মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান

রাতে নিরাপত্তা বাহিনীর ধরপাকড় দিনে ফের সড়কে বিক্ষোভকারীরা

মায়ানমারের সামরিক জান্তারা অভ্যুত্থান বিরোধীদের ধরতে রাতে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে লোকজনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘ হচ্ছে। এ নিয়ে দেশটিতে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ আতংক সত্ত্বেও দেশটির গণতন্ত্রপন্থি হাজারো মানুষ রাজপথে নেমে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। অভু্যুত্থানের প্রতিবাদে মায়ানমারের বড় শহরগুলোতে টানা নবম দিনের মতো বিক্ষোভ করছেন হাজার হাজার মানুষ। দিনে বিক্ষোভ চললেও এবার রাতেও বিভিন্ন এলাকায় টহল পার্টি গঠন করে বিক্ষোভ করেছেন শত শত মানুষ। এদিকে মানুষের স্বাধীনতা খর্ব করতে বেশ কিছু বিতর্কিতন আইন সচল করেছে জান্তা সরকার। রয়টার্স

এ অবস্থার পরও গুরুত্বপূর্ণ শহর-নগরের সড়কে নামেন হাজারো বিক্ষোভকারী। এ নিয়ে দেশটির গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারীরা টানা নবম দিনের মতো সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন। অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস নামের একটি পর্যবেক্ষক গোষ্ঠীর ভাষ্য অনুযায়ী, মায়ানমারে অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০০ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশকেই রাত্রিকালীন অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়। সেনাবাহিনী পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাতজন বিরোধী প্রচারকর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। মায়ানমারের জনসাধারণ চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন। সামনে কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।

বিবিসি বার্মিজের সাংবাদিক জানান, মায়ানমারে সাধারণ মানুষের ঘুমহীন রাত পার করার বিষয়টি সাধারণ হয়ে উঠছে। দেশের বড় শহর গুলোতে রাতের বেলায় নিরাপত্তা বাহিনী মানুষের বাড়িতে বাড়িতে হানা দিচ্ছে। তল্লাশি চালাচ্ছে। যারা সেনাশাসনের বিরুদ্ধে, তাদের গ্রেপ্তার বা আটকের চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ লোকজন নিজেরাই নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করছেন। তারা রাত জেগে থাকছেন। মায়ানমারে রাত্রিকালীন অভিযান ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা মিম ভেসে বেড়াচ্ছে। এসব মিমের ক্যাপশনে বলা হচ্ছে, ‘আমাদের রাত আর নিরাপদ নয়।’ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক ফিল রবার্টসন বলেন, মায়ানমারে রাত্রিবেলায় অনেক অভিযান ও তল্লাশি তৎপরতা চালানো হচ্ছে। মধ্যরাতের এই অভিযানের মাধ্যমে লোকজনকে ঘর থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে জান্তা সরকার ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মায়ানমারে ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে। রাজপথে নেমে আসছে হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভ দমনে পুলিশও কঠোর হয়ে উঠতে শুরু করেছে। সেনা অভু্যুত্থানের দিনেই নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চিসহ ঊর্ধ্বতন নেতাদের গ্রেফতারের পর বহু বিক্ষোভকারীকেও আটক করা হচ্ছে।

এর আগে ময়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনের উপকণ্ঠে সাদা কাপড় পরে বিক্ষোভ করেছে প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা। নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চির মুক্তির দাবি করে তারা। অনেকে রাতের বেলা গ্রেপ্তার বন্ধের আহ্বান জানানো প্ল্যাকার্ড বহন করে। এছাড়া রাজধানী নেপিদোতে মহড়া দিয়ে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মোটরসাইকেল ও গাড়ির আরোহী।

ইয়াঙ্গুন এবং মান্দালয় শহরে রাতের বেলা গ্রেপ্তার অভিযানের শঙ্কায় মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় টহল দিয়েছে। এছাড়া জান্তা সরকার বহু দণ্ডিতকে ক্ষমা করে মুক্তি দেয়ায় সাধারণ অপরাধ বাড়ার আশঙ্কাও করছেন অনেকে।

এদিকে, মানুষের স্বাধীনতা সীমিত করতে রাতে বেশ কয়েকটি আইন সচল করেছে জান্তা সরকার। এসব আইনের মধ্যে রয়েছে, কারও বাড়িতে রাতে অতিথি রাখতে হলে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে, আদালতের অনুমতি ছাড়াই যে কোনও স্থানে তল্লাশি চালাতে পারবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। আর বিক্ষোভের বড় বড় সমর্থকদের গ্রেপ্ততারের আদেশ দেয়া হয়েছে।

সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২ ফাল্গুন ১৪২৭ ২ রজব ১৪৪২

মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান

রাতে নিরাপত্তা বাহিনীর ধরপাকড় দিনে ফের সড়কে বিক্ষোভকারীরা

image

ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় সু চির মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত -এএফপি

মায়ানমারের সামরিক জান্তারা অভ্যুত্থান বিরোধীদের ধরতে রাতে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে লোকজনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘ হচ্ছে। এ নিয়ে দেশটিতে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ আতংক সত্ত্বেও দেশটির গণতন্ত্রপন্থি হাজারো মানুষ রাজপথে নেমে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। অভু্যুত্থানের প্রতিবাদে মায়ানমারের বড় শহরগুলোতে টানা নবম দিনের মতো বিক্ষোভ করছেন হাজার হাজার মানুষ। দিনে বিক্ষোভ চললেও এবার রাতেও বিভিন্ন এলাকায় টহল পার্টি গঠন করে বিক্ষোভ করেছেন শত শত মানুষ। এদিকে মানুষের স্বাধীনতা খর্ব করতে বেশ কিছু বিতর্কিতন আইন সচল করেছে জান্তা সরকার। রয়টার্স

এ অবস্থার পরও গুরুত্বপূর্ণ শহর-নগরের সড়কে নামেন হাজারো বিক্ষোভকারী। এ নিয়ে দেশটির গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারীরা টানা নবম দিনের মতো সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন। অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস নামের একটি পর্যবেক্ষক গোষ্ঠীর ভাষ্য অনুযায়ী, মায়ানমারে অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০০ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশকেই রাত্রিকালীন অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়। সেনাবাহিনী পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাতজন বিরোধী প্রচারকর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। মায়ানমারের জনসাধারণ চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন। সামনে কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।

বিবিসি বার্মিজের সাংবাদিক জানান, মায়ানমারে সাধারণ মানুষের ঘুমহীন রাত পার করার বিষয়টি সাধারণ হয়ে উঠছে। দেশের বড় শহর গুলোতে রাতের বেলায় নিরাপত্তা বাহিনী মানুষের বাড়িতে বাড়িতে হানা দিচ্ছে। তল্লাশি চালাচ্ছে। যারা সেনাশাসনের বিরুদ্ধে, তাদের গ্রেপ্তার বা আটকের চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ লোকজন নিজেরাই নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করছেন। তারা রাত জেগে থাকছেন। মায়ানমারে রাত্রিকালীন অভিযান ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা মিম ভেসে বেড়াচ্ছে। এসব মিমের ক্যাপশনে বলা হচ্ছে, ‘আমাদের রাত আর নিরাপদ নয়।’ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক ফিল রবার্টসন বলেন, মায়ানমারে রাত্রিবেলায় অনেক অভিযান ও তল্লাশি তৎপরতা চালানো হচ্ছে। মধ্যরাতের এই অভিযানের মাধ্যমে লোকজনকে ঘর থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে জান্তা সরকার ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মায়ানমারে ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে। রাজপথে নেমে আসছে হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভ দমনে পুলিশও কঠোর হয়ে উঠতে শুরু করেছে। সেনা অভু্যুত্থানের দিনেই নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চিসহ ঊর্ধ্বতন নেতাদের গ্রেফতারের পর বহু বিক্ষোভকারীকেও আটক করা হচ্ছে।

এর আগে ময়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনের উপকণ্ঠে সাদা কাপড় পরে বিক্ষোভ করেছে প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা। নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চির মুক্তির দাবি করে তারা। অনেকে রাতের বেলা গ্রেপ্তার বন্ধের আহ্বান জানানো প্ল্যাকার্ড বহন করে। এছাড়া রাজধানী নেপিদোতে মহড়া দিয়ে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মোটরসাইকেল ও গাড়ির আরোহী।

ইয়াঙ্গুন এবং মান্দালয় শহরে রাতের বেলা গ্রেপ্তার অভিযানের শঙ্কায় মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় টহল দিয়েছে। এছাড়া জান্তা সরকার বহু দণ্ডিতকে ক্ষমা করে মুক্তি দেয়ায় সাধারণ অপরাধ বাড়ার আশঙ্কাও করছেন অনেকে।

এদিকে, মানুষের স্বাধীনতা সীমিত করতে রাতে বেশ কয়েকটি আইন সচল করেছে জান্তা সরকার। এসব আইনের মধ্যে রয়েছে, কারও বাড়িতে রাতে অতিথি রাখতে হলে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে, আদালতের অনুমতি ছাড়াই যে কোনও স্থানে তল্লাশি চালাতে পারবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। আর বিক্ষোভের বড় বড় সমর্থকদের গ্রেপ্ততারের আদেশ দেয়া হয়েছে।