সাইবার বুলিং প্রতিরোধে আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতা জরুরি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের জীবনের নানা ক্ষেত্রে লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে। মানুষে মানুষে যোগাযোগ অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে সহজ ও সাবলীল হওয়া তারই একটি উদাহরণ। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যোগাযোগের বিশ্বকে করেছে বিস্তৃত। চেনা-অচেনার ভেদরেখাও যেন উঠে গেছে।

সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মানুষের জীবনে যেমন নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমন কিছু সমস্যাও দেখা দিয়েছে। একজনের ছবি বা ভিডিও অনলাইনে বিকৃত করা, একজন অন্যজনকে হেয় প্রতিপন্ন করার মতো সাইবার বুলিং এখন বড় একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাইবার বুলিংয়ের শিকার মানুষ হতাশায় ভোগেন। হতাশাগ্রস্ত কেউ কেউ আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়।

‘স্টপ সাইবার বুলিং ডে’ ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৬০ ভাগ অনলাইন বুলিং বা হয়রানির শিকার হয়। তাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী, শিশু এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরী। করোনার সংক্রমণের পর থেকে গত দেড় বছরে দেশে সাইবার বুলিং বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার জন্যই বেশি সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে তাদের অনলাইনে বিপদে পড়ার আশঙ্কাটাও বাড়ছে।

সাইবার বুলিং একটি বৈশ্বিক সংকট। এ সংকট থেকে সবার নিরাপদ থাকা জরুরি। এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছরের জুন মাসের তৃতীয় শুক্রবার ‘স্টপ সাইবার বুলিং ডে’ পালন করা হচ্ছে।

সাইবার বুলিংয়ের মতো সমস্যার কারণে অনলাইন ব্যবহারকারীরা যে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তার জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দায়ী নয়। বরং সাইবার জগতের অপব্যবহারকারীই এজন্য দায়ী। প্রযুক্তিকে দূরে সরিয়ে বা এর ব্যবহার সীমিত করে এ থেকে পরিত্রাণ মিলবে না।

ইন্টারনেটের অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াটা জরুরি। কেউ সাইবার বুলিং করলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। হয়রানির শিকার মানুষ যেন আইনের আশ্রয় পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে যারা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন তাদের মধ্যে ৭৮ শতাংশ হয়রানির ভয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যান না। আবার যারা গিয়ে থাকেন তাদের মধ্যে ৭২ শতাংশ অভিযোগকারী প্রত্যাশা অনুযায়ী বিচার পান না। আইন প্রয়োগ করতে হবে ডিজিটাল জগতকে নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে। কেবল সরকারবিরোধী মতকে দমন করা আইনের লক্ষ্য হলে বুলিং করা সাইবার অপরাধীরা অন্যায় উৎসাহ পাবে।

নাগরিকদের অনলাইনে সুরক্ষা দিতে সরকারকে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। অনলাইনে নিরাপদ থাকার কৌশলগুলো মানুষকে জানাতে হবে। এজন্য নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে। পাঠ্যসূচিতে নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

রবিবার, ২০ জুন ২০২১ , ৬ আষাঢ় ১৪২৮ ৮ জিলকদ ১৪৪২

সাইবার বুলিং প্রতিরোধে আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতা জরুরি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের জীবনের নানা ক্ষেত্রে লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে। মানুষে মানুষে যোগাযোগ অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে সহজ ও সাবলীল হওয়া তারই একটি উদাহরণ। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যোগাযোগের বিশ্বকে করেছে বিস্তৃত। চেনা-অচেনার ভেদরেখাও যেন উঠে গেছে।

সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মানুষের জীবনে যেমন নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমন কিছু সমস্যাও দেখা দিয়েছে। একজনের ছবি বা ভিডিও অনলাইনে বিকৃত করা, একজন অন্যজনকে হেয় প্রতিপন্ন করার মতো সাইবার বুলিং এখন বড় একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাইবার বুলিংয়ের শিকার মানুষ হতাশায় ভোগেন। হতাশাগ্রস্ত কেউ কেউ আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়।

‘স্টপ সাইবার বুলিং ডে’ ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৬০ ভাগ অনলাইন বুলিং বা হয়রানির শিকার হয়। তাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী, শিশু এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরী। করোনার সংক্রমণের পর থেকে গত দেড় বছরে দেশে সাইবার বুলিং বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার জন্যই বেশি সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে তাদের অনলাইনে বিপদে পড়ার আশঙ্কাটাও বাড়ছে।

সাইবার বুলিং একটি বৈশ্বিক সংকট। এ সংকট থেকে সবার নিরাপদ থাকা জরুরি। এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছরের জুন মাসের তৃতীয় শুক্রবার ‘স্টপ সাইবার বুলিং ডে’ পালন করা হচ্ছে।

সাইবার বুলিংয়ের মতো সমস্যার কারণে অনলাইন ব্যবহারকারীরা যে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তার জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দায়ী নয়। বরং সাইবার জগতের অপব্যবহারকারীই এজন্য দায়ী। প্রযুক্তিকে দূরে সরিয়ে বা এর ব্যবহার সীমিত করে এ থেকে পরিত্রাণ মিলবে না।

ইন্টারনেটের অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াটা জরুরি। কেউ সাইবার বুলিং করলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। হয়রানির শিকার মানুষ যেন আইনের আশ্রয় পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে যারা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন তাদের মধ্যে ৭৮ শতাংশ হয়রানির ভয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যান না। আবার যারা গিয়ে থাকেন তাদের মধ্যে ৭২ শতাংশ অভিযোগকারী প্রত্যাশা অনুযায়ী বিচার পান না। আইন প্রয়োগ করতে হবে ডিজিটাল জগতকে নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে। কেবল সরকারবিরোধী মতকে দমন করা আইনের লক্ষ্য হলে বুলিং করা সাইবার অপরাধীরা অন্যায় উৎসাহ পাবে।

নাগরিকদের অনলাইনে সুরক্ষা দিতে সরকারকে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। অনলাইনে নিরাপদ থাকার কৌশলগুলো মানুষকে জানাতে হবে। এজন্য নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে। পাঠ্যসূচিতে নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।