অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়েছে বান্দরবানে পর্যটন শিল্প

কোভিড-১৯ এর কারণে পর্যটকদের কোলাহল থেমে গেছে। নেই কোন হৈ হুল্লোর। প্রতিবছর ঈদ ও সরকারি ছুটিতে পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড় থাকলেও গত দুই বছর পাহাড়ে ভিন্ন চিত্র। নেই কোন পর্যটকের আনাগোনা।এতে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। করোনার সংক্রমন রোধে ১ এপ্রিল থেকে বান্দরবানে সব পর্যটন কেন্দ্রগুলো দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা এবং সব পর্যটন কেন্দ্র পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন স্থানীয় প্রশাসন।

এরপর লকডাউনের কারণে এখনও বন্ধ রয়েছে হোটেল-মোটেল এবং সব পর্যটন কেন্দ্র। ফলে সাড়ে তিন মাসের বেশি সময় ধরে হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউজ বন্ধ থাকায় কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। এতে ব্যবসায়ীদের দিন দিন লোকসানের পাল্লা ভারি হলেও আয়ের খাত জিরো। পাশাপাশি বেকার হয়ে পড়ছে হাজার হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী।

কারণ প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে প্রকৃতির নির্মল স্বাদ পেতে পর্যটককের ঢল নামে বান্দরবানে। বান্দরবানে রয়েছে পাহাড়-পর্বত, ঝিরি-ঝর্ণা, মেঘলা, নীলাচল, নীলগিরি, চিম্বুকসহ অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র। যার কারণে ঈদ উৎসবে পর্যটকদের ঢল নামে পাহাড়ে, সেখানে পর্যটকশূন্য। খালি পড়ে রয়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। হোটেল-মোটেল রিসোর্টগুলো ফাঁকা। পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মূল ফটকে লাগানো হয়েছে তালা, আর কর্মচারীরা পার করছেন অলস সময়। পর্যটক না থাকায় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বিরাজ করছে শূন্যতা। ফলে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে ট্যুরিস্ট শ্রমিকরা জানান, সাড়ে তিন মাসের বেশি হয়ে গেলো শ্রমিকদের গাড়ির চাকা বন্ধ রয়েছে। গাড়িগুলো মালিক-শ্রমিকরা পর্যটক নির্ভরশীল এবং তাদের মাধ্যমে আমাদের আয় রোজগার। চাকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কষ্টে জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। তাদের মতে, ভবিষ্যৎ শ্রমিকদের ভাগ্যে কি আছে বলা যাচ্ছে না। আমরা এখন অসহায় অবস্থায় আছি, করোনার কারণে এখনও লকডাউন চলছে।

ভবিষ্যতে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আমরা কিভাবে দিন কাটবো জানি না। ট্যুরিস্ট গাড়িগুলো বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছে। শ্রমিকরা মনে করেন, সরকারের তরফ থেকে যে পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে, সে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে তাদের পরিবার চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা মনে করেন, তাদের গাড়ির চাকা ঘুরলে তাদের আয় রোজগার।

বান্দরবানের হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজ ব্যবসায়ীরা জানান, করোনাকালে এই ব্যবসা খাতে গত বছর থেকে শুধু লোকসান গুনতেছি, প্রতিদিনই লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে এবং আয়ের খাত জিরো। প্রতিবছর ঈদে ও সরকারি ছুটিতে কিছু পর্যটকের দেখা মিলে। কিন্তু করোনার কারণে সব ব্যবসা-বাণিজ্য থমকে গেছে। ফলে চরম সংকটে পড়ছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। বান্দরবান হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনাকালে প্রথম থেকে এ পর্যন্ত হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। মালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এক কথায় কোভিড-১৯ জীবন-জীবিকা স্তদ্ধ করে দিয়েছে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরিজী বলেন, করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তাই বান্দরবানের সাধারণ জনগণকে মহামারী থেকে রক্ষা করা, আর পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যটন কেন্দ্র সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে করোনা প্রকোপ কমে গেলে আবারও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্বান্ত নেয়া হবে।

শনিবার, ২৪ জুলাই ২০২১ , ৮ শ্রাবন ১৪২৮ ১২ জিলহজ ১৪৪২

অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়েছে বান্দরবানে পর্যটন শিল্প

মো. শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান

কোভিড-১৯ এর কারণে পর্যটকদের কোলাহল থেমে গেছে। নেই কোন হৈ হুল্লোর। প্রতিবছর ঈদ ও সরকারি ছুটিতে পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড় থাকলেও গত দুই বছর পাহাড়ে ভিন্ন চিত্র। নেই কোন পর্যটকের আনাগোনা।এতে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। করোনার সংক্রমন রোধে ১ এপ্রিল থেকে বান্দরবানে সব পর্যটন কেন্দ্রগুলো দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা এবং সব পর্যটন কেন্দ্র পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন স্থানীয় প্রশাসন।

এরপর লকডাউনের কারণে এখনও বন্ধ রয়েছে হোটেল-মোটেল এবং সব পর্যটন কেন্দ্র। ফলে সাড়ে তিন মাসের বেশি সময় ধরে হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউজ বন্ধ থাকায় কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। এতে ব্যবসায়ীদের দিন দিন লোকসানের পাল্লা ভারি হলেও আয়ের খাত জিরো। পাশাপাশি বেকার হয়ে পড়ছে হাজার হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী।

কারণ প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে প্রকৃতির নির্মল স্বাদ পেতে পর্যটককের ঢল নামে বান্দরবানে। বান্দরবানে রয়েছে পাহাড়-পর্বত, ঝিরি-ঝর্ণা, মেঘলা, নীলাচল, নীলগিরি, চিম্বুকসহ অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র। যার কারণে ঈদ উৎসবে পর্যটকদের ঢল নামে পাহাড়ে, সেখানে পর্যটকশূন্য। খালি পড়ে রয়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। হোটেল-মোটেল রিসোর্টগুলো ফাঁকা। পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মূল ফটকে লাগানো হয়েছে তালা, আর কর্মচারীরা পার করছেন অলস সময়। পর্যটক না থাকায় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বিরাজ করছে শূন্যতা। ফলে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে ট্যুরিস্ট শ্রমিকরা জানান, সাড়ে তিন মাসের বেশি হয়ে গেলো শ্রমিকদের গাড়ির চাকা বন্ধ রয়েছে। গাড়িগুলো মালিক-শ্রমিকরা পর্যটক নির্ভরশীল এবং তাদের মাধ্যমে আমাদের আয় রোজগার। চাকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কষ্টে জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। তাদের মতে, ভবিষ্যৎ শ্রমিকদের ভাগ্যে কি আছে বলা যাচ্ছে না। আমরা এখন অসহায় অবস্থায় আছি, করোনার কারণে এখনও লকডাউন চলছে।

ভবিষ্যতে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আমরা কিভাবে দিন কাটবো জানি না। ট্যুরিস্ট গাড়িগুলো বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছে। শ্রমিকরা মনে করেন, সরকারের তরফ থেকে যে পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে, সে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে তাদের পরিবার চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা মনে করেন, তাদের গাড়ির চাকা ঘুরলে তাদের আয় রোজগার।

বান্দরবানের হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজ ব্যবসায়ীরা জানান, করোনাকালে এই ব্যবসা খাতে গত বছর থেকে শুধু লোকসান গুনতেছি, প্রতিদিনই লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে এবং আয়ের খাত জিরো। প্রতিবছর ঈদে ও সরকারি ছুটিতে কিছু পর্যটকের দেখা মিলে। কিন্তু করোনার কারণে সব ব্যবসা-বাণিজ্য থমকে গেছে। ফলে চরম সংকটে পড়ছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। বান্দরবান হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনাকালে প্রথম থেকে এ পর্যন্ত হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। মালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এক কথায় কোভিড-১৯ জীবন-জীবিকা স্তদ্ধ করে দিয়েছে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরিজী বলেন, করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তাই বান্দরবানের সাধারণ জনগণকে মহামারী থেকে রক্ষা করা, আর পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যটন কেন্দ্র সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে করোনা প্রকোপ কমে গেলে আবারও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্বান্ত নেয়া হবে।