ভাত দে হারামজাদা বলে কবি রফিক আজাদ তাঁর জনকের সাথে ভয়ংকর খুনসুটিতে মেতে উঠেছিলেন!

ওবায়েদ আকাশ

শুধুই মানুষের কাছে; প্রকৃতির কাছে; যেতে যেতে, অবশেষে এই সত্য উপলব্ধ হলো যে, কবি রফিক আজাদ আজকাল দেশলাই জ্বেলে একটিও সিগারেটের শলাকায় আগুন ধরাতে যান না। অথচ সারাটা জীবন তিনি বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো দুঃসহ অরাজকতা আর দানবের মিথ্যে দাম্ভিকতায় বারুদের স্পর্শখেলায় অভ্যস্ত উঠেছিলেন, সেই থেকে, যখন, বাংলা কবিতার ধারাপাত একঘরও মুখস্থ করেননি কিংবা সহজাত ছন্দের অ আ ক খণ্ডয় অন্তর বা বহির্গমন শেষে কবিতার একটি পঙ্ক্তিও ময়ূরপুচ্ছে চড়িয়ে দিতে শেখেননি। নাকি শিখেছিলেন? তবু জানি তিনিই আমাকে বুঝিয়েছেন কীভাবে তৈলাক্ত বাঁশের মাথায় চড়ে একহাতে একতারা আর অন্যহাতে লাল মলাটের গ্রন্থ বা কাস্তে-হাতুড়ি ধরে পরম প্রেমিক সেজে সুর তোলা শিখতে হয় বাঁশের বাঁশিতে। আর অরক্ষিত দিনে নিসর্গের আঁচল পেঁচিয়ে পড়ে থাকা স্নিগ্ধ মায়ের মুখ আক্রান্ত হলে কী করে অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় মানচিত্রের সম্ভ্রম রক্ষায়। এমন সশস্ত্র সুন্দর বলে যা কিছু আমার অগ্রাহ্য করা জরুরি বলে মনস্থির করেছি, তাদের প্রধানতম রফিক আজাদ। অথচ একবার এই অসম্ভবের পায়ে হাত দিয়ে আমি আমার দ্বিতীয় জন্মের প্রকৃতি নির্ণয়ে ঘোরতর সন্দিহান হয়ে উঠি। যেহেতু আজও সীমাবদ্ধ জলে, সীমিত সবুজে বসবাস করে মনে হয়, অনধিকারে খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছি এই বাংলার ধানক্ষেত আলপথ পাহাড় নদী অবিশ্বাস্য সবুজের প্ররোচনা। তবু আমার হাতুড়ির নিচের জীবন- যেদিকে অঙ্গুলি তুলে বলেন কবি রফিক আজাদ, যদিও পরিকীর্ণ পানশালাই তোমার স্বদেশ, তবু আমৃত্যু নির্বান্ধব দিনে পৃথিবীতে সমগ্র খরতার বিপরীতে বর্ষণে আনন্দে যাও মানুষের কাছে। আর আমি বলি, ক্ষমা করো বহমান হে উদার... সুরাসক্ত তোমাকে যখন যে কোনো মানুষের উর্ধে মানুষ হয়ে উড়ে যেতে দেখি- পৃথিবীর নক্ষত্রশালায় সংরক্ষিত আলোর পরীরা বলে, ‘প্রণম্য হে কবিতার দিঘল পুরুষ’- এমন পতিত জীবনে একবার অভিনন্দিত করো

বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৮ মাঘ ১৪২৭, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ভাত দে হারামজাদা বলে কবি রফিক আজাদ তাঁর জনকের সাথে ভয়ংকর খুনসুটিতে মেতে উঠেছিলেন!

ওবায়েদ আকাশ

শুধুই মানুষের কাছে; প্রকৃতির কাছে; যেতে যেতে, অবশেষে এই সত্য উপলব্ধ হলো যে, কবি রফিক আজাদ আজকাল দেশলাই জ্বেলে একটিও সিগারেটের শলাকায় আগুন ধরাতে যান না। অথচ সারাটা জীবন তিনি বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো দুঃসহ অরাজকতা আর দানবের মিথ্যে দাম্ভিকতায় বারুদের স্পর্শখেলায় অভ্যস্ত উঠেছিলেন, সেই থেকে, যখন, বাংলা কবিতার ধারাপাত একঘরও মুখস্থ করেননি কিংবা সহজাত ছন্দের অ আ ক খণ্ডয় অন্তর বা বহির্গমন শেষে কবিতার একটি পঙ্ক্তিও ময়ূরপুচ্ছে চড়িয়ে দিতে শেখেননি। নাকি শিখেছিলেন? তবু জানি তিনিই আমাকে বুঝিয়েছেন কীভাবে তৈলাক্ত বাঁশের মাথায় চড়ে একহাতে একতারা আর অন্যহাতে লাল মলাটের গ্রন্থ বা কাস্তে-হাতুড়ি ধরে পরম প্রেমিক সেজে সুর তোলা শিখতে হয় বাঁশের বাঁশিতে। আর অরক্ষিত দিনে নিসর্গের আঁচল পেঁচিয়ে পড়ে থাকা স্নিগ্ধ মায়ের মুখ আক্রান্ত হলে কী করে অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় মানচিত্রের সম্ভ্রম রক্ষায়। এমন সশস্ত্র সুন্দর বলে যা কিছু আমার অগ্রাহ্য করা জরুরি বলে মনস্থির করেছি, তাদের প্রধানতম রফিক আজাদ। অথচ একবার এই অসম্ভবের পায়ে হাত দিয়ে আমি আমার দ্বিতীয় জন্মের প্রকৃতি নির্ণয়ে ঘোরতর সন্দিহান হয়ে উঠি। যেহেতু আজও সীমাবদ্ধ জলে, সীমিত সবুজে বসবাস করে মনে হয়, অনধিকারে খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছি এই বাংলার ধানক্ষেত আলপথ পাহাড় নদী অবিশ্বাস্য সবুজের প্ররোচনা। তবু আমার হাতুড়ির নিচের জীবন- যেদিকে অঙ্গুলি তুলে বলেন কবি রফিক আজাদ, যদিও পরিকীর্ণ পানশালাই তোমার স্বদেশ, তবু আমৃত্যু নির্বান্ধব দিনে পৃথিবীতে সমগ্র খরতার বিপরীতে বর্ষণে আনন্দে যাও মানুষের কাছে। আর আমি বলি, ক্ষমা করো বহমান হে উদার... সুরাসক্ত তোমাকে যখন যে কোনো মানুষের উর্ধে মানুষ হয়ে উড়ে যেতে দেখি- পৃথিবীর নক্ষত্রশালায় সংরক্ষিত আলোর পরীরা বলে, ‘প্রণম্য হে কবিতার দিঘল পুরুষ’- এমন পতিত জীবনে একবার অভিনন্দিত করো