এমএ কবীর
মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন বলেছিলেন, সংবাদপত্রহীন সরকার আর সরকারবিহীন সংবাদপত্র-দুটোর একটা বেছে নিতে হলে তিনি সরকারবিহীন সংবাদপত্রকেই বেছে নেবেন।
সমাজ বদলে দিতে দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে তথ্য চুরির অপরাধে গণমাধ্যম লালদালানে। আর হাজার কোটি টাকা চুরি করে বিদেশে পাচারকারীদের গাড়ি চলে বিশেষ নিরাপত্তায়। একের পর এক গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা কী বার্তা দেয়?
রোজিনার বিরুদ্ধে মামলাটি দেয়া হয়েছে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ নম্বর ও ৫ নম্বর এবং দন্ডবিধির ৩৭৯ ও ৪১১ ধারায়। অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ নম্বর ধারায় তখনই মামলা দেয়া যাবে, যখন নিরাপত্তার স্বার্থে নিষিদ্ধঘোষিত কোনো এলাকা থেকে নথি সরানোর অভিযোগ ওঠে। ৫ নম্বর ধারাটি নথি যখন শত্রুপক্ষের হাতে তুলে দেয়ার অভিযোগ উঠবে, তখন প্রয়োগ হবে। দন্ডবিধির ৩৭৯ ধারাটি চুরির শাস্তি এবং ৪১১ ধারা চুরি হওয়া কোনো বস্তু কারো জিম্মায় থেকে উদ্ধার করা হলে।
আটকে রেখে একজন সাংবাদিককে হেনস্তা, গ্রেপ্তার, মামলা দেয়া এবং পরে জেলে নেয়ার ঘটনায় দেশ ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বিভিন্ন দেশের ১৩১টি সংবাদপত্রে এ নিয়ে প্রতিবেদন ছেপেছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও সাংবাদিকদের সংগঠন ঘটনার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
সচিবালয়ভিত্তিক রিপোর্টে এক সময় দেশের অনেক সাংবাদিকেরই খুব নামডাক ছিল। রাষ্ট্র এবং জনগণের স্বার্থেই তারা খবরগুলো দিতেন। নথি দেখা, নথি থেকে টুকে নেয়া কিংবা ফটোকপি করা নিতান্তই স্বাভাবিক ঘটনা ছিল।
পে-স্কেল, যৌথ নদী কমিশন, সড়ক দুর্ঘটনা, পরিবেশ মন্ত্রণালয়, নিয়ে অনুসন্ধানী সিরিজ রিপোর্ট ছিল দেশের কল্যাণে।
মতিউর রহমান চৌধুরী তার ‘কূটনীতির অন্দর মহল’ বইয়ে এর কিছু বর্ণনাও দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ফরেন অফিস কভার করতে গিয়ে দুয়েকবার আমি সরকারি ফাইলও বাসায় নিয়ে গিয়েছিলাম, যা আজকে বলছি, সে সময় হয়তো মনেই হয়নি যে আমার এটা নেয়া ঠিক হয়েছে কি-না। আমি একবার দুটি ফাইল নিয়েছিলাম। ফটোকপি করে আবার ফেরত দিয়েছিলাম।’
চাঁদাবাজি নিয়ে খায়রুল আনোয়ার মুকুলের অনুসন্ধানী রিপোর্ট সাড়া জাগিয়েছিল। তেজষ্ক্রিয় গুঁড়ো দুধের রিপোর্ট করেছিলেন আহমেদ নূর আলম। চেরনোবিল পারমাণবিক চুল্লি দুর্ঘটনার পর তেজষ্ক্রিয় এই গুঁড়ো দুধ বাংলাদেশে ঢোকে। নোটারি পাবলিক ১০০-১৫০ টাকায় যে কোন বিষয় নোটারি করে দেয়। এ নিয়ে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় চাঞ্চল্যকর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করেছিলেন ড. আসিফ নজরুল। সেটি ছিল নোটারি করে বঙ্গভবন বিক্রি করে দেয়ার একটি রিপোর্ট।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার এক পথিকৃৎ ছিলেন সাংবাদিক আতাউস সামাদ। তিনি সারা জীবনই এমন অসংখ্য রিপোর্ট করে গেছেন, যা ছিল জনস্বার্থে, দেশের কল্যাণে। তার রিপোর্টে মহলবিশেষের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে কিন্তু জনস্বার্থ রক্ষিত হয়েছে। রিপোর্টের কারণে জেনারেল এরশাদ তাকে জেলে ঢুকিয়েছিলেন।
দৈনিক ইত্তেফাকে ‘ওপেন সিক্রেট’ নামে অনুসন্ধানী সিরিজ রিপোর্ট করতেন সাংবাদিক আবেদ খান। এসব রিপোর্টেও মানুষের কল্যাণ হয়েছে।
সম্প্রতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন কালাকানুন এবং মতলবি লোকদের মাধ্যমে গণমাধ্যমে অনুসন্ধানী ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।
প্রায় ১০০ বছর আগে সামাজিক-রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক বাস্তবতার প্রেক্ষিতে ব্রিটিশরাজ কর্তৃক প্রণীত ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’ মূলত একটি ঔপনিবেশিক আইন। সে সময় ব্রিটিশদের প্রশাসনে কর্মরত ভারতীয়দের প্রতি এক ধরনের অবিশ্বাস থেকেই এই আইনের জন্ম। দেশের প্রতি মমত্ববোধ থেকেই স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের বিভিন্ন গোপন নথিপত্র সরবরাহ করতেন ব্রিটিশদের অধীনে কর্মরত ভারতীয়রা। এমনটা যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করতে তথা নিজেদের ঔপনিবেশ টিকিয়ে রাখার একটা কৌশল হিসেবে এই মন্দ আইনটি প্রণয়ন করা হয়।
১৮৯২ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত লর্ড কার্জন যখন ভারতবর্ষের ভাইসরয় ছিলেন তখন এই আইন প্রণয়ন করা হয়। পরে বেশ কয়েক দফা সংশোধিত হয়ে ১৯২৩ সালের ২ এপ্রিল ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’ জারি করা হয়। এই আইনটির দুটি দিক রয়েছে। একটি হচ্ছে গুপ্তচরবৃত্তি এবং অপরটি হচ্ছে সরকারের গোপন নথি ফাঁস।
আইনে বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং স্বার্থের পরিপন্থি কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করে তাহলে তার শাস্তি হবে। অর্থাৎ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ কোনো এলাকায় গমন করে, পরিদর্শন করে বা ভেতরে প্রবেশ করে তাহলে শাস্তি হবে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট মূলত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই অ্যাক্ট অনুযায়ী গোপন নথি বলতে বোঝানো হয়েছে অফিশিয়াল কোড, পাসওয়ার্ড, স্কেচ, নকশা, প্ল্যান, বিভিন্ন ধরনের নথি। শত্রুপক্ষের ব্যবহারের জন্য কোনো ব্যক্তি যদি এগুলো সংগ্রহ বা রেকর্ড করে তাহলে এটি অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই আইনে বলা হয়েছে, তথ্য পাচার এবং তথ্য গ্রহণকারী-উভয়পক্ষ এর ফলে দন্ডিত হতে পারেন। এই আইনের অধীনে সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ড বা ১৪ বছর পর্যন্ত সাজা এবং সর্বনিম্ন তিন বছরের সাজার বিধান রয়েছে।
বাংলাদেশ সচিবালয় কোনো নিষিদ্ধ জায়গা নয়। সেখানে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারের জন্য সরকার পরিচয়পত্র দিয়েছে এবং সরকার জানে যে সেখানে সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহের জন্য যাবে।
সচিবালয়ে কোন দুঃসাহসে একজন সাংবাদিকের গলা টিপে ধরা যায়? এর আগে আরেক নারী কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক পারভীন সুলতানার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করায় সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে পুলিশ অমানসিক নির্যাতন করে।
জনপ্রতিনিধিদের অনেকে সাংবাদিক নির্যাতন করেন, সরকারের কর্তাব্যক্তিরা করছেন।
এমন প্রশ্নের ঘোরে আমাদের যেতেই হয় বঙ্গবন্ধুর কাছে। আড়ালে-আবডালে বা অফ দ্য রেকর্ডে নয় খোলা ময়দানের ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার কৃষকরা দুর্নীতি করে না। আমার শ্রমিকরা দুর্নীতি করে না। তাহলে কে ঘুষ খায়? ... বিদেশে টাকা পাচার করে কে? আমি জানি না এত চোর কোথা হতে এলো! পাকিস্তানিরা সব নিয়ে গেছে, রেখে গেছে এই সব চোরের দল। তারা এই সব চোরদেরও যদি নিয়ে যেত, তাহলে আমরা আরও ভালো থাকতাম। কিছু দালাল দেশ ছেড়ে চলে গেছে। চোরেরা যদি তাদের সঙ্গে চলে যেত, আমরাও অনেক ভালো থাকতাম। ... শুধু আইন দ্বারা দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না।’ আজও কত প্রাসঙ্গিক বঙ্গবন্ধুর সেই মেঠো বক্তৃতা!
হতাশ আর ডুবন্ত জাতিকে রক্ষা করার জন্য প্রকৃতিই নাকি যোগ্য নেতৃত্ব ঠিক করে দেয়। আট শতকে শত বছরের মাৎস্যন্যায় থেকে জাতিকে উদ্ধার করে রাজনীতির মঞ্চে এসে দাঁড়িয়েছিলেন প্রায় অচেনা নেতা গোপাল। পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের হাত ধরেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাঙালি জাতি।
এখন তো নষ্ট রাজনীতির আসুরিক দাপটে বিপন্ন আমরা। কই কোনো গোপাল তো আকাশ ফুঁড়ে নেমে আসে না। বারবারই প্রতারক রাজনীতির বাচালতার মধ্যে আটকে যাই আমরা। মিডিয়াতে তথ্যসমৃদ্ধ শতকোটি টাকার ক্রয় দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশ পেলেও চৌর্যবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত এই জগতের মানুষগুলো মোটেও পরোয়া করে না।
কতটা শক্ত ভিত্তি এদের, চুরি চুরি আবার সিনাজুড়ি করতেও ছাড়ে না। প্রত্যেক সরকারই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আর গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা বিধানের কথা বলে; কিন্তু বাস্তবতা নির্মম। প্রতিনিয়তই কর্মক্ষেত্রে নানাভাবে লাঞ্ছিত-নিগৃহীত হচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। কখনও শারীরিকভাবে, কখনও শিকার হচ্ছেন মানসিক, আর্থিক হয়রানির। কখনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে, কখনও রাষ্ট্রের হাতে। স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলেই গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর নেমে আসে খড়গ।
পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করলেও পুলিশি নির্যাতনেরও শিকার হতে হয় সংবাদকর্মীদের। যদিও উভয়েই ঝুঁকির মধ্যে কাজ করেন। কিন্তু রাজপথে, বিপজ্জনক মুহূর্তে মাঝে-মধ্যে পুলিশই হয়ে ওঠে সাংবাদিকের প্রতিপক্ষ। পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতির ঝাল মেটান সাংবাদিকদের ওপর। পরে ‘গরু মেরে জুতা দান’-এর মতো মৌখিক দুঃখ প্রকাশও করেন। এটুকুতেই প্রতিকারের সমাপ্তি।
রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিকের সম্পর্ককে আখ্যায়িত করা হয় জল ও মাছের সম্পর্কে। কিন্তু যতই বস্তুনিষ্ঠ হোক, নিজের বা নিজ গ্রুপের বিপক্ষে গেলেই প্রতিপক্ষ হয়ে পড়েন রাজনীতিবিদরাও। তারাও হুমকি-ধমকি দেন, কর্মক্ষেত্রে প্রভাব খাটিয়ে সাংবাদিকদের ‘উপহার’ দেন বেকারত্ব। নিজস্ব সুবিধাবাদীদের দিয়ে মামলায় জড়িয়ে দেন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। আমলারা করেন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নানা হয়রানি। সাংবাদিকতার নৈতিকতায় সাংবাদিকরা কারও স্থায়ী বন্ধু বা শত্রু হতে পারে না। অনিয়মের বিরুদ্ধে সাংবাদিককে দাঁড়াতেই হয়। ফলে তারা হয়ে যান অপছন্দের পাত্র। তাদের গলা টিপে ধরতে সচেষ্ট হয়ে ওঠে সবাই। অথচ অপছন্দের কথাগুলো তুলে ধরতে হয় দেশের বৃহত্তর স্বার্থেই।
শিল্প হিসেবে সংবাদমাধ্যমের বিকাশ ও সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় প্রতিটি সরকারই থাকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু কোন সরকারের হাতেই প্রণীত হয়নি একটি সাংবাদিক সুরক্ষা আইন। এমনকি দেশে একের পর এক সাংবাদিক খুনের ঘটনা ঘটলেও কোন খুনের বিচার প্রক্রিয়াই সুষ্ঠুভাবে এগোয়নি। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি একটিরও।
প্রতিদিন সংবাদপিপাসু মানুষের দ্বারে নতুন নতুন খবর নিয়ে হাজির হন সাংবাদিকরা। নির্যাতিত মানুষ শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে সাংবাদিকদের দারস্থ হন। আর সাংবাদিকরা জাতির সামনে তুলে ধরেন সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, সাফল্য-ব্যর্থতার গাঁথা। সেই সাংবাদিক যখন নির্যাতিত হন তখন সাধারণ মানুষ কোথায় যাবেন?
রোজিনা ইসলাম। সাংবাদিকতার জন্য দেশ-বিদেশে বহু পুরস্কার পেয়েছেন। সাম্প্রতিককালে স্বাস্থ্য বিভাগের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে রোজিনা ইসলাম বেশকিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেন দৈনিক প্রথম আলোয়, যা দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করেন। তুলির আঁচড়ে কিংবা ক্যামেরার কারুকার্যে তারা সাধারণ্যে সমাজের ভালো-মন্দের ছবি ফুটিয়ে তোলেন। এটা করতে যেমন মেধার যোগান লাগে, অনেক শারীরিক-মানসিক ধকলও পোহাতে হয়।
একদিকে যেমন আমজনতার প্রত্যাশা পূরণে সজাগ থাকতে হয়, অন্যদিকে সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে কায়েমি স্বার্থের রোষানলে পড়তে হয়। সাংবাদিকরা কেবল যে সমাজের চলমান অবস্থাকে প্রতিবিম্বিত করেন তা-ই নয়, জনমত গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাদের ভূমিকা আপোষকামী হলে সাধারণ্যে দুয়োধ্বনি শুনতে হয়।
উদ্বেগের বিষয় হলো, রোজিনা ইসলামের ঘটনা একদিকে যেমন দেশের জন্য ইমেজ সংকট তৈরি করছে, অন্যদিকে সাংবাদিকদেরও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় নিরুৎসাহিত করতে পারে। এটা আখেরে সরকার বা সমাজ কারও জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না, শুধু দুর্নীতিবাজদের পোয়াবারো হতে পারে।
গণমাধ্যম বা সাংবাদিকতামুক্ত দেশ আজকের বিশ্বে ভাবাও যায় না। দেশের সব পত্রিকা বা টেলিভিশন বন্ধ হয়ে গেছে। কোথাও কোন দুর্নীতির খবর নেই, ধর্ষণের খবর নেই, শিক্ষাঙ্গনের দুর্দশার খবর নেই, লুটপাট-রাহাজানির খবর নেই, শ্রমিক সংকটের খবর নেই, কোনো বৈষম্যের খবর নেই, করোনাকালীন কোনো মৃত্যুর খবর নেই। কোথাও কিছু বলার নেই, লেখার নেই। পৃথিবীর কোন তথ্য নেই। এমন হীরক রাজার দেশ পাগলেও ভাবে না।
[লেখক : সভাপতি, ঝিনাইদহ
জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি]
শনিবার, ২৯ মে ২০২১ , ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৬ শাওয়াল ১৪৪২
এমএ কবীর
মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন বলেছিলেন, সংবাদপত্রহীন সরকার আর সরকারবিহীন সংবাদপত্র-দুটোর একটা বেছে নিতে হলে তিনি সরকারবিহীন সংবাদপত্রকেই বেছে নেবেন।
সমাজ বদলে দিতে দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে তথ্য চুরির অপরাধে গণমাধ্যম লালদালানে। আর হাজার কোটি টাকা চুরি করে বিদেশে পাচারকারীদের গাড়ি চলে বিশেষ নিরাপত্তায়। একের পর এক গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা কী বার্তা দেয়?
রোজিনার বিরুদ্ধে মামলাটি দেয়া হয়েছে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ নম্বর ও ৫ নম্বর এবং দন্ডবিধির ৩৭৯ ও ৪১১ ধারায়। অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ নম্বর ধারায় তখনই মামলা দেয়া যাবে, যখন নিরাপত্তার স্বার্থে নিষিদ্ধঘোষিত কোনো এলাকা থেকে নথি সরানোর অভিযোগ ওঠে। ৫ নম্বর ধারাটি নথি যখন শত্রুপক্ষের হাতে তুলে দেয়ার অভিযোগ উঠবে, তখন প্রয়োগ হবে। দন্ডবিধির ৩৭৯ ধারাটি চুরির শাস্তি এবং ৪১১ ধারা চুরি হওয়া কোনো বস্তু কারো জিম্মায় থেকে উদ্ধার করা হলে।
আটকে রেখে একজন সাংবাদিককে হেনস্তা, গ্রেপ্তার, মামলা দেয়া এবং পরে জেলে নেয়ার ঘটনায় দেশ ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বিভিন্ন দেশের ১৩১টি সংবাদপত্রে এ নিয়ে প্রতিবেদন ছেপেছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও সাংবাদিকদের সংগঠন ঘটনার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
সচিবালয়ভিত্তিক রিপোর্টে এক সময় দেশের অনেক সাংবাদিকেরই খুব নামডাক ছিল। রাষ্ট্র এবং জনগণের স্বার্থেই তারা খবরগুলো দিতেন। নথি দেখা, নথি থেকে টুকে নেয়া কিংবা ফটোকপি করা নিতান্তই স্বাভাবিক ঘটনা ছিল।
পে-স্কেল, যৌথ নদী কমিশন, সড়ক দুর্ঘটনা, পরিবেশ মন্ত্রণালয়, নিয়ে অনুসন্ধানী সিরিজ রিপোর্ট ছিল দেশের কল্যাণে।
মতিউর রহমান চৌধুরী তার ‘কূটনীতির অন্দর মহল’ বইয়ে এর কিছু বর্ণনাও দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ফরেন অফিস কভার করতে গিয়ে দুয়েকবার আমি সরকারি ফাইলও বাসায় নিয়ে গিয়েছিলাম, যা আজকে বলছি, সে সময় হয়তো মনেই হয়নি যে আমার এটা নেয়া ঠিক হয়েছে কি-না। আমি একবার দুটি ফাইল নিয়েছিলাম। ফটোকপি করে আবার ফেরত দিয়েছিলাম।’
চাঁদাবাজি নিয়ে খায়রুল আনোয়ার মুকুলের অনুসন্ধানী রিপোর্ট সাড়া জাগিয়েছিল। তেজষ্ক্রিয় গুঁড়ো দুধের রিপোর্ট করেছিলেন আহমেদ নূর আলম। চেরনোবিল পারমাণবিক চুল্লি দুর্ঘটনার পর তেজষ্ক্রিয় এই গুঁড়ো দুধ বাংলাদেশে ঢোকে। নোটারি পাবলিক ১০০-১৫০ টাকায় যে কোন বিষয় নোটারি করে দেয়। এ নিয়ে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় চাঞ্চল্যকর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করেছিলেন ড. আসিফ নজরুল। সেটি ছিল নোটারি করে বঙ্গভবন বিক্রি করে দেয়ার একটি রিপোর্ট।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার এক পথিকৃৎ ছিলেন সাংবাদিক আতাউস সামাদ। তিনি সারা জীবনই এমন অসংখ্য রিপোর্ট করে গেছেন, যা ছিল জনস্বার্থে, দেশের কল্যাণে। তার রিপোর্টে মহলবিশেষের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে কিন্তু জনস্বার্থ রক্ষিত হয়েছে। রিপোর্টের কারণে জেনারেল এরশাদ তাকে জেলে ঢুকিয়েছিলেন।
দৈনিক ইত্তেফাকে ‘ওপেন সিক্রেট’ নামে অনুসন্ধানী সিরিজ রিপোর্ট করতেন সাংবাদিক আবেদ খান। এসব রিপোর্টেও মানুষের কল্যাণ হয়েছে।
সম্প্রতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন কালাকানুন এবং মতলবি লোকদের মাধ্যমে গণমাধ্যমে অনুসন্ধানী ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।
প্রায় ১০০ বছর আগে সামাজিক-রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক বাস্তবতার প্রেক্ষিতে ব্রিটিশরাজ কর্তৃক প্রণীত ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’ মূলত একটি ঔপনিবেশিক আইন। সে সময় ব্রিটিশদের প্রশাসনে কর্মরত ভারতীয়দের প্রতি এক ধরনের অবিশ্বাস থেকেই এই আইনের জন্ম। দেশের প্রতি মমত্ববোধ থেকেই স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের বিভিন্ন গোপন নথিপত্র সরবরাহ করতেন ব্রিটিশদের অধীনে কর্মরত ভারতীয়রা। এমনটা যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করতে তথা নিজেদের ঔপনিবেশ টিকিয়ে রাখার একটা কৌশল হিসেবে এই মন্দ আইনটি প্রণয়ন করা হয়।
১৮৯২ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত লর্ড কার্জন যখন ভারতবর্ষের ভাইসরয় ছিলেন তখন এই আইন প্রণয়ন করা হয়। পরে বেশ কয়েক দফা সংশোধিত হয়ে ১৯২৩ সালের ২ এপ্রিল ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’ জারি করা হয়। এই আইনটির দুটি দিক রয়েছে। একটি হচ্ছে গুপ্তচরবৃত্তি এবং অপরটি হচ্ছে সরকারের গোপন নথি ফাঁস।
আইনে বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং স্বার্থের পরিপন্থি কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করে তাহলে তার শাস্তি হবে। অর্থাৎ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ কোনো এলাকায় গমন করে, পরিদর্শন করে বা ভেতরে প্রবেশ করে তাহলে শাস্তি হবে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট মূলত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই অ্যাক্ট অনুযায়ী গোপন নথি বলতে বোঝানো হয়েছে অফিশিয়াল কোড, পাসওয়ার্ড, স্কেচ, নকশা, প্ল্যান, বিভিন্ন ধরনের নথি। শত্রুপক্ষের ব্যবহারের জন্য কোনো ব্যক্তি যদি এগুলো সংগ্রহ বা রেকর্ড করে তাহলে এটি অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই আইনে বলা হয়েছে, তথ্য পাচার এবং তথ্য গ্রহণকারী-উভয়পক্ষ এর ফলে দন্ডিত হতে পারেন। এই আইনের অধীনে সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ড বা ১৪ বছর পর্যন্ত সাজা এবং সর্বনিম্ন তিন বছরের সাজার বিধান রয়েছে।
বাংলাদেশ সচিবালয় কোনো নিষিদ্ধ জায়গা নয়। সেখানে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারের জন্য সরকার পরিচয়পত্র দিয়েছে এবং সরকার জানে যে সেখানে সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহের জন্য যাবে।
সচিবালয়ে কোন দুঃসাহসে একজন সাংবাদিকের গলা টিপে ধরা যায়? এর আগে আরেক নারী কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক পারভীন সুলতানার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করায় সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে পুলিশ অমানসিক নির্যাতন করে।
জনপ্রতিনিধিদের অনেকে সাংবাদিক নির্যাতন করেন, সরকারের কর্তাব্যক্তিরা করছেন।
এমন প্রশ্নের ঘোরে আমাদের যেতেই হয় বঙ্গবন্ধুর কাছে। আড়ালে-আবডালে বা অফ দ্য রেকর্ডে নয় খোলা ময়দানের ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার কৃষকরা দুর্নীতি করে না। আমার শ্রমিকরা দুর্নীতি করে না। তাহলে কে ঘুষ খায়? ... বিদেশে টাকা পাচার করে কে? আমি জানি না এত চোর কোথা হতে এলো! পাকিস্তানিরা সব নিয়ে গেছে, রেখে গেছে এই সব চোরের দল। তারা এই সব চোরদেরও যদি নিয়ে যেত, তাহলে আমরা আরও ভালো থাকতাম। কিছু দালাল দেশ ছেড়ে চলে গেছে। চোরেরা যদি তাদের সঙ্গে চলে যেত, আমরাও অনেক ভালো থাকতাম। ... শুধু আইন দ্বারা দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না।’ আজও কত প্রাসঙ্গিক বঙ্গবন্ধুর সেই মেঠো বক্তৃতা!
হতাশ আর ডুবন্ত জাতিকে রক্ষা করার জন্য প্রকৃতিই নাকি যোগ্য নেতৃত্ব ঠিক করে দেয়। আট শতকে শত বছরের মাৎস্যন্যায় থেকে জাতিকে উদ্ধার করে রাজনীতির মঞ্চে এসে দাঁড়িয়েছিলেন প্রায় অচেনা নেতা গোপাল। পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের হাত ধরেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাঙালি জাতি।
এখন তো নষ্ট রাজনীতির আসুরিক দাপটে বিপন্ন আমরা। কই কোনো গোপাল তো আকাশ ফুঁড়ে নেমে আসে না। বারবারই প্রতারক রাজনীতির বাচালতার মধ্যে আটকে যাই আমরা। মিডিয়াতে তথ্যসমৃদ্ধ শতকোটি টাকার ক্রয় দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশ পেলেও চৌর্যবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত এই জগতের মানুষগুলো মোটেও পরোয়া করে না।
কতটা শক্ত ভিত্তি এদের, চুরি চুরি আবার সিনাজুড়ি করতেও ছাড়ে না। প্রত্যেক সরকারই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আর গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা বিধানের কথা বলে; কিন্তু বাস্তবতা নির্মম। প্রতিনিয়তই কর্মক্ষেত্রে নানাভাবে লাঞ্ছিত-নিগৃহীত হচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। কখনও শারীরিকভাবে, কখনও শিকার হচ্ছেন মানসিক, আর্থিক হয়রানির। কখনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে, কখনও রাষ্ট্রের হাতে। স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলেই গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর নেমে আসে খড়গ।
পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করলেও পুলিশি নির্যাতনেরও শিকার হতে হয় সংবাদকর্মীদের। যদিও উভয়েই ঝুঁকির মধ্যে কাজ করেন। কিন্তু রাজপথে, বিপজ্জনক মুহূর্তে মাঝে-মধ্যে পুলিশই হয়ে ওঠে সাংবাদিকের প্রতিপক্ষ। পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতির ঝাল মেটান সাংবাদিকদের ওপর। পরে ‘গরু মেরে জুতা দান’-এর মতো মৌখিক দুঃখ প্রকাশও করেন। এটুকুতেই প্রতিকারের সমাপ্তি।
রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিকের সম্পর্ককে আখ্যায়িত করা হয় জল ও মাছের সম্পর্কে। কিন্তু যতই বস্তুনিষ্ঠ হোক, নিজের বা নিজ গ্রুপের বিপক্ষে গেলেই প্রতিপক্ষ হয়ে পড়েন রাজনীতিবিদরাও। তারাও হুমকি-ধমকি দেন, কর্মক্ষেত্রে প্রভাব খাটিয়ে সাংবাদিকদের ‘উপহার’ দেন বেকারত্ব। নিজস্ব সুবিধাবাদীদের দিয়ে মামলায় জড়িয়ে দেন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। আমলারা করেন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নানা হয়রানি। সাংবাদিকতার নৈতিকতায় সাংবাদিকরা কারও স্থায়ী বন্ধু বা শত্রু হতে পারে না। অনিয়মের বিরুদ্ধে সাংবাদিককে দাঁড়াতেই হয়। ফলে তারা হয়ে যান অপছন্দের পাত্র। তাদের গলা টিপে ধরতে সচেষ্ট হয়ে ওঠে সবাই। অথচ অপছন্দের কথাগুলো তুলে ধরতে হয় দেশের বৃহত্তর স্বার্থেই।
শিল্প হিসেবে সংবাদমাধ্যমের বিকাশ ও সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় প্রতিটি সরকারই থাকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু কোন সরকারের হাতেই প্রণীত হয়নি একটি সাংবাদিক সুরক্ষা আইন। এমনকি দেশে একের পর এক সাংবাদিক খুনের ঘটনা ঘটলেও কোন খুনের বিচার প্রক্রিয়াই সুষ্ঠুভাবে এগোয়নি। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি একটিরও।
প্রতিদিন সংবাদপিপাসু মানুষের দ্বারে নতুন নতুন খবর নিয়ে হাজির হন সাংবাদিকরা। নির্যাতিত মানুষ শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে সাংবাদিকদের দারস্থ হন। আর সাংবাদিকরা জাতির সামনে তুলে ধরেন সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, সাফল্য-ব্যর্থতার গাঁথা। সেই সাংবাদিক যখন নির্যাতিত হন তখন সাধারণ মানুষ কোথায় যাবেন?
রোজিনা ইসলাম। সাংবাদিকতার জন্য দেশ-বিদেশে বহু পুরস্কার পেয়েছেন। সাম্প্রতিককালে স্বাস্থ্য বিভাগের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে রোজিনা ইসলাম বেশকিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেন দৈনিক প্রথম আলোয়, যা দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করেন। তুলির আঁচড়ে কিংবা ক্যামেরার কারুকার্যে তারা সাধারণ্যে সমাজের ভালো-মন্দের ছবি ফুটিয়ে তোলেন। এটা করতে যেমন মেধার যোগান লাগে, অনেক শারীরিক-মানসিক ধকলও পোহাতে হয়।
একদিকে যেমন আমজনতার প্রত্যাশা পূরণে সজাগ থাকতে হয়, অন্যদিকে সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে কায়েমি স্বার্থের রোষানলে পড়তে হয়। সাংবাদিকরা কেবল যে সমাজের চলমান অবস্থাকে প্রতিবিম্বিত করেন তা-ই নয়, জনমত গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাদের ভূমিকা আপোষকামী হলে সাধারণ্যে দুয়োধ্বনি শুনতে হয়।
উদ্বেগের বিষয় হলো, রোজিনা ইসলামের ঘটনা একদিকে যেমন দেশের জন্য ইমেজ সংকট তৈরি করছে, অন্যদিকে সাংবাদিকদেরও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় নিরুৎসাহিত করতে পারে। এটা আখেরে সরকার বা সমাজ কারও জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না, শুধু দুর্নীতিবাজদের পোয়াবারো হতে পারে।
গণমাধ্যম বা সাংবাদিকতামুক্ত দেশ আজকের বিশ্বে ভাবাও যায় না। দেশের সব পত্রিকা বা টেলিভিশন বন্ধ হয়ে গেছে। কোথাও কোন দুর্নীতির খবর নেই, ধর্ষণের খবর নেই, শিক্ষাঙ্গনের দুর্দশার খবর নেই, লুটপাট-রাহাজানির খবর নেই, শ্রমিক সংকটের খবর নেই, কোনো বৈষম্যের খবর নেই, করোনাকালীন কোনো মৃত্যুর খবর নেই। কোথাও কিছু বলার নেই, লেখার নেই। পৃথিবীর কোন তথ্য নেই। এমন হীরক রাজার দেশ পাগলেও ভাবে না।
[লেখক : সভাপতি, ঝিনাইদহ
জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি]