অধিক লাভের টোপে ফেলে দু’শতাধিক বিনিয়োগকারীর অর্থ লোপাট

ভুয়া এলএলএম প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ ৬ জন গ্রেপ্তার

রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং(এমএলএম) পক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন আশিক ঘোষ। নগদ অর্থ বিনিয়োগ করলেও বিনিয়োগ করা অর্থ এক বছরে দিগুণ লাভসহ ফেরত পাওয়া যাবে এমন আশ্বাস দিতে থাকেন। তার এ প্রলোভনে পড়ে দুই শতাধিক মানুষ অর্ধশত কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করেছেন। পুরো টাকাই মেরে দিয়ে হাওয়া হয়ে যান আশিক ঘোষ ও তার সহযোগীরা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি অভিযান চালিয়ে আশিক ঘোষসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল দুপুরে সিআইডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক।

সিআইডি জানান, আশিক ঘোষ ছাড়া অন্য গ্রেপ্তারকৃতরা হলোÑ প্রতিষ্ঠানটির এমডি কাজী নুরুল ইসলাম, অর্থ পরিচালক শাহ নেওয়াজ শামীম, পরিচালক মো. জহিরুল হক, মীর মো. নরুল ইসলাম, মো. মামুন মিয়া। গ্রেপ্তারের সময় কোম্পানির কার্যালয় থেকে ২শ’ ৯ জন বিনিয়োগকারী গ্রাহকের তালিকা, আড়াইশ’ মানিরিসিটসহ বিভিন্ন নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি উত্তরা পূর্ব থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে পেনাল কোডের ধারায়।

অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক জানান, ২০১৬ সালে উত্তরায় সিল সিটি নামে একটি ডেভলপার প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে রাজকীয় অফিস নেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে আশিক ঘোষ দায়িত্ব নেয় এবং অন্যদের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব দেয়া হয়। প্লট বা ফ্ল্যাট বুকিং ব্যানার, ফেস্টুনসহ বিভিন্ন এলাকায় সিলসিটির নামে প্রচারও করা হয়। বিনিয়োগকারী খুঁজতে কিছু দালালও মাঠ পর্যায়ে নিয়োগ করা হয়। এসব দালাল মানুষকে ফ্ল্যাট ও প্লট বুকিং দেয়ার কথা বলে আমন্ত্রণ জানালেও অফিসে আসার পর তাদের দেয়া হতো ভিন্ন টোপ। বলা হতো, এখানে অর্থ বিনিয়োগ করলে তা লাভসহ দিগুণ হিসেবে পাওয়া যাবে। এক লাখ টাকা কেউ বিনিয়োগ করলে লাভসহ ২ লাখ করে টাকা দেয়া হবে। কোন বিনিয়োগকারী তার মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগকারী আনতে পারলে ওই বিনিয়োগকারীকে লাভসহ টাকা দিগুন দেয়া হবে। এছাড়া যে বিনিয়োগকারীর মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগকারী আসবে এজন্য তাকেও লাভের অংশ দেয়া হবে। তাদের এমন প্রচার-প্রচরণায় কয়েক হাজার মানুষ সেখানে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ শুরু করেন। কেউ ৫০ হাজার টাকা, কেউ ১ লাখ টাকা, কেউ ২ লাখ টাকা, কেউ আড়াই লাখ টাকা, কেউ ১০ লাখ টাকাও বিনিয়োগ করেছেন। এভাবে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র।

সিআইডি জানায়, একটি প্রাইমারি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ওই প্রতিষ্ঠানে আড়াই লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। প্রথম কয়েকমাস তাকে লাভের টাকা দেয়া হয়। ৬৯ হাজার টাকা দেয়ার পর হঠাৎ টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর ওই স্কুলশিক্ষক বুঝতে পারেন প্রতিষ্ঠানটি প্রতারণা করছে। তিনি তার বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত চেয়ে একটি আবেদন করেন। তাকে আজ দিচ্ছি কাল দিচ্ছি করে ১ বছরের বেশি সময় ক্ষেপণ করে। একপর্যায়ে ওই শিক্ষক আত্মহত্যা করার চিন্তা করেন। ওই শিক্ষক সিআইডিতে অভিযোগ করার পর প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে খোঁজ নেয়া শুরু করে সিআইডি। পরে দেখা যায়, এটি মূলত এক ফ্রট প্রতিষ্ঠান। কাগজে কলমে তারা রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান হলেও এর এ ধরনের কোন ব্যবসা নেই। তারা কোন ফ্ল্যাট বা প্লট বিক্রি করেন না বা নির্মাণও করেন না। মূলত তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজর এড়াতে এ ধরনের কৌশল নিয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষক নাছির উদ্দিন জানান, ঝিনাইদহের মহেশপুর এলাকায় তার বাড়ি। তিনি মহেশপুর পৌরসভায় একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হিসেবে চাকরি করতেন। ২০১২ সালে তিনি অবসরে যান। অবসরের পর তার পেনশনের টাকার মধ্যে কিছু টাকা ছিল। ২ বছর আগে তিনি ঢাকায় এসে মেসে উঠেন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। এক পরিচিতের মাধ্যমে তিনি সিল সিটির কথা জানতে পারেন, এখানে টাকা বিনিয়োগ করলে দিগুণ লাভ পাওয়া যাবে। তিনি অফিসে গিয়ে কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে আড়াই লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। ওই টাকাই ছিল তার পেনশনের টাকার শেষ সম্বল। কয়েকমাস লাভ পেলেও হঠাৎ করে টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর তিনি কয়েকমাস ঘুরে তাদের কাছে টাকা ফেরত চান। তারা নানাভাবে সময় নিতে থাকে। অর্থকষ্টে তিনি পড়ে যান। অর্থকষ্ট, অভাব-অনটনের কারণে টাকাটা তার জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এতেও কর্ণপাত করছিল না। পরে তিনি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন। এখন এ টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় তিনি সিআইডির কার্যালয়ে এসেছেন।

ভুক্তভোগী ফল ব্যবসায়ী রুস্তম আলী জানান, তিনি রূপগঞ্জের ইসাপুর এলাকায় ফলের ব্যবসা করেন। তার পরিচিত এক ব্যক্তি এ প্রতিষ্ঠানের দালাল হয়ে কাজ করত। ওই দালাল প্রতিদিন তার কাছ থেকে বিভিন্ন রকম ফল কিনতেন। ওই দালাল তাকে বলেন, তিনি সিল সিটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানে টাকা বিনিয়োগ করেছেন। সেখানে টাকা বিনিয়োগ করলে দিগুণ লাভ পাওয় যায়। লাভেল টাকায় তিনি প্লট বা ফ্ল্যাটও পেতে পারেন। কয়েকবার তাকে প্রলোভন দেখানোর পর তিনি প্রতিষ্ঠানের উত্তরার অফিসে এসে অফিসের শওকত দেখতে পান। তাদের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে তিনি ১০ লাখ টাকা দেন। তাকে বলা হয় একসঙ্গে ২০ লাখ টাকা দেয়া হবে। গতকাল ওই দালালই তাকে ফোন করে জানান, সমস্যা হয়েছে, অফিসের চেয়ারম্যানসহ কয়েকজনকে সিআইডি ধরে নিয়ে গেছে। তারা মনে হয় মানুষের টাকা মেরে দিয়েছে। তিনি খবর পেয়েই সিআইডি কার্যালয়ে ছুটে আসেন। এখন টাকা কিভাবে উদ্ধার করবেন তা নিয়ে চরম দুঃচিন্তায় পড়েছেন।

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানান, তাদের কাছে এ পর্যন্ত ২৫ জন ভুক্তভোগী যোগাযোগ করেছেন যারা এ প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছেন। অভিযানের সময় ২২শ’ ৯ জন গ্রাহকের একটি তালিকা উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে কে কত টাকা দিয়েছেন তার একটি হিসাবে পাওয়া গেছে। হিসাব অনুযায়ী ২২শ’ ৯ জনের কাছ থেকে ৫৭ কোটি টাকা নেয়া হয়েছে। গ্রাহকের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। বিনিয়োগকারীদের টাকা এরা কি করেছে তা এখনও তথ্য পাওয়া যায়নি। এ চক্রের সঙ্গে আরও কারও যোগসূত্র আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, তাদের কোন কাগজপত্র নেই। যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে তাদের একটি মানি রিসিট দেয়া হয়েছে। পুরো রহস্য উদ্ঘাটনে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন জানিয়ে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়েছে।

বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৭ মাঘ ১৪২৭, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪২

অধিক লাভের টোপে ফেলে দু’শতাধিক বিনিয়োগকারীর অর্থ লোপাট

ভুয়া এলএলএম প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ ৬ জন গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং(এমএলএম) পক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন আশিক ঘোষ। নগদ অর্থ বিনিয়োগ করলেও বিনিয়োগ করা অর্থ এক বছরে দিগুণ লাভসহ ফেরত পাওয়া যাবে এমন আশ্বাস দিতে থাকেন। তার এ প্রলোভনে পড়ে দুই শতাধিক মানুষ অর্ধশত কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করেছেন। পুরো টাকাই মেরে দিয়ে হাওয়া হয়ে যান আশিক ঘোষ ও তার সহযোগীরা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি অভিযান চালিয়ে আশিক ঘোষসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল দুপুরে সিআইডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক।

সিআইডি জানান, আশিক ঘোষ ছাড়া অন্য গ্রেপ্তারকৃতরা হলোÑ প্রতিষ্ঠানটির এমডি কাজী নুরুল ইসলাম, অর্থ পরিচালক শাহ নেওয়াজ শামীম, পরিচালক মো. জহিরুল হক, মীর মো. নরুল ইসলাম, মো. মামুন মিয়া। গ্রেপ্তারের সময় কোম্পানির কার্যালয় থেকে ২শ’ ৯ জন বিনিয়োগকারী গ্রাহকের তালিকা, আড়াইশ’ মানিরিসিটসহ বিভিন্ন নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি উত্তরা পূর্ব থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে পেনাল কোডের ধারায়।

অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক জানান, ২০১৬ সালে উত্তরায় সিল সিটি নামে একটি ডেভলপার প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে রাজকীয় অফিস নেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে আশিক ঘোষ দায়িত্ব নেয় এবং অন্যদের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব দেয়া হয়। প্লট বা ফ্ল্যাট বুকিং ব্যানার, ফেস্টুনসহ বিভিন্ন এলাকায় সিলসিটির নামে প্রচারও করা হয়। বিনিয়োগকারী খুঁজতে কিছু দালালও মাঠ পর্যায়ে নিয়োগ করা হয়। এসব দালাল মানুষকে ফ্ল্যাট ও প্লট বুকিং দেয়ার কথা বলে আমন্ত্রণ জানালেও অফিসে আসার পর তাদের দেয়া হতো ভিন্ন টোপ। বলা হতো, এখানে অর্থ বিনিয়োগ করলে তা লাভসহ দিগুণ হিসেবে পাওয়া যাবে। এক লাখ টাকা কেউ বিনিয়োগ করলে লাভসহ ২ লাখ করে টাকা দেয়া হবে। কোন বিনিয়োগকারী তার মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগকারী আনতে পারলে ওই বিনিয়োগকারীকে লাভসহ টাকা দিগুন দেয়া হবে। এছাড়া যে বিনিয়োগকারীর মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগকারী আসবে এজন্য তাকেও লাভের অংশ দেয়া হবে। তাদের এমন প্রচার-প্রচরণায় কয়েক হাজার মানুষ সেখানে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ শুরু করেন। কেউ ৫০ হাজার টাকা, কেউ ১ লাখ টাকা, কেউ ২ লাখ টাকা, কেউ আড়াই লাখ টাকা, কেউ ১০ লাখ টাকাও বিনিয়োগ করেছেন। এভাবে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র।

সিআইডি জানায়, একটি প্রাইমারি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ওই প্রতিষ্ঠানে আড়াই লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। প্রথম কয়েকমাস তাকে লাভের টাকা দেয়া হয়। ৬৯ হাজার টাকা দেয়ার পর হঠাৎ টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর ওই স্কুলশিক্ষক বুঝতে পারেন প্রতিষ্ঠানটি প্রতারণা করছে। তিনি তার বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত চেয়ে একটি আবেদন করেন। তাকে আজ দিচ্ছি কাল দিচ্ছি করে ১ বছরের বেশি সময় ক্ষেপণ করে। একপর্যায়ে ওই শিক্ষক আত্মহত্যা করার চিন্তা করেন। ওই শিক্ষক সিআইডিতে অভিযোগ করার পর প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে খোঁজ নেয়া শুরু করে সিআইডি। পরে দেখা যায়, এটি মূলত এক ফ্রট প্রতিষ্ঠান। কাগজে কলমে তারা রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান হলেও এর এ ধরনের কোন ব্যবসা নেই। তারা কোন ফ্ল্যাট বা প্লট বিক্রি করেন না বা নির্মাণও করেন না। মূলত তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজর এড়াতে এ ধরনের কৌশল নিয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষক নাছির উদ্দিন জানান, ঝিনাইদহের মহেশপুর এলাকায় তার বাড়ি। তিনি মহেশপুর পৌরসভায় একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হিসেবে চাকরি করতেন। ২০১২ সালে তিনি অবসরে যান। অবসরের পর তার পেনশনের টাকার মধ্যে কিছু টাকা ছিল। ২ বছর আগে তিনি ঢাকায় এসে মেসে উঠেন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। এক পরিচিতের মাধ্যমে তিনি সিল সিটির কথা জানতে পারেন, এখানে টাকা বিনিয়োগ করলে দিগুণ লাভ পাওয়া যাবে। তিনি অফিসে গিয়ে কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে আড়াই লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। ওই টাকাই ছিল তার পেনশনের টাকার শেষ সম্বল। কয়েকমাস লাভ পেলেও হঠাৎ করে টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর তিনি কয়েকমাস ঘুরে তাদের কাছে টাকা ফেরত চান। তারা নানাভাবে সময় নিতে থাকে। অর্থকষ্টে তিনি পড়ে যান। অর্থকষ্ট, অভাব-অনটনের কারণে টাকাটা তার জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এতেও কর্ণপাত করছিল না। পরে তিনি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন। এখন এ টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় তিনি সিআইডির কার্যালয়ে এসেছেন।

ভুক্তভোগী ফল ব্যবসায়ী রুস্তম আলী জানান, তিনি রূপগঞ্জের ইসাপুর এলাকায় ফলের ব্যবসা করেন। তার পরিচিত এক ব্যক্তি এ প্রতিষ্ঠানের দালাল হয়ে কাজ করত। ওই দালাল প্রতিদিন তার কাছ থেকে বিভিন্ন রকম ফল কিনতেন। ওই দালাল তাকে বলেন, তিনি সিল সিটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানে টাকা বিনিয়োগ করেছেন। সেখানে টাকা বিনিয়োগ করলে দিগুণ লাভ পাওয় যায়। লাভেল টাকায় তিনি প্লট বা ফ্ল্যাটও পেতে পারেন। কয়েকবার তাকে প্রলোভন দেখানোর পর তিনি প্রতিষ্ঠানের উত্তরার অফিসে এসে অফিসের শওকত দেখতে পান। তাদের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে তিনি ১০ লাখ টাকা দেন। তাকে বলা হয় একসঙ্গে ২০ লাখ টাকা দেয়া হবে। গতকাল ওই দালালই তাকে ফোন করে জানান, সমস্যা হয়েছে, অফিসের চেয়ারম্যানসহ কয়েকজনকে সিআইডি ধরে নিয়ে গেছে। তারা মনে হয় মানুষের টাকা মেরে দিয়েছে। তিনি খবর পেয়েই সিআইডি কার্যালয়ে ছুটে আসেন। এখন টাকা কিভাবে উদ্ধার করবেন তা নিয়ে চরম দুঃচিন্তায় পড়েছেন।

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানান, তাদের কাছে এ পর্যন্ত ২৫ জন ভুক্তভোগী যোগাযোগ করেছেন যারা এ প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছেন। অভিযানের সময় ২২শ’ ৯ জন গ্রাহকের একটি তালিকা উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে কে কত টাকা দিয়েছেন তার একটি হিসাবে পাওয়া গেছে। হিসাব অনুযায়ী ২২শ’ ৯ জনের কাছ থেকে ৫৭ কোটি টাকা নেয়া হয়েছে। গ্রাহকের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। বিনিয়োগকারীদের টাকা এরা কি করেছে তা এখনও তথ্য পাওয়া যায়নি। এ চক্রের সঙ্গে আরও কারও যোগসূত্র আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, তাদের কোন কাগজপত্র নেই। যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে তাদের একটি মানি রিসিট দেয়া হয়েছে। পুরো রহস্য উদ্ঘাটনে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন জানিয়ে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়েছে।