চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন

আজ ভোট : কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

৪১৭টি কেন্দ্র থাকবে বিশেষ নজরদারিতে

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে আজ ভোটগ্রহণ। এই নির্বাচনে গত ৮ জানুয়ারি প্রচারণা শুরুর প্রথম দিক থেকে কোন প্রার্থী কোন মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আর তাদের প্রতিশ্রুতির কথা ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে ভাটারদের কাছে। এবার শুধু অপেক্ষার পালা। কে হচ্ছেন বিজয়ী। ভোটারদের মাঝেও কৌতুহল দেখা গেছে। নির্বাচনে প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী এবং বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেনসহ ৭ মেয়র প্রার্থী এবং ২২৫ জন (সাধারণ ও সংরক্ষিত) কাউন্সিলর প্রার্র্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শান্তিপূর্ণ ভোটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৪১৭টি কেন্দ্রে থাকবে বিশেষ নজরদারি।

সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে এবং ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন সেজন্য ইসি সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে যা যা করা দরকার, ইসি তাই করবে। তবে শঙ্কা যে নেই, তা নয়। কিন্তু শঙ্কার ভাবনা থেকে আমরা অতিরিক্ত সতর্ক রয়েছি। নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মাঠে রয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে তাদের সব ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে এই নির্বাচনে পুরো নগরীতে উৎসবের আমেজ বয়ে চলেছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে এ পর্যন্ত কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও কর্মকর্তারা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী। নির্বাচনে বিভিন্ন দল অংশ নিলেও মেয়র পদে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে। দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় দু’দলই এটিকে তাদের প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবে দেখছে। এছাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহীদের মাঠে রেখেই ভোট করছে আওয়ামী লীগ। শুরু থেকেই দলের প্রার্থীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পরও তাদের দল থেকে বহিষ্কার হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও তারা সরে দাঁড়ায়নি।

আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রার্থী দু’জনই জয় প্রত্যাশা করছেন।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নির্বাচিত হলে নগরবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই- হোল্ডিং ট্যাক্স অসহনীয় পর্যায়ে বাড়ানো হবে না। সহনীয় পর্যায়ে রাখা হবে। করোনাভাইরাসে আমরা অনেকে আক্রান্ত হয়েছি। এই মহামারী নিয়ে ছয় মাস ধরে কাজ করেছি। আমি উপলব্ধি করেছি বিপদ বলে-কয়ে আসে না। নির্বাচিত হলে নগরবাসী যাতে স্বাস্থ্যসেবা পায় তার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তুলব। যাতে নগরবাসী বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পায়। নগরবাসী আরও নানা সমস্যায় রয়েছে। মানুষ একটু শান্তিতে থাকতে চায়।

এদিকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও পেশিশক্তিবিহীন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রামের মাটি সব সময় আন্দোলন-সংগ্রামের ঘাঁটি। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন যদি চসিক নির্বাচন নিয়ে কোন ধরনের ষড়যন্ত্রের পাঁয়তারা করে, তাহলে চট্টগ্রামের মানুষ পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য আপনারা একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, প্রতিযোগিতামূলক, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচন দিন।

চট্টগ্রামের মানুষকে ভোট দেয়ার সুযোগ দিন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার জন্য মানুষ যেভাবে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, ঠিক সেভাবে সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার সংগ্রামে আপনারা ঝাঁপিয়ে পড়বেন। এই ভোটযুদ্ধ বাঁচার লড়াই। স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখা, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, স্বাধীনভাবে কথা বলার লড়াই। এই যুদ্ধে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রতীক ধানের শীষে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। এই লড়াইয়ে জিততে হবে। রক্তের শেষবিন্দু দিয়ে হলেও ভোটাধিকার রক্ষার লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

ভোটকেন্দ্র ও ভোটারের সংখ্যা

চসিক নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ৭৩৫টি কেন্দ্রে এবং ৪ হাজার ৮৮৬টি বুথে। এরমধ্যে অস্থায়ী ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ২টি, অস্থায়ী বুথের সংখ্যা ৭৬৪টি। মোট ভোটার ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এরমধ্যে নারী ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন এবং পুরুষ ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন। ভোটগ্রহণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৭৩৫ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ৪ হাজার ৮৮৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং ৯ হাজার ৭৭২ জন পোলিং কর্মকর্তা। ভোটগ্রহণ হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকবেন ২৫ প্লাটুন (৭৫০ জন) বিজিবি, ৪৯২ জন র‌্যাব, ৪ হাজার ৩০৮ জন পুলিশ এবং ৮ হাজার ৮২০ জন আনসার সদস্য। গত সোমবার থেকে ভোটের পরে চারদিন দায়িত্ব পালন করবেন তারা।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা

পাশাপাশি মাঠে রয়েছে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। এবারের নির্বাচনে সব বাহিনী মিলে মোট ১৪ হাজার ৩৭০ জন সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। মোবাইল টিম থাকবে ৪১০টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে ১৪০টি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ৭৬ জন। প্রতি ওয়ার্ডে ১ জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া বিজিবির প্রতি প্লাটুনে ১ জন করে এবং র‌্যাবের সঙ্গে ৩ জন দায়িত্ব পালন করবেন।

নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি দায়িত্ব পালন করবে। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৬ জন করে এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, বিজিবি ও র‌্যাব। ইভিএমের কারিগরি সহায়তায় প্রতি ভোটকেন্দ্রে সশস্ত্র বাহিনীর দু’জন করে সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।

ইভিএমে ভোট

এবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব কেন্দ্রে (৭৩৫টি) ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে। এর আগে গত সোমবার ৭৩৫টি কেন্দ্রে অনুশীলনমূলক (মক) ভোট সম্পন্ন হয়। ভোটাররা ইভিএমে কিভাবে ভোট দেবেন- সেই পদ্ধতি ভোটারদের আগে জানিয়ে দেয়ার জন্য অনুশীলনমূলক (মক) ভোটের আয়োজন করা হয়েছিল। ভোটাররা সরেজমিন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে কিভাবে ভোট দেবেন এবং তিনি যেই জায়গায় ভোট দিচ্ছেন তা ঠিকমতো দিচ্ছেন কিনা সব জেনেছেন এই মক ভোটিংয়ের সময়।

জানা গেছে, নির্বাচনে প্রায় ৫৭ শতাংশ কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নগরীর বাইরে হাটহাজারী থানা এলাকার একটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে সেই কেন্দ্রকেও ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা পুলিশ। আর নগরীর ৭২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪১০টি কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ৩১৩টি ভোটকেন্দ্রকে ‘সাধারণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নগর পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রেখে নির্বাচন সম্পন্ন করতে নয় হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। এর বাইরে থাকবে আনসার বাহিনীর সদস্য। নির্বাচনে দায়িত্বপালনে পুলিশ সদস্যরা এসেছে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে। তাদের অন্তত চারদিন অবস্থান করতে হবে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য রাখতে নগর পুলিশের চার জোনে সুবিধাজনক স্থানে চাহিদা অনুযায়ী কমিউনিটি সেন্টার নির্ধারণ করা হয়েছে।

৪১৭টি কেন্দ্রে

থাকবে বিশেষ নজরদারি : সিএমপি কমিশনার

বহিরাগত এসে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে বলেছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নগরের বিভিন্ন এলাকায় আমরা চেকপোস্ট করেছি। এর ফলাফল আমরা পেয়েছি। চেকপোস্টের কারণে বলার মতো তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি জানান।

গতকাল দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর।

সিএমপি কমিশনার বলেন, নির্বাচনে মোট ১৮ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কাজ করবেন। তার মধ্যে প্রায় ৯ হাজার পুলিশ সদস্য। এছাড়া বিজিবিও কাজ করছে। আমাদের সদস্যরা ইতোমধ্যে কেন্দ্রে চলে গেছেন। প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোট ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৪১৭টি ভোটকেন্দ্রকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। এসব কেন্দ্রে থাকবে বিশেষ নজরদারি।

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) এসএম মোস্তাক আহমদ খান, উপকমিশনার (সদর) আমির জাফর, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক।

সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমরা যেরকম আশঙ্কা করেছিলাম তা রুখতে পেরেছি। আমরা জানিয়ে দিতে চাই, যাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকবে তাদের জন্য উৎসবমুখর হবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। কিন্তু যাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকবে না তাদের জন্য মানে বহিরাগতদের জন্য দ্বার বন্ধ।

কোন বহিরাগত এসে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন সরকারি কর্মদিবস রয়েছে। অনেকে কর্মস্থলে যাবেন। তাদেরও জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার জন্য বলা হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে যারা আসবেন তারাও জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে আসবেন। আমরা বহিরাগত ঠেকাতে চাই।

সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক মিটিং করেছি। বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সভা করেছি। আমরা যে ঝুঁকিটা এসেস করেছি তা মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী, নির্বাচনের দিন থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা কোন মিছিল, সমাবেশ বা বিজয় মিছিলের সুযোগ নেই। যারাই জয়ী হোক, কোনপ্রকার বিজয় মিছিল করা যাবে না। তিনি বলেন, আমরা ডানেও তাকাব না, বামেও তাকাব না। যেই আইনশৃঙ্খলার জন্য থ্রেট হয়ে দাঁড়াবে তাকে কঠোরভাবে দমন করব। এক প্রশ্নের জবাবে সিএমপি কমিশনার বলেন, বিএনপি তাদের নেতাকর্মীদের আটকের বিষয়ে যে অভিযোগ করছেন তা মোটেও সঠিক নয়। আমরা নিয়মিত পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনা করছি। যারা আটক হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি, তারা কোন না কোন মামলা বা ওয়ারেন্টের আসামি।

আলকরণ ওয়ার্ডে ভোট হচ্ছে না

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিমের মৃত্যুতে স্থগিত হওয়া আলকরণ ৩১নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। গত ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা যায়।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২ ফেব্রুয়ারি। রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক মনোয়নপত্র বাছাই হবে ৪ ফেব্রুয়ারি। এ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি প্রার্র্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে গত ২০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. হাসানুজ্জামান এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিলেন, চসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিমের মৃত্যুতে আলকরণ ৩১নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর নির্বাচন স্থগিতের কথা।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ওয়ার্ডের ঘুড়ি মার্কার প্রতিদ্বন্দ্বী তারেক সোলেমান সেলিমের গত ১৮ তারিখ মৃত্যু হয়। নির্বাচন বিধিমালা ২০১০-এর বিধি ২০ অনুযায়ী ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ আসনের কাউন্সিলর নির্বাচনের সব কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করা হয়।

রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ

বিএনপির ৫৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী। সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির ৫৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করে অভিযোগ দিয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। গতকাল দুপুর ২টার দিকে অভিযোগ দেয়ার পর সাংবাদিকদের ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, নির্বাচনের একদিন আগে ৫৬ জন নির্বাচনী এজেন্টকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যেহেতু এজেন্টরা নির্বাচনের একটি অংশ। তাই নির্বাচনী এজেন্টদের ছাড়িয়ে আনতে কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছি। আর যদি কমিশন এতে বিফল হয় তাহলে তাদের ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরে আসা উচিত।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, বিএনপি তাদের নেতাকর্মীদের আটকের বিষয়ে যে অভিযোগ করছেন তা মোটেও সঠিক নয়। আমরা নিয়মিত পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনা করছি। যারা আটক হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি, তারা কোন না কোন মামলা বা ওয়ারেন্টের আসামি বলে তিনি জানান।

বুধবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২১ , ১৩ মাঘ ১৪২৭, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪২

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন

আজ ভোট : কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

৪১৭টি কেন্দ্র থাকবে বিশেষ নজরদারিতে

নিরুপম দাশগুপ্ত ,চট্টগ্রাম

image

চট্টগ্রাম : সিটি নির্বাচনে আজ ভোট। নিরাপত্তায় সোমবার রাত থেকে নগরীতে বিজিবি টহল -সংবাদ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে আজ ভোটগ্রহণ। এই নির্বাচনে গত ৮ জানুয়ারি প্রচারণা শুরুর প্রথম দিক থেকে কোন প্রার্থী কোন মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আর তাদের প্রতিশ্রুতির কথা ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে ভাটারদের কাছে। এবার শুধু অপেক্ষার পালা। কে হচ্ছেন বিজয়ী। ভোটারদের মাঝেও কৌতুহল দেখা গেছে। নির্বাচনে প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী এবং বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেনসহ ৭ মেয়র প্রার্থী এবং ২২৫ জন (সাধারণ ও সংরক্ষিত) কাউন্সিলর প্রার্র্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শান্তিপূর্ণ ভোটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৪১৭টি কেন্দ্রে থাকবে বিশেষ নজরদারি।

সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে এবং ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন সেজন্য ইসি সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে যা যা করা দরকার, ইসি তাই করবে। তবে শঙ্কা যে নেই, তা নয়। কিন্তু শঙ্কার ভাবনা থেকে আমরা অতিরিক্ত সতর্ক রয়েছি। নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মাঠে রয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে তাদের সব ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে এই নির্বাচনে পুরো নগরীতে উৎসবের আমেজ বয়ে চলেছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে এ পর্যন্ত কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও কর্মকর্তারা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী। নির্বাচনে বিভিন্ন দল অংশ নিলেও মেয়র পদে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে। দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় দু’দলই এটিকে তাদের প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবে দেখছে। এছাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহীদের মাঠে রেখেই ভোট করছে আওয়ামী লীগ। শুরু থেকেই দলের প্রার্থীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পরও তাদের দল থেকে বহিষ্কার হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও তারা সরে দাঁড়ায়নি।

আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রার্থী দু’জনই জয় প্রত্যাশা করছেন।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নির্বাচিত হলে নগরবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই- হোল্ডিং ট্যাক্স অসহনীয় পর্যায়ে বাড়ানো হবে না। সহনীয় পর্যায়ে রাখা হবে। করোনাভাইরাসে আমরা অনেকে আক্রান্ত হয়েছি। এই মহামারী নিয়ে ছয় মাস ধরে কাজ করেছি। আমি উপলব্ধি করেছি বিপদ বলে-কয়ে আসে না। নির্বাচিত হলে নগরবাসী যাতে স্বাস্থ্যসেবা পায় তার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তুলব। যাতে নগরবাসী বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পায়। নগরবাসী আরও নানা সমস্যায় রয়েছে। মানুষ একটু শান্তিতে থাকতে চায়।

এদিকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও পেশিশক্তিবিহীন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রামের মাটি সব সময় আন্দোলন-সংগ্রামের ঘাঁটি। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন যদি চসিক নির্বাচন নিয়ে কোন ধরনের ষড়যন্ত্রের পাঁয়তারা করে, তাহলে চট্টগ্রামের মানুষ পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য আপনারা একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, প্রতিযোগিতামূলক, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচন দিন।

চট্টগ্রামের মানুষকে ভোট দেয়ার সুযোগ দিন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার জন্য মানুষ যেভাবে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, ঠিক সেভাবে সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার সংগ্রামে আপনারা ঝাঁপিয়ে পড়বেন। এই ভোটযুদ্ধ বাঁচার লড়াই। স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখা, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, স্বাধীনভাবে কথা বলার লড়াই। এই যুদ্ধে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রতীক ধানের শীষে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। এই লড়াইয়ে জিততে হবে। রক্তের শেষবিন্দু দিয়ে হলেও ভোটাধিকার রক্ষার লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

ভোটকেন্দ্র ও ভোটারের সংখ্যা

চসিক নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ৭৩৫টি কেন্দ্রে এবং ৪ হাজার ৮৮৬টি বুথে। এরমধ্যে অস্থায়ী ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ২টি, অস্থায়ী বুথের সংখ্যা ৭৬৪টি। মোট ভোটার ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এরমধ্যে নারী ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন এবং পুরুষ ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন। ভোটগ্রহণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৭৩৫ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ৪ হাজার ৮৮৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং ৯ হাজার ৭৭২ জন পোলিং কর্মকর্তা। ভোটগ্রহণ হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকবেন ২৫ প্লাটুন (৭৫০ জন) বিজিবি, ৪৯২ জন র‌্যাব, ৪ হাজার ৩০৮ জন পুলিশ এবং ৮ হাজার ৮২০ জন আনসার সদস্য। গত সোমবার থেকে ভোটের পরে চারদিন দায়িত্ব পালন করবেন তারা।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা

পাশাপাশি মাঠে রয়েছে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। এবারের নির্বাচনে সব বাহিনী মিলে মোট ১৪ হাজার ৩৭০ জন সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। মোবাইল টিম থাকবে ৪১০টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে ১৪০টি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ৭৬ জন। প্রতি ওয়ার্ডে ১ জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া বিজিবির প্রতি প্লাটুনে ১ জন করে এবং র‌্যাবের সঙ্গে ৩ জন দায়িত্ব পালন করবেন।

নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি দায়িত্ব পালন করবে। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৬ জন করে এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, বিজিবি ও র‌্যাব। ইভিএমের কারিগরি সহায়তায় প্রতি ভোটকেন্দ্রে সশস্ত্র বাহিনীর দু’জন করে সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।

ইভিএমে ভোট

এবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব কেন্দ্রে (৭৩৫টি) ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে। এর আগে গত সোমবার ৭৩৫টি কেন্দ্রে অনুশীলনমূলক (মক) ভোট সম্পন্ন হয়। ভোটাররা ইভিএমে কিভাবে ভোট দেবেন- সেই পদ্ধতি ভোটারদের আগে জানিয়ে দেয়ার জন্য অনুশীলনমূলক (মক) ভোটের আয়োজন করা হয়েছিল। ভোটাররা সরেজমিন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে কিভাবে ভোট দেবেন এবং তিনি যেই জায়গায় ভোট দিচ্ছেন তা ঠিকমতো দিচ্ছেন কিনা সব জেনেছেন এই মক ভোটিংয়ের সময়।

জানা গেছে, নির্বাচনে প্রায় ৫৭ শতাংশ কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নগরীর বাইরে হাটহাজারী থানা এলাকার একটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে সেই কেন্দ্রকেও ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা পুলিশ। আর নগরীর ৭২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪১০টি কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ৩১৩টি ভোটকেন্দ্রকে ‘সাধারণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নগর পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রেখে নির্বাচন সম্পন্ন করতে নয় হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। এর বাইরে থাকবে আনসার বাহিনীর সদস্য। নির্বাচনে দায়িত্বপালনে পুলিশ সদস্যরা এসেছে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে। তাদের অন্তত চারদিন অবস্থান করতে হবে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য রাখতে নগর পুলিশের চার জোনে সুবিধাজনক স্থানে চাহিদা অনুযায়ী কমিউনিটি সেন্টার নির্ধারণ করা হয়েছে।

৪১৭টি কেন্দ্রে

থাকবে বিশেষ নজরদারি : সিএমপি কমিশনার

বহিরাগত এসে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে বলেছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নগরের বিভিন্ন এলাকায় আমরা চেকপোস্ট করেছি। এর ফলাফল আমরা পেয়েছি। চেকপোস্টের কারণে বলার মতো তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি জানান।

গতকাল দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর।

সিএমপি কমিশনার বলেন, নির্বাচনে মোট ১৮ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কাজ করবেন। তার মধ্যে প্রায় ৯ হাজার পুলিশ সদস্য। এছাড়া বিজিবিও কাজ করছে। আমাদের সদস্যরা ইতোমধ্যে কেন্দ্রে চলে গেছেন। প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোট ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৪১৭টি ভোটকেন্দ্রকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। এসব কেন্দ্রে থাকবে বিশেষ নজরদারি।

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) এসএম মোস্তাক আহমদ খান, উপকমিশনার (সদর) আমির জাফর, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক।

সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমরা যেরকম আশঙ্কা করেছিলাম তা রুখতে পেরেছি। আমরা জানিয়ে দিতে চাই, যাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকবে তাদের জন্য উৎসবমুখর হবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। কিন্তু যাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকবে না তাদের জন্য মানে বহিরাগতদের জন্য দ্বার বন্ধ।

কোন বহিরাগত এসে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন সরকারি কর্মদিবস রয়েছে। অনেকে কর্মস্থলে যাবেন। তাদেরও জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার জন্য বলা হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে যারা আসবেন তারাও জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে আসবেন। আমরা বহিরাগত ঠেকাতে চাই।

সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক মিটিং করেছি। বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সভা করেছি। আমরা যে ঝুঁকিটা এসেস করেছি তা মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী, নির্বাচনের দিন থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা কোন মিছিল, সমাবেশ বা বিজয় মিছিলের সুযোগ নেই। যারাই জয়ী হোক, কোনপ্রকার বিজয় মিছিল করা যাবে না। তিনি বলেন, আমরা ডানেও তাকাব না, বামেও তাকাব না। যেই আইনশৃঙ্খলার জন্য থ্রেট হয়ে দাঁড়াবে তাকে কঠোরভাবে দমন করব। এক প্রশ্নের জবাবে সিএমপি কমিশনার বলেন, বিএনপি তাদের নেতাকর্মীদের আটকের বিষয়ে যে অভিযোগ করছেন তা মোটেও সঠিক নয়। আমরা নিয়মিত পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনা করছি। যারা আটক হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি, তারা কোন না কোন মামলা বা ওয়ারেন্টের আসামি।

আলকরণ ওয়ার্ডে ভোট হচ্ছে না

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিমের মৃত্যুতে স্থগিত হওয়া আলকরণ ৩১নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। গত ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা যায়।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২ ফেব্রুয়ারি। রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক মনোয়নপত্র বাছাই হবে ৪ ফেব্রুয়ারি। এ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি প্রার্র্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে গত ২০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. হাসানুজ্জামান এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিলেন, চসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিমের মৃত্যুতে আলকরণ ৩১নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর নির্বাচন স্থগিতের কথা।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ওয়ার্ডের ঘুড়ি মার্কার প্রতিদ্বন্দ্বী তারেক সোলেমান সেলিমের গত ১৮ তারিখ মৃত্যু হয়। নির্বাচন বিধিমালা ২০১০-এর বিধি ২০ অনুযায়ী ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ আসনের কাউন্সিলর নির্বাচনের সব কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করা হয়।

রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ

বিএনপির ৫৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী। সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির ৫৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করে অভিযোগ দিয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। গতকাল দুপুর ২টার দিকে অভিযোগ দেয়ার পর সাংবাদিকদের ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, নির্বাচনের একদিন আগে ৫৬ জন নির্বাচনী এজেন্টকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যেহেতু এজেন্টরা নির্বাচনের একটি অংশ। তাই নির্বাচনী এজেন্টদের ছাড়িয়ে আনতে কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছি। আর যদি কমিশন এতে বিফল হয় তাহলে তাদের ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরে আসা উচিত।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, বিএনপি তাদের নেতাকর্মীদের আটকের বিষয়ে যে অভিযোগ করছেন তা মোটেও সঠিক নয়। আমরা নিয়মিত পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনা করছি। যারা আটক হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি, তারা কোন না কোন মামলা বা ওয়ারেন্টের আসামি বলে তিনি জানান।