চীনের ৫ লাখ ডোজ ১০ মে’র মধ্যে আসতে পারে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

করোনা টিকার মজুদ একেবারে শেষ পর্যায়ে। টিকা পাওয়ার আগ পর্যন্ত মাস্ক পরাকেই ‘বড় টিকা’ হিসেবে দেখছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একই সঙ্গে টিকা পেতে নানা তোড়জোড় অব্যাহত রয়েছে। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি ‘মডার্নার’ তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা আনার জন্য বাংলাদেশের ?ওষুধ কোম্পানি রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালস সরকারের কাছে আবেদন করেছে। এছাড়া চীনের উপহার হিসেবে দেয়া পাঁচ লাখ ডোজ টিকা আগামী ১০ মে’র মধ্যে দেশে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের জানান, মডার্নার টিকা আনার জন্য রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালস আবেদন করেছে।’

এ সংক্রান্ত কাগজপত্র ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে (ডিজিডিএস) পাঠানো হয়েছে জানিয়ে ডিজি বলেন, ‘তারা যাচাই-বাছাই করে দেখছেন, ওই কোম্পানির সক্ষমতা আছে কিনা, তারা আনতে পারবেন কিনা।’

মডার্নার টিকা শূন্য ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। দেশে এ ধরনের ব্যবস্থা আছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের ক্যাপাসিটিতে আমরা এটা ঢাকায় রাখতে পারব। কিন্তু ঢাকার বাইরে এই টিকা সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নেই।’

চীনের সিনোফার্ম যে পাঁচ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দিচ্ছে, সেগুলো কবে নাগাদ আসতে পারে জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, এখনও সঠিক তারিখ পাওয়া যায়নি।

তবে উপহার হিসেবে চীনের দেয়া পাঁচ লাখ ডোজ করোনা টিকা ১০ মের মধ্যে দেশে পৌঁছাতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মন্ত্রী গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘চীন আমাদের বলেছে ৫ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দেবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটা আনার ব্যবস্থা করছে, হয়তো ১০ তারিখের মধ্যে বাংলাদেশে আসতে পারে।’

সরকার চীন থেকে যে টিকা কিনতে চায় সেগুলো আসতে আরও সময় লাগবে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, টিকা কেনার জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। চীন তাতে সম্মত হলে আলোচনা শুরু হবে।

মন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গেও আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা টিকা দিতে চায়, উৎপাদনও করতে চাচ্ছে। আমরা দুটি দেশের সঙ্গেই কথা বলে রাখছি।’

টিকার মজুদ একেবারে শেষ পর্যায়ে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম গতকাল দুপুরে ভার্চুয়াল প্রেস বিফ্রিংয়ে জানান, দেশে টিকার কিছুটা সংকট আছে। কারণ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে যে পরিমাণ টিকার প্রত্যাশা ছিল যথাসময়ে পাওয়ার সেটা এখনও পাওয়া যায়নি। সেটি পাওয়ার জন্য নানাভাবে যোগাযোগ চলছে।

ভারতের বাইরেও যেসব দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উৎপাদন করা হচ্ছে সেখানেও টিকার জন্য যোগাযোগ হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই পরিচালক বলেন, ‘আমরা যদি পেয়ে যাই, তাহলে প্রথম ডোজের ঘাটতি পূরণ করা খুবই সহজ হয়ে যাবে।

দেশে টিকার মজুদ খুব বেশি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যে পরিমাণ টিকা সংগ্রহ করেছিলাম, তা একেবারেই শেষের পর্যায়ে চলে এসেছে।’

তিনি জানান, রোববার (২ মে) পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৭০৯ জন প্রথম ডোজ পেয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান কর্মসূচি চলমান আছে, সেটির জন্য নিবন্ধন করেছেন ২৯ লাখ ৩৬ হাজার ২৪১ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে মোট ৮৭ লাখ ৫৫ হাজার ৯৫০ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।

চুক্তির আওতায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র টিকা এবং ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া টিকাসহ সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে মোট এক কোটি তিন লাখ ডোজ টিকা এসেছে। এ হিসাবে রোববার পর্যন্ত ১৫ লাখের বেশি টিকার মজুদ ছিল।

ডা. নাজমুল ইসলাম আরও বলেন, ‘টিকা আসতে দেরি হোক বা যা-ই হোক না কেন, যতক্ষণ টিকা হাতে না আসছে মাস্ক হলো আমাদের সবচেয়ে বড় টিকা। এটি সহজলভ্য, আমরা সবাই নিয়ম মেনে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেটি ব্যবহার করি।’

মঙ্গলবার, ০৪ মে ২০২১ , ২২ বৈশাখ ১৪২৮ ২২ রমজান ১৪৪২

টিকা পেতে তোড়জোড়

চীনের ৫ লাখ ডোজ ১০ মে’র মধ্যে আসতে পারে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

করোনা টিকার মজুদ একেবারে শেষ পর্যায়ে। টিকা পাওয়ার আগ পর্যন্ত মাস্ক পরাকেই ‘বড় টিকা’ হিসেবে দেখছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একই সঙ্গে টিকা পেতে নানা তোড়জোড় অব্যাহত রয়েছে। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি ‘মডার্নার’ তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা আনার জন্য বাংলাদেশের ?ওষুধ কোম্পানি রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালস সরকারের কাছে আবেদন করেছে। এছাড়া চীনের উপহার হিসেবে দেয়া পাঁচ লাখ ডোজ টিকা আগামী ১০ মে’র মধ্যে দেশে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের জানান, মডার্নার টিকা আনার জন্য রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালস আবেদন করেছে।’

এ সংক্রান্ত কাগজপত্র ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে (ডিজিডিএস) পাঠানো হয়েছে জানিয়ে ডিজি বলেন, ‘তারা যাচাই-বাছাই করে দেখছেন, ওই কোম্পানির সক্ষমতা আছে কিনা, তারা আনতে পারবেন কিনা।’

মডার্নার টিকা শূন্য ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। দেশে এ ধরনের ব্যবস্থা আছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের ক্যাপাসিটিতে আমরা এটা ঢাকায় রাখতে পারব। কিন্তু ঢাকার বাইরে এই টিকা সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নেই।’

চীনের সিনোফার্ম যে পাঁচ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দিচ্ছে, সেগুলো কবে নাগাদ আসতে পারে জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, এখনও সঠিক তারিখ পাওয়া যায়নি।

তবে উপহার হিসেবে চীনের দেয়া পাঁচ লাখ ডোজ করোনা টিকা ১০ মের মধ্যে দেশে পৌঁছাতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মন্ত্রী গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘চীন আমাদের বলেছে ৫ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দেবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটা আনার ব্যবস্থা করছে, হয়তো ১০ তারিখের মধ্যে বাংলাদেশে আসতে পারে।’

সরকার চীন থেকে যে টিকা কিনতে চায় সেগুলো আসতে আরও সময় লাগবে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, টিকা কেনার জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। চীন তাতে সম্মত হলে আলোচনা শুরু হবে।

মন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গেও আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা টিকা দিতে চায়, উৎপাদনও করতে চাচ্ছে। আমরা দুটি দেশের সঙ্গেই কথা বলে রাখছি।’

টিকার মজুদ একেবারে শেষ পর্যায়ে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম গতকাল দুপুরে ভার্চুয়াল প্রেস বিফ্রিংয়ে জানান, দেশে টিকার কিছুটা সংকট আছে। কারণ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে যে পরিমাণ টিকার প্রত্যাশা ছিল যথাসময়ে পাওয়ার সেটা এখনও পাওয়া যায়নি। সেটি পাওয়ার জন্য নানাভাবে যোগাযোগ চলছে।

ভারতের বাইরেও যেসব দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উৎপাদন করা হচ্ছে সেখানেও টিকার জন্য যোগাযোগ হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই পরিচালক বলেন, ‘আমরা যদি পেয়ে যাই, তাহলে প্রথম ডোজের ঘাটতি পূরণ করা খুবই সহজ হয়ে যাবে।

দেশে টিকার মজুদ খুব বেশি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যে পরিমাণ টিকা সংগ্রহ করেছিলাম, তা একেবারেই শেষের পর্যায়ে চলে এসেছে।’

তিনি জানান, রোববার (২ মে) পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৭০৯ জন প্রথম ডোজ পেয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান কর্মসূচি চলমান আছে, সেটির জন্য নিবন্ধন করেছেন ২৯ লাখ ৩৬ হাজার ২৪১ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে মোট ৮৭ লাখ ৫৫ হাজার ৯৫০ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।

চুক্তির আওতায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র টিকা এবং ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া টিকাসহ সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে মোট এক কোটি তিন লাখ ডোজ টিকা এসেছে। এ হিসাবে রোববার পর্যন্ত ১৫ লাখের বেশি টিকার মজুদ ছিল।

ডা. নাজমুল ইসলাম আরও বলেন, ‘টিকা আসতে দেরি হোক বা যা-ই হোক না কেন, যতক্ষণ টিকা হাতে না আসছে মাস্ক হলো আমাদের সবচেয়ে বড় টিকা। এটি সহজলভ্য, আমরা সবাই নিয়ম মেনে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেটি ব্যবহার করি।’