গ্রন্থাগারিক নিয়োগ জটিলতা

আবু বক্কর সিদ্দিক

বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকার শিক্ষার মানোন্নয়নে একদিকে যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধনে কাজ করে যাচ্ছে অন্যদিকে অন্যদিকে শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থীর জীবন-মান উন্নয়নেও নানা রকম সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ গত ২৮ মার্চ- ২০২১ তারিখে নতুন করে প্রকাশ করেছে ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১’।

নীতিমালাটিতে সহঃগ্রন্থাগারিক-কাম-ক্যাটালগার পদটিকে সহঃশিক্ষক এবং গ্রন্থাগারিক পদটিকে প্রভাষকের মর্যাদা দেয়া হয়, যা ছিল গ্রন্থাগারিক পেশাজীবীদের বহুদিনের দাবি। নীতিমালার এই স্বীকৃতি পেশাজীবীদের জন্য একদিকে যেমন সম্মান বয়ে এনেছে অন্যদিকে পদ-বলে তাদের প্রশাসনিক পদে পদোন্নতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এরূপ পদমর্যাদার ফলে পদ দুটির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দেখা দিয়েছে জটিলতা।

যেহেতু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক-প্রভাষক পদগুলো ২০১৬ সাল থেকে নন-গভর্মেন্ট টিচার্স রেজিস্ট্রেশন এবং সার্টিফিকেশন অথরিটি (এনটিআরসিএ) নিয়োগ দিয়ে আসছে। সে হিসেবে পদ দুটির নিয়োগ এনটিআরসিএ-এর অধীন যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও নীতিমালায় এ বিষয়ে স্পষ্ট কোন নির্দেশনা নেই। তবে নীতিমালা প্রণয়নের পর থেকে এই পদগুলোতে নিয়োগ প্রদান বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে করে ইতিপূর্বে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া প্রতিষ্ঠান এবং পদগুলোতে আবেদনকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

ভবিষ্যতে পদ দুটির নিয়োগ কোন প্রক্রিয়ায় হতে পারে সে সম্পর্কে চাকরিপ্রত্যাশীদের পক্ষ থেকে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান- এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে আলোচনা চলছে। অতিসত্বর এটি স্পষ্টীকরণে একটি প্রজ্ঞাপণ জারি করা হবে।

চাকরিপ্রত্যাশীরা সহঃশিক্ষক-প্রভাষক পদমর্যাদাকে সাধুবাদ জানালেও তাদের বেশিরভাগ পদ দুটির নিয়োগ এনটিআরসিএতে নেয়ার বিরুদ্ধে। কারণ এনটিআরসিএর অধীনে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ বেশ পুরোনো এবং এ সংক্রান্ত শতাধিক মামলায় প্রতিষ্ঠানটি জর্জরিত। এনটিআরসিএর নিবন্ধন পদ্ধতি এবং নিয়োগ প্রদান পদ্ধতি সম্পূর্ণ আলাদা দুটি বিষয়। এর নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথমে প্রিলিমিনারি টেস্ট, তারপর লিখিত পরীক্ষা এবং সর্বশেষ ভাইভাতে অংশগ্রহণ করতে হয়। অতঃপর একজন চাকরিপ্রত্যাশীকে প্রথমে শুধু সনদ প্রদান করা হয়। আবার এই সনদ অর্জনকারীদের নিয়োগের জন্য পুনরায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এভাবে ধাপে ধাপে চূড়ান্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কমপক্ষে দুই বছর সময় লেগে যায়। অর্থাৎ নিবন্ধন পরীক্ষার সময় একজন পরীক্ষার্থীর বয়স ৩৩ বছর হলে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ তথা চূড়ান্ত নিয়োগের সময় তার বয়স ৩৫ প্লাস হয়ে যাবে। আর জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে কাউকে নিয়োগ প্রদানের নিয়ম নেই। সুতরাং এরূপ নিয়োগ দীর্ঘসূত্রতার কারণে একজন প্রার্থীর ৩৫ বছর পেরিয়ে গেলে তার দায়-ভার কে নেবে?

আবার এই পদের জন্য প্রচলিত ডিপ্লোমা কোর্সটি ১ বছর মেয়াদি হলেও এতে সময় লাগে ২-৩ বছর। উদাহরণ স্বরূপ- আমি ২০১৮ সালের জুন মাসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০১৮-১৯ ব্যাচে ভর্তি হই। যখন আমার বয়স ছিল ২৮ বছর। অপরদিকে ৩১ বছর বয়সে এসে ২০২১ সালের মার্চ মাসে আমি এর চূড়ান্ত রেজাল্ট পাই। অনুরূপভাবে কোর্সটি সম্পন্ন করতে অনেকের বয়স ৩২-৩৩ বা তার বেশি হয়ে যায়। আবার এনটিআরসিএ এর অধীন নিয়োগ চলে গেলে যেহেতু কমপক্ষে আরও ২ বছর লেগে যাবে। ফলে বেশিরভাগ চাকরিপ্রত্যাশী বয়সজনিত সমস্যায় চাকরিতে আবেদনের সুযোগই পাবেন না।

উল্লেখ্য এনটিআরসিএ এর সর্বশেষ ১৭তম নিবন্ধন সার্কুলার ফেব্রুয়ারি-২০২০ এ প্রকাশ হলেও এখনও এর প্রিলিমিনারি টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়নি। তাছাড়া জুন-২০১৯ এ সার্কুলার হওয়া ১৬তমদের ভাইভা পরীক্ষা এখন শেষ হয়নি। এ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ মিলে যে এনটিআরসিএ-এর একটি নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হতে কমপক্ষে ২ বছর সময় লাগে। এমতাবস্থায় ১৮তম নিবন্ধন বিজ্ঞপ্তিতে ছাড়া এই পদ দুটি এনটিআরসিএতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। তাহলে এখন প্রশ্ন ১৮তম নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি কবে প্রকাশ হবে, কবেই বা এর নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হবে? আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বা গণবিজ্ঞপ্তিই-বা কবে প্রকাশ পাবে? সুতরাং এনটিআরসিএ-এর অধীন নিয়োগ প্রদানের নিমিত্তে এখনই যদি নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে নিয়োগ প্রক্রিয়া দুই বছরেরও অধিক সময়ের জন্য আটকে যাবে। ফলে হাজার হাজার চাকরিপ্রত্যাশী যোগ্যতা থাকার পরও শুধু বয়স জটিলতায় নিয়োগ বঞ্চিত হবেন।

অনেকে কমিটিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন ও স্বজনপ্রীতি রোধে পদ দুটির নিয়োগ এনটিআরসিএ অধীনে নেয়ার দাবি তুলেছেন। এতে প্রশ্ন থেকে যায়- শুধু কী গ্রন্থাগারিকও সহঃগ্রন্থাগারিক পদের নিয়োগেই অনিয়ম হয়? না, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি রোধে এনটিআরসিএ অধীনে নিয়োগ বা কমিটির অধীনে নিয়োগ সিস্টেম-ই শেষ কথা নয়, এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যকর কোন পদক্ষেপ এবং সুষ্ঠু মনিটরিং। কমিটির অধীনে রেখে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনার মাধ্যমে এই মুহূর্তে নিয়োগ চালিয়ে যাওয়াই উত্তম, এনটিআরসিএ-এর অধীন নিয়োগ নেয়ার উপযুক্ত সময় এখনও আসেনি। তাই এনটিআরসিএ-এর অধীন নিয়োগ প্রদানের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির আগ পর্যন্ত কমিটির অধীন নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রাখার কোন বিকল্প নেই।

অন্যদিকে গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান বিষয়টির কোন পাঠ্য-বই পাঠ্যক্রমে নেই। যেহেতু সহঃগ্রন্থাগারিক বা গ্রন্থাগারিক পদ দুটি নন-টিচিং পদ তাই সহঃশিক্ষক-প্রভাষক মর্যাদার হলেও মূলত এগুলো শিক্ষক প্যাটার্নভুক্ত পদ নয়। যে পদগুলোর পাঠদানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই সে পদগুলোর নিয়োগে শিক্ষক নিবন্ধন সনদের কী প্রয়োজন? সুতরাং সহঃশিক্ষক-প্রভাষক (গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান) পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া এনটিআরসিএর অধীন হওয়াটা যৌক্তিক নয়।

সর্বোপরি চাকরিপ্রত্যাশীদের বয়স বিবেচনায় এবং প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমের স্বাভাবিক ধারা বজায় রাখতে পদ দুটির নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রাখা জরুরি। এই কোর্সের শিক্ষার্থীদের সেশনজট এবং করোনা পরিস্থিতির জন্য এমনিতেই ২-৩টি বছর নষ্ট হয়েছে। তাই এনটিআরসিএ জটিলতায় আরও ২-৩টি বছর তারা হারাতে চায় না। তাছাড়া গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান কোর্সটি গতানুগতিক কোনো কোর্স নয়, এটি একটি বিশেষ কোর্স, অনার্স-মাস্টার্স পাসের পর এই কোর্সটি সম্পন্ন করা হয় শুধু এই পদ দুটিতে চাকরির নিশ্চয়তার জন্যই। তাই নিয়োগ বন্ধ থাকা বা নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতার কারণে হাজার হাজার চাকরিপ্রত্যাশী নিয়োগ বঞ্চিত হলে তা হবে অমানবিক এবং অপূরণীয় ক্ষতি। কারণ তারা অন্যসব প্রতিযোগিতামূলক চাকরির ক্ষেত্রগুলো পরিহার করে শুধু এই পদগুলোর জন্যই নিজেদের প্রস্তুত করেছিলেন, তাই নিয়োগ বঞ্চিত হলে তাদের জন্য আর অন্য কোনো চাকরির পথ খোলা থাকবে না। সুতরাং শিক্ষা মন্ত্রাণালয় এবং নীতিমালা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে কার্যকর এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে যাতে সুষ্ঠু নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান থাকে এবং কোনো চাকরিপ্রত্যাশীই যেন অধিকার বঞ্চিত না হন।

শুক্রবার, ২১ মে ২০২১ , ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৮ শাওয়াল ১৪৪২

গ্রন্থাগারিক নিয়োগ জটিলতা

আবু বক্কর সিদ্দিক

বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকার শিক্ষার মানোন্নয়নে একদিকে যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধনে কাজ করে যাচ্ছে অন্যদিকে অন্যদিকে শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থীর জীবন-মান উন্নয়নেও নানা রকম সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ গত ২৮ মার্চ- ২০২১ তারিখে নতুন করে প্রকাশ করেছে ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১’।

নীতিমালাটিতে সহঃগ্রন্থাগারিক-কাম-ক্যাটালগার পদটিকে সহঃশিক্ষক এবং গ্রন্থাগারিক পদটিকে প্রভাষকের মর্যাদা দেয়া হয়, যা ছিল গ্রন্থাগারিক পেশাজীবীদের বহুদিনের দাবি। নীতিমালার এই স্বীকৃতি পেশাজীবীদের জন্য একদিকে যেমন সম্মান বয়ে এনেছে অন্যদিকে পদ-বলে তাদের প্রশাসনিক পদে পদোন্নতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এরূপ পদমর্যাদার ফলে পদ দুটির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দেখা দিয়েছে জটিলতা।

যেহেতু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক-প্রভাষক পদগুলো ২০১৬ সাল থেকে নন-গভর্মেন্ট টিচার্স রেজিস্ট্রেশন এবং সার্টিফিকেশন অথরিটি (এনটিআরসিএ) নিয়োগ দিয়ে আসছে। সে হিসেবে পদ দুটির নিয়োগ এনটিআরসিএ-এর অধীন যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও নীতিমালায় এ বিষয়ে স্পষ্ট কোন নির্দেশনা নেই। তবে নীতিমালা প্রণয়নের পর থেকে এই পদগুলোতে নিয়োগ প্রদান বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে করে ইতিপূর্বে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া প্রতিষ্ঠান এবং পদগুলোতে আবেদনকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

ভবিষ্যতে পদ দুটির নিয়োগ কোন প্রক্রিয়ায় হতে পারে সে সম্পর্কে চাকরিপ্রত্যাশীদের পক্ষ থেকে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান- এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে আলোচনা চলছে। অতিসত্বর এটি স্পষ্টীকরণে একটি প্রজ্ঞাপণ জারি করা হবে।

চাকরিপ্রত্যাশীরা সহঃশিক্ষক-প্রভাষক পদমর্যাদাকে সাধুবাদ জানালেও তাদের বেশিরভাগ পদ দুটির নিয়োগ এনটিআরসিএতে নেয়ার বিরুদ্ধে। কারণ এনটিআরসিএর অধীনে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ বেশ পুরোনো এবং এ সংক্রান্ত শতাধিক মামলায় প্রতিষ্ঠানটি জর্জরিত। এনটিআরসিএর নিবন্ধন পদ্ধতি এবং নিয়োগ প্রদান পদ্ধতি সম্পূর্ণ আলাদা দুটি বিষয়। এর নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথমে প্রিলিমিনারি টেস্ট, তারপর লিখিত পরীক্ষা এবং সর্বশেষ ভাইভাতে অংশগ্রহণ করতে হয়। অতঃপর একজন চাকরিপ্রত্যাশীকে প্রথমে শুধু সনদ প্রদান করা হয়। আবার এই সনদ অর্জনকারীদের নিয়োগের জন্য পুনরায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এভাবে ধাপে ধাপে চূড়ান্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কমপক্ষে দুই বছর সময় লেগে যায়। অর্থাৎ নিবন্ধন পরীক্ষার সময় একজন পরীক্ষার্থীর বয়স ৩৩ বছর হলে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ তথা চূড়ান্ত নিয়োগের সময় তার বয়স ৩৫ প্লাস হয়ে যাবে। আর জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে কাউকে নিয়োগ প্রদানের নিয়ম নেই। সুতরাং এরূপ নিয়োগ দীর্ঘসূত্রতার কারণে একজন প্রার্থীর ৩৫ বছর পেরিয়ে গেলে তার দায়-ভার কে নেবে?

আবার এই পদের জন্য প্রচলিত ডিপ্লোমা কোর্সটি ১ বছর মেয়াদি হলেও এতে সময় লাগে ২-৩ বছর। উদাহরণ স্বরূপ- আমি ২০১৮ সালের জুন মাসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০১৮-১৯ ব্যাচে ভর্তি হই। যখন আমার বয়স ছিল ২৮ বছর। অপরদিকে ৩১ বছর বয়সে এসে ২০২১ সালের মার্চ মাসে আমি এর চূড়ান্ত রেজাল্ট পাই। অনুরূপভাবে কোর্সটি সম্পন্ন করতে অনেকের বয়স ৩২-৩৩ বা তার বেশি হয়ে যায়। আবার এনটিআরসিএ এর অধীন নিয়োগ চলে গেলে যেহেতু কমপক্ষে আরও ২ বছর লেগে যাবে। ফলে বেশিরভাগ চাকরিপ্রত্যাশী বয়সজনিত সমস্যায় চাকরিতে আবেদনের সুযোগই পাবেন না।

উল্লেখ্য এনটিআরসিএ এর সর্বশেষ ১৭তম নিবন্ধন সার্কুলার ফেব্রুয়ারি-২০২০ এ প্রকাশ হলেও এখনও এর প্রিলিমিনারি টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়নি। তাছাড়া জুন-২০১৯ এ সার্কুলার হওয়া ১৬তমদের ভাইভা পরীক্ষা এখন শেষ হয়নি। এ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ মিলে যে এনটিআরসিএ-এর একটি নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হতে কমপক্ষে ২ বছর সময় লাগে। এমতাবস্থায় ১৮তম নিবন্ধন বিজ্ঞপ্তিতে ছাড়া এই পদ দুটি এনটিআরসিএতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। তাহলে এখন প্রশ্ন ১৮তম নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি কবে প্রকাশ হবে, কবেই বা এর নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হবে? আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বা গণবিজ্ঞপ্তিই-বা কবে প্রকাশ পাবে? সুতরাং এনটিআরসিএ-এর অধীন নিয়োগ প্রদানের নিমিত্তে এখনই যদি নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে নিয়োগ প্রক্রিয়া দুই বছরেরও অধিক সময়ের জন্য আটকে যাবে। ফলে হাজার হাজার চাকরিপ্রত্যাশী যোগ্যতা থাকার পরও শুধু বয়স জটিলতায় নিয়োগ বঞ্চিত হবেন।

অনেকে কমিটিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন ও স্বজনপ্রীতি রোধে পদ দুটির নিয়োগ এনটিআরসিএ অধীনে নেয়ার দাবি তুলেছেন। এতে প্রশ্ন থেকে যায়- শুধু কী গ্রন্থাগারিকও সহঃগ্রন্থাগারিক পদের নিয়োগেই অনিয়ম হয়? না, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি রোধে এনটিআরসিএ অধীনে নিয়োগ বা কমিটির অধীনে নিয়োগ সিস্টেম-ই শেষ কথা নয়, এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যকর কোন পদক্ষেপ এবং সুষ্ঠু মনিটরিং। কমিটির অধীনে রেখে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনার মাধ্যমে এই মুহূর্তে নিয়োগ চালিয়ে যাওয়াই উত্তম, এনটিআরসিএ-এর অধীন নিয়োগ নেয়ার উপযুক্ত সময় এখনও আসেনি। তাই এনটিআরসিএ-এর অধীন নিয়োগ প্রদানের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির আগ পর্যন্ত কমিটির অধীন নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রাখার কোন বিকল্প নেই।

অন্যদিকে গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান বিষয়টির কোন পাঠ্য-বই পাঠ্যক্রমে নেই। যেহেতু সহঃগ্রন্থাগারিক বা গ্রন্থাগারিক পদ দুটি নন-টিচিং পদ তাই সহঃশিক্ষক-প্রভাষক মর্যাদার হলেও মূলত এগুলো শিক্ষক প্যাটার্নভুক্ত পদ নয়। যে পদগুলোর পাঠদানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই সে পদগুলোর নিয়োগে শিক্ষক নিবন্ধন সনদের কী প্রয়োজন? সুতরাং সহঃশিক্ষক-প্রভাষক (গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান) পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া এনটিআরসিএর অধীন হওয়াটা যৌক্তিক নয়।

সর্বোপরি চাকরিপ্রত্যাশীদের বয়স বিবেচনায় এবং প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমের স্বাভাবিক ধারা বজায় রাখতে পদ দুটির নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রাখা জরুরি। এই কোর্সের শিক্ষার্থীদের সেশনজট এবং করোনা পরিস্থিতির জন্য এমনিতেই ২-৩টি বছর নষ্ট হয়েছে। তাই এনটিআরসিএ জটিলতায় আরও ২-৩টি বছর তারা হারাতে চায় না। তাছাড়া গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান কোর্সটি গতানুগতিক কোনো কোর্স নয়, এটি একটি বিশেষ কোর্স, অনার্স-মাস্টার্স পাসের পর এই কোর্সটি সম্পন্ন করা হয় শুধু এই পদ দুটিতে চাকরির নিশ্চয়তার জন্যই। তাই নিয়োগ বন্ধ থাকা বা নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতার কারণে হাজার হাজার চাকরিপ্রত্যাশী নিয়োগ বঞ্চিত হলে তা হবে অমানবিক এবং অপূরণীয় ক্ষতি। কারণ তারা অন্যসব প্রতিযোগিতামূলক চাকরির ক্ষেত্রগুলো পরিহার করে শুধু এই পদগুলোর জন্যই নিজেদের প্রস্তুত করেছিলেন, তাই নিয়োগ বঞ্চিত হলে তাদের জন্য আর অন্য কোনো চাকরির পথ খোলা থাকবে না। সুতরাং শিক্ষা মন্ত্রাণালয় এবং নীতিমালা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে কার্যকর এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে যাতে সুষ্ঠু নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান থাকে এবং কোনো চাকরিপ্রত্যাশীই যেন অধিকার বঞ্চিত না হন।