হাসপাতালের জলাশয় ভরাটের নামে পাহাড় কেটে জমজমাট মাটির ব্যবসা

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার যদুনাথপুর ইউনিয়নের বাড়ইপাড়া গ্রামে হাসপাতাল নির্মাণের নামে লাল মাটির পাহাড় কেটে জলাশয় ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। এসব মাটি কেটে আনা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী মধুপুর উপজেলার কুড়াগাছা ইউনিয়নের ধরাটি টান পাহাড় থেকে। এতে পাহাড়ে ২০-২৫ ফুট উঁচু গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। এ খাদের পাশে উপরে বসবাস করছে অনেক পরিবার। এলাকার ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এ কাজ করছেন বলে ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না।

এলাকাবাসীরা জানায়, পার্শ্ববর্তী ধনবাড়ী উপজেলার যদুনাথপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইব্রাহিম মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গণি ও প্রভাবশালী আক্তার হোসেনের নেতৃত্বে ধরাটি টান পাহাড়, ধাইরা, ধাইরা কানকাটা মোড় থেকে ভেকু দিয়ে অবৈধভাবে লাল মাটি কেটে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে। প্রতিদিন পাহাড় কাটার এ লাল মাটি ট্র্যাক্টরে করে পার্শ্ববর্তী ধনবাড়ী উপজেলার বাড়ইপাড়া গ্রামে জলাশয় ভরাট করছে এবং বিভিন্ন জায়গায় মাটি বিক্রি করে পাচার করার অভিযোগ উঠেছে।

এতে করে স্থানীয় রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষতিসাধান হচ্ছে। পাহাড়ি সড়কগুলোতে বড়-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে কৃষিপণ্য পরিবহন ও স্থানীয়দের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবত পাহাড় কাটার এ কাজটি ঘটলেও প্রভাবশালীরা এ কাজে জড়িত থাকায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না এবং প্রতিবাদও করতে পারছে না।

স্থানীয় শরাফত আলী, সুরুজ নিয়া, মইফুল বেগম, জাহিদুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, এভাবে পাহাড় কাইটা লাল মাটি টাক্টরে করে রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন নিয়া যায়। এতে করে রাস্তার খুব খারাপ অবস্থা। আমরা হাঁটা-চলা করতে পারি না। খেতের ফসল বাজারে নিতে পারছি না। এসব দেখারও যেন কেউ নাই। ধনবাড়ীর যদুনাথপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান জানান, বিষয়টি আমি জানি। ইউনিয়ন হাসপাতাল (উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র) নির্মাণের জন্য ওই জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। কোথাও মাটি না পেয়ে ধরাটি পাহাড় থেকে মাটি আনা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত যদুনাথপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইব্রাহিম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গণি জানান, সরকারি হাসপাতাল করার জন্য মধুপুরের কুড়াগাছা ইউপি চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে ধরাটি টান পাহাড় থেকে মাটি এনে জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। তবে অন্যত্র মাটি পাচারের অভিযোগ তারা অস্বীকার করেন।

কুড়াগাছা ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক জানান, আমি জানি যে ধনবাড়ীর যদুনাথপুরে একটি হাসপপাতাল নির্মাণের লক্ষ্যে আমার এলাকার ধরাটি থেকে পাহাড় কেটে কিছু মাটি নিচ্ছে।

সহকারী বন-সংরক্ষক (এসিএফ) জামাল হোসেন তালুকদার জানান, পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ অবৈধ কাজ। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহনাজ সুলতানা বলেন, যদুনাথপুরে কোন সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন হাসপাতাল নির্মাণের বিষয় আমার জানা নেই।

এ ব্যাপারে মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসা শামীমা ইয়াসমিন জানান, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বুধবার, ১৭ নভেম্বর ২০২১ , ২ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩

হাসপাতালের জলাশয় ভরাটের নামে পাহাড় কেটে জমজমাট মাটির ব্যবসা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল

image

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার যদুনাথপুর ইউনিয়নের বাড়ইপাড়া গ্রামে হাসপাতাল নির্মাণের নামে লাল মাটির পাহাড় কেটে জলাশয় ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। এসব মাটি কেটে আনা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী মধুপুর উপজেলার কুড়াগাছা ইউনিয়নের ধরাটি টান পাহাড় থেকে। এতে পাহাড়ে ২০-২৫ ফুট উঁচু গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। এ খাদের পাশে উপরে বসবাস করছে অনেক পরিবার। এলাকার ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এ কাজ করছেন বলে ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না।

এলাকাবাসীরা জানায়, পার্শ্ববর্তী ধনবাড়ী উপজেলার যদুনাথপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইব্রাহিম মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গণি ও প্রভাবশালী আক্তার হোসেনের নেতৃত্বে ধরাটি টান পাহাড়, ধাইরা, ধাইরা কানকাটা মোড় থেকে ভেকু দিয়ে অবৈধভাবে লাল মাটি কেটে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে। প্রতিদিন পাহাড় কাটার এ লাল মাটি ট্র্যাক্টরে করে পার্শ্ববর্তী ধনবাড়ী উপজেলার বাড়ইপাড়া গ্রামে জলাশয় ভরাট করছে এবং বিভিন্ন জায়গায় মাটি বিক্রি করে পাচার করার অভিযোগ উঠেছে।

এতে করে স্থানীয় রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষতিসাধান হচ্ছে। পাহাড়ি সড়কগুলোতে বড়-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে কৃষিপণ্য পরিবহন ও স্থানীয়দের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবত পাহাড় কাটার এ কাজটি ঘটলেও প্রভাবশালীরা এ কাজে জড়িত থাকায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না এবং প্রতিবাদও করতে পারছে না।

স্থানীয় শরাফত আলী, সুরুজ নিয়া, মইফুল বেগম, জাহিদুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, এভাবে পাহাড় কাইটা লাল মাটি টাক্টরে করে রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন নিয়া যায়। এতে করে রাস্তার খুব খারাপ অবস্থা। আমরা হাঁটা-চলা করতে পারি না। খেতের ফসল বাজারে নিতে পারছি না। এসব দেখারও যেন কেউ নাই। ধনবাড়ীর যদুনাথপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান জানান, বিষয়টি আমি জানি। ইউনিয়ন হাসপাতাল (উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র) নির্মাণের জন্য ওই জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। কোথাও মাটি না পেয়ে ধরাটি পাহাড় থেকে মাটি আনা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত যদুনাথপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইব্রাহিম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গণি জানান, সরকারি হাসপাতাল করার জন্য মধুপুরের কুড়াগাছা ইউপি চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে ধরাটি টান পাহাড় থেকে মাটি এনে জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। তবে অন্যত্র মাটি পাচারের অভিযোগ তারা অস্বীকার করেন।

কুড়াগাছা ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক জানান, আমি জানি যে ধনবাড়ীর যদুনাথপুরে একটি হাসপপাতাল নির্মাণের লক্ষ্যে আমার এলাকার ধরাটি থেকে পাহাড় কেটে কিছু মাটি নিচ্ছে।

সহকারী বন-সংরক্ষক (এসিএফ) জামাল হোসেন তালুকদার জানান, পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ অবৈধ কাজ। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহনাজ সুলতানা বলেন, যদুনাথপুরে কোন সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন হাসপাতাল নির্মাণের বিষয় আমার জানা নেই।

এ ব্যাপারে মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসা শামীমা ইয়াসমিন জানান, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।