চিড়িয়াখানায় মাংসাশী প্রাণীর খাবার প্রসঙ্গে

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় অজগরের খাঁচার গ্রিল ধরে অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা একটি খরগোশের ছবি ও ভিডিও বেশ কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে। জীবন্ত খরগোশটিকে খাঁচায় রাখা হয়েছে অজগরের খাবার হিসেবে। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রশ্ন উঠেছে চিড়িয়াখানার মতো পরিবেশে মাংসাশী প্রাণীদের খাদ্য হিসেবে জীবন্ত প্রাণী দেয়া কতটা যৌক্তিক?

আমরা খাদ্যশৃঙ্খলের দিকে তাকালে দেখতে পায় বাঘ, সিংহ, নেকড়ে, হায়েনা, অজগরসহ সব মাংসাশী প্রাণী প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবন্ত প্রাণীদের শিকার করেই খায়। মাংসাশী প্রাণীরা বন্য পরিবেশে নিজে শিকার ধরে খেয়ে অভ্যস্ত। এজন্য মাংসাশী প্রাণীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চিড়িয়াখানাতে সপ্তাহে দুই-একদিন জীবিত প্রাণী দেয়া হয়।

তবে চিড়িয়াখানায় অধিকাংশ সময় মাংসাশী প্রাণীকে জবাই করা গবাদি পশুর মাংস দেয়ার কারণে অল্প পরিশ্রমে আহারের ব্যবস্থা হওয়ায় প্রাণীগুলো দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে। জীবিত প্রাণী দেয়ার ফলে মাংসাশী প্রাণী কিছুটা হলেও নিজস্ব পরিবেশ ও কর্মচাঞ্চল্য ফিরে পায়। বিশ্বের অধিকাংশ চিড়িয়াখানাতে এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, কারণ হিসাবে ভেটেরিনারিয়ান চিকিৎসকেরা দাবি করেন শিকার ধরে খেলে অজগরের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া জীবন্ত প্রাণী না দিলে অজগর তার প্রিডেটরি আচরণ ভুলে যায় যা তার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

যদিও প্রাণীপ্রেমীরা দাবি করেন বন্যপ্রাণীরা শিকার ধরে খেয়ে অভ্যস্ত হলেও চিড়িয়াখানার পরিবেশে এ পদ্ধতি অমানবিক। তাদের কথা বিবেচনায় রেখে মাংসাশী প্রাণীকে খরগোশসহ অন্য যেকোনো প্রাণী খেতে দিতে হলে প্রশিক্ষিত কর্মী দিয়ে খাদ্যে পরিণত হওয়া প্রাণীটিকে সহজভাবে হত্যা করে তাজা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। একই সঙ্গে খাবার হিসেবে সরবরাহের পূর্ব পর্যন্ত ওই প্রাণীর খাদ্য, চিকিৎসাসহ তার প্রাপ্য সব অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আর জীবন্ত প্রাণী যদি দিতেই হয় তবে তার কষ্ট লাঘব করতে হবে।

সাপ সাধারণত জীবিত প্রাণীই খেয়ে থাকে। জীবন্ত প্রাণী খেতে দেখলে শিশুদের মনে বিরূপ প্রভাব তৈরির শঙ্কা থাকে এজন্য বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে অজগর বা অন্যান্য মাংসাশী প্রাণীকে রাতে জীবন্ত প্রাণী দেয়া যেতে পারে। উন্নত কিছু দেশে অজগরসহ অন্যান্য সাপকে খাওয়ানোর সময় লম্বা লাঠির মাথায় মৃত প্রাণী বা মাংস রেখে নাড়ানো হয় যাতে সাপ খাবারটিকে জীবন্ত মনে করে। তবে এজন্য চিড়িয়াখানার কর্মীদের আগে প্রশিক্ষণ দিতে হবে, সঙ্গে মাংসাশী প্রাণীকেও অভ্যস্ত করাতে হবে।

মাংসাশী প্রাণীর খাবার জীবন্ত যাবে না মৃত যাবে এ বিষয়ে বাংলাদেশের জন্য নির্দিষ্ট কোন আইন বা আইনি কোন বাধ্যবাধকতা নেই। ভেটেরিনারি সার্জন যদি জীবন্ত প্রাণী দেবার পরামর্শ দেয় তবেই জীবন্ত প্রাণী দেয়া উচিত তা নাহলে নিরুৎসাহিত করতে হবে। আমাদের প্রাণীর ফিজিওলজি-ইকোলজি সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা রাখতে হবে। মাংসাশী প্রাণীর অভ্যাস বোঝার চেষ্টা করতে হবে, কারো ব্যাপারে পক্ষপাত করা যাবে না।

আর এস মাহমুদ হাসান

বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৭ মাঘ ১৪২৭, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪২

চিড়িয়াখানায় মাংসাশী প্রাণীর খাবার প্রসঙ্গে

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় অজগরের খাঁচার গ্রিল ধরে অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা একটি খরগোশের ছবি ও ভিডিও বেশ কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে। জীবন্ত খরগোশটিকে খাঁচায় রাখা হয়েছে অজগরের খাবার হিসেবে। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রশ্ন উঠেছে চিড়িয়াখানার মতো পরিবেশে মাংসাশী প্রাণীদের খাদ্য হিসেবে জীবন্ত প্রাণী দেয়া কতটা যৌক্তিক?

আমরা খাদ্যশৃঙ্খলের দিকে তাকালে দেখতে পায় বাঘ, সিংহ, নেকড়ে, হায়েনা, অজগরসহ সব মাংসাশী প্রাণী প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবন্ত প্রাণীদের শিকার করেই খায়। মাংসাশী প্রাণীরা বন্য পরিবেশে নিজে শিকার ধরে খেয়ে অভ্যস্ত। এজন্য মাংসাশী প্রাণীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চিড়িয়াখানাতে সপ্তাহে দুই-একদিন জীবিত প্রাণী দেয়া হয়।

তবে চিড়িয়াখানায় অধিকাংশ সময় মাংসাশী প্রাণীকে জবাই করা গবাদি পশুর মাংস দেয়ার কারণে অল্প পরিশ্রমে আহারের ব্যবস্থা হওয়ায় প্রাণীগুলো দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে। জীবিত প্রাণী দেয়ার ফলে মাংসাশী প্রাণী কিছুটা হলেও নিজস্ব পরিবেশ ও কর্মচাঞ্চল্য ফিরে পায়। বিশ্বের অধিকাংশ চিড়িয়াখানাতে এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, কারণ হিসাবে ভেটেরিনারিয়ান চিকিৎসকেরা দাবি করেন শিকার ধরে খেলে অজগরের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া জীবন্ত প্রাণী না দিলে অজগর তার প্রিডেটরি আচরণ ভুলে যায় যা তার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

যদিও প্রাণীপ্রেমীরা দাবি করেন বন্যপ্রাণীরা শিকার ধরে খেয়ে অভ্যস্ত হলেও চিড়িয়াখানার পরিবেশে এ পদ্ধতি অমানবিক। তাদের কথা বিবেচনায় রেখে মাংসাশী প্রাণীকে খরগোশসহ অন্য যেকোনো প্রাণী খেতে দিতে হলে প্রশিক্ষিত কর্মী দিয়ে খাদ্যে পরিণত হওয়া প্রাণীটিকে সহজভাবে হত্যা করে তাজা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। একই সঙ্গে খাবার হিসেবে সরবরাহের পূর্ব পর্যন্ত ওই প্রাণীর খাদ্য, চিকিৎসাসহ তার প্রাপ্য সব অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আর জীবন্ত প্রাণী যদি দিতেই হয় তবে তার কষ্ট লাঘব করতে হবে।

সাপ সাধারণত জীবিত প্রাণীই খেয়ে থাকে। জীবন্ত প্রাণী খেতে দেখলে শিশুদের মনে বিরূপ প্রভাব তৈরির শঙ্কা থাকে এজন্য বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে অজগর বা অন্যান্য মাংসাশী প্রাণীকে রাতে জীবন্ত প্রাণী দেয়া যেতে পারে। উন্নত কিছু দেশে অজগরসহ অন্যান্য সাপকে খাওয়ানোর সময় লম্বা লাঠির মাথায় মৃত প্রাণী বা মাংস রেখে নাড়ানো হয় যাতে সাপ খাবারটিকে জীবন্ত মনে করে। তবে এজন্য চিড়িয়াখানার কর্মীদের আগে প্রশিক্ষণ দিতে হবে, সঙ্গে মাংসাশী প্রাণীকেও অভ্যস্ত করাতে হবে।

মাংসাশী প্রাণীর খাবার জীবন্ত যাবে না মৃত যাবে এ বিষয়ে বাংলাদেশের জন্য নির্দিষ্ট কোন আইন বা আইনি কোন বাধ্যবাধকতা নেই। ভেটেরিনারি সার্জন যদি জীবন্ত প্রাণী দেবার পরামর্শ দেয় তবেই জীবন্ত প্রাণী দেয়া উচিত তা নাহলে নিরুৎসাহিত করতে হবে। আমাদের প্রাণীর ফিজিওলজি-ইকোলজি সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা রাখতে হবে। মাংসাশী প্রাণীর অভ্যাস বোঝার চেষ্টা করতে হবে, কারো ব্যাপারে পক্ষপাত করা যাবে না।

আর এস মাহমুদ হাসান