তুলা সংকট

দক্ষিণাঞ্চলের সব টেক্সটাইল মিল বন্ধ

হাজার হাজার শ্রমিক পরিবার চরম দুর্দশায়

তুলা সংকটসহ বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে দক্ষিণাঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি প্রায় সবগুলো টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে হাজার হাজার শ্রমিক পরিবারে চরম দুর্দশা নেমে এসেছে। অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে এসব পরিবারগুলো। কোন কোন মিল শ্রমিকরা বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম করছেন। মহাসড়ক অবরোধ করছেন। কিন্তু ফলাফল শূন্য। গত প্রায় বছর খানেক ধরে ভারত তুলা রপ্তানি বন্ধ রাখায় সুতা উৎপাদনকারী এসব টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে গেছে। মিল মালিকদের মতে, একটি টেক্সটাইল মিলের মূল কাঁচামাল তুলা।

ইতিপূর্বে ভারত ছিল বাংলাদেশে তুলার প্রধান যোগানদাতা। কিন্তু করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর ভারত বাংলাদেশে তুলা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের অধিকাংশ স্পিনিং মিল ও টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানে অর্থ লগ্নিকরী সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোও তাদের পাওনা আদায় করতে পারছে না।

দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম বরিশালের বিসিক শিল্প নগরীতে প্রথমে সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরে সরকার মিলটি বিক্রি করে দিলে এটি খান অ্যান্ড সন্স গ্রুপ কিনে নেয়। প্রায় ২৫ হাজার টাকুর ফাইভ-আর টেক্সটাইল মিলটি বন্ধ বিগত বছরাধিক ধরে। তুলা সংকটের সঙ্গে বিদ্যুতের অধিক মূল্যে সুতার উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তা বিক্রি করে পুঁজি ফেরত না আসায় ২০১৯ সালের শেষভাগে এই মিলটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে এখানকার প্রায় হাজারখানেক শ্রমিক সম্পূর্ণ বেকার হয়ে পড়েছেন। অদূর ভবিষ্যতেও মিলটি চালু হওয়ার কোন সম্ভাবনার কথা বলতে পারেননি মিল মালিক কর্তৃপক্ষ।

একই মালিকপক্ষের রূপাতলী এলাকার সোনারগাঁও টেক্সটাইল মিলটিও বন্ধ হয়ে গেছে করোনা সংকটের মুখে গত মার্চের শেষ ভাগে। প্রায় ৩৭ হাজার টাকুর এ মিলটিতে শ্রমিকের সংখা প্রায় ১২শ’। গত মার্চ পর্যন্ত বেতন-ভাতা পরিশোধ করে মিলটি বন্ধ করে দেয় মালিক কর্তৃপক্ষ। এ ব্যপারে গতকাল সোনারগাঁও টেক্সটাইল মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, একটি টেক্সটাইল মিলের প্রধান কাঁচামাল তুলার প্রধান যোগানদাতা ভারত করোনা সংকট শুরুর পনের দিন আগে থেকেই তুলা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ইচ্ছে থাকলেও কোন অবস্থাতেই টেক্সটাইল মিলগুলো সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

বরিশালের এদুটি মিল ছাড়াও মাদারীপুরের একমাত্র টেক্সটাইল ও স্পিনিং মিলটি বন্ধ রয়েছে প্রায় দু’বছর যাবত। বিটিএমসির মালিকানাধীন এ মিলটি ইতিপূর্বে বেবসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হলেও সরকারি পাওনা টাকা পরিশোধ না করায় বছর দুয়েক আগে বিটিএমসি পুনরায় মিলটির দায়িত্ব গ্রহণ করলেও তা আর চালু করেনি উৎপাদন ব্যয় উঠে না আসার আশঙ্কায়। ফলে এখানেও প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক ও আরও প্রায় ৫শ’ বিভিন্ন স্তরের কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছে। এমনকি মিলটি চালু করারও কোন উদ্যোগ নেই বিটিএমসির। ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় বেসরকারি খাতে স্থাপিত ফরিদপুর স্পিনিং মিলটিও বন্ধ আরও কয়েক বছর আগ থেকে। এছাড়া ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানে ছোট ও মাঝারি আরও কয়েকটি সুতা উৎপাদনকারী স্পিনিং মিল বন্ধ হয়ে গেছে।

মূলত গত এক দশকে বিদ্যুতের দাম প্রায় দেড়গুণ বৃদ্ধির পাশাপাশি করোনা সংকট শুরুর পর থেকে ভারত তুলা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো টেক্সটাইল ও স্পিনিং মিল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ইতিপূর্বে দেশীয় কাপড় কলগুলো স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুতার সাহায্যে উৎপাদন অব্যাহত রাখলেও এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে আমদানিকৃত সুতার ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে দেশীয় বস্ত্র শিল্প। পাশাপাশি দেশীয় স্পিনিং মিলগুলো বন্ধের কারণে বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার শ্রমিক। এসব শ্রমিক পরিবারগুলোতে দুর্দশা বর্ণনাতীত।

এ পরিস্থিতি উত্তরণে দেশীয় তুলা উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানির বিকল্প উৎস সন্ধানের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ মহল। পাশাপাশি এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বিদ্যুতের মূল্য যুক্তিসংগত পর্যায়ে নির্ধারণেরও দাবি করেছেন।

রবিবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২১ , ১০ মাঘ ১৪২৭, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪২

তুলা সংকট

দক্ষিণাঞ্চলের সব টেক্সটাইল মিল বন্ধ

হাজার হাজার শ্রমিক পরিবার চরম দুর্দশায়

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল

image

তুলা সংকটসহ বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে দক্ষিণাঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি প্রায় সবগুলো টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে হাজার হাজার শ্রমিক পরিবারে চরম দুর্দশা নেমে এসেছে। অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে এসব পরিবারগুলো। কোন কোন মিল শ্রমিকরা বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম করছেন। মহাসড়ক অবরোধ করছেন। কিন্তু ফলাফল শূন্য। গত প্রায় বছর খানেক ধরে ভারত তুলা রপ্তানি বন্ধ রাখায় সুতা উৎপাদনকারী এসব টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে গেছে। মিল মালিকদের মতে, একটি টেক্সটাইল মিলের মূল কাঁচামাল তুলা।

ইতিপূর্বে ভারত ছিল বাংলাদেশে তুলার প্রধান যোগানদাতা। কিন্তু করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর ভারত বাংলাদেশে তুলা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের অধিকাংশ স্পিনিং মিল ও টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানে অর্থ লগ্নিকরী সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোও তাদের পাওনা আদায় করতে পারছে না।

দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম বরিশালের বিসিক শিল্প নগরীতে প্রথমে সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরে সরকার মিলটি বিক্রি করে দিলে এটি খান অ্যান্ড সন্স গ্রুপ কিনে নেয়। প্রায় ২৫ হাজার টাকুর ফাইভ-আর টেক্সটাইল মিলটি বন্ধ বিগত বছরাধিক ধরে। তুলা সংকটের সঙ্গে বিদ্যুতের অধিক মূল্যে সুতার উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তা বিক্রি করে পুঁজি ফেরত না আসায় ২০১৯ সালের শেষভাগে এই মিলটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে এখানকার প্রায় হাজারখানেক শ্রমিক সম্পূর্ণ বেকার হয়ে পড়েছেন। অদূর ভবিষ্যতেও মিলটি চালু হওয়ার কোন সম্ভাবনার কথা বলতে পারেননি মিল মালিক কর্তৃপক্ষ।

একই মালিকপক্ষের রূপাতলী এলাকার সোনারগাঁও টেক্সটাইল মিলটিও বন্ধ হয়ে গেছে করোনা সংকটের মুখে গত মার্চের শেষ ভাগে। প্রায় ৩৭ হাজার টাকুর এ মিলটিতে শ্রমিকের সংখা প্রায় ১২শ’। গত মার্চ পর্যন্ত বেতন-ভাতা পরিশোধ করে মিলটি বন্ধ করে দেয় মালিক কর্তৃপক্ষ। এ ব্যপারে গতকাল সোনারগাঁও টেক্সটাইল মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, একটি টেক্সটাইল মিলের প্রধান কাঁচামাল তুলার প্রধান যোগানদাতা ভারত করোনা সংকট শুরুর পনের দিন আগে থেকেই তুলা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ইচ্ছে থাকলেও কোন অবস্থাতেই টেক্সটাইল মিলগুলো সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

বরিশালের এদুটি মিল ছাড়াও মাদারীপুরের একমাত্র টেক্সটাইল ও স্পিনিং মিলটি বন্ধ রয়েছে প্রায় দু’বছর যাবত। বিটিএমসির মালিকানাধীন এ মিলটি ইতিপূর্বে বেবসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হলেও সরকারি পাওনা টাকা পরিশোধ না করায় বছর দুয়েক আগে বিটিএমসি পুনরায় মিলটির দায়িত্ব গ্রহণ করলেও তা আর চালু করেনি উৎপাদন ব্যয় উঠে না আসার আশঙ্কায়। ফলে এখানেও প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক ও আরও প্রায় ৫শ’ বিভিন্ন স্তরের কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছে। এমনকি মিলটি চালু করারও কোন উদ্যোগ নেই বিটিএমসির। ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় বেসরকারি খাতে স্থাপিত ফরিদপুর স্পিনিং মিলটিও বন্ধ আরও কয়েক বছর আগ থেকে। এছাড়া ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানে ছোট ও মাঝারি আরও কয়েকটি সুতা উৎপাদনকারী স্পিনিং মিল বন্ধ হয়ে গেছে।

মূলত গত এক দশকে বিদ্যুতের দাম প্রায় দেড়গুণ বৃদ্ধির পাশাপাশি করোনা সংকট শুরুর পর থেকে ভারত তুলা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো টেক্সটাইল ও স্পিনিং মিল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ইতিপূর্বে দেশীয় কাপড় কলগুলো স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুতার সাহায্যে উৎপাদন অব্যাহত রাখলেও এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে আমদানিকৃত সুতার ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে দেশীয় বস্ত্র শিল্প। পাশাপাশি দেশীয় স্পিনিং মিলগুলো বন্ধের কারণে বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার শ্রমিক। এসব শ্রমিক পরিবারগুলোতে দুর্দশা বর্ণনাতীত।

এ পরিস্থিতি উত্তরণে দেশীয় তুলা উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানির বিকল্প উৎস সন্ধানের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ মহল। পাশাপাশি এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বিদ্যুতের মূল্য যুক্তিসংগত পর্যায়ে নির্ধারণেরও দাবি করেছেন।