প্রতি উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের সেবার আওতায় আনা হবে

সাজ্জাদ হোসেন, মহাপরিচালক

দেশের প্রতিটি উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের সেবার আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ জন্য জনবল কাঠামো ও উন্নত সরঞ্জাম সংগ্রহের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন। সম্প্রতি দৈনিক সংবাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এসব পরিকল্পনা কথা জানান তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সংবাদের স্টাফ রিপোর্টার মাহমুদ আকাশ।

সংবাদ : প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিসকে ঢেলে সাজানো পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কী ওই পরিকল্পনা?

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন : প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দেশের প্রতিটি উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের সেবার আওতায় আনা হবে। এ জন্য ফায়াস স্টেশন নির্মাণ, জনবল বৃদ্ধি ও উন্নত সরঞ্জামন সংগ্রহের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৯০০ কোটি টাকার আলাদা প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুর্যোগ মোকাবিলার বিভিন্ন সরঞ্জাম রয়েছে।

সংবাদ : ফায়ার সার্ভিসের বর্তমান জনবল কত এবং জনবল বৃদ্ধির কী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে?

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন : ১৯৯৬ সালে অধিদফতরের মোট জনবল ছিল ৪ হাজার ৩৩৫ জন। বতর্মান সরকার আমলে বিভিন্ন সময় ৭ হাজার ৫৫৫টি পদ তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪ হাজার ১৬৪ জনের নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে। তাই বর্তমানে জনবল বৃদ্ধি পেয়ে ১১ হাজার ৮৯০ জনে উন্নীত হয়েছে। চলমান প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জনবলের এই সংখ্যা ২৫ হাজারে উন্নীত হবে।

সংবাদ : বর্তমানে কতটি ফায়ার স্টেশন রয়েছে এবং স্টেশন বৃদ্ধির কি পরিকল্পনা আছে?

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন : বর্তমানে সারাদেশের এ, বি, সি শ্রেণীর মোট ৪০৬টি ফায়ার স্টেশন রয়েছে। সারাদেশে ‘এ’ শ্রেণীর মোট ৮৮টি ফায়ার স্টেশন আছে। ‘এ’ শ্রেণীর ফায়ার স্টেশনে ৩৫ জন, ‘বি’ শ্রেণীর ফায়ার স্টেশনে ২৭ জন ও ‘সি’ শ্রেণীর ফায়ার স্টেশনে ১৭ জন করে জনবল নিয়োজিত থাকে। ভবিষ্যতে সব ফায়ার স্টেশন এ ও বি শ্রেণীতে উন্নতি করা হবে। এছাড়া ১১টি আধুনিক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপনে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২৯ কোটি ৭৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে এসব স্টেশন স্থাপনের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিবেচনা করে সব উপজেলায় ৫৬৫টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হযেছে। তাই দেশের প্রতিটি উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের সেবার আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে ৪০৬ উপজেলার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১৫৯টি স্টেশন নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এসব স্টেশন তৈরির কাজ শেষ হলে মানুষের জানমাল সুরক্ষায় ফায়ার সার্ভিসের সামর্থ্য বৃদ্ধি পাবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ‘ফায়ারম্যান’ পদের নাম বদলে করা হচ্ছে ‘ফায়ার ফাইটার’। নিয়োগবিধি সংশোধন ও জনবল কাঠামো বৃদ্ধির পাশাপাশি নির্মাণ করা হচ্ছে অত্যাধুনিক ফায়ার স্টেশন। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের জন্য ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে কল্যাণ ট্রাস্ট। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরকে আরও শক্তিশালী করতেই এসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

সংবাদ : ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে?

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন : ফায়ার সার্ভিসকে আরও আধুনিক করতে কাজ করা হচ্ছে। বতর্মানে ঢাকা শহরে ১৮ তলা পর্যন্ত ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা আছে ফায়ার সার্ভিসের। তবে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উন্নত সরঞ্জাম ক্রয়ে ইতোমধ্যে ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ২২ তলা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া প্রতি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি ১১টি আধুনিক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপনের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। যে কোন বহুতল ভবনে আগুন নেভানোর জন্য উঁচু মই বা ফায়ার ল্যাডারসহ ফায়ার সার্ভিসের আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন জরুরি, তেমনি প্রতিটি ভবনের নিজস্ব হাইড্রেন্ট বা জলাধার, ফায়ার এক্সিট বা জরুরি নির্গমন পথ এবং তাৎক্ষণিক ব্যবহারের জন্য প্রতিটি ভবনের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা মোকাবিলার সরঞ্জাম রাখার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এ জন্য কোন সুউচ্চ ভবনে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে দ্রুততার সঙ্গে অগ্নিকা- নির্বাপণ ও অগ্নিকা-কবলিত মানুষজনকে উদ্ধারের লক্ষ্য নিয়ে আধুনিকায়নের আওতায় আনার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরটিকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বর্তমানে আগুন নেভানোর পানিবাহী গাড়ি ৫২০, পাম্প টানা গাড়ি ১ হাজার ১, ফায়ার পাম্প ১ হাজার ১৮২, অ্যাম্বুলেন্স ১৮৫, বিশেষায়িত গাড়ি আছে ৬৮টি। এসব সরঞ্জাম দ্বিগুণ করা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৯০০ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। বর্তমানে দুর্যোগ মোকাবিলায় সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার কাজে ব্যবহারের জন্য টার্নটেবল লেডার ১, স্নোরকেল ২, মাল্টিপারপাস ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ ভেহিকল ১, পাম্প ড্রিভেন ওয়াটার মিস্ট ৫টি, ফোর হুইলার ওয়াটার মিস্ট ১০, রেসকিউ ভেহিক্যাল (পিকআপ) ১০, কেমিক্যাল টেন্ডার ১, টু হুইলার ওয়াটার মিস্ট ২৪টি ও কেমিক্যাল টেন্ডার ১টি। এসব সরঞ্জামও দ্বিগুণ করা করা হবে।

সংবাদ : দেশের দুর্যোগকালীন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকরা এগিয়ে আসে। এ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে কত হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন : বর্তমান সরকারের সময়ে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের নিরাপত্তায় লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণ জোরদার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬২ হাজার স্বেচ্ছোসেবক প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে ফায়ার অ্যান্ড সেফটি সেল। সেখান থেকে নিয়মিতভাবে পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন শিল্প-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ, মহড়া ও সার্ভে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৬ লাখ ৬১ হাজার ৯৮৪ জনকে দেশি ও বিদেশি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

সংবাদ : শত ব্যস্ততার মধ্যে আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন : আপনাকেও ধন্যবাদ।

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০১৯ , ১৮ আষাঢ় ১৪২৫, ২৮ শাওয়াল ১৪৪০

প্রতি উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের সেবার আওতায় আনা হবে

সাজ্জাদ হোসেন, মহাপরিচালক

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

দেশের প্রতিটি উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের সেবার আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ জন্য জনবল কাঠামো ও উন্নত সরঞ্জাম সংগ্রহের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন। সম্প্রতি দৈনিক সংবাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এসব পরিকল্পনা কথা জানান তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সংবাদের স্টাফ রিপোর্টার মাহমুদ আকাশ।

সংবাদ : প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিসকে ঢেলে সাজানো পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কী ওই পরিকল্পনা?

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন : প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দেশের প্রতিটি উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের সেবার আওতায় আনা হবে। এ জন্য ফায়াস স্টেশন নির্মাণ, জনবল বৃদ্ধি ও উন্নত সরঞ্জামন সংগ্রহের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৯০০ কোটি টাকার আলাদা প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুর্যোগ মোকাবিলার বিভিন্ন সরঞ্জাম রয়েছে।

সংবাদ : ফায়ার সার্ভিসের বর্তমান জনবল কত এবং জনবল বৃদ্ধির কী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে?

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন : ১৯৯৬ সালে অধিদফতরের মোট জনবল ছিল ৪ হাজার ৩৩৫ জন। বতর্মান সরকার আমলে বিভিন্ন সময় ৭ হাজার ৫৫৫টি পদ তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪ হাজার ১৬৪ জনের নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে। তাই বর্তমানে জনবল বৃদ্ধি পেয়ে ১১ হাজার ৮৯০ জনে উন্নীত হয়েছে। চলমান প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জনবলের এই সংখ্যা ২৫ হাজারে উন্নীত হবে।

সংবাদ : বর্তমানে কতটি ফায়ার স্টেশন রয়েছে এবং স্টেশন বৃদ্ধির কি পরিকল্পনা আছে?

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন : বর্তমানে সারাদেশের এ, বি, সি শ্রেণীর মোট ৪০৬টি ফায়ার স্টেশন রয়েছে। সারাদেশে ‘এ’ শ্রেণীর মোট ৮৮টি ফায়ার স্টেশন আছে। ‘এ’ শ্রেণীর ফায়ার স্টেশনে ৩৫ জন, ‘বি’ শ্রেণীর ফায়ার স্টেশনে ২৭ জন ও ‘সি’ শ্রেণীর ফায়ার স্টেশনে ১৭ জন করে জনবল নিয়োজিত থাকে। ভবিষ্যতে সব ফায়ার স্টেশন এ ও বি শ্রেণীতে উন্নতি করা হবে। এছাড়া ১১টি আধুনিক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপনে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২৯ কোটি ৭৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে এসব স্টেশন স্থাপনের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিবেচনা করে সব উপজেলায় ৫৬৫টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হযেছে। তাই দেশের প্রতিটি উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের সেবার আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে ৪০৬ উপজেলার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১৫৯টি স্টেশন নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এসব স্টেশন তৈরির কাজ শেষ হলে মানুষের জানমাল সুরক্ষায় ফায়ার সার্ভিসের সামর্থ্য বৃদ্ধি পাবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ‘ফায়ারম্যান’ পদের নাম বদলে করা হচ্ছে ‘ফায়ার ফাইটার’। নিয়োগবিধি সংশোধন ও জনবল কাঠামো বৃদ্ধির পাশাপাশি নির্মাণ করা হচ্ছে অত্যাধুনিক ফায়ার স্টেশন। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের জন্য ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে কল্যাণ ট্রাস্ট। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরকে আরও শক্তিশালী করতেই এসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

সংবাদ : ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে?

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন : ফায়ার সার্ভিসকে আরও আধুনিক করতে কাজ করা হচ্ছে। বতর্মানে ঢাকা শহরে ১৮ তলা পর্যন্ত ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা আছে ফায়ার সার্ভিসের। তবে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উন্নত সরঞ্জাম ক্রয়ে ইতোমধ্যে ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ২২ তলা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া প্রতি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি ১১টি আধুনিক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপনের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। যে কোন বহুতল ভবনে আগুন নেভানোর জন্য উঁচু মই বা ফায়ার ল্যাডারসহ ফায়ার সার্ভিসের আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন জরুরি, তেমনি প্রতিটি ভবনের নিজস্ব হাইড্রেন্ট বা জলাধার, ফায়ার এক্সিট বা জরুরি নির্গমন পথ এবং তাৎক্ষণিক ব্যবহারের জন্য প্রতিটি ভবনের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা মোকাবিলার সরঞ্জাম রাখার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এ জন্য কোন সুউচ্চ ভবনে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে দ্রুততার সঙ্গে অগ্নিকা- নির্বাপণ ও অগ্নিকা-কবলিত মানুষজনকে উদ্ধারের লক্ষ্য নিয়ে আধুনিকায়নের আওতায় আনার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরটিকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বর্তমানে আগুন নেভানোর পানিবাহী গাড়ি ৫২০, পাম্প টানা গাড়ি ১ হাজার ১, ফায়ার পাম্প ১ হাজার ১৮২, অ্যাম্বুলেন্স ১৮৫, বিশেষায়িত গাড়ি আছে ৬৮টি। এসব সরঞ্জাম দ্বিগুণ করা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৯০০ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। বর্তমানে দুর্যোগ মোকাবিলায় সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার কাজে ব্যবহারের জন্য টার্নটেবল লেডার ১, স্নোরকেল ২, মাল্টিপারপাস ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ ভেহিকল ১, পাম্প ড্রিভেন ওয়াটার মিস্ট ৫টি, ফোর হুইলার ওয়াটার মিস্ট ১০, রেসকিউ ভেহিক্যাল (পিকআপ) ১০, কেমিক্যাল টেন্ডার ১, টু হুইলার ওয়াটার মিস্ট ২৪টি ও কেমিক্যাল টেন্ডার ১টি। এসব সরঞ্জামও দ্বিগুণ করা করা হবে।

সংবাদ : দেশের দুর্যোগকালীন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকরা এগিয়ে আসে। এ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে কত হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন : বর্তমান সরকারের সময়ে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের নিরাপত্তায় লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণ জোরদার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬২ হাজার স্বেচ্ছোসেবক প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে ফায়ার অ্যান্ড সেফটি সেল। সেখান থেকে নিয়মিতভাবে পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন শিল্প-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ, মহড়া ও সার্ভে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৬ লাখ ৬১ হাজার ৯৮৪ জনকে দেশি ও বিদেশি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

সংবাদ : শত ব্যস্ততার মধ্যে আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন : আপনাকেও ধন্যবাদ।