জিও ব্যাগ ফেলেও মাদারীপুরের কুমার নদের বেড়িবাঁধ সড়কটি রক্ষা পেল না

মাদারীপুরে রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট-কালীবাড়ী ফিডার (বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহৃত) সড়কটি কুমার নদের ভাঙন থেকে বাঁচাতে সড়কের ৮৫ মিটার অংশে জিও ব্যাগের ডাম্পিং করা হয়। ডাম্পিং শেষ হতে না হতেই পাকা সড়কটি প্রায় ২৫০ মিটার এখন নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে হরিদাসদী-মহেন্দ্রদী ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের উপজেলা এবং জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডে থেকে জানা গেছে, রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট-কালীবাড়ী ফিডার সড়কটি ব্যবহার করে এই অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ জেলা ও উপজেলা শহরে যাতায়াত করে। এছাড়া সড়কটি কুমার নদের বেড়িবাঁধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

স্টেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে কুমার নদের ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় টেকেরহাট-কালীবাড়ী সড়কের গোয়ালবাথান এলাকা। তাৎক্ষণিক ভাঙন ঠেকাতে সড়কের টেকেরহাটÑকালীবাড়ী ফিডার সড়কটি ৮৫ মিটার অংশ চিহ্নত করে নদের পাড়ে ফেলা হয় ৮ হাজার জিও ব্যাগ।

জিও ব্যাগের ডাম্পিং শেষ হওয়ার পরেই নদের পানি কমতে শুরু করে। পানি কমায় আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। গত দুই দিনে ভাঙনের সড়কটি প্রায় ২৫০ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে প্রায় তিনশ মিটার সড়ক ও একাধিক বসতঘর ও ফসলি জমি। শুক্রবার বিকেলে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার টেকেরহাট-কালীবাড়ী ফিডার সড়কের গোয়ালবাথান নামক স্থানে প্রায় ২৫০ মিটার পাকা সড়ক কুমার নদে বিলীন হয়ে গেছে।

সড়কটির কার্পেটিং, বিটুমিন, ইট, বালুসহ জমির মাটি খসে খসে নদে পড়ছে। সড়কটির অন্য পাশে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, উঁচু স্থানে রয়েছে বসতঘরও। নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় সড়কটি দিয়ে কোন তিন চাকার যানবাহন চলতে পারছে না। ভাঙনের অংশটুকু অনেকেই পায়ে হেঁটে তারপর ইজিবাইক বা তিন চাকার যানবাহনে করে যাচ্ছেন গন্তব্যে। ফলে সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। গোয়ালবাথান এলাকার কৃষক আনিচ মাতুব্বর (৭০) বলেন, ‘৪০ শতাংশ জমিতে আমন ধানের চাষ করছি। রাস্তাটি কুমার নদে ভেঙে যাচ্ছে। পুরোটা ভেঙে গেলে যে কোন সময়ে ফসলের ক্ষেতে পানি চলে আসবে।

সব ধান তলিয়ে যাবে।’ নারায়ণ হালদার নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, হরিদাসদী-মহেন্দ্রদী ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটি নদের গর্ভে বিলীন হয়েই চলেছে। ক্রমেই ভাঙন আমাদের ফসলী জমির দিকে আগ্রসর হচ্ছে। ভাঙন ঠেকাতে নামে মাত্র জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে যা কোন কাজে আসেনি এখানে। আমাদের দাবি, সড়ক ও এলাকার মানুষের ফসলী জমি ও বসতঘর রক্ষায় এখানে স্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণের।’ কুমারে নদের ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে মো. ফেরদাউস হাওলাদারের বসতঘরসহ ফসলী জমি। তিনি বলেন, কুমার নদ থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এই ভয়াবহ ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এখনই ভাঙন রোধ না করা হলে বিদ্যানন্দী মাঠের সব ফসলী জমি নদের পানিতে ডুবে যাবে। আমরা বিপদে পড়ে যাব। হরিদাসদী-মহেন্দ্রদী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, সড়কটি রক্ষার জন্য আমি অনেকবারই পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।

তারা ভাঙন রোধে সর্বোচ্চ কাজ করার আশ^াস দিলেও তারা সেভাবে কোন কাজই করেনি। তাই সড়কটি ২৫০ মিটারের বেশি কুমার নদে চলে গেছে। স্থানীভাবে ভাঙন রোধ না করা গেলে এখানে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্নসহ এলাকায় বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে।’

জানতে চাইলে মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা জানান, গত মাসে নদের ভাঙনে সড়কটির ৮৫ মিটার অংশের অর্ধেক বিলীন হয়ে গিয়েছিল। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করেছিলাম। এছাড়াও মাদারীপুরে নদ-নদীর ভাঙন রোধে বড় প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে স্থায়ীভাবে নদের শাসন কাজ করে সড়কের পাশে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে।

শনিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২১ , ২৪ আশ্বিন ১৪২৮ ০১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

জিও ব্যাগ ফেলেও মাদারীপুরের কুমার নদের বেড়িবাঁধ সড়কটি রক্ষা পেল না

রিপন চন্দ্র মল্লিক, মাদারীপুর

image

মাদারীপুরে রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট-কালীবাড়ী ফিডার (বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহৃত) সড়কটি কুমার নদের ভাঙন থেকে বাঁচাতে সড়কের ৮৫ মিটার অংশে জিও ব্যাগের ডাম্পিং করা হয়। ডাম্পিং শেষ হতে না হতেই পাকা সড়কটি প্রায় ২৫০ মিটার এখন নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে হরিদাসদী-মহেন্দ্রদী ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের উপজেলা এবং জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডে থেকে জানা গেছে, রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট-কালীবাড়ী ফিডার সড়কটি ব্যবহার করে এই অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ জেলা ও উপজেলা শহরে যাতায়াত করে। এছাড়া সড়কটি কুমার নদের বেড়িবাঁধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

স্টেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে কুমার নদের ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় টেকেরহাট-কালীবাড়ী সড়কের গোয়ালবাথান এলাকা। তাৎক্ষণিক ভাঙন ঠেকাতে সড়কের টেকেরহাটÑকালীবাড়ী ফিডার সড়কটি ৮৫ মিটার অংশ চিহ্নত করে নদের পাড়ে ফেলা হয় ৮ হাজার জিও ব্যাগ।

জিও ব্যাগের ডাম্পিং শেষ হওয়ার পরেই নদের পানি কমতে শুরু করে। পানি কমায় আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। গত দুই দিনে ভাঙনের সড়কটি প্রায় ২৫০ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে প্রায় তিনশ মিটার সড়ক ও একাধিক বসতঘর ও ফসলি জমি। শুক্রবার বিকেলে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার টেকেরহাট-কালীবাড়ী ফিডার সড়কের গোয়ালবাথান নামক স্থানে প্রায় ২৫০ মিটার পাকা সড়ক কুমার নদে বিলীন হয়ে গেছে।

সড়কটির কার্পেটিং, বিটুমিন, ইট, বালুসহ জমির মাটি খসে খসে নদে পড়ছে। সড়কটির অন্য পাশে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, উঁচু স্থানে রয়েছে বসতঘরও। নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় সড়কটি দিয়ে কোন তিন চাকার যানবাহন চলতে পারছে না। ভাঙনের অংশটুকু অনেকেই পায়ে হেঁটে তারপর ইজিবাইক বা তিন চাকার যানবাহনে করে যাচ্ছেন গন্তব্যে। ফলে সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। গোয়ালবাথান এলাকার কৃষক আনিচ মাতুব্বর (৭০) বলেন, ‘৪০ শতাংশ জমিতে আমন ধানের চাষ করছি। রাস্তাটি কুমার নদে ভেঙে যাচ্ছে। পুরোটা ভেঙে গেলে যে কোন সময়ে ফসলের ক্ষেতে পানি চলে আসবে।

সব ধান তলিয়ে যাবে।’ নারায়ণ হালদার নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, হরিদাসদী-মহেন্দ্রদী ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটি নদের গর্ভে বিলীন হয়েই চলেছে। ক্রমেই ভাঙন আমাদের ফসলী জমির দিকে আগ্রসর হচ্ছে। ভাঙন ঠেকাতে নামে মাত্র জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে যা কোন কাজে আসেনি এখানে। আমাদের দাবি, সড়ক ও এলাকার মানুষের ফসলী জমি ও বসতঘর রক্ষায় এখানে স্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণের।’ কুমারে নদের ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে মো. ফেরদাউস হাওলাদারের বসতঘরসহ ফসলী জমি। তিনি বলেন, কুমার নদ থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এই ভয়াবহ ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এখনই ভাঙন রোধ না করা হলে বিদ্যানন্দী মাঠের সব ফসলী জমি নদের পানিতে ডুবে যাবে। আমরা বিপদে পড়ে যাব। হরিদাসদী-মহেন্দ্রদী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, সড়কটি রক্ষার জন্য আমি অনেকবারই পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।

তারা ভাঙন রোধে সর্বোচ্চ কাজ করার আশ^াস দিলেও তারা সেভাবে কোন কাজই করেনি। তাই সড়কটি ২৫০ মিটারের বেশি কুমার নদে চলে গেছে। স্থানীভাবে ভাঙন রোধ না করা গেলে এখানে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্নসহ এলাকায় বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে।’

জানতে চাইলে মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা জানান, গত মাসে নদের ভাঙনে সড়কটির ৮৫ মিটার অংশের অর্ধেক বিলীন হয়ে গিয়েছিল। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করেছিলাম। এছাড়াও মাদারীপুরে নদ-নদীর ভাঙন রোধে বড় প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে স্থায়ীভাবে নদের শাসন কাজ করে সড়কের পাশে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে।