আলোবিন্দু
ফারুক মাহমুদ
সৌন্দর্য ডেকেছে যদি..., চলে আসি কাছে
হাতে হাত। দীর্ঘ রাস্তা চলি
বাঘের ক্রোধের নিচে পরিচ্ছন্ন ঘুম
অনাদৃত- তবু কথা বলি
ঈর্ষা ঘৃণা কাতরতা বিবেকের ধস
অস্তগামী মানবিক জয়
জ্বালিয়ে রেখেছি আলো, হে পতঙ্গ এসো
স্বপ্নজন্ম- যদি কিছু হয়
মানুষ ছুটেছে ক্রোধে মানুষের পিছু
প্রীতি নেই- পাথরের কাঁড়ি
চোখের জলের দাগ চক্ষুঝরা জলে
এখনো তা ধুয়ে দিতে পারি
হলগুলি আজ মৃতগ্রাম
বিমল গুহ
আমার চোখের সামনে প্রতিভোরে জেগে ওঠে- মুহসীন হল,
অমর একুশে হল, সূর্যসেন, জসীম উদ্দীন, এফ রহমান,
কাছে-দূরে সার্জেন্ট জহুরুল হক, রোকেয়া, শামসুন নাহার,
জগন্নাথ, সলিমুল্লাহ হল আরো আরো- মনে হয় হলগুলি আজ মৃতগ্রাম;
বিস্ময়ভরা চোখে প্রাগৈতিহাসিক যুগের কোনো স্থাপত্য-এলাকা!
সাক্ষী আকাশমণ্ডলী; সাক্ষী দূর বাতাসের কানে কানে রোদন-বেদন;
সাক্ষী আজ মৃতজ্যোৎস্না, উঠন্ত সূর্যের তীর!
মনে হয় শতবর্ষ পার করে হলগুলি একবিংশ শতাব্দীর সাক্ষী হয়ে
মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে আঙিনায়।
খুব কাছাকাছি থেকে আমিও তাদের কাছে পরিচিত মুখ,
কাছে থেকে দেখি এই হলের ভেতর কারো ঝুলছে কাপড় আলনায়
চেয়ার-টেবিল-খাট-বুকসেলফ হাহাকার করে; প্রতিরাতে কাঁদে-
আমি সে-রোদনস্বর কান পেতে শুনি; আমাকে জানিয়ে যায় জারুলের হাওয়া!
হলগুলির দিকে আর আগের মতন পারি না তাকাতে, যেন ইতিহাস-সাক্ষী এই
প্রাগৈতিহাসিক যুগের কোনো জীবন্মৃত গ্রাম- দাঁড়িয়ে রয়েছে মহাধ্বংসচিহ্ন নিয়ে!
হলগুলির দিকে আর সত্যি যায় না তাকানো- দেখি রাতের নিঃঝুম পাড়া
বিস্ময়চিহ্ন বুকে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক শতাব্দী অবধি!
সত্যিই কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ মৃতপুরী; হলগুলি দূর মৃতগ্রাম!
দেখি- অন্ধকারে অদৃশ্য করোনা হাঁটে বিড়ালের চোখের মতন বারান্দায়
সন্তর্পণে একা; যেখানে আমার প্রজন্মছায়া হাঁটতো উল্লাসে একদিন!
প্রত্যহ সন্ধ্যারাতে কারা যেন বারান্দার বাতি জ্বেলে যায়।
এই নির্জন উত্তরাধিকারবিহীন বারান্দায় কারা হাঁটে? সন্ধ্যার ছায়ামুখ?
হতে পারে দূরত্বে-দেখার তফাৎ; হতে পারে সময়-আতঙ্ক আমাদের!
করোনার শ্রীহীন থাবা তছনছ করে গেছে আমাদের আগামী-ভুবন;
করে গেছে লণ্ডভণ্ড স্বপ্নের বাগান; আমাদের ভবিষ্যৎদিন!
সবাই তাকিয়ে আছে- কখন আবার হলগুলি সোল্লাসে মুখরিত হবে
আগের মতন; কলকল্লোলে কখন উঠবে ভরে স্কুলপ্রাঙ্গণ- আমার পৃথিবী?
কখন গুঞ্জনে মুখর হবে ক্লাসরুম, মধুর কেন্টিন, টি-স্টল, হাকিমচত্বর;
আবার কখন করোনারমুক্ত টিএসসি’র স্বপ্নপুরে জ্বলে উঠবে আলো- পরিপার্শ্ব
আলোকিত করে- কবিতা ও গানে কখন উঠবে ভরে এই মহা বিদ্যার-শহর?
কবিস্বভাব
মাহফুজ আল-হোসেন
এই বোধ হচ্ছে দুয়ে দুয়ে চার
পরমুহূর্তেই দুর্গম গিরিখাত- দূরপনেয় অস্বাভাবিক
ভাবছেন দৈবচয়িত নমুনা নিয়ে রয়েছেন ঠিক হাতের নাগালেই
আবার উড়নচণ্ডী-উদ্ভট প্রশ্নের ঝড় তুলে বিনা নোটিশে হঠাৎ নিরুদ্দেশ
চারুপ্রকাশে প্রায়শই মিতবাক
কখনো সখনো বিশেষণিক সোমরসে মাত্রাতিরিক্ত উচ্ছ্বাস
তন্দ্রাঘোর কেটে গেলে আবার নিরুদ্বেগ নির্মোহ- যেন উদ্বায়ী কর্পূর
কথায় কথায় ব্যথার কাজল পরাবেন নিদ্রাহীন দুচোখে
নৈঃশব্দ্যের মেঘ হয়ে চোখের কোণে ঝরাবেন স্ফটিক জল
বোধিপ্রাপ্তির প্রশান্তিকে লুকাবেন সাধনবৃক্ষ কোটরে
আর প্রহেলিকাময় উৎপ্রেক্ষার প্রতীকায়িত ইঙ্গিতে
আনন্দের খেয়ালী ঝর্নাধারাকে প্রবাহিত করবেন
যতিচিহ্নহীন মুক্তি সরোবরে
সিগনেচার
মিলু শামস
ব্যাংকের ভল্টে মূল্যবান দস্তাবেজ রাখার মতো
এখানে অনেক দুপুর গচ্ছিত রেখেছিল তারা
তারা এসেছিল দূর দূর অঞ্চল থেকে
ফিরেছেও ভিন্ন গন্তব্যে
দুপুরগুলো শুধু অভিন্ন আলোক রেখায়
গেঁথেছিল, সংগ্রাম ও দ্রোহে স্বপ্ন ও সিদ্ধান্তে
সংশয়াতীত নির্মল জীবন
সাতঘড়া মোহরের মতো রেখে গিয়েছিল।
এ ছিল তাদের উত্থান পর্বের সিগনেচার
সোনালি পালকে চড়ে উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে
এরপর ছড়িয়ে যায়
সুশোভন বিকেলের দিকে
সায়াহ্নে একদিন ফেরা যাবে
এই সব দুপুরের কাছে
উদ্যানে ঝুলে থাকা
বৃক্ষের শাখা ও কাণ্ডে অবিচল-
এই ছিল অভিলাষ।
সময়ের ত্বকে শত ছিদ্র ফুঁড়ে
বেরিয়ে এলে লোমশ হাত, নখ-দন্ত ও জীভ ক্রমশ
দুপুরের আলয় কেঁপে ওঠে একদিন
ঝড় ওঠে অগ্নি ও নৈঋতে
তারপর-
দুপুরগুলো ঝর ঝর ঝরে পড়ে
বৃক্ষের চোখে জল হয়ে।
এক নিভৃত নাম
হানিফ রুবেল
বাড়াই না কাতর হাত- আকাক্সক্ষার আলোর চোরাবালিতে
সত্তার ভিটায় মর্মরিত তবু এক নাম নিভৃতে জ্বলে
সারাক্ষণ মাথাকুটে নিশিথের হাওয়ার কাছে
উন্মুখর এক করুণ পরিণাম।
উদ্বেলিত বুকে পরাক্রান্ত এক মেঘের অভিলাষ
ছায়া ফেলে উড়ে দূরে হাওয়ায় হাওয়ায়,
সেখানে আমি মেলে রাখি কাতর চোখ- নীলিমার নীল
ঝড়ের রাত বাড়ে, স্মৃতিরা মর্মরিত পাতা হয়ে দোলে...
এমনি নিদান কালে আকূল শূন্যতা নিয়ে
আমি দাঁড়িয়ে থাকি বুকের পাঁজর খুলে।
বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন ২০২১ , ৩ আষাড় ১৪২৮ ৫ জিলকদ ১৪৪২
আলোবিন্দু
ফারুক মাহমুদ
সৌন্দর্য ডেকেছে যদি..., চলে আসি কাছে
হাতে হাত। দীর্ঘ রাস্তা চলি
বাঘের ক্রোধের নিচে পরিচ্ছন্ন ঘুম
অনাদৃত- তবু কথা বলি
ঈর্ষা ঘৃণা কাতরতা বিবেকের ধস
অস্তগামী মানবিক জয়
জ্বালিয়ে রেখেছি আলো, হে পতঙ্গ এসো
স্বপ্নজন্ম- যদি কিছু হয়
মানুষ ছুটেছে ক্রোধে মানুষের পিছু
প্রীতি নেই- পাথরের কাঁড়ি
চোখের জলের দাগ চক্ষুঝরা জলে
এখনো তা ধুয়ে দিতে পারি
হলগুলি আজ মৃতগ্রাম
বিমল গুহ
আমার চোখের সামনে প্রতিভোরে জেগে ওঠে- মুহসীন হল,
অমর একুশে হল, সূর্যসেন, জসীম উদ্দীন, এফ রহমান,
কাছে-দূরে সার্জেন্ট জহুরুল হক, রোকেয়া, শামসুন নাহার,
জগন্নাথ, সলিমুল্লাহ হল আরো আরো- মনে হয় হলগুলি আজ মৃতগ্রাম;
বিস্ময়ভরা চোখে প্রাগৈতিহাসিক যুগের কোনো স্থাপত্য-এলাকা!
সাক্ষী আকাশমণ্ডলী; সাক্ষী দূর বাতাসের কানে কানে রোদন-বেদন;
সাক্ষী আজ মৃতজ্যোৎস্না, উঠন্ত সূর্যের তীর!
মনে হয় শতবর্ষ পার করে হলগুলি একবিংশ শতাব্দীর সাক্ষী হয়ে
মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে আঙিনায়।
খুব কাছাকাছি থেকে আমিও তাদের কাছে পরিচিত মুখ,
কাছে থেকে দেখি এই হলের ভেতর কারো ঝুলছে কাপড় আলনায়
চেয়ার-টেবিল-খাট-বুকসেলফ হাহাকার করে; প্রতিরাতে কাঁদে-
আমি সে-রোদনস্বর কান পেতে শুনি; আমাকে জানিয়ে যায় জারুলের হাওয়া!
হলগুলির দিকে আর আগের মতন পারি না তাকাতে, যেন ইতিহাস-সাক্ষী এই
প্রাগৈতিহাসিক যুগের কোনো জীবন্মৃত গ্রাম- দাঁড়িয়ে রয়েছে মহাধ্বংসচিহ্ন নিয়ে!
হলগুলির দিকে আর সত্যি যায় না তাকানো- দেখি রাতের নিঃঝুম পাড়া
বিস্ময়চিহ্ন বুকে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক শতাব্দী অবধি!
সত্যিই কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ মৃতপুরী; হলগুলি দূর মৃতগ্রাম!
দেখি- অন্ধকারে অদৃশ্য করোনা হাঁটে বিড়ালের চোখের মতন বারান্দায়
সন্তর্পণে একা; যেখানে আমার প্রজন্মছায়া হাঁটতো উল্লাসে একদিন!
প্রত্যহ সন্ধ্যারাতে কারা যেন বারান্দার বাতি জ্বেলে যায়।
এই নির্জন উত্তরাধিকারবিহীন বারান্দায় কারা হাঁটে? সন্ধ্যার ছায়ামুখ?
হতে পারে দূরত্বে-দেখার তফাৎ; হতে পারে সময়-আতঙ্ক আমাদের!
করোনার শ্রীহীন থাবা তছনছ করে গেছে আমাদের আগামী-ভুবন;
করে গেছে লণ্ডভণ্ড স্বপ্নের বাগান; আমাদের ভবিষ্যৎদিন!
সবাই তাকিয়ে আছে- কখন আবার হলগুলি সোল্লাসে মুখরিত হবে
আগের মতন; কলকল্লোলে কখন উঠবে ভরে স্কুলপ্রাঙ্গণ- আমার পৃথিবী?
কখন গুঞ্জনে মুখর হবে ক্লাসরুম, মধুর কেন্টিন, টি-স্টল, হাকিমচত্বর;
আবার কখন করোনারমুক্ত টিএসসি’র স্বপ্নপুরে জ্বলে উঠবে আলো- পরিপার্শ্ব
আলোকিত করে- কবিতা ও গানে কখন উঠবে ভরে এই মহা বিদ্যার-শহর?
কবিস্বভাব
মাহফুজ আল-হোসেন
এই বোধ হচ্ছে দুয়ে দুয়ে চার
পরমুহূর্তেই দুর্গম গিরিখাত- দূরপনেয় অস্বাভাবিক
ভাবছেন দৈবচয়িত নমুনা নিয়ে রয়েছেন ঠিক হাতের নাগালেই
আবার উড়নচণ্ডী-উদ্ভট প্রশ্নের ঝড় তুলে বিনা নোটিশে হঠাৎ নিরুদ্দেশ
চারুপ্রকাশে প্রায়শই মিতবাক
কখনো সখনো বিশেষণিক সোমরসে মাত্রাতিরিক্ত উচ্ছ্বাস
তন্দ্রাঘোর কেটে গেলে আবার নিরুদ্বেগ নির্মোহ- যেন উদ্বায়ী কর্পূর
কথায় কথায় ব্যথার কাজল পরাবেন নিদ্রাহীন দুচোখে
নৈঃশব্দ্যের মেঘ হয়ে চোখের কোণে ঝরাবেন স্ফটিক জল
বোধিপ্রাপ্তির প্রশান্তিকে লুকাবেন সাধনবৃক্ষ কোটরে
আর প্রহেলিকাময় উৎপ্রেক্ষার প্রতীকায়িত ইঙ্গিতে
আনন্দের খেয়ালী ঝর্নাধারাকে প্রবাহিত করবেন
যতিচিহ্নহীন মুক্তি সরোবরে
সিগনেচার
মিলু শামস
ব্যাংকের ভল্টে মূল্যবান দস্তাবেজ রাখার মতো
এখানে অনেক দুপুর গচ্ছিত রেখেছিল তারা
তারা এসেছিল দূর দূর অঞ্চল থেকে
ফিরেছেও ভিন্ন গন্তব্যে
দুপুরগুলো শুধু অভিন্ন আলোক রেখায়
গেঁথেছিল, সংগ্রাম ও দ্রোহে স্বপ্ন ও সিদ্ধান্তে
সংশয়াতীত নির্মল জীবন
সাতঘড়া মোহরের মতো রেখে গিয়েছিল।
এ ছিল তাদের উত্থান পর্বের সিগনেচার
সোনালি পালকে চড়ে উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে
এরপর ছড়িয়ে যায়
সুশোভন বিকেলের দিকে
সায়াহ্নে একদিন ফেরা যাবে
এই সব দুপুরের কাছে
উদ্যানে ঝুলে থাকা
বৃক্ষের শাখা ও কাণ্ডে অবিচল-
এই ছিল অভিলাষ।
সময়ের ত্বকে শত ছিদ্র ফুঁড়ে
বেরিয়ে এলে লোমশ হাত, নখ-দন্ত ও জীভ ক্রমশ
দুপুরের আলয় কেঁপে ওঠে একদিন
ঝড় ওঠে অগ্নি ও নৈঋতে
তারপর-
দুপুরগুলো ঝর ঝর ঝরে পড়ে
বৃক্ষের চোখে জল হয়ে।
এক নিভৃত নাম
হানিফ রুবেল
বাড়াই না কাতর হাত- আকাক্সক্ষার আলোর চোরাবালিতে
সত্তার ভিটায় মর্মরিত তবু এক নাম নিভৃতে জ্বলে
সারাক্ষণ মাথাকুটে নিশিথের হাওয়ার কাছে
উন্মুখর এক করুণ পরিণাম।
উদ্বেলিত বুকে পরাক্রান্ত এক মেঘের অভিলাষ
ছায়া ফেলে উড়ে দূরে হাওয়ায় হাওয়ায়,
সেখানে আমি মেলে রাখি কাতর চোখ- নীলিমার নীল
ঝড়ের রাত বাড়ে, স্মৃতিরা মর্মরিত পাতা হয়ে দোলে...
এমনি নিদান কালে আকূল শূন্যতা নিয়ে
আমি দাঁড়িয়ে থাকি বুকের পাঁজর খুলে।