ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বন্যায় বিপন্ন চিলমারীর চরের মানুষ

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের মানুষ শাক-সবজি চাষ ও পশু পালন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের মানুষ বন্যায় মাঠের ফসল খেয়ে গেলে সেই মাঠে এবং বসতবাড়িতে শাক-সবজি চাষ করে নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করছে। এছাড়াও ভেড়া ও হাঁস-মুরগি পালন করে ভাগ্য বদলানোর স্বপ্ন দেখছে চরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ। তাদের এই উন্নয়নমুখী কর্মকা- দেখে উৎসাহিত হচ্ছে অনেকেই। বন্যায় তাদের ধানের বীজতলা, মাঠের ফসল, বাড়ির আশপাশের শাক-সবজি ও হাঁস মুরগির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। বন্যায় নষ্ট হয়ে যায় ঘর-বাড়ি ও গরুর খাবার খড়ের গাদা। এই ক্ষতি কমাতে সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ। সংস্থার ট্রান্সজিশন ফান্ড (এএসডি) প্রকল্পের সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ শুরু করে বসতভিটায় সবজি চাষ, হাঁস-মুরগি ও ভেড়া পালন। এতেই পাল্টে যেতে থাকে তাদের জীবনমান। সচেতনতামূলক কর্মকা-ের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পেয়ে তা কাজে লাগায় তারা। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সরদার পাড়া গ্রাম থেকে ইউনিয়ন পরিষদ, বাজার, হাসপাতাল এবং স্কুল-কলেজে যাওয়ার রাস্তাটি ভেঙ্গে যাওয়ায় এলাকার মানুষের যাতায়াতের জন্য সীমাহীন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। সমষ্ঠিগতভাবে উদ্যোগ নিয়ে বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়া তাদের গ্রামের রাস্তাটি মেরামত করেন।

চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের নাইয়ার চর এফডিএমসির সদস্য মোছা. বুলবুলি বেগম। সে ফ্রেন্ডশিপের ট্রান্সজিশন ফান্ড (এএসডি) প্রকল্প থেকে ৩৬০০/- টাকা মূল্যের একটি ভেড়া পেয়েছেন। এখন তার চারটি ভেড়া। যার বাজারমূল্য ১৬০০০/-। মোছা. বুলবুলি বেগম বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে শাক-সবজি উৎপাদনের প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর আমার বসতবাড়িতে সবজি উৎপাদন করে এ বছর ৫১০০/- টাকার সবজি বিক্রি করেছি, যা আমার সাংসারিক ব্যয়ভার বহনে সহায়ক হচ্ছে এবং আমি সবজি বিক্রির ৮,০০০/- টাকা একটি ছাগল ক্রয় করেছি।

একই গ্রামের আইয়ুব আলী, সুমারী বেগম, বেহুলা খাতুন ও কছিরন বেগম বলেন, আগে হাট থেকে সার কিনে আনতাম, এখন আমরা কম্পোস্ট সার তৈরি করে ব্যবহার করি, ফেরোমন ফাঁদ দিয়ে পোকা মারছি, সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ করছি এবং গ্রামে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

‘ফ্রেন্ডশিপ’ এর ট্রান্সজিশন ফান্ড (এএসডি) প্রজেক্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার কৃষিবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম মল্লিক জানান, ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গ এর সহায়তায় সদস্যদের আয় রোজগার নিয়মিতকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্ন্য়ন, সম্পদবৃদ্ধি এবং সমাজে সুশাসন যেমন বাল্যবিবাহ রোধ, পারিবারিক নির্যাতন বন্ধ, জাতীয় সংসদ ও সংবিধান সম্পর্কে ধারণা, জিডি করার কৌশল ইত্যাদি শিক্ষামূলক আলোচনাসহ দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি, জনগোষ্ঠীর ভৌগলিক দুর্দশাগ্রস্থতা হ্রাসকরণ এবং স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী এবং রৌমারী উপজেলার মোট ২৪টি চরে ৭২১ জন সদস্যকে উক্ত প্রকল্প সহায়তা প্রদান করে আসছে।

চিলমারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশিদুল হক জানান, চিলমারী উপজেলায় ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশন ফান্ড প্রকল্পের মাধ্যমে ২১১টি পরিবারকে ভেড়া প্রদান করেছে এবং প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, ফলে পরিবারগুলোর ভেড়া পালনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে অধিক আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেকটি ভেড়াকে টিকা এবং কৃমিনাশক বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চর এলাকা ভেড়া পালনের জন্য উপযুক্ত তাই ভেড়া পালনের মাধ্যমে চরাঞ্চলের মানুষ স্বাবলম্বী হবে বলে তিনি আশাবাদী।

মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর ২০২১ , ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৩

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বন্যায় বিপন্ন চিলমারীর চরের মানুষ

প্রতিনিধি, চিলমারী (কুড়িগ্রাম)

image

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের মানুষ শাক-সবজি চাষ ও পশু পালন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের মানুষ বন্যায় মাঠের ফসল খেয়ে গেলে সেই মাঠে এবং বসতবাড়িতে শাক-সবজি চাষ করে নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করছে। এছাড়াও ভেড়া ও হাঁস-মুরগি পালন করে ভাগ্য বদলানোর স্বপ্ন দেখছে চরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ। তাদের এই উন্নয়নমুখী কর্মকা- দেখে উৎসাহিত হচ্ছে অনেকেই। বন্যায় তাদের ধানের বীজতলা, মাঠের ফসল, বাড়ির আশপাশের শাক-সবজি ও হাঁস মুরগির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। বন্যায় নষ্ট হয়ে যায় ঘর-বাড়ি ও গরুর খাবার খড়ের গাদা। এই ক্ষতি কমাতে সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ। সংস্থার ট্রান্সজিশন ফান্ড (এএসডি) প্রকল্পের সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ শুরু করে বসতভিটায় সবজি চাষ, হাঁস-মুরগি ও ভেড়া পালন। এতেই পাল্টে যেতে থাকে তাদের জীবনমান। সচেতনতামূলক কর্মকা-ের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পেয়ে তা কাজে লাগায় তারা। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সরদার পাড়া গ্রাম থেকে ইউনিয়ন পরিষদ, বাজার, হাসপাতাল এবং স্কুল-কলেজে যাওয়ার রাস্তাটি ভেঙ্গে যাওয়ায় এলাকার মানুষের যাতায়াতের জন্য সীমাহীন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। সমষ্ঠিগতভাবে উদ্যোগ নিয়ে বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়া তাদের গ্রামের রাস্তাটি মেরামত করেন।

চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের নাইয়ার চর এফডিএমসির সদস্য মোছা. বুলবুলি বেগম। সে ফ্রেন্ডশিপের ট্রান্সজিশন ফান্ড (এএসডি) প্রকল্প থেকে ৩৬০০/- টাকা মূল্যের একটি ভেড়া পেয়েছেন। এখন তার চারটি ভেড়া। যার বাজারমূল্য ১৬০০০/-। মোছা. বুলবুলি বেগম বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে শাক-সবজি উৎপাদনের প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর আমার বসতবাড়িতে সবজি উৎপাদন করে এ বছর ৫১০০/- টাকার সবজি বিক্রি করেছি, যা আমার সাংসারিক ব্যয়ভার বহনে সহায়ক হচ্ছে এবং আমি সবজি বিক্রির ৮,০০০/- টাকা একটি ছাগল ক্রয় করেছি।

একই গ্রামের আইয়ুব আলী, সুমারী বেগম, বেহুলা খাতুন ও কছিরন বেগম বলেন, আগে হাট থেকে সার কিনে আনতাম, এখন আমরা কম্পোস্ট সার তৈরি করে ব্যবহার করি, ফেরোমন ফাঁদ দিয়ে পোকা মারছি, সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ করছি এবং গ্রামে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

‘ফ্রেন্ডশিপ’ এর ট্রান্সজিশন ফান্ড (এএসডি) প্রজেক্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার কৃষিবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম মল্লিক জানান, ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গ এর সহায়তায় সদস্যদের আয় রোজগার নিয়মিতকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্ন্য়ন, সম্পদবৃদ্ধি এবং সমাজে সুশাসন যেমন বাল্যবিবাহ রোধ, পারিবারিক নির্যাতন বন্ধ, জাতীয় সংসদ ও সংবিধান সম্পর্কে ধারণা, জিডি করার কৌশল ইত্যাদি শিক্ষামূলক আলোচনাসহ দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি, জনগোষ্ঠীর ভৌগলিক দুর্দশাগ্রস্থতা হ্রাসকরণ এবং স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী এবং রৌমারী উপজেলার মোট ২৪টি চরে ৭২১ জন সদস্যকে উক্ত প্রকল্প সহায়তা প্রদান করে আসছে।

চিলমারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশিদুল হক জানান, চিলমারী উপজেলায় ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশন ফান্ড প্রকল্পের মাধ্যমে ২১১টি পরিবারকে ভেড়া প্রদান করেছে এবং প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, ফলে পরিবারগুলোর ভেড়া পালনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে অধিক আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেকটি ভেড়াকে টিকা এবং কৃমিনাশক বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চর এলাকা ভেড়া পালনের জন্য উপযুক্ত তাই ভেড়া পালনের মাধ্যমে চরাঞ্চলের মানুষ স্বাবলম্বী হবে বলে তিনি আশাবাদী।