিক্ষাকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের ছেলেদের প্রথম দুটো কম্পিউটার কিনে দিয়ে বলেছিলাম, তোমরা দ্রুত শুরু করো। এখন শুনলে অবাক লাগবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হতে পেরে তিনি নিজে সত্যিই গর্বিত বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘শুধু আমি নই, আমার পরিবারের সবাই, আমার ছোট ভাই শেখ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। আমার ছোট্ট ভাইটি শেখ রাসেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুলের ছাত্র ছিল। আমার স্বামীও এই বিশ্বিবিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন এবং একটি হলের ভিপিও ছিলেন। এছাড়া আমাদের পরিবারের অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে করোনাভাইরাসে সারাবিশ্ব স্থবির। আমিও ঘরে অনেকটা বন্দী। মাঝে মাঝে মনে হয়, ২০০৭ সালে যখন গ্রেপ্তার হয়েছিলাম, তখন একটা ছোট কারাগারে ছিলাম এখনও মনে হয় বড় কারাগারে আছি। যার কারণে আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত হতে না পারাটা সত্যিই আমার জন্য অনেক কষ্টের, খুব দুঃখের। মনটা পড়ে আছে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে।’

প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘এ পরিস্থিতি থাকবে না। ইতোমধ্যে আমরা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ভারত থেকে উপহার স্বরূপ পেয়েছি, যেটি এসে পৌঁছে গেছে। এজন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আর আমরা যেটা টাকা দিয়ে কিনেছি, সেটা ২৫-২৬ তারিখের মধ্যে এসে পৌঁছাবে। কাজেই কীভাবে ভ্যাকসিন দেয়া হবে সেসব পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছি। অর্থাৎ, করোনা মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাব, সেটাই আমরা আশা করি।’