হিসাব সহকারী সালাম বরখাস্ত

যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেক জালিয়াতির মাধ্যমে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে হিসাব সহকারী আবদুস সালামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত সোমবার বোর্ড কমিটির সভা শেষে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন বোর্ড সচিব প্রফেসর এএমএইচ আলী আর রেজা।

সচিব জানান, অর্থ আত্মসাতের পুরো ঘটনার সব দোষ সালাম নিজে স্বীকার করে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন তিনি। রোববার বিকেলে সালাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত দিয়ে সব দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকা জমা দেন। সালামের পক্ষ থেকে তার স্ত্রী লিখিত আবেদন ও টাকা জমা দেন। এরপর সোমবারের বোর্ড কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সালামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যশোর শিক্ষা বোর্ডের আড়াই কোটি টাকা চেক জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় দুদকে (দুর্নীতি দমন কমিশন) অভিযোগ দাখিল করেন বোর্ডের সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা। রোববার সকাল ১০টায় দুদক যশোর কার্যালয়ে গিয়ে তিনি এ অভিযোগ দাখিল করেন। এরপরে দুপুর ১২টার দিকে দুদক কর্মকর্তারা বোর্ডে গিয়ে তদন্ত শুরু করে। অভিযুক্ত ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম বাবু ও আশরাফুল আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মূলহোতা হিসাব সহকারী আবদুস সালাম অনুপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, ২০২০-২১ ও ২১-২২ অর্থবছরে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সরকারি কোষাগারে জমার জন্য আয়কর ও ভ্যাট বাবদ ১০ হাজার ৩৬ টাকার ৯টি চেক ইস্যু করে। এই ৯টি চেক জালিয়াতি করে ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের নামে ১ কোটি ৮৯ লাখ ১২ হাজার ১০টাকা এবং শাহী লাল স্টোরের নামে ৬১ লাখ ৩২ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। সরকারি ছুটি থাকায় ঘটনা প্রকাশ্যে আসার দুইদিন পর বোর্ডের সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা দুদক কার্যালয়ে গিয়ে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযোগ দাখিল করেন। দুদক কর্মকর্তারা সব কাগজপত্র সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করেন। দুদকের যশোর অঞ্চলের উপ-পরিচালক নাজমুস ছায়াদাতের নেতৃত্বে তদন্ত করেন সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেন ও সহকারী পরিচালক মাহফুজ ইকবাল। দুদকের কর্মকর্তাদের তদন্ত শেষ হওয়ার পর সালামের স্ত্রী দোষ স্বীকার করে লিখিত ও টাকা ফেরত দেন।

সেখানে জানানো হয়েছে, চেক জালিয়াতের ঘটনায় আবদুস সালাম ব্যক্তিগতভাবে দায়ী। শিক্ষাবোর্ডের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী, ভেনাস প্রিন্টিং অন্ড প্যাকেজিং ও শাহী লাল স্টোরের কেউ জড়িত নয়। পূর্ব পরিচিতির সূত্র ধরে দুই প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ব্যবহার তিনি টাকা উত্তোলন করেছেন। নিজ প্রয়োজনে খরচ করে ফেলেছেন। ওই টাকা তিনি ফেরত দিতে ইচ্ছুক। তাই ১৫ লাখ ৪২ টাকা ফেরত দিচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে সব টাকা ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করেন।

তবে ওই লিখিত পত্রে যেভাবে আবদুস সালাম সব দোষ নিজের কাঁধে নিয়ে বাকিদের ‘দায়মুক্তি’ দিয়েছেন, তাতে আরও সন্দেহ দানা বেঁধেছে। প্রলোভন বা হুমকিতে জিম্মি করে সালমের কাছ থেকে এই লিখিত নেয়া হয়েছে কিনা, তা নিয়েও বোর্ড সংশ্লিষ্টদের মনে প্রশ্ন রয়েছে।

যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন জানান, বোর্ড কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সালামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বোর্ডের পক্ষ থেকে দুদকে অভিযোগ করা হয়েছে। আইনের মাধ্যমে পুরো ঘটনার নিষ্পত্তি হবে। দোষীরা কোনভাবেই রেহাই পাবে না।

বুধবার, ১৩ অক্টোবর ২০২১ , ২৮ আশ্বিন ১৪২৮ ০৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

যশোর বোর্ডের আড়াই কোটি টাকা লোপাট

হিসাব সহকারী সালাম বরখাস্ত

যশোর অফিস

যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেক জালিয়াতির মাধ্যমে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে হিসাব সহকারী আবদুস সালামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত সোমবার বোর্ড কমিটির সভা শেষে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন বোর্ড সচিব প্রফেসর এএমএইচ আলী আর রেজা।

সচিব জানান, অর্থ আত্মসাতের পুরো ঘটনার সব দোষ সালাম নিজে স্বীকার করে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন তিনি। রোববার বিকেলে সালাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত দিয়ে সব দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকা জমা দেন। সালামের পক্ষ থেকে তার স্ত্রী লিখিত আবেদন ও টাকা জমা দেন। এরপর সোমবারের বোর্ড কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সালামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যশোর শিক্ষা বোর্ডের আড়াই কোটি টাকা চেক জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় দুদকে (দুর্নীতি দমন কমিশন) অভিযোগ দাখিল করেন বোর্ডের সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা। রোববার সকাল ১০টায় দুদক যশোর কার্যালয়ে গিয়ে তিনি এ অভিযোগ দাখিল করেন। এরপরে দুপুর ১২টার দিকে দুদক কর্মকর্তারা বোর্ডে গিয়ে তদন্ত শুরু করে। অভিযুক্ত ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম বাবু ও আশরাফুল আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মূলহোতা হিসাব সহকারী আবদুস সালাম অনুপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, ২০২০-২১ ও ২১-২২ অর্থবছরে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সরকারি কোষাগারে জমার জন্য আয়কর ও ভ্যাট বাবদ ১০ হাজার ৩৬ টাকার ৯টি চেক ইস্যু করে। এই ৯টি চেক জালিয়াতি করে ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের নামে ১ কোটি ৮৯ লাখ ১২ হাজার ১০টাকা এবং শাহী লাল স্টোরের নামে ৬১ লাখ ৩২ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। সরকারি ছুটি থাকায় ঘটনা প্রকাশ্যে আসার দুইদিন পর বোর্ডের সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা দুদক কার্যালয়ে গিয়ে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযোগ দাখিল করেন। দুদক কর্মকর্তারা সব কাগজপত্র সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করেন। দুদকের যশোর অঞ্চলের উপ-পরিচালক নাজমুস ছায়াদাতের নেতৃত্বে তদন্ত করেন সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেন ও সহকারী পরিচালক মাহফুজ ইকবাল। দুদকের কর্মকর্তাদের তদন্ত শেষ হওয়ার পর সালামের স্ত্রী দোষ স্বীকার করে লিখিত ও টাকা ফেরত দেন।

সেখানে জানানো হয়েছে, চেক জালিয়াতের ঘটনায় আবদুস সালাম ব্যক্তিগতভাবে দায়ী। শিক্ষাবোর্ডের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী, ভেনাস প্রিন্টিং অন্ড প্যাকেজিং ও শাহী লাল স্টোরের কেউ জড়িত নয়। পূর্ব পরিচিতির সূত্র ধরে দুই প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ব্যবহার তিনি টাকা উত্তোলন করেছেন। নিজ প্রয়োজনে খরচ করে ফেলেছেন। ওই টাকা তিনি ফেরত দিতে ইচ্ছুক। তাই ১৫ লাখ ৪২ টাকা ফেরত দিচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে সব টাকা ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করেন।

তবে ওই লিখিত পত্রে যেভাবে আবদুস সালাম সব দোষ নিজের কাঁধে নিয়ে বাকিদের ‘দায়মুক্তি’ দিয়েছেন, তাতে আরও সন্দেহ দানা বেঁধেছে। প্রলোভন বা হুমকিতে জিম্মি করে সালমের কাছ থেকে এই লিখিত নেয়া হয়েছে কিনা, তা নিয়েও বোর্ড সংশ্লিষ্টদের মনে প্রশ্ন রয়েছে।

যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন জানান, বোর্ড কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সালামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বোর্ডের পক্ষ থেকে দুদকে অভিযোগ করা হয়েছে। আইনের মাধ্যমে পুরো ঘটনার নিষ্পত্তি হবে। দোষীরা কোনভাবেই রেহাই পাবে না।