হাড়িভাঙ্গায় সফল অনেকে, ‘জনকে’র পরিবার তিমিরেই

হাড়িভাঙ্গা আম- রংপুরকে এনে দিয়েছে সমৃদ্ধি, দেশকে অন্যরকম পরিচিতি। শুধুমাত্র এ আমের প্রচার করে কেউ পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পদক। তবে ভাগ্য খোলেনি নফল উদ্দিন পাইকাড়ের একমাত্র উত্তরসূরীর।

জানা যায়- হাড়িভাঙ্গা আমের প্রথম উৎপত্তি ঘটে মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের তেকানীপাড়ায়। চাষী নফল উদ্দিন পাইকাড় প্রথম ওই গাছ রোপণ করেন। এরপর এলাকায় সম্প্রসারিত হয়। নব্বই দশকে এসে তা’ রংপুর জেলার সবক’টি উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের আলোড়ন সৃষ্টিকারী ফল। একারণে রাষ্ট্রীয় আতিথেয়তা থেকে শুরু করে সর্বত্রই হাড়িভাঙ্গা আম ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু হাড়িভাঙ্গা আম রংপুরকে সমৃদ্ধ করলেও নফল উদ্দিন পাইকাড়ের একমাত্র উত্তরসূরী আমজাদ হোসেন পাইকাড় রয়েছেন চরম অবহেলায়। তাকে পরিবারের মুখে অন্য তুলে দিতে কাজ করতে হয় অন্যের বাগানে।

কথা হয় আমজাদ হোসেন পাইকাড়ের সাথে। তিনি বলেন, প্রায় ৭৫ বছর আগে পার্শ্ববর্তী বালুয়া মাসিমপুর এলাকায় একটি সুমিষ্ট আমের সন্ধান পান বাবা নফল উদ্দিন পাইকাড়। তিনি ওই গাছ থেকে একটা চারা সংগ্রহ করেন। সেই চারা তিনি বাড়ির পাশে আরেকটি ভিটায় রোপণ করেন। সে সময় প্রচ- খরা থাকায় বাবা চারা গাছের উপর একটি হাড়ি স্থাপন করেন। আর ওই হাড়িতে পানি ভর্তি করে নীচে ছিদ্র করে দেন। ওই ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ত চারা গাছটির উপর। কিন্তু একদিন কে বা কারা ওই হাড়িটি ভেঙ্গে ফেলে। ফলে বাবা নিজেই ওই আমের নাম রাখেন হাড়িভাঙ্গা। তিনি অবশ্য এও বলেন, এ আমের পূর্ব নাম ছিল মালদাইয়া। বালুয়া মাসুমপুর এলাকায় যমুনেশ্বরী নদীর পাড়ে একটিই মাত্র গাছ ছিল। কালের বিবর্তনে মালদাইয়া আমের গাছ হারিয়ে গেলেও হাড়িভাঙ্গা আমগাছ রয়ে গেছে। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, হাড়িভাঙ্গা আমগাছ রোপণ করে কেউ পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পদক। এ আমকে ঘিরে রাষ্ট্রীয়ভাবে কতইনা উত্তেজনা। অথচ নফল উদ্দিন পাইকাড়ের উত্তরসূরীর খবর কেউ রাখে না।

আমজাদ হোসেন পাইকাড় বলেন, ভিটেবাড়িসহ মাত্র ৪০ শতক জমি- এই হল আমার সম্পদ। তাই জীবন বাঁচাতে অন্যের বাগানে কাজ করতে হয়। তিনি আরো বলেন, একসময় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে অনেক ঘুরেছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। তাই এখন আর কারো কাছে যাই না। অনেক কষ্টে চার মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। একমাত্র ছেলেটি কর্মক্ষম হয়েছে। তিনি হতাশ কণ্ঠে বলেন, বাকী দিনগুলো এভাবেই যেন কাটে সৃষ্টিকর্তার কাছে এটুকুই প্রার্থনা করি।

মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০২২ , ১৪ আষাড় ১৪২৮ ২৬ জিলকদ ১৪৪৩

হাড়িভাঙ্গায় সফল অনেকে, ‘জনকে’র পরিবার তিমিরেই

প্রতিনিধি, বদরগঞ্জ (রংপুর)

image

বদরগঞ্জ (রংপুর) : হাড়িভাঙ্গা আমের জনক নফল উদ্দিনের ছেলে আমজাদ হোসেন -সংবাদ

হাড়িভাঙ্গা আম- রংপুরকে এনে দিয়েছে সমৃদ্ধি, দেশকে অন্যরকম পরিচিতি। শুধুমাত্র এ আমের প্রচার করে কেউ পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পদক। তবে ভাগ্য খোলেনি নফল উদ্দিন পাইকাড়ের একমাত্র উত্তরসূরীর।

জানা যায়- হাড়িভাঙ্গা আমের প্রথম উৎপত্তি ঘটে মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের তেকানীপাড়ায়। চাষী নফল উদ্দিন পাইকাড় প্রথম ওই গাছ রোপণ করেন। এরপর এলাকায় সম্প্রসারিত হয়। নব্বই দশকে এসে তা’ রংপুর জেলার সবক’টি উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের আলোড়ন সৃষ্টিকারী ফল। একারণে রাষ্ট্রীয় আতিথেয়তা থেকে শুরু করে সর্বত্রই হাড়িভাঙ্গা আম ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু হাড়িভাঙ্গা আম রংপুরকে সমৃদ্ধ করলেও নফল উদ্দিন পাইকাড়ের একমাত্র উত্তরসূরী আমজাদ হোসেন পাইকাড় রয়েছেন চরম অবহেলায়। তাকে পরিবারের মুখে অন্য তুলে দিতে কাজ করতে হয় অন্যের বাগানে।

কথা হয় আমজাদ হোসেন পাইকাড়ের সাথে। তিনি বলেন, প্রায় ৭৫ বছর আগে পার্শ্ববর্তী বালুয়া মাসিমপুর এলাকায় একটি সুমিষ্ট আমের সন্ধান পান বাবা নফল উদ্দিন পাইকাড়। তিনি ওই গাছ থেকে একটা চারা সংগ্রহ করেন। সেই চারা তিনি বাড়ির পাশে আরেকটি ভিটায় রোপণ করেন। সে সময় প্রচ- খরা থাকায় বাবা চারা গাছের উপর একটি হাড়ি স্থাপন করেন। আর ওই হাড়িতে পানি ভর্তি করে নীচে ছিদ্র করে দেন। ওই ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ত চারা গাছটির উপর। কিন্তু একদিন কে বা কারা ওই হাড়িটি ভেঙ্গে ফেলে। ফলে বাবা নিজেই ওই আমের নাম রাখেন হাড়িভাঙ্গা। তিনি অবশ্য এও বলেন, এ আমের পূর্ব নাম ছিল মালদাইয়া। বালুয়া মাসুমপুর এলাকায় যমুনেশ্বরী নদীর পাড়ে একটিই মাত্র গাছ ছিল। কালের বিবর্তনে মালদাইয়া আমের গাছ হারিয়ে গেলেও হাড়িভাঙ্গা আমগাছ রয়ে গেছে। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, হাড়িভাঙ্গা আমগাছ রোপণ করে কেউ পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পদক। এ আমকে ঘিরে রাষ্ট্রীয়ভাবে কতইনা উত্তেজনা। অথচ নফল উদ্দিন পাইকাড়ের উত্তরসূরীর খবর কেউ রাখে না।

আমজাদ হোসেন পাইকাড় বলেন, ভিটেবাড়িসহ মাত্র ৪০ শতক জমি- এই হল আমার সম্পদ। তাই জীবন বাঁচাতে অন্যের বাগানে কাজ করতে হয়। তিনি আরো বলেন, একসময় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে অনেক ঘুরেছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। তাই এখন আর কারো কাছে যাই না। অনেক কষ্টে চার মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। একমাত্র ছেলেটি কর্মক্ষম হয়েছে। তিনি হতাশ কণ্ঠে বলেন, বাকী দিনগুলো এভাবেই যেন কাটে সৃষ্টিকর্তার কাছে এটুকুই প্রার্থনা করি।