সাড়ে ৩ হাজার মামলা পরিচালনায় বেসরকারি প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ দিতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়

মাউশির সাড়ে তিন হাজার মামলা পরিচালনায় ‘বেসরকারি প্যানেল আইনজীবী’ নিয়োগ দিতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সরকারি ‘বিজ্ঞ’ আইনজীবীদের ওপর ‘নির্ভরতা’ কমানো, যথাযথভাবে মামলা উপস্থাপন বা প্রতিদ্বন্ধিতায় ‘ঘাটতি’ থাকা এবং ‘আশানুরুপ’ ফলাফল পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এ উদ্যোগ নিয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগে ইতোমধ্যে আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগ ‘অনাপত্তি’ দিয়েছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এই প্রস্তাবে ‘অসম্মতি জ্ঞাপন’ করেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এসব মামলা পরিচালনায় সংস্থার ‘আইন সহায়তা খাতে অর্থ বরাদ্দ রয়েছে’ উল্লেখ করে পূণরায় অর্থ বিভাগের ‘সম্মতি’ চেয়ে গত ৩ ডিসেম্বর চিঠি দেয়া হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ সংবাদকে বলেছেন, ‘এটা (প্যানেল আইনজীবী) আমাদের লাগবেই। এর কারণ হলো-অনেক মামলা... আমরা জানার আগেই একপক্ষ রায় নিয়ে চলে আসে; আমরা অ্যাট দ্যা লাস্ট মুমেন্টে জানতে পারি, তখন আমরা যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারি না, কিছু করারও থাকে না। আমাদের প্যানেল আইনজীবী থাকলে আমরা মামলার বিষয়ে আগাম প্রস্তুতি নিতে পারবো।’

প্যানেল আইনজীবী নিয়োগে অর্থ বিভাগের ‘অসম্মতি’ কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা অসম্মতি দিয়েছে। আমরা আবার চিঠি দিয়েছি। আমাদের আইন বিষয়ক লোকবল দরকার।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/কর্মচারীর এমপিও, সিলেকশন গ্রেড, পদোন্নতি, সাময়িক বরখাস্ত, প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি সংক্রান্ত- বিষয়ে মাউশির পক্ষে/বিপক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ, প্রশাসনিক ট্রাইবুন্যাল, প্রশাসনিক আপিল ট্রাইবুন্যালে তিন হাজার ৫৪৫টি মামলা চলমান রয়েছে।

এসব মামলায় সাধারণত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব এবং মাউশি মহাপরিচালককে যথাক্রমে ১ ও ২ নম্বর ‘রেসপনডেন্ট’ বা প্রতিপক্ষ করা হয়। মামলাগুলো সাধারণত সংশ্লিষ্ট আদালতের ‘জিপি/সলিসিটর উইং’ কর্তৃক নিয়োগকৃত এটর্নি জেনারেলের দপ্তরের সরকারি আইন কর্মকর্তা কর্তৃক উপস্থাপন বা প্রতিদ্বন্ধিতা করা হয় বলে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে।

মাউশির তালিকাভুক্ত প্যানেল আইনজীবী না থাকায় সরকারি ‘স্বার্থ সংশ্লিষ্ট জনগুরুত্বপূর্ণ’ মামলার ক্ষেত্রেও সরকারি বিজ্ঞ আইনজীবীর ওপর নির্ভর করতে হয়। ফলে যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে যথাযথভাবে মামলা উপস্থাপন বা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘ঘাটতি’ থাকায় প্রত্যাশী সংস্থা হিসেবে ‘আশানুরুপ ফল’ না পাওয়ায় অনেক সময় সরকার ‘ক্ষতিগ্রস্থ’ হয় বলে চিঠিতে মন্তব্য করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আপিল মামলার ক্ষেত্রে অনেক সময় সরকারি বিজ্ঞ এওআর (অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড) যথাসময়ে আপিল দায়ের না করায় টাইম বারর্ডে আপিল খারিজ হয়ে যায়। প্যানেল আইনজীবীর মাধ্যমে সরকারের জনগুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনা করা হলে আশানুরুপ ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।’

চলমান মামলাগুলো দ্রুত নিস্পত্তি ও নতুন মামলাগুলো পরিচালনা এবং যথাসময়ে আপিল দায়ের নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। মাউশির আইন সহায়তা খাত থেকে সংস্থার পক্ষে জনগুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেল আইনজীবীর ফি/সম্মানি প্রদান করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

‘চলমান মামলা দ্রুত নিস্পত্তি ও নতুন মামলা পরিচালনা এবং যথাসময়ে আপিল দায়ের নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এজন্য মামলাগুলো রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তার পাশাপাশি পরিচালনার জন্য পাঁচজন বেসরকারি প্যানেল আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে সম্পত্তি প্রদানের জন্য পুনরায় নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ , ২৮ অগ্রায়ন ১৪৩০, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫

সাড়ে ৩ হাজার মামলা পরিচালনায় বেসরকারি প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ দিতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়

রাকিব উদ্দিন

মাউশির সাড়ে তিন হাজার মামলা পরিচালনায় ‘বেসরকারি প্যানেল আইনজীবী’ নিয়োগ দিতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সরকারি ‘বিজ্ঞ’ আইনজীবীদের ওপর ‘নির্ভরতা’ কমানো, যথাযথভাবে মামলা উপস্থাপন বা প্রতিদ্বন্ধিতায় ‘ঘাটতি’ থাকা এবং ‘আশানুরুপ’ ফলাফল পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এ উদ্যোগ নিয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগে ইতোমধ্যে আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগ ‘অনাপত্তি’ দিয়েছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এই প্রস্তাবে ‘অসম্মতি জ্ঞাপন’ করেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এসব মামলা পরিচালনায় সংস্থার ‘আইন সহায়তা খাতে অর্থ বরাদ্দ রয়েছে’ উল্লেখ করে পূণরায় অর্থ বিভাগের ‘সম্মতি’ চেয়ে গত ৩ ডিসেম্বর চিঠি দেয়া হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ সংবাদকে বলেছেন, ‘এটা (প্যানেল আইনজীবী) আমাদের লাগবেই। এর কারণ হলো-অনেক মামলা... আমরা জানার আগেই একপক্ষ রায় নিয়ে চলে আসে; আমরা অ্যাট দ্যা লাস্ট মুমেন্টে জানতে পারি, তখন আমরা যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারি না, কিছু করারও থাকে না। আমাদের প্যানেল আইনজীবী থাকলে আমরা মামলার বিষয়ে আগাম প্রস্তুতি নিতে পারবো।’

প্যানেল আইনজীবী নিয়োগে অর্থ বিভাগের ‘অসম্মতি’ কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা অসম্মতি দিয়েছে। আমরা আবার চিঠি দিয়েছি। আমাদের আইন বিষয়ক লোকবল দরকার।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/কর্মচারীর এমপিও, সিলেকশন গ্রেড, পদোন্নতি, সাময়িক বরখাস্ত, প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি সংক্রান্ত- বিষয়ে মাউশির পক্ষে/বিপক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ, প্রশাসনিক ট্রাইবুন্যাল, প্রশাসনিক আপিল ট্রাইবুন্যালে তিন হাজার ৫৪৫টি মামলা চলমান রয়েছে।

এসব মামলায় সাধারণত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব এবং মাউশি মহাপরিচালককে যথাক্রমে ১ ও ২ নম্বর ‘রেসপনডেন্ট’ বা প্রতিপক্ষ করা হয়। মামলাগুলো সাধারণত সংশ্লিষ্ট আদালতের ‘জিপি/সলিসিটর উইং’ কর্তৃক নিয়োগকৃত এটর্নি জেনারেলের দপ্তরের সরকারি আইন কর্মকর্তা কর্তৃক উপস্থাপন বা প্রতিদ্বন্ধিতা করা হয় বলে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে।

মাউশির তালিকাভুক্ত প্যানেল আইনজীবী না থাকায় সরকারি ‘স্বার্থ সংশ্লিষ্ট জনগুরুত্বপূর্ণ’ মামলার ক্ষেত্রেও সরকারি বিজ্ঞ আইনজীবীর ওপর নির্ভর করতে হয়। ফলে যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে যথাযথভাবে মামলা উপস্থাপন বা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘ঘাটতি’ থাকায় প্রত্যাশী সংস্থা হিসেবে ‘আশানুরুপ ফল’ না পাওয়ায় অনেক সময় সরকার ‘ক্ষতিগ্রস্থ’ হয় বলে চিঠিতে মন্তব্য করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আপিল মামলার ক্ষেত্রে অনেক সময় সরকারি বিজ্ঞ এওআর (অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড) যথাসময়ে আপিল দায়ের না করায় টাইম বারর্ডে আপিল খারিজ হয়ে যায়। প্যানেল আইনজীবীর মাধ্যমে সরকারের জনগুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনা করা হলে আশানুরুপ ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।’

চলমান মামলাগুলো দ্রুত নিস্পত্তি ও নতুন মামলাগুলো পরিচালনা এবং যথাসময়ে আপিল দায়ের নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। মাউশির আইন সহায়তা খাত থেকে সংস্থার পক্ষে জনগুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেল আইনজীবীর ফি/সম্মানি প্রদান করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

‘চলমান মামলা দ্রুত নিস্পত্তি ও নতুন মামলা পরিচালনা এবং যথাসময়ে আপিল দায়ের নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এজন্য মামলাগুলো রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তার পাশাপাশি পরিচালনার জন্য পাঁচজন বেসরকারি প্যানেল আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে সম্পত্তি প্রদানের জন্য পুনরায় নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’