আগামী বাজেটে ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা কমাচ্ছে সরকার

প্রতিবছরই বাজেটে বড় ঘাটতি লক্ষ্য করা করা যায়। আর এই ঘাটতির বড় অংশ পূরণ করা হয় ব্যাংকঋণ থেকে। তবে আগামী বাজেটে ব্যাংকঋণ নির্ভরতা কমানো হবে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, অর্থ বিভাগের কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠকে আগামী অর্থবছরে ব্যাংকঋণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ৯৩ হাজার কোটি টাকা। তবে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে ঋণের লক্ষ্য চিন্তা করা হচ্ছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে ঘাটতির অঙ্ক মেলাতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে অর্থবিভাগ। এক পক্ষ চায় ব্যাংকব্যবস্থা থেকে বাড়ানো হোক ঋণের লক্ষ্য। অন্যদিকে বিদেশি ঋণনির্ভরতা বাড়ানোর পক্ষে অন্য পক্ষ। কারণ, অর্থ বিভাগের কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠকে আগামী অর্থবছরে ব্যাংকঋণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ৯৩ হাজার কোটি টাকা। তবে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে ঋণের লক্ষ্য চিন্তা করা হচ্ছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা। আর সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সংগ্রহ করা হবে ৩২ হাজার কোটি টাকা, যা ঘাটতি অর্থায়ন নিশ্চিত করবে। তবে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতে পারে সাড়ে ৯৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় এই হার ৩৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি। ঋণ ও সহায়তা মিলিয়ে এই উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময়ে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ বেড়েছে।

সূত্র জানায়, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে আসছে সবচেয়ে বড় ঘাটতির বাজেট। জিডিপির তুলনায় ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ৬ দশমিক ১ শতাংশের মতো। ৬ লাখ কোটি টাকার বাজেটে ঘাটতি দাঁড়াতে পারে ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, পরিশোধ করেছে তার চেয়ে বেশি। ফলে সরকারের নিট ঋণ গ্রহণ ঋণাত্মক হয়ে গেছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। তবে নিট হিসেবে দেখা যাচ্ছে, এপ্রিল পর্যন্ত সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে উল্টো ১৩ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। তার আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংকঋণের পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঋণ নেয়া হয় ২৮ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঋণ নেয়নি সরকার। তবে তার আগের অর্থবছরে ঋণ নেয়া হয় ৫১৪ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ঋণ নেয়া হয় ১৮ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ঋণ নেয়া হয় ২৭ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে ঋণের পরিমাণ ছিল ২৭ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে ঋণ দাঁড়ায় ২৫ হাজার ২১০ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছর ২০০৯-১০ ব্যাংক খাত থেকে সরকার কোন ঋণ নেয়নি।

এদিকে, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা মহামারীতে মানুষের আয় কমে গেছে। তাছাড়া, মুনাফার ওপর করের হার বৃদ্ধি এবং নানা ধরনের কড়াকড়ি আরোপের পরও সঞ্চয়পত্র বিক্রি ঠেকাতে পারছে না সরকার। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত) ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি ১৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই ৯ মাসে এত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়নি। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৫২ হাজার ৯৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা শোধ করা হয়েছে। এ হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি টাকা।

পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই খাত থেকে ঋণ নেয়া হয় মাত্র ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয় ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে ঋণ নেয়া হয় ৪৯ হাজার কোটি টাকা। এর আগে কয়েক বছর ধরেই সঞ্চয়পত্র খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ঋণ নিচ্ছে সরকার।

শুক্রবার, ২৮ মে ২০২১ , ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৫ শাওয়াল ১৪৪২

আগামী বাজেটে ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা কমাচ্ছে সরকার

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

প্রতিবছরই বাজেটে বড় ঘাটতি লক্ষ্য করা করা যায়। আর এই ঘাটতির বড় অংশ পূরণ করা হয় ব্যাংকঋণ থেকে। তবে আগামী বাজেটে ব্যাংকঋণ নির্ভরতা কমানো হবে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, অর্থ বিভাগের কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠকে আগামী অর্থবছরে ব্যাংকঋণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ৯৩ হাজার কোটি টাকা। তবে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে ঋণের লক্ষ্য চিন্তা করা হচ্ছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে ঘাটতির অঙ্ক মেলাতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে অর্থবিভাগ। এক পক্ষ চায় ব্যাংকব্যবস্থা থেকে বাড়ানো হোক ঋণের লক্ষ্য। অন্যদিকে বিদেশি ঋণনির্ভরতা বাড়ানোর পক্ষে অন্য পক্ষ। কারণ, অর্থ বিভাগের কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠকে আগামী অর্থবছরে ব্যাংকঋণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ৯৩ হাজার কোটি টাকা। তবে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে ঋণের লক্ষ্য চিন্তা করা হচ্ছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা। আর সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সংগ্রহ করা হবে ৩২ হাজার কোটি টাকা, যা ঘাটতি অর্থায়ন নিশ্চিত করবে। তবে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতে পারে সাড়ে ৯৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় এই হার ৩৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি। ঋণ ও সহায়তা মিলিয়ে এই উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময়ে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ বেড়েছে।

সূত্র জানায়, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে আসছে সবচেয়ে বড় ঘাটতির বাজেট। জিডিপির তুলনায় ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ৬ দশমিক ১ শতাংশের মতো। ৬ লাখ কোটি টাকার বাজেটে ঘাটতি দাঁড়াতে পারে ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, পরিশোধ করেছে তার চেয়ে বেশি। ফলে সরকারের নিট ঋণ গ্রহণ ঋণাত্মক হয়ে গেছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। তবে নিট হিসেবে দেখা যাচ্ছে, এপ্রিল পর্যন্ত সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে উল্টো ১৩ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। তার আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংকঋণের পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঋণ নেয়া হয় ২৮ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঋণ নেয়নি সরকার। তবে তার আগের অর্থবছরে ঋণ নেয়া হয় ৫১৪ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ঋণ নেয়া হয় ১৮ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ঋণ নেয়া হয় ২৭ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে ঋণের পরিমাণ ছিল ২৭ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে ঋণ দাঁড়ায় ২৫ হাজার ২১০ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছর ২০০৯-১০ ব্যাংক খাত থেকে সরকার কোন ঋণ নেয়নি।

এদিকে, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা মহামারীতে মানুষের আয় কমে গেছে। তাছাড়া, মুনাফার ওপর করের হার বৃদ্ধি এবং নানা ধরনের কড়াকড়ি আরোপের পরও সঞ্চয়পত্র বিক্রি ঠেকাতে পারছে না সরকার। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত) ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি ১৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই ৯ মাসে এত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়নি। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৫২ হাজার ৯৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা শোধ করা হয়েছে। এ হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি টাকা।

পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই খাত থেকে ঋণ নেয়া হয় মাত্র ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয় ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে ঋণ নেয়া হয় ৪৯ হাজার কোটি টাকা। এর আগে কয়েক বছর ধরেই সঞ্চয়পত্র খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ঋণ নিচ্ছে সরকার।