ইলিশ রপ্তানিতে আয় ১৪১ কোটি টাকা : মৎস্যমন্ত্রী

চলতি বছর এক হাজার ৩৫২ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। তবে ইলিশ রপ্তানি আর বাড়ানো ঠিক হবে না বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ.ম. রেজাউল করিম। গতকাল মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২২ বাস্তবায়ন’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ইলিশ রপ্তানি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার অভিমত দেশের সব মানুষ ইলিশের স্বাদ গ্রহণ করুক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে বেশ কিছু দেশে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রপ্তানি হয় ভারতে, সেখান থেকে বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে। হাইকোর্ট যদি কোন আদেশ দেয় তাহলে অবশ্যই সেটি মেনে চলতে হবে। বাণিজ্যিকভাবে ইলিশের রপ্তানি এভাবে হয়নি, এবার যে পরিমাণ রপ্তানি হয়েছে। এবার অধিকাংশ রপ্তানি ভারতে হয়েছে।’

তিনি আনও বলেন, ‘অন্য কয়েকটি দেশেও ইলিশ গেছে। সেগুলো উপহার কিংবা ব্যক্তিগতভাবে গেছে। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ভারতে। আগে ইলিশ পাওয়াই যেত না এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এখন ইলিশ অনেক জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে, আমার মনে হয় ৬৪টি জেলার সর্বত্র ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।’ ‘দেশের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে ইলিশ পৌঁছানোর আমাদের একটি লক্ষ্য আছে। কর্মসূচি সফল করতে পারলে ইলিশ সবার কাছে পৌঁছাবে। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ইলিশ রপ্তানি বাড়ানো আর ঠিক হবে না।’

তিনি বলেন, ‘দেশে মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ দশমিক ২২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে যা একক প্রজাতি হিসেবে সর্বোচ্চ। জিডিপিতে এর অবদান শতকরা এক ভাগ। প্রায় ৬ লাখ মানুষ ইলিশ আহরণে সরাসরি এবং ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ ইলিশ পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানি প্রভৃতি কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।’

মা ইলিশ রক্ষায় গতকাল মধ্যরাত থেকে সাগরে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষায় ইলিশের বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনায় নিয়ে ধরে মৎস্য সংরক্ষণ আইন সংশোধন করে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের সময় ২২ দিন করা হয়েছে।’

ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের সময়কালে জেলেদের সহায়তার বিষয়টি তুলে ধরে রেজাউল করিম বলেন, ‘জেলেদের ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। জাটকা আহরণ নিষিদ্ধ থাকাকালে এ বছর দেশের ৩ লাখ ৯০ হাজার ৭০০ জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি হারে চার মাসের জন্য ৫৯ হাজার ১৪১ টন ভিজিএফ দেয়া হয়েছে।’

এছাড়া সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকালে ৩ লাখ ১১ হাজার ৬২ জেলে পরিবারকে ২৬ হাজার ৮৩ টন খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। এছাড়া ২০২২ সালে সামুদ্রিক জলসীমায় ৬৫ দিন মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকালে সমুদ্র উপকূলীয় ৩ লাখ ১১ হাজার ৬২টি জেলে পরিবারকে ২৬ হাজার ৮৩ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে।

শ.ম. রেজাউল করিম বলেন, ‘গত ১২ বছরে দেশে ইলিশ আহরণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এ সময়ে দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির হার প্রায় ৯০ শতাংশ। এ বছর জেলেদের জন্য ভিজিএফয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করে পরিবারপ্রতি ২০ কেজি থেকে ২৫ কেজিতে উন্নীত করা হয়েছে। এর আওতায় দেশের ৩৭ জেলার ১৫৫ উপজেলায় ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৭টি জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি হারে ১৩ হাজার ৮৭২ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

নিষেধাজ্ঞা চলাকালে সমুদ্রে ও নদীতে ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিপণন বন্ধ থাকবে। সে হিসাবে গতকালই ছিল ইলিশ বিক্রি ও ক্রয়ের শেষ দিন। কিন্তু শেষ দিনে মাছ কিনতে এসে অনেকটা হতাশা নিয়ে ফিরেছেন ক্রেতারা। জানা গেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চাঁদপুর, বরিশাল ও বাগেরহাটসহ বিভিন্ন ইলিশ প্রধান এলাকায় মানুষ দাম বেশি হওয়ায় ইলিশ মাছ না কিনেই ফিরে গেছেন।

শুক্রবার, ০৭ অক্টোবর ২০২২ , ২২ আশ্বিন ১৪২৯ ১০ সফর ১৪৪৪

ইলিশ রপ্তানিতে আয় ১৪১ কোটি টাকা : মৎস্যমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

চলতি বছর এক হাজার ৩৫২ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। তবে ইলিশ রপ্তানি আর বাড়ানো ঠিক হবে না বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ.ম. রেজাউল করিম। গতকাল মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২২ বাস্তবায়ন’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ইলিশ রপ্তানি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার অভিমত দেশের সব মানুষ ইলিশের স্বাদ গ্রহণ করুক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে বেশ কিছু দেশে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রপ্তানি হয় ভারতে, সেখান থেকে বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে। হাইকোর্ট যদি কোন আদেশ দেয় তাহলে অবশ্যই সেটি মেনে চলতে হবে। বাণিজ্যিকভাবে ইলিশের রপ্তানি এভাবে হয়নি, এবার যে পরিমাণ রপ্তানি হয়েছে। এবার অধিকাংশ রপ্তানি ভারতে হয়েছে।’

তিনি আনও বলেন, ‘অন্য কয়েকটি দেশেও ইলিশ গেছে। সেগুলো উপহার কিংবা ব্যক্তিগতভাবে গেছে। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ভারতে। আগে ইলিশ পাওয়াই যেত না এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এখন ইলিশ অনেক জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে, আমার মনে হয় ৬৪টি জেলার সর্বত্র ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।’ ‘দেশের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে ইলিশ পৌঁছানোর আমাদের একটি লক্ষ্য আছে। কর্মসূচি সফল করতে পারলে ইলিশ সবার কাছে পৌঁছাবে। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ইলিশ রপ্তানি বাড়ানো আর ঠিক হবে না।’

তিনি বলেন, ‘দেশে মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ দশমিক ২২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে যা একক প্রজাতি হিসেবে সর্বোচ্চ। জিডিপিতে এর অবদান শতকরা এক ভাগ। প্রায় ৬ লাখ মানুষ ইলিশ আহরণে সরাসরি এবং ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ ইলিশ পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানি প্রভৃতি কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।’

মা ইলিশ রক্ষায় গতকাল মধ্যরাত থেকে সাগরে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষায় ইলিশের বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনায় নিয়ে ধরে মৎস্য সংরক্ষণ আইন সংশোধন করে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের সময় ২২ দিন করা হয়েছে।’

ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের সময়কালে জেলেদের সহায়তার বিষয়টি তুলে ধরে রেজাউল করিম বলেন, ‘জেলেদের ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। জাটকা আহরণ নিষিদ্ধ থাকাকালে এ বছর দেশের ৩ লাখ ৯০ হাজার ৭০০ জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি হারে চার মাসের জন্য ৫৯ হাজার ১৪১ টন ভিজিএফ দেয়া হয়েছে।’

এছাড়া সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকালে ৩ লাখ ১১ হাজার ৬২ জেলে পরিবারকে ২৬ হাজার ৮৩ টন খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। এছাড়া ২০২২ সালে সামুদ্রিক জলসীমায় ৬৫ দিন মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকালে সমুদ্র উপকূলীয় ৩ লাখ ১১ হাজার ৬২টি জেলে পরিবারকে ২৬ হাজার ৮৩ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে।

শ.ম. রেজাউল করিম বলেন, ‘গত ১২ বছরে দেশে ইলিশ আহরণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এ সময়ে দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির হার প্রায় ৯০ শতাংশ। এ বছর জেলেদের জন্য ভিজিএফয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করে পরিবারপ্রতি ২০ কেজি থেকে ২৫ কেজিতে উন্নীত করা হয়েছে। এর আওতায় দেশের ৩৭ জেলার ১৫৫ উপজেলায় ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৭টি জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি হারে ১৩ হাজার ৮৭২ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

নিষেধাজ্ঞা চলাকালে সমুদ্রে ও নদীতে ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিপণন বন্ধ থাকবে। সে হিসাবে গতকালই ছিল ইলিশ বিক্রি ও ক্রয়ের শেষ দিন। কিন্তু শেষ দিনে মাছ কিনতে এসে অনেকটা হতাশা নিয়ে ফিরেছেন ক্রেতারা। জানা গেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চাঁদপুর, বরিশাল ও বাগেরহাটসহ বিভিন্ন ইলিশ প্রধান এলাকায় মানুষ দাম বেশি হওয়ায় ইলিশ মাছ না কিনেই ফিরে গেছেন।