জাপানি সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণ

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পোশাক খাত

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তৈরি পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছে জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ। সংবাদমাধ্যমটির গত শুক্রবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব ইতিমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে পণ্যের দামও বেড়ে যাবে। তখন অন্য রপ্তানীকারক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লোকসান কমাতে সম্প্রতি শিল্প খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম গড়ে এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ বিষয়ে অনন্ত গার্মেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির বলেছেন, ‘গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রতিষ্ঠানটির উন্নতির হার ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। ইতিমধ্যেই পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।’ পোশাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর ৩০ কোটি ডলারের বেশি অর্থের পণ্য রফতানি করে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীসংখ্যা ২৬ হাজার। পোশাকশিল্পের নেতারাও একই ধরনের কথা বলছেন। বাংলাদেশ পোশাকশিল্প প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট রুবানা হক বলেন, পোশাকশিল্পের মোট খরচের ১ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় হয় গ্যাস ব্যবহারে। সে হিসেবে গ্যাসের দাম ৩৮ শতাংশ বাড়ায় উৎপাদন খরচ বাড়ছে প্রায় ১ শতাংশ। এটা হয়তো শতাংশের হিসেবে খুব বেশি না কিন্তু আমাদের পোশাকশিল্প হচ্ছে এমন একটি খাত যেখানে প্রতি পয়সার জন্য সংগ্রাম করতে হয়। অনিশ্চিত গ্যাস সরবরাহ, বাজারে অস্থিরতা ও পণ্যের দামের আচমকা ওঠানামার মতো সমস্যার কারণেই নতুন উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে ইচ্ছুক নন। এর মধ্যে আচমকা এ মূল্যবৃদ্ধি তাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ভেস্তে দেবে।

২০২০ সালের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে প্রতিদিন দরকার পড়বে ৮৫ কোটি কিউবিক ফুট এলএনজি। এই হিসাবের ওপর নির্ভর করেই কর্তৃপক্ষ গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু অনন্ত গার্মেন্টের মতো গ্যাস ব্যবহারকারী শিল্পগুলোর জন্য দাম বৃদ্ধি হয়েছে ৩৮ শতাংশ। এদিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ ও বাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বেড়েছে প্রায় এক-চতুর্থাংশ। এই দাম বৃদ্ধির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ব্যবসায়ী, ভোক্তা অধিকার সংগঠন ও বিরোধীদলগুলো। কিন্তু সরকার মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এক বিবৃতিতে বলেছে, গ্যাস উৎপাদন, এলএনজি আমদানি, হস্তান্তর ও বণ্টন খরচ এবং দেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিচারে মূল্যবৃদ্ধির প্রয়োজন ছিল। সরকারি তথ্য অনুসারে, এলএনজিসহ বাংলাদেশে প্রতিদিন উৎপাদিত গ্যাসের পরিমাণ ৩ হাজার কোটি ঘনফুট। অপরদিকে দৈনিক চাহিদা ৪ হাজার কোটি ঘনফুট।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, এ মূল্যবৃদ্ধি কোনভাবেই ন্যায্য নয়। গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থার তেমন কোন উন্নতি হয়নি। এ মূল্যবৃদ্ধির জন্য যদি পোশাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তৈরি পোশাক রফতানিকারকরাও ব্যাপক আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ব্যক্তি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত মূল্যবৃদ্ধি রফতানিকারকদের সরাসরি আঘাত হানবে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি আবাসিক চুলা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতসহ সব খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। আবাসিক গ্রাহকদের এক চুলার জন্য মাসে ৯২৫ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৯৭৫ টাকা দিতে হবে, যা এত দিন ছিল যথাক্রমে ৭৫০ টাকা ও ৮০০ টাকা। গৃহস্থালিতে মিটারে যারা গ্যাসের বিল দেন, তাদের প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের ব্যবহারের জন্য ১২ টাকা ৬০ পয়সা করে দিতে হবে। এত দিন প্রতি ঘনমিটারে তাদের বিল হত ৯ টাকা ১০ পয়সা। অর্থাৎ, রান্নার গ্যাসের জন্য চুলাভিত্তিক গ্রাহকদের প্রতি মাসে ২৩ শতাংশ এবং মিটারভিত্তিক গ্রাহকদের ৩৮ শতাংশ বেশি অর্থ খরচ হবে। যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম আগামী সোমবার থেকে প্রতি ঘনমিটারে ৩৮ টাকা থেকে বেড়ে ৪৩ টাকা হবে। এ হিসাবে গাড়ির গ্যাসের জন্য মালিকদের খরচ বাড়বে সাড়ে ৭ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবেই গণপরিবহনে এর প্রভাব পড়বে। এর মাশুল দিতে হবে যাত্রীদের। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৫ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত। এর ফলে শিল্পোৎপাদনে খরচ বাড়বে। আর ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকেই তা আদায় করবেন। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গত রোববার বিকালে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর এই ঘোষণা দেয়।

রবিবার, ০৭ জুলাই ২০১৯ , ২৩ আষাঢ় ১৪২৫, ৩ জ্বিলকদ ১৪৪০

জাপানি সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণ

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পোশাক খাত

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তৈরি পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছে জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ। সংবাদমাধ্যমটির গত শুক্রবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব ইতিমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে পণ্যের দামও বেড়ে যাবে। তখন অন্য রপ্তানীকারক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লোকসান কমাতে সম্প্রতি শিল্প খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম গড়ে এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ বিষয়ে অনন্ত গার্মেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির বলেছেন, ‘গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রতিষ্ঠানটির উন্নতির হার ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। ইতিমধ্যেই পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।’ পোশাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর ৩০ কোটি ডলারের বেশি অর্থের পণ্য রফতানি করে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীসংখ্যা ২৬ হাজার। পোশাকশিল্পের নেতারাও একই ধরনের কথা বলছেন। বাংলাদেশ পোশাকশিল্প প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট রুবানা হক বলেন, পোশাকশিল্পের মোট খরচের ১ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় হয় গ্যাস ব্যবহারে। সে হিসেবে গ্যাসের দাম ৩৮ শতাংশ বাড়ায় উৎপাদন খরচ বাড়ছে প্রায় ১ শতাংশ। এটা হয়তো শতাংশের হিসেবে খুব বেশি না কিন্তু আমাদের পোশাকশিল্প হচ্ছে এমন একটি খাত যেখানে প্রতি পয়সার জন্য সংগ্রাম করতে হয়। অনিশ্চিত গ্যাস সরবরাহ, বাজারে অস্থিরতা ও পণ্যের দামের আচমকা ওঠানামার মতো সমস্যার কারণেই নতুন উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে ইচ্ছুক নন। এর মধ্যে আচমকা এ মূল্যবৃদ্ধি তাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ভেস্তে দেবে।

২০২০ সালের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে প্রতিদিন দরকার পড়বে ৮৫ কোটি কিউবিক ফুট এলএনজি। এই হিসাবের ওপর নির্ভর করেই কর্তৃপক্ষ গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু অনন্ত গার্মেন্টের মতো গ্যাস ব্যবহারকারী শিল্পগুলোর জন্য দাম বৃদ্ধি হয়েছে ৩৮ শতাংশ। এদিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ ও বাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বেড়েছে প্রায় এক-চতুর্থাংশ। এই দাম বৃদ্ধির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ব্যবসায়ী, ভোক্তা অধিকার সংগঠন ও বিরোধীদলগুলো। কিন্তু সরকার মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এক বিবৃতিতে বলেছে, গ্যাস উৎপাদন, এলএনজি আমদানি, হস্তান্তর ও বণ্টন খরচ এবং দেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিচারে মূল্যবৃদ্ধির প্রয়োজন ছিল। সরকারি তথ্য অনুসারে, এলএনজিসহ বাংলাদেশে প্রতিদিন উৎপাদিত গ্যাসের পরিমাণ ৩ হাজার কোটি ঘনফুট। অপরদিকে দৈনিক চাহিদা ৪ হাজার কোটি ঘনফুট।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, এ মূল্যবৃদ্ধি কোনভাবেই ন্যায্য নয়। গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থার তেমন কোন উন্নতি হয়নি। এ মূল্যবৃদ্ধির জন্য যদি পোশাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তৈরি পোশাক রফতানিকারকরাও ব্যাপক আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ব্যক্তি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত মূল্যবৃদ্ধি রফতানিকারকদের সরাসরি আঘাত হানবে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি আবাসিক চুলা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতসহ সব খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। আবাসিক গ্রাহকদের এক চুলার জন্য মাসে ৯২৫ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৯৭৫ টাকা দিতে হবে, যা এত দিন ছিল যথাক্রমে ৭৫০ টাকা ও ৮০০ টাকা। গৃহস্থালিতে মিটারে যারা গ্যাসের বিল দেন, তাদের প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের ব্যবহারের জন্য ১২ টাকা ৬০ পয়সা করে দিতে হবে। এত দিন প্রতি ঘনমিটারে তাদের বিল হত ৯ টাকা ১০ পয়সা। অর্থাৎ, রান্নার গ্যাসের জন্য চুলাভিত্তিক গ্রাহকদের প্রতি মাসে ২৩ শতাংশ এবং মিটারভিত্তিক গ্রাহকদের ৩৮ শতাংশ বেশি অর্থ খরচ হবে। যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম আগামী সোমবার থেকে প্রতি ঘনমিটারে ৩৮ টাকা থেকে বেড়ে ৪৩ টাকা হবে। এ হিসাবে গাড়ির গ্যাসের জন্য মালিকদের খরচ বাড়বে সাড়ে ৭ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবেই গণপরিবহনে এর প্রভাব পড়বে। এর মাশুল দিতে হবে যাত্রীদের। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৫ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত। এর ফলে শিল্পোৎপাদনে খরচ বাড়বে। আর ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকেই তা আদায় করবেন। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গত রোববার বিকালে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর এই ঘোষণা দেয়।