করোনার মধ্যে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১০ শতাংশ

চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল তা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে গতকাল দুপুর ২টায় এনবিআর সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

চলতি বছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন এসে গেছে। সহসাই এটি দেয়া শুরু হবে। মানুষের করোনা ভীতি দূর হবে। করোনার প্রকোপ কমে আসবে। দেশ স্বাভাবিক অর্থনীতিতে ফিরে আসবে। আমাদের যে টার্গেট, সেটা অর্জন করার পথে অনেক দূর অগ্রসর হব। গত অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রাজস্ব আহরণ ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথমার্ধে প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১০ শতাংশ।

তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি, করোনাকালীন কাস্টমস, ভ্যাট ও ইনকাম ট্যাক্স- এই তিন বিভাগের কর্মচারীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন রাজস্ব আদায়ে। গত বছর এই সময়ে করোনা ছিল না। কিন্তু করোনার প্রভাব আসেনি। অর্থনীতি স্বাভাবিক ছিল। করোনাকালীন স্থবির অর্থনীতির সময়ে এই অর্জন তিন বিভাগের কর্মচারীদের পরিশ্রমের ফসল।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২১ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আদায় হয়েছে ৩০ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, আজ পালিত হবে ‘আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস ২০২১’। বৈশ্বিক মহামারীর কারণে এবারে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস কিছুটা স্বল্প পরিসরে পালিত হবে। সে কারণে এবারের র?্যালি করা হচ্ছে না। তবে দিবসটি উপলক্ষে আজ একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইন প্লাটফর্মে উপস্থিত থাকবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।

উল্লেখ্য, তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে করোনার মধ্যে রাজস্ব ঘাটতি বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে আমদানি-রপ্তানি (কাস্টমস) খাতে। নভেম্বর পর্যন্ত এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার ২৬১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ৭১৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এতে ঘাটতি হয়েছে ১০ হাজার ৫৪৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আহরণ কম হলেও গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আহরণ বেড়েছে এক হাজার ৬২৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কাস্টমস খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ।

রাজস্ব আহরণে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘাটতি রয়েছে ভ্যাট (মূসক) খাতে। এ খাতে নভেম্বর পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৪৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ হাজার ৫২৮ কোটি ৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি রয়েছে ৯ হাজার ৮২ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

আর গত অর্থবছরের তুলনায় একই সময়ে মাত্র ১১ কোটি ৬১ লাখ বেশি ভ্যাট আদায় হয়েছে। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। রাজস্ব ঘাটতি সবচেয়ে কম হয়েছে আয়কর খাতে। নভেম্বর পর্যন্ত এ খাতে ৩২ হাজার ১৬৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২৫ হাজার ৯৩৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬ হাজার ২৩৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা কম। তবে এটি গত অর্থবছরের চেয়ে এক হাজার ৪৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা বেশি। আর এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ।

মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২১ , ১২ মাঘ ১৪২৭, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪২

করোনার মধ্যে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১০ শতাংশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল তা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে গতকাল দুপুর ২টায় এনবিআর সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

চলতি বছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন এসে গেছে। সহসাই এটি দেয়া শুরু হবে। মানুষের করোনা ভীতি দূর হবে। করোনার প্রকোপ কমে আসবে। দেশ স্বাভাবিক অর্থনীতিতে ফিরে আসবে। আমাদের যে টার্গেট, সেটা অর্জন করার পথে অনেক দূর অগ্রসর হব। গত অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রাজস্ব আহরণ ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথমার্ধে প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১০ শতাংশ।

তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি, করোনাকালীন কাস্টমস, ভ্যাট ও ইনকাম ট্যাক্স- এই তিন বিভাগের কর্মচারীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন রাজস্ব আদায়ে। গত বছর এই সময়ে করোনা ছিল না। কিন্তু করোনার প্রভাব আসেনি। অর্থনীতি স্বাভাবিক ছিল। করোনাকালীন স্থবির অর্থনীতির সময়ে এই অর্জন তিন বিভাগের কর্মচারীদের পরিশ্রমের ফসল।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২১ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আদায় হয়েছে ৩০ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, আজ পালিত হবে ‘আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস ২০২১’। বৈশ্বিক মহামারীর কারণে এবারে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস কিছুটা স্বল্প পরিসরে পালিত হবে। সে কারণে এবারের র?্যালি করা হচ্ছে না। তবে দিবসটি উপলক্ষে আজ একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইন প্লাটফর্মে উপস্থিত থাকবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।

উল্লেখ্য, তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে করোনার মধ্যে রাজস্ব ঘাটতি বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে আমদানি-রপ্তানি (কাস্টমস) খাতে। নভেম্বর পর্যন্ত এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার ২৬১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ৭১৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এতে ঘাটতি হয়েছে ১০ হাজার ৫৪৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আহরণ কম হলেও গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আহরণ বেড়েছে এক হাজার ৬২৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কাস্টমস খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ।

রাজস্ব আহরণে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘাটতি রয়েছে ভ্যাট (মূসক) খাতে। এ খাতে নভেম্বর পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৪৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ হাজার ৫২৮ কোটি ৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি রয়েছে ৯ হাজার ৮২ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

আর গত অর্থবছরের তুলনায় একই সময়ে মাত্র ১১ কোটি ৬১ লাখ বেশি ভ্যাট আদায় হয়েছে। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। রাজস্ব ঘাটতি সবচেয়ে কম হয়েছে আয়কর খাতে। নভেম্বর পর্যন্ত এ খাতে ৩২ হাজার ১৬৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২৫ হাজার ৯৩৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬ হাজার ২৩৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা কম। তবে এটি গত অর্থবছরের চেয়ে এক হাজার ৪৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা বেশি। আর এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ।