তিন মোড়ল ছাড়া বাকি দেশগুলোর প্রতি কোন দায়দায়িত্ব বোধ আছে মনে করে না আইসিসি

প্রায় ৪০০ বছর আগে ক্রিকেট খেলার উদ্ভাবক হিসেবে ইংলিশরা অবশ্যই গর্ববোধ করতে পারেন। কিন্তু এর ক্রমবিবর্তনে ক্রিকেট এখন যে পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, এতে ভদ্রলোকের খেলাটি নিয়ে হেলাফেলা করার অধিকার কারও নেই। কারণ ক্রিকেট এখন শুধুই ইংলিশদের সম্পদ নয়। বিশ্বের ১০টি শীর্ষ দল ছাড়াও প্রায় ১৫-২০টি দেশে ক্রিকেট খেলা হয়। তবে আইসিসি এবং বিশ্বকাপ ২০১৯-এর আয়োজক ইংল্যান্ড এটায় অনাকাক্সিক্ষত কর্তৃত্ব করছে। অথচ কে না জানে, বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী ১০টি দেশের জনগণের কাছে এর গুরুত্ব, মর্যাদা, আকর্ষণ ও ফলাফলে খেলাটির উন্নয়ন এবং প্রসারে যে বিরাট অবদান রাখছে, তা আইসিসি গভীরভাবে অনুধাবন করে মনে হয় না। তা না হলে আয়োজক দেশ এবার বিশ্বকাপ ম্যাচের জন্য ব্রিস্টলের মতো চাল-চুলোহীন মাঠে খেলার ব্যবস্থা করত না।

দীর্ঘ দুই দশক পর আয়োজক হয়ে গত মঙ্গলবার যে মাঠে (ব্রিস্টল) বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল, সেটিকে বড়জোর লীগের উপযুক্ত বলা যায়। চারদিকে শুধু গ্যালারি ও সুন্দর মাঠ থাকলেই বিশ্বকাপের মতো সর্বোচ্চ টুর্নামেন্টের ভেনু করা কতটুকু যৌক্তিক, তা অবশ্যই আইসিসির পর্যলোচনা করা উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, আইসিসির বর্তমান চেয়ারম্যান ভারতের শশাঙ্ক মনোহর বিশ্ব ক্রিকেটের তিন মোড়ল ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড ছাড়া বাকি দেশগুলোর প্রতি কোন দায়দায়িত্ব বোধ আছে মনে করে না। ব্রিস্টলের কাউন্টি ক্রিকেট মাঠটির যে চেহারা দেখেছি, তা হতাশাজনক।

লন্ডন থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টার ড্রাইভে যখন সেখানে পৌঁছেছি (সকাল ১০টা), তখন মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছিল। মাঠের আয়তন কোনভাবেই বিশ্বকাপমানের নয়। শুধু গ্যালারি, নম্বর দেয়া চেয়ার, দুটি মিনিটিভি, ২০-৩০ সাংবাদিকের বসার মতো কক্ষ ও ৬টি স্ট্যান্ডে ফ্লাডলাইট। দর্শকের সুযোগ-সুবিধার মধ্যে ছিল সরিয়ে নেয়ার মতো ১০-১২টি আলোবিহীন টয়লেট ও একটি পানাহারের রেস্তোরাঁ। মূল উইকেট ও চারপাশঢাকা কভারের ওপর থেকে পানি সরানোর কাজে ব্যস্ত একটি সুপারসফার। আরেকটি মিনিসুপারসফার ব্যস্ত আউটফিল্ড খেলা উপযোগী করার কাজে। গ্যালারির আশপাশে লন্ডন ও বিভিন্ন শহর থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা প্রায় হাজারো বাঙালি বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়েও খেলা শুরুর আশায় সময় কাটাচ্ছেন। কিন্তু এ দুটি পানি নিষ্কাশন যন্ত্র প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা সাধ্যমতো চেষ্টা করেও কূলকিনারা করতে পারছিল না। কারণ প্রকৃতিও নাছোড়বান্দা। ভারী বৃষ্টি না হলেও বন্ধ হওয়ারও লক্ষণ ছিল না। বৃষ্টিতে জবুথুবু নিরাপত্তা কর্মীরা সবার টিকিট দেখে গ্যালারিতে ঢুকতে দেয়। অবশেষে স্থানীয় সময় বেলা ৩টার দিকে দুই আম্পায়ার শেষবার মাঠ পরিদর্শন করে ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে বাংলাদেশের সব আশা উবে যায়। যদিও খেলা না হওয়ায় আইসিসি টিকিটের টাকা ফেরত দেবে, তবুও দল দুটির আশা-ভরসার এমন অপমৃত্যুর সদুত্তর নেই। অথচ আইসিসির বোদ্ধারা ভালো করেই জানেন, এ দেশে গ্রীষ্মকালে এ রকম বৃষ্টিবাদল হয়ই। তারপরও রিজার্ভ দিন না রাখার কারণ বোধগম্য নয়। অন্তত যে ক’টি খেলা পরিত্যক্ত, সেগুলো রিজার্ভ দিনে করার ব্যবস্থা রাখা যেত। এ ম্যাচটিতে পয়েন্ট ভাগাভাগিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ।

গত ২ জুন ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দারুণ সূচনার পর একই মাঠে মুশফিক ও অজি আম্পায়ারের আম্পায়ারের অমার্জনীয় ভুলে নিউজিল্যান্ডের কাছে এবং কার্ডিফে স্বাগতিকদের কাছে শোচনীয় হারে সম্পূর্ণ ব্যাকফুটে থাকা বাংলাদেশের সোনালি স্বপ্নের যে সলিলসমাধি হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কার্ডিফ ম্যাচের আগের দিন তিন সিনিয়র খেলোয়াড় সম্পর্কে এক প্রত্যক্ষদর্শী যা বলেন, এতে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের অবস্থান ৭-এ না থাকলেও অবাক হব না। তিনি অত রাতে দু’টি টিকিট আনতে গিয়েছিলেন। অধিনায়কসহ রাত ১-২টায় নাকি তারা সিগারেট খেতে খেতে আড্ডা মারছিলেন। অথচ বেচারা কোচ ও টিম ম্যানেজমেন্ট এর খবরও রাখেন না।

এদিকে ব্রিস্টলে খেলা না হওয়ায় কোচ রোডস সাংঘাতিক হতাশ। তিনি বলেন, এ ম্যাচে জিততে লঙ্কাও যে মরণকামড় দিত, এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরাও বেশ আশাবাদী ছিলাম। এখন টনটনে পরবর্তী ম্যাচে উইন্ডিজের বিরুদ্ধে মরিয়া চেষ্টার বিকল্প নেই। এরপর আফগানিস্তানকে হারাতে পারলেই যথেষ্ট। তিনি যোগ করেনÑ দলের একমাত্র নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরিয়ান সাকিব, মিরাজ ও মোসাদ্দেককে নিয়ে বেশ আশাবাদী। গত ৩টি ম্যাচে তিনজনে মোট ১০ উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু রিস্ট স্পিনার ও কার্যকর ফাস্ট মিডিয়াম বোলার না থাকায় এত বড় টুর্নামেন্টে নাটকীয় কিছু করার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। কোচও মনে করেন, পরিত্যক্ত খেলাগুলোর জন্য রিজার্ভ দিন রাখলে এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হতো না।

আরও খবর
বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে
৪৮ বছরে বাজেট বেড়েছে ৬৬৬ গুণ
সঠিক সময়ে রাজস্ব আদায়ই বড় চ্যালেঞ্জ
আ’লীগের ইশতেহার অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেই
বাজেট বাস্তবায়ন করাই বড় চ্যালেঞ্জ
প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন কিছু নেই
দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বেড়েছে
জননিরাপত্তায় ব্যয় ২১ হাজার ৯২৩ কোটি ১৭ লাখ 
করমুক্ত আয়সীমা আগের মতোই
আবারও এমপিওভুক্ত হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ৬১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা
স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বেড়েছে
বড় দলের বিপক্ষে লড়াই করার সামর্থ্য আছে বাংলাদেশের : কোচ রোডস
পরিবহন ও যোগাযোগে বরাদ্দ ৬৪ হাজার ৮২০ কোটি টাকা
ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচও পরিত্যক্ত

শুক্রবার, ১৪ জুন ২০১৯ , ২৯ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ১০ শাওয়াল ১৪৪০

তিন মোড়ল ছাড়া বাকি দেশগুলোর প্রতি কোন দায়দায়িত্ব বোধ আছে মনে করে না আইসিসি

প্রায় ৪০০ বছর আগে ক্রিকেট খেলার উদ্ভাবক হিসেবে ইংলিশরা অবশ্যই গর্ববোধ করতে পারেন। কিন্তু এর ক্রমবিবর্তনে ক্রিকেট এখন যে পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, এতে ভদ্রলোকের খেলাটি নিয়ে হেলাফেলা করার অধিকার কারও নেই। কারণ ক্রিকেট এখন শুধুই ইংলিশদের সম্পদ নয়। বিশ্বের ১০টি শীর্ষ দল ছাড়াও প্রায় ১৫-২০টি দেশে ক্রিকেট খেলা হয়। তবে আইসিসি এবং বিশ্বকাপ ২০১৯-এর আয়োজক ইংল্যান্ড এটায় অনাকাক্সিক্ষত কর্তৃত্ব করছে। অথচ কে না জানে, বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী ১০টি দেশের জনগণের কাছে এর গুরুত্ব, মর্যাদা, আকর্ষণ ও ফলাফলে খেলাটির উন্নয়ন এবং প্রসারে যে বিরাট অবদান রাখছে, তা আইসিসি গভীরভাবে অনুধাবন করে মনে হয় না। তা না হলে আয়োজক দেশ এবার বিশ্বকাপ ম্যাচের জন্য ব্রিস্টলের মতো চাল-চুলোহীন মাঠে খেলার ব্যবস্থা করত না।

দীর্ঘ দুই দশক পর আয়োজক হয়ে গত মঙ্গলবার যে মাঠে (ব্রিস্টল) বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল, সেটিকে বড়জোর লীগের উপযুক্ত বলা যায়। চারদিকে শুধু গ্যালারি ও সুন্দর মাঠ থাকলেই বিশ্বকাপের মতো সর্বোচ্চ টুর্নামেন্টের ভেনু করা কতটুকু যৌক্তিক, তা অবশ্যই আইসিসির পর্যলোচনা করা উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, আইসিসির বর্তমান চেয়ারম্যান ভারতের শশাঙ্ক মনোহর বিশ্ব ক্রিকেটের তিন মোড়ল ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড ছাড়া বাকি দেশগুলোর প্রতি কোন দায়দায়িত্ব বোধ আছে মনে করে না। ব্রিস্টলের কাউন্টি ক্রিকেট মাঠটির যে চেহারা দেখেছি, তা হতাশাজনক।

লন্ডন থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টার ড্রাইভে যখন সেখানে পৌঁছেছি (সকাল ১০টা), তখন মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছিল। মাঠের আয়তন কোনভাবেই বিশ্বকাপমানের নয়। শুধু গ্যালারি, নম্বর দেয়া চেয়ার, দুটি মিনিটিভি, ২০-৩০ সাংবাদিকের বসার মতো কক্ষ ও ৬টি স্ট্যান্ডে ফ্লাডলাইট। দর্শকের সুযোগ-সুবিধার মধ্যে ছিল সরিয়ে নেয়ার মতো ১০-১২টি আলোবিহীন টয়লেট ও একটি পানাহারের রেস্তোরাঁ। মূল উইকেট ও চারপাশঢাকা কভারের ওপর থেকে পানি সরানোর কাজে ব্যস্ত একটি সুপারসফার। আরেকটি মিনিসুপারসফার ব্যস্ত আউটফিল্ড খেলা উপযোগী করার কাজে। গ্যালারির আশপাশে লন্ডন ও বিভিন্ন শহর থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা প্রায় হাজারো বাঙালি বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়েও খেলা শুরুর আশায় সময় কাটাচ্ছেন। কিন্তু এ দুটি পানি নিষ্কাশন যন্ত্র প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা সাধ্যমতো চেষ্টা করেও কূলকিনারা করতে পারছিল না। কারণ প্রকৃতিও নাছোড়বান্দা। ভারী বৃষ্টি না হলেও বন্ধ হওয়ারও লক্ষণ ছিল না। বৃষ্টিতে জবুথুবু নিরাপত্তা কর্মীরা সবার টিকিট দেখে গ্যালারিতে ঢুকতে দেয়। অবশেষে স্থানীয় সময় বেলা ৩টার দিকে দুই আম্পায়ার শেষবার মাঠ পরিদর্শন করে ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে বাংলাদেশের সব আশা উবে যায়। যদিও খেলা না হওয়ায় আইসিসি টিকিটের টাকা ফেরত দেবে, তবুও দল দুটির আশা-ভরসার এমন অপমৃত্যুর সদুত্তর নেই। অথচ আইসিসির বোদ্ধারা ভালো করেই জানেন, এ দেশে গ্রীষ্মকালে এ রকম বৃষ্টিবাদল হয়ই। তারপরও রিজার্ভ দিন না রাখার কারণ বোধগম্য নয়। অন্তত যে ক’টি খেলা পরিত্যক্ত, সেগুলো রিজার্ভ দিনে করার ব্যবস্থা রাখা যেত। এ ম্যাচটিতে পয়েন্ট ভাগাভাগিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ।

গত ২ জুন ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দারুণ সূচনার পর একই মাঠে মুশফিক ও অজি আম্পায়ারের আম্পায়ারের অমার্জনীয় ভুলে নিউজিল্যান্ডের কাছে এবং কার্ডিফে স্বাগতিকদের কাছে শোচনীয় হারে সম্পূর্ণ ব্যাকফুটে থাকা বাংলাদেশের সোনালি স্বপ্নের যে সলিলসমাধি হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কার্ডিফ ম্যাচের আগের দিন তিন সিনিয়র খেলোয়াড় সম্পর্কে এক প্রত্যক্ষদর্শী যা বলেন, এতে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের অবস্থান ৭-এ না থাকলেও অবাক হব না। তিনি অত রাতে দু’টি টিকিট আনতে গিয়েছিলেন। অধিনায়কসহ রাত ১-২টায় নাকি তারা সিগারেট খেতে খেতে আড্ডা মারছিলেন। অথচ বেচারা কোচ ও টিম ম্যানেজমেন্ট এর খবরও রাখেন না।

এদিকে ব্রিস্টলে খেলা না হওয়ায় কোচ রোডস সাংঘাতিক হতাশ। তিনি বলেন, এ ম্যাচে জিততে লঙ্কাও যে মরণকামড় দিত, এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরাও বেশ আশাবাদী ছিলাম। এখন টনটনে পরবর্তী ম্যাচে উইন্ডিজের বিরুদ্ধে মরিয়া চেষ্টার বিকল্প নেই। এরপর আফগানিস্তানকে হারাতে পারলেই যথেষ্ট। তিনি যোগ করেনÑ দলের একমাত্র নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরিয়ান সাকিব, মিরাজ ও মোসাদ্দেককে নিয়ে বেশ আশাবাদী। গত ৩টি ম্যাচে তিনজনে মোট ১০ উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু রিস্ট স্পিনার ও কার্যকর ফাস্ট মিডিয়াম বোলার না থাকায় এত বড় টুর্নামেন্টে নাটকীয় কিছু করার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। কোচও মনে করেন, পরিত্যক্ত খেলাগুলোর জন্য রিজার্ভ দিন রাখলে এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হতো না।