উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে করণীয় জানালেন অর্থনীতিবিদরা

স্বল্প উন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের বর্তমানে বাংলাদেশের করণীয় নিয়ে নানা পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। সম্প্রতি ‘উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ : প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বিশাল অর্জন’ শীর্ষক লাইভ ওয়েবিনার করেছে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ। সেই ওয়েবিনারে তারা এই পরামর্শ দেন। তারা বলেন, ‘বাংলাদেশকে নিয়ে এক সময় যারা সমালোচনা করেছে, তাদের জন্য এখন বাংলাদেশ একটি উদাহরণ। ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।

আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের উপ-উপাচার্য ড. শেখ মামুন খালেদ এবং ট্রাস্টি বোর্ডের উপদেষ্টা মোহাম্মদ এ আরাফাত।

সুবিধা হারালেও উদ্বিগ্ন হওয়ার

কিছু নেই : মির্জ্জা আজিজ

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের কারণে ২০২৬ সালের পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের কিছু সুবিধা হারানোর শঙ্কা থাকলেও উদ্বেগের কিছু দেখছেন না তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘কিছু চ্যালেঞ্জ আসবে। তবে সেটি মোকাবিলার সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে। এখন দরকার পরিকল্পনা নিয়ে সময়াবদ্ধ কর্মসূচির মাধ্যমে কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিজেদের সক্ষম করে তোলা। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বৈষম্য কমিয়ে সুষম প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করা। যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে বাংলাদেশ সেসব ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারবে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ যখন উন্নয়নশীলে উত্তরণের প্রথম সুপারিশ পেয়েছিল তখনই বলেছিলাম, আমাদের অর্থনৈতিক যে সক্ষমতা সেটা ২০২১ সালের চূড়ান্ত রিভিউতেও অটুট থাকবে। এখন আমি আশাবাদী, উন্নয়নশীলের যে চ্যালেঞ্জ আসবে সেটাও আমরা মোকাবিলা করতে পারব। এ নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’

প্রস্তুতি নিতে হবে এখন

থেকেই : আহসান মনসুর

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ পরবর্তী সময় মোকাবিলা এবং দেশকে আরও এগিয়ে নিতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়ার তাগিদ দিলেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীলের চূড়ান্ত ধাপ সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করতে হলে অনেক কিছুর সঙ্গেই আপোষ করতে হবে। সুরক্ষা নির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে উদার বাণিজ্যা নীতি গ্রহণ করতে হবে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ থেকে বাংলাদেশ যে পর্যায়ে এসেছে সেটি সত্যিই গর্বের বিষয়। কারণ, এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ঘটনা বৈশ্বিক উন্নয়নে অনেক বড় বিষয়। এ অর্জন কারও একার নয়। দেশের আপামর জনগণের। বাংলাদেশ যে ধারাবাহিক গতিতে এগোচ্ছে, ২০২১ সালের মধ্যেই আমরা এলডিসি থেকে বের হতে পারতাম। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি অতিরিক্ত সুরক্ষা নীতি ও সক্ষমতার অভাবে। এখন ২০২৬ সালের পর আমরা চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছাব। দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই।’

বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং

বাড়বে : মোস্তাফিজুর

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের যে ব্র্যান্ডিং হবে তাতে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এর ফলে যে ব্র্যান্ডিং হবে তার কারণে আন্তর্জাতিক যেসব সংস্থা আছে বা আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিংয়ের কথা বলি, সরকার কোন সলভেন্ট বন্ড ইত্যাদি যদি রেইজ করতে চায় তাহলে সেগুলোতে রিস্ক পারসেপশান মিলে ইতিবাচক ফলাফল পাব বলে আশা করি। প্রথমত, আমাদের বাজার সুবিধা। দ্বিতীয়ত, অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক সে সম্পর্কের মধ্যে একটা পরিবর্তন হবে। তৃতীয়ত, আমাদের অভ্যন্তরীণ নিজস্ব নীতিমালার ওপর প্রভাব। চতুর্থত, এনভায়রনমেন্ট বা যেগুলোতে শৈথিল্য আছে সেখানে আমাদের অনেক বড় পরিবর্তন হবে। ওই নিয়ম নীতিগুলো যদি আমরা মেনে না চলি, তাহলে আমাদের ডব্লিউটিওতে যে ডিসপিউট সেটলমেন্ট বডি আছে সেখানে অন্যান্য দেশ আমাদের বিরুদ্ধে কেইস নিয়ে আসতে পারে এবং সেটার ফলে নেতিবাচক একটা প্রভাব অর্থনীতিতে পড়তে পারে।’

মাথাপিছু আয় ৫ হাজার ডলার

কঠিন নয় : শিবলী রুবাইয়াত

বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে মাথাপিছু আয় পাঁচ হাজার ডলারে নিয়ে যাওয়াও কঠিন হবে না বলে মনে করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সবাই চাই ভালোর দিকে যেতে। মাথাপিছু আয় সাড়ে পাঁচশ ডলার ১২ বছরের মধ্যে চারগুণ বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। এই প্রবণতা ধরে রাখা গেলে এটা পাঁচ হাজার ডলারে অর্জন করা কঠিন হবে না। মাথাপিছু আয় বাড়লে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে আরও কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। এখন থেকেই দক্ষতা বাড়াতে হবে। পণ্যের উৎপাদন খরচ কমাতে হবে।

উৎপাদনশীলতা নির্ভর অর্থনীতিতে যেতে হবে। মানব সম্পদের দক্ষাতার বিষয়ে নজর দিতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে পণ্যের খরচ কমিয়ে আনা জরুরি। এটা নিশ্চিত করতে পারলে শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করলেও কোন অসুবিধা হবে না। সেজন্য অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিতে হবে।’

পেছনে তাকানোর সুযোগ

নেই : মামুন খালেদ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির নানা চিত্র তুলে ধরেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের উপ-উপাচার্য ড. শেখ মামুন খালেদ। তার মতে, এখন কেবল এগিয়ে যেতে হবে। পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘এখন ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হতে হলে কী কী প্যারামিটার অর্জন করতে হবে সেদিকে নজর দিতে হবে।

মানুষ এগিযে যাবে, কখনও পিছিয়ে যেতে পারে না। পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছেন। কারণ তিনি জানেন বাংলাদেশকে যদি ডিজটাল না করা হয়, তাহলে আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে পড়ব। সেজন্য তিনি টেকনোলজি ফ্রেন্ডলি দেশ হিসেবে পরিবর্তন করতে চেয়েছেন। পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার যে লিডারশিপ সেটা প্রধানমন্ত্রীর আছে। এজন্য তিনি পেরেছেন।’

বিশ্বের বিস্ময় বাংলাদেশ : চৌধুরী নাফিজ সরাফাত

আলোচনায় অংশ নেয়া সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘যে বাংলাদেশ এক সময় পরিচিত ছিল বন্যাকবলিত, দারিদ্রপীড়িত দেশ হিসেবে, সেই দেশই এখন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্বের বিস্ময়। এটা কেবলই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী এবং জাদুকরি নেতৃত্বের কারণে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ কনসেপ্ট বিশ্বকে আলোড়িত করেছে। কোভিড সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব তাকে জায়গা করে দিয়েছে বিশ্বের সেরা ৩ নেতার কাতারে। তার হাত ধরেই আজ আমরা স্বল্পোন্নত দেশের গ-ি পেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে।’

সোমবার, ১৫ মার্চ ২০২১ , ৩০ ফাল্গুন ১৪২৭ ৩০ রজব ১৪৪২

কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের ওয়েবিনার

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে করণীয় জানালেন অর্থনীতিবিদরা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

স্বল্প উন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের বর্তমানে বাংলাদেশের করণীয় নিয়ে নানা পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। সম্প্রতি ‘উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ : প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বিশাল অর্জন’ শীর্ষক লাইভ ওয়েবিনার করেছে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ। সেই ওয়েবিনারে তারা এই পরামর্শ দেন। তারা বলেন, ‘বাংলাদেশকে নিয়ে এক সময় যারা সমালোচনা করেছে, তাদের জন্য এখন বাংলাদেশ একটি উদাহরণ। ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।

আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের উপ-উপাচার্য ড. শেখ মামুন খালেদ এবং ট্রাস্টি বোর্ডের উপদেষ্টা মোহাম্মদ এ আরাফাত।

সুবিধা হারালেও উদ্বিগ্ন হওয়ার

কিছু নেই : মির্জ্জা আজিজ

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের কারণে ২০২৬ সালের পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের কিছু সুবিধা হারানোর শঙ্কা থাকলেও উদ্বেগের কিছু দেখছেন না তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘কিছু চ্যালেঞ্জ আসবে। তবে সেটি মোকাবিলার সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে। এখন দরকার পরিকল্পনা নিয়ে সময়াবদ্ধ কর্মসূচির মাধ্যমে কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিজেদের সক্ষম করে তোলা। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বৈষম্য কমিয়ে সুষম প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করা। যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে বাংলাদেশ সেসব ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারবে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ যখন উন্নয়নশীলে উত্তরণের প্রথম সুপারিশ পেয়েছিল তখনই বলেছিলাম, আমাদের অর্থনৈতিক যে সক্ষমতা সেটা ২০২১ সালের চূড়ান্ত রিভিউতেও অটুট থাকবে। এখন আমি আশাবাদী, উন্নয়নশীলের যে চ্যালেঞ্জ আসবে সেটাও আমরা মোকাবিলা করতে পারব। এ নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’

প্রস্তুতি নিতে হবে এখন

থেকেই : আহসান মনসুর

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ পরবর্তী সময় মোকাবিলা এবং দেশকে আরও এগিয়ে নিতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়ার তাগিদ দিলেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীলের চূড়ান্ত ধাপ সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করতে হলে অনেক কিছুর সঙ্গেই আপোষ করতে হবে। সুরক্ষা নির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে উদার বাণিজ্যা নীতি গ্রহণ করতে হবে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ থেকে বাংলাদেশ যে পর্যায়ে এসেছে সেটি সত্যিই গর্বের বিষয়। কারণ, এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ঘটনা বৈশ্বিক উন্নয়নে অনেক বড় বিষয়। এ অর্জন কারও একার নয়। দেশের আপামর জনগণের। বাংলাদেশ যে ধারাবাহিক গতিতে এগোচ্ছে, ২০২১ সালের মধ্যেই আমরা এলডিসি থেকে বের হতে পারতাম। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি অতিরিক্ত সুরক্ষা নীতি ও সক্ষমতার অভাবে। এখন ২০২৬ সালের পর আমরা চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছাব। দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই।’

বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং

বাড়বে : মোস্তাফিজুর

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের যে ব্র্যান্ডিং হবে তাতে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এর ফলে যে ব্র্যান্ডিং হবে তার কারণে আন্তর্জাতিক যেসব সংস্থা আছে বা আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিংয়ের কথা বলি, সরকার কোন সলভেন্ট বন্ড ইত্যাদি যদি রেইজ করতে চায় তাহলে সেগুলোতে রিস্ক পারসেপশান মিলে ইতিবাচক ফলাফল পাব বলে আশা করি। প্রথমত, আমাদের বাজার সুবিধা। দ্বিতীয়ত, অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক সে সম্পর্কের মধ্যে একটা পরিবর্তন হবে। তৃতীয়ত, আমাদের অভ্যন্তরীণ নিজস্ব নীতিমালার ওপর প্রভাব। চতুর্থত, এনভায়রনমেন্ট বা যেগুলোতে শৈথিল্য আছে সেখানে আমাদের অনেক বড় পরিবর্তন হবে। ওই নিয়ম নীতিগুলো যদি আমরা মেনে না চলি, তাহলে আমাদের ডব্লিউটিওতে যে ডিসপিউট সেটলমেন্ট বডি আছে সেখানে অন্যান্য দেশ আমাদের বিরুদ্ধে কেইস নিয়ে আসতে পারে এবং সেটার ফলে নেতিবাচক একটা প্রভাব অর্থনীতিতে পড়তে পারে।’

মাথাপিছু আয় ৫ হাজার ডলার

কঠিন নয় : শিবলী রুবাইয়াত

বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে মাথাপিছু আয় পাঁচ হাজার ডলারে নিয়ে যাওয়াও কঠিন হবে না বলে মনে করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সবাই চাই ভালোর দিকে যেতে। মাথাপিছু আয় সাড়ে পাঁচশ ডলার ১২ বছরের মধ্যে চারগুণ বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। এই প্রবণতা ধরে রাখা গেলে এটা পাঁচ হাজার ডলারে অর্জন করা কঠিন হবে না। মাথাপিছু আয় বাড়লে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে আরও কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। এখন থেকেই দক্ষতা বাড়াতে হবে। পণ্যের উৎপাদন খরচ কমাতে হবে।

উৎপাদনশীলতা নির্ভর অর্থনীতিতে যেতে হবে। মানব সম্পদের দক্ষাতার বিষয়ে নজর দিতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে পণ্যের খরচ কমিয়ে আনা জরুরি। এটা নিশ্চিত করতে পারলে শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করলেও কোন অসুবিধা হবে না। সেজন্য অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিতে হবে।’

পেছনে তাকানোর সুযোগ

নেই : মামুন খালেদ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির নানা চিত্র তুলে ধরেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের উপ-উপাচার্য ড. শেখ মামুন খালেদ। তার মতে, এখন কেবল এগিয়ে যেতে হবে। পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘এখন ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হতে হলে কী কী প্যারামিটার অর্জন করতে হবে সেদিকে নজর দিতে হবে।

মানুষ এগিযে যাবে, কখনও পিছিয়ে যেতে পারে না। পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছেন। কারণ তিনি জানেন বাংলাদেশকে যদি ডিজটাল না করা হয়, তাহলে আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে পড়ব। সেজন্য তিনি টেকনোলজি ফ্রেন্ডলি দেশ হিসেবে পরিবর্তন করতে চেয়েছেন। পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার যে লিডারশিপ সেটা প্রধানমন্ত্রীর আছে। এজন্য তিনি পেরেছেন।’

বিশ্বের বিস্ময় বাংলাদেশ : চৌধুরী নাফিজ সরাফাত

আলোচনায় অংশ নেয়া সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘যে বাংলাদেশ এক সময় পরিচিত ছিল বন্যাকবলিত, দারিদ্রপীড়িত দেশ হিসেবে, সেই দেশই এখন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্বের বিস্ময়। এটা কেবলই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী এবং জাদুকরি নেতৃত্বের কারণে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ কনসেপ্ট বিশ্বকে আলোড়িত করেছে। কোভিড সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব তাকে জায়গা করে দিয়েছে বিশ্বের সেরা ৩ নেতার কাতারে। তার হাত ধরেই আজ আমরা স্বল্পোন্নত দেশের গ-ি পেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে।’