রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

নিঃস্ব সহস্রাধিক মানুষ

প্রচার ফ্ল্যাট বা প্লট বুকিং-এর। প্রস্তাব থাকে বিনিয়োগ করা টাকায় লাখে প্রতি মাসে ৬ হাজার ৩শ টাকা লাভ দেয়া হবে। সেইসঙ্গে মিলবে প্লট বা ফ্ল্যাটও। এমন প্রলোভন দেখিয়ে সহস্রাধিক মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। সারা জীবনের উপার্জিত সম্বলটুকু যারা লাভের আশায় দিয়েছে তাদের এখন মাথায় হাত। প্রতারক চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলেও মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় প্রতারিত ব্যক্তিরা এখন যোগাযোগ শুরু করেছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির সঙ্গে।

গত সোমবার রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ প্রতারক চক্রের খোঁজ পায় সিআইডি। প্রতারণার অভিযোগে এসএস আবাসন লিমিটেডে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় ৯ জনকে। আটক হওয়া ব্যক্তিরা হলো মো. আল আমিন, মো. মামুন, মো. মঞ্জুর রহমান মোহন, মো. মোজাম্মেল হোসেন, মো. সাইফুল ইসলাম, আবদুল হালিম, মো. জাহাঙ্গীর আলম, শাহাদাত হোসেন সুমন, আমিনুল ইসলাম। এসএস আবাসন-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. রাশেদুজ্জামানকে আটক করার জন্য খুঁজছে সিআইডি।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, ১ মাস আগে অভিযোগ পেয়ে এসএস আবাসন সম্পর্কে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তদন্ত করে সিআইডি নিশ্চিত হয় আবাসন ব্যবসার অন্তরালে অবৈধভাবে এমএলএম কোম্পানির আদলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণা করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এমএলএম ব্যবসার কোন বৈধ অনুমোদন তো দূরের কথা আবাসন ব্যবসায় কোন অনুমোদন নেই এসএস আবাসন নামের ওই প্রতিষ্ঠানের। প্রতিষ্ঠানটি চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দিয়ে মাঠ পর্যায়ে দালাল নিয়োগ করেছে। একজন ব্যক্তি প্লট বা ফ্ল্যাট বুকিং দেয়ার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পর তাকে বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়ার প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে রাজি হয়ে কেউ টাকা বিনিয়োগ করলে তাকে বলা হয় তিনি যদি (বিনিযোগকারী) অন্য কাউকে বিনিয়োগের জন্য নিয়ে আসেন ওই বিনিয়োগকারী বিনিয়োগের লাভের অংশেরও ভাগ দেয়া হবে। এভাবে এমএলএম সিস্টেমে ৫ থেকে ৭শ ব্যক্তির কাছ থেকে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

অতিরিক্ত জিআইডি ওমর ফরুক বলেন, প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে মো. রাশেদুর রহমান একাধিক প্রতিষ্ঠানের ব্যানার ব্যবহার করে প্রতারণা করেন। তার কাজে সহযোগিতা করতেন আটককৃতরা। বিনিয়োগের টাকা চলে যেতো রাশেদুর রহমানের ব্যাংক হিসাবে। একটি এলাকায় অফিস ভাড়া নিয়ে তা জাকজমকভাবে সাজিয়ে তুলতেন। এরপর প্রতারণা করে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর অফিস তালা মেরে দিয়ে নতুন এলাকায় অফিস নিতেন। সেখানে শুরু করতেন নতুন প্রতারণা। এভাবে গত কয়েক বছর ধরে আবাসন ব্যবসার অন্তরালে এমএলএম ব্যবসা করে সহস্রাধিক মানুষকে নিঃস্ব করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাশেদুর রহমান অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে আত্মগোপনে চলে যান। তাকে আটক করার জন্য সিআইডি অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

ওই প্রতিষ্ঠানে বেশ কিছুদিন আগে ৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেয়া ল্যান্স করপোরাল মো. আইয়ুব আলী। লাভের আশায় টাকা বিনিয়োগ করে লাভ পাওয়া তো দূরের কথা এখন তার আসল টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার ওই অফিসে গিয়ে তিনি সিআইডিকে দেখতে পান। প্রতারক চক্রের সদস্য মনে করে সিআইডি তাকে আটকও করে। পরে তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানে টাকা বিনিয়োগের কথা জানায়। পরে বুঝতে পারেন তিনি বড় ধাপ্পায় পড়েছেন। গতকাল তিনি সিআইডির কার্যালয়ে ছুটে আসেন।

বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১২ ফাল্গুন ১৪২৭ ১২ রজব ১৪৪২

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

নিঃস্ব সহস্রাধিক মানুষ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

প্রচার ফ্ল্যাট বা প্লট বুকিং-এর। প্রস্তাব থাকে বিনিয়োগ করা টাকায় লাখে প্রতি মাসে ৬ হাজার ৩শ টাকা লাভ দেয়া হবে। সেইসঙ্গে মিলবে প্লট বা ফ্ল্যাটও। এমন প্রলোভন দেখিয়ে সহস্রাধিক মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। সারা জীবনের উপার্জিত সম্বলটুকু যারা লাভের আশায় দিয়েছে তাদের এখন মাথায় হাত। প্রতারক চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলেও মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় প্রতারিত ব্যক্তিরা এখন যোগাযোগ শুরু করেছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির সঙ্গে।

গত সোমবার রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ প্রতারক চক্রের খোঁজ পায় সিআইডি। প্রতারণার অভিযোগে এসএস আবাসন লিমিটেডে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় ৯ জনকে। আটক হওয়া ব্যক্তিরা হলো মো. আল আমিন, মো. মামুন, মো. মঞ্জুর রহমান মোহন, মো. মোজাম্মেল হোসেন, মো. সাইফুল ইসলাম, আবদুল হালিম, মো. জাহাঙ্গীর আলম, শাহাদাত হোসেন সুমন, আমিনুল ইসলাম। এসএস আবাসন-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. রাশেদুজ্জামানকে আটক করার জন্য খুঁজছে সিআইডি।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, ১ মাস আগে অভিযোগ পেয়ে এসএস আবাসন সম্পর্কে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তদন্ত করে সিআইডি নিশ্চিত হয় আবাসন ব্যবসার অন্তরালে অবৈধভাবে এমএলএম কোম্পানির আদলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণা করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এমএলএম ব্যবসার কোন বৈধ অনুমোদন তো দূরের কথা আবাসন ব্যবসায় কোন অনুমোদন নেই এসএস আবাসন নামের ওই প্রতিষ্ঠানের। প্রতিষ্ঠানটি চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দিয়ে মাঠ পর্যায়ে দালাল নিয়োগ করেছে। একজন ব্যক্তি প্লট বা ফ্ল্যাট বুকিং দেয়ার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পর তাকে বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়ার প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে রাজি হয়ে কেউ টাকা বিনিয়োগ করলে তাকে বলা হয় তিনি যদি (বিনিযোগকারী) অন্য কাউকে বিনিয়োগের জন্য নিয়ে আসেন ওই বিনিয়োগকারী বিনিয়োগের লাভের অংশেরও ভাগ দেয়া হবে। এভাবে এমএলএম সিস্টেমে ৫ থেকে ৭শ ব্যক্তির কাছ থেকে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

অতিরিক্ত জিআইডি ওমর ফরুক বলেন, প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে মো. রাশেদুর রহমান একাধিক প্রতিষ্ঠানের ব্যানার ব্যবহার করে প্রতারণা করেন। তার কাজে সহযোগিতা করতেন আটককৃতরা। বিনিয়োগের টাকা চলে যেতো রাশেদুর রহমানের ব্যাংক হিসাবে। একটি এলাকায় অফিস ভাড়া নিয়ে তা জাকজমকভাবে সাজিয়ে তুলতেন। এরপর প্রতারণা করে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর অফিস তালা মেরে দিয়ে নতুন এলাকায় অফিস নিতেন। সেখানে শুরু করতেন নতুন প্রতারণা। এভাবে গত কয়েক বছর ধরে আবাসন ব্যবসার অন্তরালে এমএলএম ব্যবসা করে সহস্রাধিক মানুষকে নিঃস্ব করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাশেদুর রহমান অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে আত্মগোপনে চলে যান। তাকে আটক করার জন্য সিআইডি অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

ওই প্রতিষ্ঠানে বেশ কিছুদিন আগে ৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেয়া ল্যান্স করপোরাল মো. আইয়ুব আলী। লাভের আশায় টাকা বিনিয়োগ করে লাভ পাওয়া তো দূরের কথা এখন তার আসল টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার ওই অফিসে গিয়ে তিনি সিআইডিকে দেখতে পান। প্রতারক চক্রের সদস্য মনে করে সিআইডি তাকে আটকও করে। পরে তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানে টাকা বিনিয়োগের কথা জানায়। পরে বুঝতে পারেন তিনি বড় ধাপ্পায় পড়েছেন। গতকাল তিনি সিআইডির কার্যালয়ে ছুটে আসেন।