পৃথিবীতে গত ৭০ বছরের ইতিহাসে ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৭০ মিলিয়ন শরণার্থী সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রায় ১ মিলিয়ন শরণার্থীর আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল ইউএনএইচসিআর-এর বার্ষিক ‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ শরণার্থী জনগোষ্ঠী মায়ানমার থেকে সৃষ্টি হয়েছে, যাদের অধিকাংশকেই বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে মায়ানমারের শরণার্থীদের সবচেয়ে বেশি আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ (৯ লাখ ৬ হাজার ৬০০ জন)। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরের স্থানে পর্যায়ক্রমে রয়েছে মালয়েশিয়া (১ লাখ ১৪ হাজার ২০০ জন), থাইল্যান্ড (৯৭ হাজার ৬০০ জন) এবং ভারত (১৮ হাজার ৮০০ জন)। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৭০ বছরের ইতিহাসে ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক শরণার্থী সৃষ্টি হয়েছে। যুদ্ধ, নির্যাতন ও সংঘর্ষে পালিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা ২০১৮ সালে ৭০ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে।
এ প্রতিবেদন প্রসঙ্গে ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশ প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের সঙ্গে আরও বেশি সংহতি প্রকাশের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আজ যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তাতে আরও একবার প্রমাণিত হলো যে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে সরকার ও বাংলাদেশের জনগণ উদারতা দেখিয়েছে।’
প্রতিবেদনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শরণার্থীদের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলা হয়, ২০১৮ সালে ৭ কোটি ৮ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে যা গত বছরের তুলনায় ২৩ লাখ বেশি। ২০ বছর আগের সংখ্যার সাপেক্ষে এটি দ্বিগুণ। সংস্থাটি জানায়, ঘরহারা মানুষের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও বেশি হতে পারে। কারণ ভেনিজুয়েলা সংকটে ঘরহারাদের সংখ্যা প্রতিবেদনে আংশিকভাবে উঠে এসেছে। ভেনিজুয়েলার শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া দেশগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৪০ লাখ মানুষ দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে।
বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের সঙ্গে এই বাস্তুহারাদের সংখ্যা বৃদ্ধি হারের আনুপাতিক সম্পর্কও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। ১৯৫১ সালে শরণার্থী কনভেনশন-এর পর থেকে প্রণীত তালিকা অনুযায়ী? এর আগ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ ঘর হারিয়েছিল ১৯৯২ সালে। সে বছর বাস্তুহারার হার ছিল ৩.৭ শতাংশ। আর ২০১৮ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩ শতাংশে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে ঘরহারাদের তিনটি ভাগে পর্যায়ভুক্ত করা হয়েছে। একটি ভাগে রয়েছে যুদ্ধ, হত্যা কিংবা সহিংসতা থেকে বাঁচতে দেশ থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীরা। ২০১৮ সালে এমন শরণার্থীর সংখ্যা ২ কোটি ৫৯ লাখ; যা ২০১৭ সালের চেয়ে ৫ লাখ বেশি। শুধু ফিলিস্তিনি শরণার্থীই রয়েছে ৫৫ লাখ।
দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে সেইসব রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী, যারা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিতে নিজের দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও আশ্রয় নিয়েছে কিন্তু এখনও শরণার্থী স্বীকৃতি পায়নি। তাদের সংখ্যা ৩৫ লাখ।
তৃতীয় ভাগে রাখা হয়েছে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের। তারা ঘর ছাড়তে বাধ্য হলেও নিজ দেশেই অবস্থান করছেন। বিশ্বজুড়ে এই সংখ্যা ৪ কোটি ১৩ লাখ।
বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ শরণার্থীই সিরিয়া, আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান, মায়ানমার ও সোমালিয়ার নাগরিক। এর মধ্যে সিরীয় শরণার্থীই সবচেয়ে বেশি। সংখ্যায় ৬৭ লাখ শরণার্থীর মধ্যে ২০১৮ সালে মাত্র ৯২ হাজার ৪০০ জন শরণার্থী পুনর্বাসিত হয়েছেন, যা ২ শতাংশেরও কম। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক শরণার্থী রয়েছে আফগানিস্তানে। তাদের সংখ্যা ২৭ লাখ।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্দি বলেন, প্রাপ্ত পরিসংখ্যান থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে যুদ্ধ, হত্যা ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে বেড়ানো মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছরই বাস্তুহারাদের সংখ্যা বেড়েছে। সেবছর বাস্তুহারার সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৩৩ লাখ। আর ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সিরিয়া সংকটের কারণে বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি ছিল। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে ইরাক ও ইয়েমেন, সাব সাহারান আফ্রিকায় ডিআর কঙ্গো এবং দক্ষিণ সুদানের মতো দেশগুলোর সহিংসতাও এই সংখ্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ১১ লাখ, যা প্রায় ২০১৭ সালের সমান। বাংলাদেশের সরকারি তথ্যনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০১৯ , ৫ আষাঢ় ১৪২৫, ১৫ শাওয়াল ১৪৪০
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
পৃথিবীতে গত ৭০ বছরের ইতিহাসে ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৭০ মিলিয়ন শরণার্থী সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রায় ১ মিলিয়ন শরণার্থীর আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল ইউএনএইচসিআর-এর বার্ষিক ‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ শরণার্থী জনগোষ্ঠী মায়ানমার থেকে সৃষ্টি হয়েছে, যাদের অধিকাংশকেই বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে মায়ানমারের শরণার্থীদের সবচেয়ে বেশি আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ (৯ লাখ ৬ হাজার ৬০০ জন)। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরের স্থানে পর্যায়ক্রমে রয়েছে মালয়েশিয়া (১ লাখ ১৪ হাজার ২০০ জন), থাইল্যান্ড (৯৭ হাজার ৬০০ জন) এবং ভারত (১৮ হাজার ৮০০ জন)। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৭০ বছরের ইতিহাসে ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক শরণার্থী সৃষ্টি হয়েছে। যুদ্ধ, নির্যাতন ও সংঘর্ষে পালিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা ২০১৮ সালে ৭০ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে।
এ প্রতিবেদন প্রসঙ্গে ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশ প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের সঙ্গে আরও বেশি সংহতি প্রকাশের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আজ যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তাতে আরও একবার প্রমাণিত হলো যে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে সরকার ও বাংলাদেশের জনগণ উদারতা দেখিয়েছে।’
প্রতিবেদনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শরণার্থীদের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলা হয়, ২০১৮ সালে ৭ কোটি ৮ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে যা গত বছরের তুলনায় ২৩ লাখ বেশি। ২০ বছর আগের সংখ্যার সাপেক্ষে এটি দ্বিগুণ। সংস্থাটি জানায়, ঘরহারা মানুষের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও বেশি হতে পারে। কারণ ভেনিজুয়েলা সংকটে ঘরহারাদের সংখ্যা প্রতিবেদনে আংশিকভাবে উঠে এসেছে। ভেনিজুয়েলার শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া দেশগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৪০ লাখ মানুষ দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে।
বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের সঙ্গে এই বাস্তুহারাদের সংখ্যা বৃদ্ধি হারের আনুপাতিক সম্পর্কও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। ১৯৫১ সালে শরণার্থী কনভেনশন-এর পর থেকে প্রণীত তালিকা অনুযায়ী? এর আগ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ ঘর হারিয়েছিল ১৯৯২ সালে। সে বছর বাস্তুহারার হার ছিল ৩.৭ শতাংশ। আর ২০১৮ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩ শতাংশে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে ঘরহারাদের তিনটি ভাগে পর্যায়ভুক্ত করা হয়েছে। একটি ভাগে রয়েছে যুদ্ধ, হত্যা কিংবা সহিংসতা থেকে বাঁচতে দেশ থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীরা। ২০১৮ সালে এমন শরণার্থীর সংখ্যা ২ কোটি ৫৯ লাখ; যা ২০১৭ সালের চেয়ে ৫ লাখ বেশি। শুধু ফিলিস্তিনি শরণার্থীই রয়েছে ৫৫ লাখ।
দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে সেইসব রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী, যারা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিতে নিজের দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও আশ্রয় নিয়েছে কিন্তু এখনও শরণার্থী স্বীকৃতি পায়নি। তাদের সংখ্যা ৩৫ লাখ।
তৃতীয় ভাগে রাখা হয়েছে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের। তারা ঘর ছাড়তে বাধ্য হলেও নিজ দেশেই অবস্থান করছেন। বিশ্বজুড়ে এই সংখ্যা ৪ কোটি ১৩ লাখ।
বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ শরণার্থীই সিরিয়া, আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান, মায়ানমার ও সোমালিয়ার নাগরিক। এর মধ্যে সিরীয় শরণার্থীই সবচেয়ে বেশি। সংখ্যায় ৬৭ লাখ শরণার্থীর মধ্যে ২০১৮ সালে মাত্র ৯২ হাজার ৪০০ জন শরণার্থী পুনর্বাসিত হয়েছেন, যা ২ শতাংশেরও কম। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক শরণার্থী রয়েছে আফগানিস্তানে। তাদের সংখ্যা ২৭ লাখ।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্দি বলেন, প্রাপ্ত পরিসংখ্যান থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে যুদ্ধ, হত্যা ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে বেড়ানো মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছরই বাস্তুহারাদের সংখ্যা বেড়েছে। সেবছর বাস্তুহারার সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৩৩ লাখ। আর ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সিরিয়া সংকটের কারণে বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি ছিল। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে ইরাক ও ইয়েমেন, সাব সাহারান আফ্রিকায় ডিআর কঙ্গো এবং দক্ষিণ সুদানের মতো দেশগুলোর সহিংসতাও এই সংখ্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ১১ লাখ, যা প্রায় ২০১৭ সালের সমান। বাংলাদেশের সরকারি তথ্যনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।