রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে জাতিসংঘের শঙ্কা

মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে বসবাসরত প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। দেশটিতে থাকা রোহিঙ্গাদের অবস্থা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ দিকে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির অভ্যুত্থানের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মায়ানমারে অভ্যুত্থানের ফলে দেশটিতে এখনও থাকা ৬ লাখ রোহিঙ্গারা দুর্দশা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ‘এখনও ৬ লাখ রোহিঙ্গা রাখাইনে আছে, যাদের মধ্যে এক লাখ ২০ হাজার বিভিন্ন বিভিন্ন শিবিরে আটকা। তারা স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারছে না, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ন্যূনতম সুযোগ থেকেও বঞ্চিত। আমাদের ভয় হচ্ছে, এই ঘটনা (অভ্যুত্থান) তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ করে দিতে পারে,’ সাংবাদিকদের এমনটাই বলেছেন জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক।

গত সোমবার মায়ানমারের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সু চির সরকারকে সরিয়ে নিজেরা ক্ষমতায় বসেছে। এদিন ভোরের অভিযানে তারা সু চিসহ রাজনৈতিক নেতাদেরও আটক করে। ২০১৭ সালে দেশটির রাখাইনে সামরিক বাহিনীর দমনপীড়ন থেকে বাঁচতে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা সীমানা টপকে প্রতিবেশী বাংলাদেশে চলে আসে। প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় থাকা ওই রোহিঙ্গারা এখন শরণার্থী শিবিরে জীবন কাটাচ্ছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ ৪ বছর আগে রাখাইনে সামরিক বাহিনীর ওই তৎপরতাকে ‘জাতিগত শুদ্ধি অভিযান’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়ে এলেও মায়ানমার সেনাবাহিনী তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

গতকাল মায়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কূটনীতিকরা। ‘আমরা সেখানে শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী হুমকি নিয়ে কথা বলতে চাই, এ বিষয়ে অবশ্যই মায়ানমারের এশিয়া ও আসিয়ান প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে,’ বলেছেন নিরাপত্তা পরিষদের ফেব্রুয়ারির প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড।

২০১৭ সালে রাখাইনে মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা পরিষদ যেসব পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করেছিল রাশিয়ার সমর্থন নিয়ে চীন সেসব আটকে দেয়। গত সোমবার জাতিসংঘের চীন দূতাবাস জানিয়েছে, মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদের ব্রিফিংয়ে মায়ানমারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও অনেক কিছুই জানা যাবে বলে তারা আশা করছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘে চীন মিশনের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা আরও আশা করছি যে, পরিষদ এমন পদক্ষেপই নেবে যা মায়ানমারের পরিস্থিতিকে আরও জটিল না করে সেখানকার স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক হবে।’

মায়ানমারের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ‘নির্বাচনে জালিয়াতির’ প্রতিক্রিয়ায় তারা সু চি ও অন্যদের আটক করে সামরিক বাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ও এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে।

আটককৃতদের ছেড়ে দিতে জাতিসংঘ আহ্বান জানাচ্ছে মন্তব্য করে সোমবার দুজারিক বলেছেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেসের মায়ানমারবিষয়ক দূত ক্রিস্টিন স্ক্রানার বার্গনার পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছেন এবং তিনিই সম্ভবত নিরাপত্তা পরিষদে এ সংক্রান্ত ব্রিফ করবেন।’

মায়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘের উপস্থিতি ছিল। ২০১৮ সালের এপ্রিলেও নিরাপত্তা পরিষদের দূতরা দেশটিতে গিয়ে অং সান সু চি ও মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে রাখাইনে অভিযান নিয়ে পৃথক বৈঠক করেছিলেন। গত সোমবার ভোরে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মায়ানমারের রাষ্ট্রপতি উইন মিন্ত, ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি-সহ শাসকদলের শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে আটক করে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় সেনাবাহিনী। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তবে এ ফলাফল নিয়ে মায়ানমারের বেসামরিক সরকার এবং প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর মধ্যে কয়েকদিন

ধরে দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনা চলতে থাকায় এ সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

বুধবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২০ মাঘ ১৪২৭, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪২

মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান

রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে জাতিসংঘের শঙ্কা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে বসবাসরত প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। দেশটিতে থাকা রোহিঙ্গাদের অবস্থা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ দিকে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির অভ্যুত্থানের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মায়ানমারে অভ্যুত্থানের ফলে দেশটিতে এখনও থাকা ৬ লাখ রোহিঙ্গারা দুর্দশা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ‘এখনও ৬ লাখ রোহিঙ্গা রাখাইনে আছে, যাদের মধ্যে এক লাখ ২০ হাজার বিভিন্ন বিভিন্ন শিবিরে আটকা। তারা স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারছে না, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ন্যূনতম সুযোগ থেকেও বঞ্চিত। আমাদের ভয় হচ্ছে, এই ঘটনা (অভ্যুত্থান) তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ করে দিতে পারে,’ সাংবাদিকদের এমনটাই বলেছেন জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক।

গত সোমবার মায়ানমারের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সু চির সরকারকে সরিয়ে নিজেরা ক্ষমতায় বসেছে। এদিন ভোরের অভিযানে তারা সু চিসহ রাজনৈতিক নেতাদেরও আটক করে। ২০১৭ সালে দেশটির রাখাইনে সামরিক বাহিনীর দমনপীড়ন থেকে বাঁচতে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা সীমানা টপকে প্রতিবেশী বাংলাদেশে চলে আসে। প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় থাকা ওই রোহিঙ্গারা এখন শরণার্থী শিবিরে জীবন কাটাচ্ছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ ৪ বছর আগে রাখাইনে সামরিক বাহিনীর ওই তৎপরতাকে ‘জাতিগত শুদ্ধি অভিযান’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়ে এলেও মায়ানমার সেনাবাহিনী তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

গতকাল মায়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কূটনীতিকরা। ‘আমরা সেখানে শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী হুমকি নিয়ে কথা বলতে চাই, এ বিষয়ে অবশ্যই মায়ানমারের এশিয়া ও আসিয়ান প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে,’ বলেছেন নিরাপত্তা পরিষদের ফেব্রুয়ারির প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড।

২০১৭ সালে রাখাইনে মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা পরিষদ যেসব পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করেছিল রাশিয়ার সমর্থন নিয়ে চীন সেসব আটকে দেয়। গত সোমবার জাতিসংঘের চীন দূতাবাস জানিয়েছে, মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদের ব্রিফিংয়ে মায়ানমারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও অনেক কিছুই জানা যাবে বলে তারা আশা করছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘে চীন মিশনের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা আরও আশা করছি যে, পরিষদ এমন পদক্ষেপই নেবে যা মায়ানমারের পরিস্থিতিকে আরও জটিল না করে সেখানকার স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক হবে।’

মায়ানমারের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ‘নির্বাচনে জালিয়াতির’ প্রতিক্রিয়ায় তারা সু চি ও অন্যদের আটক করে সামরিক বাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ও এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে।

আটককৃতদের ছেড়ে দিতে জাতিসংঘ আহ্বান জানাচ্ছে মন্তব্য করে সোমবার দুজারিক বলেছেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেসের মায়ানমারবিষয়ক দূত ক্রিস্টিন স্ক্রানার বার্গনার পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছেন এবং তিনিই সম্ভবত নিরাপত্তা পরিষদে এ সংক্রান্ত ব্রিফ করবেন।’

মায়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘের উপস্থিতি ছিল। ২০১৮ সালের এপ্রিলেও নিরাপত্তা পরিষদের দূতরা দেশটিতে গিয়ে অং সান সু চি ও মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে রাখাইনে অভিযান নিয়ে পৃথক বৈঠক করেছিলেন। গত সোমবার ভোরে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মায়ানমারের রাষ্ট্রপতি উইন মিন্ত, ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি-সহ শাসকদলের শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে আটক করে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় সেনাবাহিনী। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তবে এ ফলাফল নিয়ে মায়ানমারের বেসামরিক সরকার এবং প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর মধ্যে কয়েকদিন

ধরে দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনা চলতে থাকায় এ সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।