শ্রম ও সময় সাশ্রয়ী
কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির ২০২০-২১ এর আওতায় হাইব্রিড জাতের বোরো ধানের সমলয়ে চাষাবাদের জন্য ট্রেতে বীজ বপন করে বীজতলা তৈরি করছেন কৃষকরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখে গেছে, রংপুর তারাগঞ্জ উপজেলার ফসলের মাঠ বোরো ধান চাষের জন্য বীজতলা পরিচর্যা ও রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণে কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলতি মৌসুমে তারাগঞ্জ উপজেলায় কৃষি অফিসের নির্দেশনা ও পরামর্শে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে ঘুরে ঘুরে নির্বিঘেœ বোরো ধান চাষে বিভিন্ন প্রযুক্তি যেমন বোরো ধানের উচ্চ ফলনশীল জাতের চাষ, বীজ শোধন, আদর্শ বীজতলা, তীব্র শৈত্যপ্রবাহে বোরো বীজতলার যতœ ইত্যাদি গ্রহণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন। বোরোধান চাষে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমানো, কর্তনোত্তার অপচয় রোধ, শ্রমিকের কায়িক শ্রম লাঘব, শ্রমিকের অভাব পূরণ ও ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে ফসল উৎপাদনে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারে বোরোধানের সমকালীন চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণের নির্দেশনা দিয়েছে। সমকালীন চাষাবাদ পদ্ধতিতে যন্ত্র ব্যবহার করে একই সময়ে, একই জাতের ফসলের একসঙ্গে চারা রোপণ, আন্তঃপরিচর্যা ও কর্তন করা হয়। এ পদ্ধতিতে সঠিক সময়ে অল্পদিনের চারা রোপণ করা সম্ভব। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের জন্য ট্রেতে উৎপাদিত চারা রোগ বালাই মুক্ত, সম ঘনত্বের সবল সতেজ চারা উৎপাদিত হয় ও পলিথিন সীট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় ফলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহেও চারা সুস্থ থাকে। এ যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা সারিতে রোপণ করা যায়। ফলে গাছ পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায়, সমভাবে খাদ্য গ্রহণ করে, কুশির সংখ্যা বৃদ্ধি হয়। ফলে ধানের ফলন বৃদ্ধি পায় ও বীজতলা ও ধান ক্ষেতে আন্তঃপরিচর্যা (সেচ, নিড়ানি, স্প্রে) করতে সুবিধা হয়। এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করতে কৃষকের যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় ও পরিশ্রম করা হয় সে তুলনায় কৃষক বাজারমূল্য পায় না। যার ফলে কৃষক ধান উৎপাদন করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাধারণত দেখা যায় যে, প্রচলিত পদ্ধতিতে চারা রোপণে ৩০% শ্রম বীজতলার চারা উঠানো ও রোপণ কাজে ব্যয় হয়। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে ঘণ্টায় ৫০-৬০ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ করা যায় এবং সময় সাশ্রয় হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে এক বিঘা (৩৩ শতক) চারা রোপণে শ্রমিক খরচ বাবদ ২০০০ টাকা খরচ হয়। অপরদিকে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণ করলে বিঘা প্রতি মাত্র ৩০০ টাকা খরচ হয়। এছাড়া, বোরো ধানের সমকালীন চাষাবাদ পদ্ধতিতে কম্বাইন হার্ভেস্টার যন্ত্রের সাহায্যে ধান কর্তন ও মাড়াই-ঝাড়াই ও বস্তাবন্দী করা হয় ফলে ধানের উৎপাদন খরচ কম হয়। কম্বাইন হার্ভেস্টার যন্ত্রের সাহায্যে ধান কর্তন ও মাড়াই করলে এক বিঘা জমির মোট ৪০০ টাকা খরচ হয়। অপরদিকে প্রচলিত পদ্ধতিতে ধান কর্তন ও মাড়াই বাবদ শ্রমিক খরচ হয় স্থানভেদে ২৫০০-৩০০০ টাকা। উপজেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বোরোধানের উৎপাদন খরচ কমাতে তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের পশ্চিম রহিমাপুর গ্রামে বোরো ধান হাইব্রিড চাষে চারা রোপণ থেকে শুরু করে ধান কর্তন পর্যন্ত যন্ত্র ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করতে ৭৮ জন কৃষকের ৫০ একর জমিতে হাইব্রিড বোরোধানের সমকালীন চাষাবাদের জন্য কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
রবিবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২১ , ১৭ মাঘ ১৪২৭, ১৭ জমাদিউস সানি ১৪৪২
শ্রম ও সময় সাশ্রয়ী
প্রতিনিধি, তারাগঞ্জ (রংপুর)
কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির ২০২০-২১ এর আওতায় হাইব্রিড জাতের বোরো ধানের সমলয়ে চাষাবাদের জন্য ট্রেতে বীজ বপন করে বীজতলা তৈরি করছেন কৃষকরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখে গেছে, রংপুর তারাগঞ্জ উপজেলার ফসলের মাঠ বোরো ধান চাষের জন্য বীজতলা পরিচর্যা ও রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণে কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলতি মৌসুমে তারাগঞ্জ উপজেলায় কৃষি অফিসের নির্দেশনা ও পরামর্শে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে ঘুরে ঘুরে নির্বিঘেœ বোরো ধান চাষে বিভিন্ন প্রযুক্তি যেমন বোরো ধানের উচ্চ ফলনশীল জাতের চাষ, বীজ শোধন, আদর্শ বীজতলা, তীব্র শৈত্যপ্রবাহে বোরো বীজতলার যতœ ইত্যাদি গ্রহণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন। বোরোধান চাষে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমানো, কর্তনোত্তার অপচয় রোধ, শ্রমিকের কায়িক শ্রম লাঘব, শ্রমিকের অভাব পূরণ ও ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে ফসল উৎপাদনে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারে বোরোধানের সমকালীন চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণের নির্দেশনা দিয়েছে। সমকালীন চাষাবাদ পদ্ধতিতে যন্ত্র ব্যবহার করে একই সময়ে, একই জাতের ফসলের একসঙ্গে চারা রোপণ, আন্তঃপরিচর্যা ও কর্তন করা হয়। এ পদ্ধতিতে সঠিক সময়ে অল্পদিনের চারা রোপণ করা সম্ভব। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের জন্য ট্রেতে উৎপাদিত চারা রোগ বালাই মুক্ত, সম ঘনত্বের সবল সতেজ চারা উৎপাদিত হয় ও পলিথিন সীট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় ফলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহেও চারা সুস্থ থাকে। এ যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা সারিতে রোপণ করা যায়। ফলে গাছ পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায়, সমভাবে খাদ্য গ্রহণ করে, কুশির সংখ্যা বৃদ্ধি হয়। ফলে ধানের ফলন বৃদ্ধি পায় ও বীজতলা ও ধান ক্ষেতে আন্তঃপরিচর্যা (সেচ, নিড়ানি, স্প্রে) করতে সুবিধা হয়। এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করতে কৃষকের যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় ও পরিশ্রম করা হয় সে তুলনায় কৃষক বাজারমূল্য পায় না। যার ফলে কৃষক ধান উৎপাদন করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাধারণত দেখা যায় যে, প্রচলিত পদ্ধতিতে চারা রোপণে ৩০% শ্রম বীজতলার চারা উঠানো ও রোপণ কাজে ব্যয় হয়। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে ঘণ্টায় ৫০-৬০ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ করা যায় এবং সময় সাশ্রয় হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে এক বিঘা (৩৩ শতক) চারা রোপণে শ্রমিক খরচ বাবদ ২০০০ টাকা খরচ হয়। অপরদিকে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণ করলে বিঘা প্রতি মাত্র ৩০০ টাকা খরচ হয়। এছাড়া, বোরো ধানের সমকালীন চাষাবাদ পদ্ধতিতে কম্বাইন হার্ভেস্টার যন্ত্রের সাহায্যে ধান কর্তন ও মাড়াই-ঝাড়াই ও বস্তাবন্দী করা হয় ফলে ধানের উৎপাদন খরচ কম হয়। কম্বাইন হার্ভেস্টার যন্ত্রের সাহায্যে ধান কর্তন ও মাড়াই করলে এক বিঘা জমির মোট ৪০০ টাকা খরচ হয়। অপরদিকে প্রচলিত পদ্ধতিতে ধান কর্তন ও মাড়াই বাবদ শ্রমিক খরচ হয় স্থানভেদে ২৫০০-৩০০০ টাকা। উপজেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বোরোধানের উৎপাদন খরচ কমাতে তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের পশ্চিম রহিমাপুর গ্রামে বোরো ধান হাইব্রিড চাষে চারা রোপণ থেকে শুরু করে ধান কর্তন পর্যন্ত যন্ত্র ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করতে ৭৮ জন কৃষকের ৫০ একর জমিতে হাইব্রিড বোরোধানের সমকালীন চাষাবাদের জন্য কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।