রিকন্ডিশন্ড গাড়ির সম্পূরক শুল্ক পুনর্বিন্যাস চায় বারভিডা

মোটরযান খাতের বাজেট প্রস্তাবনায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ির সিসি স্ল্যাব ও সম্পূরক শুল্কের হার পুনঃবিন্যাসের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোটার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)। তাদের দাবি, রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি ও বিপণন খাতে বারভিডার বিনিয়োগ রয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। বারভিডা বছরে সরকারকে কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে থাকে। তাই তাদের বিষয়টি বিবেচনার দাবি রাখে।

গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে প্রাক বাজেট আলোচনা সভায় বারভিডার পক্ষ থেকে সংগঠনটির সবাপতি আবদুল হক এই দাবি রাখেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. আলমগীর হোসেন, মাসুদ সাদিক, গোলাম কিবরিয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বারভিডার পক্ষ থেকে সভাপতি আবদুল হক বলেন, বারভিডার সদস্যরা আয়কর, ভ্যাট এবং রোড ট্যাক্স প্রদানের মাধ্যমে দেশে একটি ব্যাপক ভিত্তিক কর কাঠামো তৈরিতে অবদান রেখে আসছে।

রিকন্ডিশন্ড মোটরযান ব্যবসাকে নির্ভর করে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক, লিজিং কোম্পানি ও বিমা কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়েছে। বারভিডা মোংলা বন্দরের রাজস্ব আহরণের প্রধান খাত। দীর্ঘদিন অচল হয়ে পড়ে থাকা মোংলা বন্দর ২০০৯ সাল থেকে ব্যবহারের মাধ্যমে বারভিডা বন্দরটিকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। যার স্বীকৃতি সরকার বারভিডাকে দিয়েছে। আশির দশক থেকে জাপান থেকে মোটরকার, জিপ, স্টেশনওয়াগন, মাইক্রোবাস, ভ্যান, পিক আপ, কোস্টার, মিনিবাস, ট্রাক, লরিসহ বিভিন্ন প্রকার রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি বাংলাদেশে শুরু হয়। যার ফলে এখন বাংলাদেশের চেহারা একপ্রকার বদলে গিয়েছে। গত ৪০ বছরের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ৯০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। একই সঙ্গে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার রাজস্ব দিয়ে আসছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৮০০সিসি পর্যন্ত রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্কহার মূল্য রয়েছে ২০ শতাংশ যা ১ থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। আর সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৮০১ সিসি হতে ২০০০ সিসি পর্যন্ত ৪৫ শতাংশ রয়েছে যা ২০০১ থেকে ২৫০০ সিসি পর্যন্ত শুল্কায়ন মূল্য ৪৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ২০০১ হতে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত বর্তমানে রয়েছে ৬০ শতাংশ যা ২৫০১ সিসি থেকে ৩৫০০সিসি পর্যন্ত ৬০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৩০০১ সিসি ৪০০০ সিসি পর্যন্ত বর্তমানে রয়েছে ১০০ শতাংশ যা ৩৫০১ সিসি হতে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত ১০০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন। এছাড়া সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৪০০০ সিসি এর বেশি শুল্কায়ন মূল্য ৩০০ শতাংশ রয়েছে যা ৪০০০ সিসি এর বেশি ১৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৮০০ সিসি পর্যন্ত মাইক্রোবাসে শুল্কহার বর্তমানে ২০ শতাংশ যা ১৮০০ সিসি হতে ২৫০০ সিসি পর্যন্ত মাইক্রোবাসে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন। আর সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৮০১ সিসি হতে ২৫০০ সিসি পর্যন্ত মাইক্রোবাসে শুল্কহার বর্তমানে রয়েছে ৪৫ শতাংশ যা ১৮০০ সিসি হতে ২৫০০ সিসি পর্যন্ত ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন। এছাড়া সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ২০০১ বা তার বেশি মাইক্রোবাসে শুল্কহার বর্তমানে রয়েছে ৬০ শতাংশ যা সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ২৫০১ থেকে তার বেশি মাইক্রোবাসে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বারভিডা সভাপতি আবদুল হক আরও বলেন, একটি কম্প্রিহেনসিভ নীতিমালার আলোকে ইলেকট্রনিক ভেহিক্যাল আমদানি ও দেশের বাজারে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করা সম্ভব। বর্তমান সামাজিক বাস্তবতায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বিলাসদ্রব্যের তালিকা থেকে বাদ দেয়া উচিত।

রাজস্ব বোর্ড সদস্য মো. আলমগীর হোসেন বলেন, বারভিডার পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাব এসেছে, তা রাজস্ব সহায়ক। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে এ প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরা হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বারভিডার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম (সম্রাট), জসিম উদ্দিন মিন্টু, যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ মোকলেসুর রহমান প্রমুখ। রাজস্ব বোর্ডের পক্ষে শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসন বিভাগের সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম, শুল্ক নীতি ও আইসিটি বিভাগের সদস্য সৈয়দ গোলাম কিবরীয়াসহ বাজেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বুধবার, ০৩ মার্চ ২০২১ , ১৮ ফাল্গুন ১৪২৭ ১৮ রজব ১৪৪২

রিকন্ডিশন্ড গাড়ির সম্পূরক শুল্ক পুনর্বিন্যাস চায় বারভিডা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

মোটরযান খাতের বাজেট প্রস্তাবনায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ির সিসি স্ল্যাব ও সম্পূরক শুল্কের হার পুনঃবিন্যাসের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোটার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)। তাদের দাবি, রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি ও বিপণন খাতে বারভিডার বিনিয়োগ রয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। বারভিডা বছরে সরকারকে কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে থাকে। তাই তাদের বিষয়টি বিবেচনার দাবি রাখে।

গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে প্রাক বাজেট আলোচনা সভায় বারভিডার পক্ষ থেকে সংগঠনটির সবাপতি আবদুল হক এই দাবি রাখেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. আলমগীর হোসেন, মাসুদ সাদিক, গোলাম কিবরিয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বারভিডার পক্ষ থেকে সভাপতি আবদুল হক বলেন, বারভিডার সদস্যরা আয়কর, ভ্যাট এবং রোড ট্যাক্স প্রদানের মাধ্যমে দেশে একটি ব্যাপক ভিত্তিক কর কাঠামো তৈরিতে অবদান রেখে আসছে।

রিকন্ডিশন্ড মোটরযান ব্যবসাকে নির্ভর করে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক, লিজিং কোম্পানি ও বিমা কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়েছে। বারভিডা মোংলা বন্দরের রাজস্ব আহরণের প্রধান খাত। দীর্ঘদিন অচল হয়ে পড়ে থাকা মোংলা বন্দর ২০০৯ সাল থেকে ব্যবহারের মাধ্যমে বারভিডা বন্দরটিকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। যার স্বীকৃতি সরকার বারভিডাকে দিয়েছে। আশির দশক থেকে জাপান থেকে মোটরকার, জিপ, স্টেশনওয়াগন, মাইক্রোবাস, ভ্যান, পিক আপ, কোস্টার, মিনিবাস, ট্রাক, লরিসহ বিভিন্ন প্রকার রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি বাংলাদেশে শুরু হয়। যার ফলে এখন বাংলাদেশের চেহারা একপ্রকার বদলে গিয়েছে। গত ৪০ বছরের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ৯০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। একই সঙ্গে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার রাজস্ব দিয়ে আসছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৮০০সিসি পর্যন্ত রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্কহার মূল্য রয়েছে ২০ শতাংশ যা ১ থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। আর সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৮০১ সিসি হতে ২০০০ সিসি পর্যন্ত ৪৫ শতাংশ রয়েছে যা ২০০১ থেকে ২৫০০ সিসি পর্যন্ত শুল্কায়ন মূল্য ৪৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ২০০১ হতে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত বর্তমানে রয়েছে ৬০ শতাংশ যা ২৫০১ সিসি থেকে ৩৫০০সিসি পর্যন্ত ৬০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৩০০১ সিসি ৪০০০ সিসি পর্যন্ত বর্তমানে রয়েছে ১০০ শতাংশ যা ৩৫০১ সিসি হতে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত ১০০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন। এছাড়া সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৪০০০ সিসি এর বেশি শুল্কায়ন মূল্য ৩০০ শতাংশ রয়েছে যা ৪০০০ সিসি এর বেশি ১৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৮০০ সিসি পর্যন্ত মাইক্রোবাসে শুল্কহার বর্তমানে ২০ শতাংশ যা ১৮০০ সিসি হতে ২৫০০ সিসি পর্যন্ত মাইক্রোবাসে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন। আর সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৮০১ সিসি হতে ২৫০০ সিসি পর্যন্ত মাইক্রোবাসে শুল্কহার বর্তমানে রয়েছে ৪৫ শতাংশ যা ১৮০০ সিসি হতে ২৫০০ সিসি পর্যন্ত ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন। এছাড়া সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ২০০১ বা তার বেশি মাইক্রোবাসে শুল্কহার বর্তমানে রয়েছে ৬০ শতাংশ যা সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ২৫০১ থেকে তার বেশি মাইক্রোবাসে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বারভিডা সভাপতি আবদুল হক আরও বলেন, একটি কম্প্রিহেনসিভ নীতিমালার আলোকে ইলেকট্রনিক ভেহিক্যাল আমদানি ও দেশের বাজারে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করা সম্ভব। বর্তমান সামাজিক বাস্তবতায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বিলাসদ্রব্যের তালিকা থেকে বাদ দেয়া উচিত।

রাজস্ব বোর্ড সদস্য মো. আলমগীর হোসেন বলেন, বারভিডার পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাব এসেছে, তা রাজস্ব সহায়ক। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে এ প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরা হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বারভিডার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম (সম্রাট), জসিম উদ্দিন মিন্টু, যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ মোকলেসুর রহমান প্রমুখ। রাজস্ব বোর্ডের পক্ষে শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসন বিভাগের সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম, শুল্ক নীতি ও আইসিটি বিভাগের সদস্য সৈয়দ গোলাম কিবরীয়াসহ বাজেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।