সস্তার প্লাস্টিকে বিলুপ্তির পথে বাঁশ-বেত শিল্প মানবেতর জীবনে শিল্পীরা

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বাঁশ-বেতের কারিগররা ভালো নেই। ভুগছে অর্থ সংকটে। ঐতিহ্য ধারণ করে বংশানুক্রমে চলে আসছে এ পেশা। নানাবিধ সংকটের ফলে মুখ থুবড়ে পড়ছে এ পেশার সঙ্গে জড়িত প্রায় সহস্রাধিক পরিবার। ফলে বিলুপ্তির পথে এক সময়ের ঐতিহ্যের বাঁশ-বেতের শিল্প। পেশা পরিবর্তনের চেষ্টায় কারিগররা।

জানা গেছে, এক সময় গ্রামীণ মানুষের ঘরের কাজে নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যবহার্য জিনিষ পত্রই ছিল বাঁশ-বেতের। তখনকার সময় কদরও ছিল আকাশচুম্বি। বাঁশ আর বেতের তৈরি করা জিনিসপত্র বিক্রি করেই অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী ছিলেন এখানকার কারিগররা। কালের পরিবর্তনে প্লাস্টিক আর কাঠের তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় হারিয়ে যেতে বসছে এই ঐতিহ্যবাহী বাঁশ আর বেতের শিল্প। করোনাকালীন এ সংকট আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছে এ পেশার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। ফলে জীবন যাত্রা থমকে গেছে। কোন রকম খেয়ে না খেয়ে চলছে তাদের জীবন।

এ উপজেলার নীলগঞ্জ, মিঠাগঞ্জ, লতাচাপলী, ডালবুগঞ্জ মহিপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে এ শিল্পীদের ব্যস্ততা ছিল প্রাচীণ কাল থেকে। অন্তত সহাস্রাধিক পরিবারের সদস্যরা এ পেশার সঙ্গে জড়িত ছিল। বেতের পাটি, বাঁশের খাঁচা, মাচা, চাটাই, গোলা, সুডি, চাই, মোড়া, ডালা, কুচা, টুরকি, ঝাপি, ছালুনিসহ নানা ধরনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরি করত এক সময়। এসব জিনিস বানানোর দৃশ্য এখন বেশি একটা চোখে পড়ে না। বিলুপ্তির পথে এক সময়ের ঐতিহ্যের বাঁশ-বেতের শিল্প। এ উপজেলার কয়েকটি পরিবার এ পেশাকে আকড়ে ধরলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারাতে বসেছে এ শিল্প। বাঁশ-বেতের উৎপাদন কমে যাওয়া, পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় এ পেশা পরিবর্তন করেছেন অনেকেই। পাশাপাশি প্লাস্টিক আর কাঠের পন্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এ পেশা থেকে ছিটকে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন অনেকেই।

বংশ পরম্পরায় চলে আসা আজও এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন মহিপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের অমূল্য মিস্ত্রি। ৪০ বছর ধরে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন এ পেশায়। ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়ছেন। ২০ হাজার টাকায় বাঁশ ক্রয় করে ৩০ হাজার টাকার পন্য তৈরি করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, বাজারে চাহিদা কম থাকা ও পন্যের মূল্য বৃদ্ধি না পাওয়ায় তেমন লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছি না। তারপরও কাজের অভাবে এ পেশায় এখনও টিকে আছি।

নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামের বিমল ব্যাপারীর পৈত্রিক পেশা বাঁশ-বেতের কাজ। তিনিও ৩৫ বছরের অধিক সময় ধরে এই পেশায় রয়েছে। তিনি বলেন, কী করব, অন্য কাজ তো শিখিনি। বাকি জীবনটা এই কাজই করে যাবো। তিনি আরও বলেন, আগে বড় ও মাঝারি সাইজের বাঁশ ৫০-১৫০ টাকায় কেনা যেত। এখন ৩০০-৩৫০ টাকায় কিনতে হয়। একদিনের পরিশ্রমে একটি বড় বাঁশ দিয়ে ১০টি চাঁই তৈরি করা যায়। আর প্রতিটি ৬০-৭০ টাকা করে ১০টি খাঁচা ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। এতে আমাদের লাভ হয় কম। তবে পাইকাররা এইসব খাঁচা ২০০ টাকায়ও বিক্রি করছে।

পটুয়াখালী জেলা বিসিকের সহকারী মহা ব্যবস্থাপক মো. মনির হোসেন বলেন, এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রশিক্ষণ-প্রণোদনার বিকল্প আর কিছু নেই। এ পেশায় জড়িতদের আধুনিকতার আদলে বাঁশ-বেতের কাজ শিখতে হবে। তাহলে হয় তো চাহিদা আবার বৃদ্ধি পাবে।

সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৯ ফাল্গুন ১৪২৭ ৯ রজব ১৪৪২

সস্তার প্লাস্টিকে বিলুপ্তির পথে বাঁশ-বেত শিল্প মানবেতর জীবনে শিল্পীরা

কাজী সাঈদ, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)

image

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বাঁশ-বেতের কারিগররা ভালো নেই। ভুগছে অর্থ সংকটে। ঐতিহ্য ধারণ করে বংশানুক্রমে চলে আসছে এ পেশা। নানাবিধ সংকটের ফলে মুখ থুবড়ে পড়ছে এ পেশার সঙ্গে জড়িত প্রায় সহস্রাধিক পরিবার। ফলে বিলুপ্তির পথে এক সময়ের ঐতিহ্যের বাঁশ-বেতের শিল্প। পেশা পরিবর্তনের চেষ্টায় কারিগররা।

জানা গেছে, এক সময় গ্রামীণ মানুষের ঘরের কাজে নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যবহার্য জিনিষ পত্রই ছিল বাঁশ-বেতের। তখনকার সময় কদরও ছিল আকাশচুম্বি। বাঁশ আর বেতের তৈরি করা জিনিসপত্র বিক্রি করেই অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী ছিলেন এখানকার কারিগররা। কালের পরিবর্তনে প্লাস্টিক আর কাঠের তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় হারিয়ে যেতে বসছে এই ঐতিহ্যবাহী বাঁশ আর বেতের শিল্প। করোনাকালীন এ সংকট আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছে এ পেশার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। ফলে জীবন যাত্রা থমকে গেছে। কোন রকম খেয়ে না খেয়ে চলছে তাদের জীবন।

এ উপজেলার নীলগঞ্জ, মিঠাগঞ্জ, লতাচাপলী, ডালবুগঞ্জ মহিপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে এ শিল্পীদের ব্যস্ততা ছিল প্রাচীণ কাল থেকে। অন্তত সহাস্রাধিক পরিবারের সদস্যরা এ পেশার সঙ্গে জড়িত ছিল। বেতের পাটি, বাঁশের খাঁচা, মাচা, চাটাই, গোলা, সুডি, চাই, মোড়া, ডালা, কুচা, টুরকি, ঝাপি, ছালুনিসহ নানা ধরনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরি করত এক সময়। এসব জিনিস বানানোর দৃশ্য এখন বেশি একটা চোখে পড়ে না। বিলুপ্তির পথে এক সময়ের ঐতিহ্যের বাঁশ-বেতের শিল্প। এ উপজেলার কয়েকটি পরিবার এ পেশাকে আকড়ে ধরলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারাতে বসেছে এ শিল্প। বাঁশ-বেতের উৎপাদন কমে যাওয়া, পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় এ পেশা পরিবর্তন করেছেন অনেকেই। পাশাপাশি প্লাস্টিক আর কাঠের পন্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এ পেশা থেকে ছিটকে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন অনেকেই।

বংশ পরম্পরায় চলে আসা আজও এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন মহিপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের অমূল্য মিস্ত্রি। ৪০ বছর ধরে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন এ পেশায়। ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়ছেন। ২০ হাজার টাকায় বাঁশ ক্রয় করে ৩০ হাজার টাকার পন্য তৈরি করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, বাজারে চাহিদা কম থাকা ও পন্যের মূল্য বৃদ্ধি না পাওয়ায় তেমন লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছি না। তারপরও কাজের অভাবে এ পেশায় এখনও টিকে আছি।

নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামের বিমল ব্যাপারীর পৈত্রিক পেশা বাঁশ-বেতের কাজ। তিনিও ৩৫ বছরের অধিক সময় ধরে এই পেশায় রয়েছে। তিনি বলেন, কী করব, অন্য কাজ তো শিখিনি। বাকি জীবনটা এই কাজই করে যাবো। তিনি আরও বলেন, আগে বড় ও মাঝারি সাইজের বাঁশ ৫০-১৫০ টাকায় কেনা যেত। এখন ৩০০-৩৫০ টাকায় কিনতে হয়। একদিনের পরিশ্রমে একটি বড় বাঁশ দিয়ে ১০টি চাঁই তৈরি করা যায়। আর প্রতিটি ৬০-৭০ টাকা করে ১০টি খাঁচা ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। এতে আমাদের লাভ হয় কম। তবে পাইকাররা এইসব খাঁচা ২০০ টাকায়ও বিক্রি করছে।

পটুয়াখালী জেলা বিসিকের সহকারী মহা ব্যবস্থাপক মো. মনির হোসেন বলেন, এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রশিক্ষণ-প্রণোদনার বিকল্প আর কিছু নেই। এ পেশায় জড়িতদের আধুনিকতার আদলে বাঁশ-বেতের কাজ শিখতে হবে। তাহলে হয় তো চাহিদা আবার বৃদ্ধি পাবে।