শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন

স্মরণকালের ভয়াবহ একটি বছর বিদায় নিয়ে নতুন বছর শুরু হয়েছে। নতুন বছরে চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। দ্বিতীয় ঢেউ হতে পারে প্রথম ধাক্কা থেকে আরও বহুগুণে শক্তিশালী ও মারাত্মক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর ভয়াবহতা আমরা সবাই আঁচ করছি। আতঙ্কটা তাই এখনও দূর হয়নি।

লকডাউন শেষে এবং স্বাস্থ্যবিধির বিধিনিষেধ মেনে পৃথিবী চলতে শুরু করেছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এটা ঠিক যে, প্রয়োজন কোন বাধা মানে না। জীবন-জীবিকার তাগিদে মানুষ কাজে ফিরেছে। চলছে হাটবাজার, পার্ক, পর্যটন শিল্প, অফিস-আদালত, যানবাহন, সভা-সমাবেশ, বিয়ে-জন্মদিন। নির্বাচনও হচ্ছে। জোরেসোরে চলছে প্রচার-প্রচারণা, মানুষের ঢল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুখে মাস্ক পরার কথা থাকলেও সেদিকে নজর নেই কারোর। মুস্টিমেয় যারা পরছেন, তারাও কোন না কোন কারণে বাধ্য হয়ে কিংবা শাস্তির ভয়ে।

তবে একটা জায়গায় ঠিকই চলছে এই করোনার প্রভাব। যেন করোনা এসেছে আমাদের দেশে এই একটি জায়গার জন্য। তা হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দেশে যেখানে সবকিছুই খোলা, সেখানে একমাত্র ব্যতিক্রম এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ প্রায় এক বছর হতে যাচ্ছে দেশে শিক্ষা-কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতেই বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে এবং অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। যদিও অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করার সামর্থ্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তৈরি হয়নি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কিছুদিন পর পর ছুটি বাড়ানো হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে- এটা ভেবে এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু পর্যটন এলাকা, পার্ক, শপিংমল, হাটবাজারে তো শিশু-কিশোরের চলাফেরা থামেনি। সেখানে জনসমাগম হচ্ছে, ভিড় হচ্ছে। কিছুই ঠেকানো যায়নি। তাহলে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা কেন?

সবকিছু চলমান রেখে শুধু শিক্ষা কার্যক্রমের গতিরোধ করা কোনভাবেই যৌক্তিক নয়। জীবিকার স্বার্থে কর্মসংস্থানে ফিরে আসার প্রয়োজনীয়তা যেমন সত্য তেমনি আরেকটা সত্য যে, শিক্ষা কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে ভবিষ্যতের জন্য আশানুরূপ মেধা বিকশিত হবে না। বলা হয়ে থাকে শিক্ষাই জাতির মেরুদ- এবং যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত। তাহলে শিক্ষার মতো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় এভাবে ঢিলেঢালাভাবে এগিয়ে নিলে আদতে ফলাফল কী হতে পারে, ভাবা দরকার। আশার কথা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে একটি গাইডলাইন প্রকাশ করেছে। আশা করি দ্রুতই শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরবে।

মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন

বুধবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২১ , ১৩ মাঘ ১৪২৭, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪২

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন

স্মরণকালের ভয়াবহ একটি বছর বিদায় নিয়ে নতুন বছর শুরু হয়েছে। নতুন বছরে চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। দ্বিতীয় ঢেউ হতে পারে প্রথম ধাক্কা থেকে আরও বহুগুণে শক্তিশালী ও মারাত্মক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর ভয়াবহতা আমরা সবাই আঁচ করছি। আতঙ্কটা তাই এখনও দূর হয়নি।

লকডাউন শেষে এবং স্বাস্থ্যবিধির বিধিনিষেধ মেনে পৃথিবী চলতে শুরু করেছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এটা ঠিক যে, প্রয়োজন কোন বাধা মানে না। জীবন-জীবিকার তাগিদে মানুষ কাজে ফিরেছে। চলছে হাটবাজার, পার্ক, পর্যটন শিল্প, অফিস-আদালত, যানবাহন, সভা-সমাবেশ, বিয়ে-জন্মদিন। নির্বাচনও হচ্ছে। জোরেসোরে চলছে প্রচার-প্রচারণা, মানুষের ঢল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুখে মাস্ক পরার কথা থাকলেও সেদিকে নজর নেই কারোর। মুস্টিমেয় যারা পরছেন, তারাও কোন না কোন কারণে বাধ্য হয়ে কিংবা শাস্তির ভয়ে।

তবে একটা জায়গায় ঠিকই চলছে এই করোনার প্রভাব। যেন করোনা এসেছে আমাদের দেশে এই একটি জায়গার জন্য। তা হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দেশে যেখানে সবকিছুই খোলা, সেখানে একমাত্র ব্যতিক্রম এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ প্রায় এক বছর হতে যাচ্ছে দেশে শিক্ষা-কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতেই বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে এবং অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। যদিও অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করার সামর্থ্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তৈরি হয়নি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কিছুদিন পর পর ছুটি বাড়ানো হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে- এটা ভেবে এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু পর্যটন এলাকা, পার্ক, শপিংমল, হাটবাজারে তো শিশু-কিশোরের চলাফেরা থামেনি। সেখানে জনসমাগম হচ্ছে, ভিড় হচ্ছে। কিছুই ঠেকানো যায়নি। তাহলে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা কেন?

সবকিছু চলমান রেখে শুধু শিক্ষা কার্যক্রমের গতিরোধ করা কোনভাবেই যৌক্তিক নয়। জীবিকার স্বার্থে কর্মসংস্থানে ফিরে আসার প্রয়োজনীয়তা যেমন সত্য তেমনি আরেকটা সত্য যে, শিক্ষা কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে ভবিষ্যতের জন্য আশানুরূপ মেধা বিকশিত হবে না। বলা হয়ে থাকে শিক্ষাই জাতির মেরুদ- এবং যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত। তাহলে শিক্ষার মতো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় এভাবে ঢিলেঢালাভাবে এগিয়ে নিলে আদতে ফলাফল কী হতে পারে, ভাবা দরকার। আশার কথা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে একটি গাইডলাইন প্রকাশ করেছে। আশা করি দ্রুতই শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরবে।

মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন