নেদারল্যান্ডসের কাছ থেকে সমুদ্র অর্থনীতি শিখতে পারে বাংলাদেশ : ডিসিসিআই সভাপতি

বাংলাদেশ সমুদ্র অর্থনীতির সুফল পেতে নেদারল্যান্ডসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। গতকাল তার সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত মান্যবর হ্যারি ভ্যারওয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি এমন মন্তব্য করেন। ঢাকা চেম্বার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এনকেএ মবিন, সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন এবং নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ফাস্ট সেক্রেটারি বাস ব্ল্য এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরে দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১.২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৩৮.৩৩ এবং ১০৯৮.৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি উল্লেখ করেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে গত অর্থবছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৪.০৭ শতাংশ কমেছে।’

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ মূলত তৈরি পোষাক, হিমায়িত মাছ এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য নেদারল্যান্ডসে রপ্তানি করে এবং বাংলাদেশে হতে আরও বেশি হারে তৈরি পোষাক ও পরিবেশবান্ধব পাট ও পাটজাত প্রভৃতি পণ্য আমদানির আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের দিক থেকে নেদারল্যান্ডস তৃতীয় স্থানে রয়েছে এবং বর্তমানে খাদ্য, জ¦ালানি, সিমেন্ট, তৈরি পোষাক ও টেক্সটাইল প্রভৃতি খাতে নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা প্রায় ১.৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ করেছে, যা বাংলাদেশে মোট বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রায় ৮ শতাংশ।’

নদী ও পানি ব্যবস্থাপনায় নেদারল্যান্ডসের দক্ষতার বিষয়টি উল্লেখ করে ডিসিসিআই সভাপতি বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের অন্য বিভাগীয় শহরগুলোর পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নেদারল্যান্ডসের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের প্রস্তাব করেন। এছাড়াও বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ¦ালানি, নদী ব্যবস্থাপনা ও নদী শাসন, ডিজিটাল শিল্পখাত এবং সমুদ্র অর্থনীতি অত্যন্ত সম্ভাবনায় হিসেবে উল্লেখ করে এ খাতসমূহে বিনিয়াগের জন্য নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান রিজওয়ান রাহমান।

বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে উল্লেখ করে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, ‘এ খাতের সুফল ভোগ করতে নেদারল্যান্ডসের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।’ এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের জন্য তিনি নেদারল্যান্ডসের সরকার ও উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।

সাক্ষাৎকালে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত মান্যবর হ্যারি ভ্যারওয়ে বাংলাদেশকে স্বল্পন্নোত দেশ হতে উত্তরণের সুপারিশ গৃহীত হওয়ার অভিনন্দন জানান। তবে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তিনি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের উপর জোরারোপ করেন।

এছাড়াও তিনি ইউরোপীয় বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি প্লাস সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি বাংলাদেশের কূটনৈতিক কার্যক্রম আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মতপ্রকাশ করেন এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশের ইমেজ বৃদ্ধিতে ব্যান্ডিং কার্যক্রম সম্প্রসারণের আহ্বান জানান। রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পোল্ট্রি ও ডেইরি, ড্রেজিং, ফিন্যান্সিয়াল টেকনোলোজি (ফিনটেক) এবং মেরিটাইম প্রভৃতি খাত ডাচ বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশের ডেল্টা প্ল্যানের সফল বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের বেসরকারিখাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করা সম্ভব হলে তারা এ দেশের অর্থনীতির গতিধারা পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে।

সোমবার, ১৫ মার্চ ২০২১ , ৩০ ফাল্গুন ১৪২৭ ৩০ রজব ১৪৪২

নেদারল্যান্ডসের কাছ থেকে সমুদ্র অর্থনীতি শিখতে পারে বাংলাদেশ : ডিসিসিআই সভাপতি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

বাংলাদেশ সমুদ্র অর্থনীতির সুফল পেতে নেদারল্যান্ডসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। গতকাল তার সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত মান্যবর হ্যারি ভ্যারওয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি এমন মন্তব্য করেন। ঢাকা চেম্বার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এনকেএ মবিন, সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন এবং নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ফাস্ট সেক্রেটারি বাস ব্ল্য এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরে দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১.২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৩৮.৩৩ এবং ১০৯৮.৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি উল্লেখ করেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে গত অর্থবছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৪.০৭ শতাংশ কমেছে।’

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ মূলত তৈরি পোষাক, হিমায়িত মাছ এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য নেদারল্যান্ডসে রপ্তানি করে এবং বাংলাদেশে হতে আরও বেশি হারে তৈরি পোষাক ও পরিবেশবান্ধব পাট ও পাটজাত প্রভৃতি পণ্য আমদানির আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের দিক থেকে নেদারল্যান্ডস তৃতীয় স্থানে রয়েছে এবং বর্তমানে খাদ্য, জ¦ালানি, সিমেন্ট, তৈরি পোষাক ও টেক্সটাইল প্রভৃতি খাতে নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তারা প্রায় ১.৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ করেছে, যা বাংলাদেশে মোট বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রায় ৮ শতাংশ।’

নদী ও পানি ব্যবস্থাপনায় নেদারল্যান্ডসের দক্ষতার বিষয়টি উল্লেখ করে ডিসিসিআই সভাপতি বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের অন্য বিভাগীয় শহরগুলোর পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নেদারল্যান্ডসের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের প্রস্তাব করেন। এছাড়াও বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ¦ালানি, নদী ব্যবস্থাপনা ও নদী শাসন, ডিজিটাল শিল্পখাত এবং সমুদ্র অর্থনীতি অত্যন্ত সম্ভাবনায় হিসেবে উল্লেখ করে এ খাতসমূহে বিনিয়াগের জন্য নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান রিজওয়ান রাহমান।

বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে উল্লেখ করে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, ‘এ খাতের সুফল ভোগ করতে নেদারল্যান্ডসের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।’ এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের জন্য তিনি নেদারল্যান্ডসের সরকার ও উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।

সাক্ষাৎকালে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত মান্যবর হ্যারি ভ্যারওয়ে বাংলাদেশকে স্বল্পন্নোত দেশ হতে উত্তরণের সুপারিশ গৃহীত হওয়ার অভিনন্দন জানান। তবে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তিনি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের উপর জোরারোপ করেন।

এছাড়াও তিনি ইউরোপীয় বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি প্লাস সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি বাংলাদেশের কূটনৈতিক কার্যক্রম আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মতপ্রকাশ করেন এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশের ইমেজ বৃদ্ধিতে ব্যান্ডিং কার্যক্রম সম্প্রসারণের আহ্বান জানান। রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পোল্ট্রি ও ডেইরি, ড্রেজিং, ফিন্যান্সিয়াল টেকনোলোজি (ফিনটেক) এবং মেরিটাইম প্রভৃতি খাত ডাচ বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশের ডেল্টা প্ল্যানের সফল বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের বেসরকারিখাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করা সম্ভব হলে তারা এ দেশের অর্থনীতির গতিধারা পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে।