নতুন অর্থমন্ত্রীর বাজেট লক্ষ্য

চলতি বছরই ভারতে ৩ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতি

চলতি অর্থবছরেই ভারতকে ৩ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেছেন বিজেপি সরকারের নতুন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। এছাড়া কয়েক বছরের মধ্যে ভারতকে ৫ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করতে চায় নরেন্দ্র মোদি সরকার। এর জন্য ব্যাপক কাঠামোগত সংস্কারে জোর দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয় দফা মেয়াদের প্রথম বাজেট উপস্থাপনকালে গত শুক্রবার এ পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। মোট ২৭ লাখ ৮০ হাজার কোটি রুপির বাজেট প্রস্তাবে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রতিরক্ষা খাতে। এতে বরাদ্দ হচ্ছে মোট বাজেটের ২৪ শতাংশ। গত ফেব্রুয়ারির অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট অপরিবর্তিত রেখে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৩ দশমিক শূন্য ৫ লাখ কোটি রুপির (৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার) বাজেট বহাল রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় বরাদ্দ থাকছে খাদ্য, জ্বালানি ও সারে ভর্তুকি, যা বাজেটের ১০-১১ শতাংশ। কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। গত অর্থবছরে কৃষি খাতে যেখানে বরাদ্দ ছিল বাজেটের ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ, এবার সেখানে বাজেটের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। খবর পিটিআই, ব্লুমবার্গ ও লাইভমিন্ট।

বাজেট বক্তৃতায় সীতারমণ বলেন, পাঁচ বছর আগে ভারতের অর্থনীতি যেখানে ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি ডলারের ছিল, তা বর্তমানে ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ৫ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সরকার। অর্থমন্ত্রী সীতারমণ বলেন, চলতি অর্থবছরে ভারতের অর্থনীতির আকার দাঁড়াবে ৩ লাখ কোটি ডলারে। বর্তমানে বিশ্বের ষষ্ঠ অর্থনীতি ভারত। পাঁচ বছর আগে দেশটির অবস্থান ছিল ১১তম। পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটির (পিপিপি) দিক থেকে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরই ভারতের অবস্থান।

প্রথম বাজেট উপস্থাপনকালে সীতারমণ বলেন, ৫ লাখ কোটি ডলার কিংবা এর চেয়ে বড় অর্থনীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাঠামোগত সংস্কার জরুরি। গত পাঁচ বছরে পরোক্ষ কর, দেউলিয়াত্ব, আবাসনসহ বিজেপি সরকার বেশকিছু বৃহৎ সংস্কার পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

বাজেট বক্তৃতায় ভারতের অর্থমন্ত্রী বলেন, ১ লাখ কোটি ডলার অর্থনীতিতে দাঁড়াতে ভারতকে ৫৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। সেখানে আমরা পাঁচ বছরের ব্যবধানে অর্থনীতির আকার ১ লাখ কোটি ডলার বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। অর্থনীতি চাঙ্গা করতে বাজেটে ১০ দফা রূপকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি লক্ষ্যমাত্রা ভারতের। এতে অবকাঠামো, ডিজিটাল অর্থনীতি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে কর্মসংস্থান সৃষ্টি গুরুত্ব পাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে রেলওয়ে খাতে ২০১৮-৩০ সালের মধ্যে ৫০ লাখ রুপি বিনিয়োগ করা হবে বলে জানান সীতারমণ। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক উজানা প্রকল্পের তৃতীয় ধাপে ১ লাখ ২৫ হাজার কিলোমিটার গ্রাম সড়ক উন্নয়নে ৮০ হাজার ২৫০ কোটি রুপি বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনা এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ চাঙ্গা করতে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, গত ১ এপ্রিলে শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে জিডিপির ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। গত ফেব্রুয়ারির অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটে যেখানে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ।

বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করার লক্ষ্যে এভিয়েশন, মিডিয়া, অ্যানিমেশন ও ইন্স্যুরেন্স খাতে এফডিআই নীতিমালা শিথিল করতে যাচ্ছে সরকার। ইন্স্যুরেন্স ইন্টারমিডিয়ারিদের জন্য সরকার শতভাগ এফডিআই অনুমোদন করবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। পুরো বিশ্বে যখন এফডিআইয়ে শ্লথগতি চলছে, সেখানে গত অর্থবছরে ভারতে এফডিআই প্রবাহ ৬ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ৪৩৭ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে বলে জানান তিনি।

রবিবার, ০৭ জুলাই ২০১৯ , ২৩ আষাঢ় ১৪২৫, ৩ জ্বিলকদ ১৪৪০

নতুন অর্থমন্ত্রীর বাজেট লক্ষ্য

চলতি বছরই ভারতে ৩ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতি

সংবাদ ডেস্ক

image

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ

চলতি অর্থবছরেই ভারতকে ৩ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেছেন বিজেপি সরকারের নতুন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। এছাড়া কয়েক বছরের মধ্যে ভারতকে ৫ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করতে চায় নরেন্দ্র মোদি সরকার। এর জন্য ব্যাপক কাঠামোগত সংস্কারে জোর দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয় দফা মেয়াদের প্রথম বাজেট উপস্থাপনকালে গত শুক্রবার এ পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। মোট ২৭ লাখ ৮০ হাজার কোটি রুপির বাজেট প্রস্তাবে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রতিরক্ষা খাতে। এতে বরাদ্দ হচ্ছে মোট বাজেটের ২৪ শতাংশ। গত ফেব্রুয়ারির অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট অপরিবর্তিত রেখে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৩ দশমিক শূন্য ৫ লাখ কোটি রুপির (৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার) বাজেট বহাল রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় বরাদ্দ থাকছে খাদ্য, জ্বালানি ও সারে ভর্তুকি, যা বাজেটের ১০-১১ শতাংশ। কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। গত অর্থবছরে কৃষি খাতে যেখানে বরাদ্দ ছিল বাজেটের ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ, এবার সেখানে বাজেটের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। খবর পিটিআই, ব্লুমবার্গ ও লাইভমিন্ট।

বাজেট বক্তৃতায় সীতারমণ বলেন, পাঁচ বছর আগে ভারতের অর্থনীতি যেখানে ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি ডলারের ছিল, তা বর্তমানে ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ৫ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সরকার। অর্থমন্ত্রী সীতারমণ বলেন, চলতি অর্থবছরে ভারতের অর্থনীতির আকার দাঁড়াবে ৩ লাখ কোটি ডলারে। বর্তমানে বিশ্বের ষষ্ঠ অর্থনীতি ভারত। পাঁচ বছর আগে দেশটির অবস্থান ছিল ১১তম। পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটির (পিপিপি) দিক থেকে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরই ভারতের অবস্থান।

প্রথম বাজেট উপস্থাপনকালে সীতারমণ বলেন, ৫ লাখ কোটি ডলার কিংবা এর চেয়ে বড় অর্থনীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাঠামোগত সংস্কার জরুরি। গত পাঁচ বছরে পরোক্ষ কর, দেউলিয়াত্ব, আবাসনসহ বিজেপি সরকার বেশকিছু বৃহৎ সংস্কার পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

বাজেট বক্তৃতায় ভারতের অর্থমন্ত্রী বলেন, ১ লাখ কোটি ডলার অর্থনীতিতে দাঁড়াতে ভারতকে ৫৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। সেখানে আমরা পাঁচ বছরের ব্যবধানে অর্থনীতির আকার ১ লাখ কোটি ডলার বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। অর্থনীতি চাঙ্গা করতে বাজেটে ১০ দফা রূপকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি লক্ষ্যমাত্রা ভারতের। এতে অবকাঠামো, ডিজিটাল অর্থনীতি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে কর্মসংস্থান সৃষ্টি গুরুত্ব পাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে রেলওয়ে খাতে ২০১৮-৩০ সালের মধ্যে ৫০ লাখ রুপি বিনিয়োগ করা হবে বলে জানান সীতারমণ। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক উজানা প্রকল্পের তৃতীয় ধাপে ১ লাখ ২৫ হাজার কিলোমিটার গ্রাম সড়ক উন্নয়নে ৮০ হাজার ২৫০ কোটি রুপি বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনা এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ চাঙ্গা করতে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, গত ১ এপ্রিলে শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে জিডিপির ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। গত ফেব্রুয়ারির অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটে যেখানে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ।

বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করার লক্ষ্যে এভিয়েশন, মিডিয়া, অ্যানিমেশন ও ইন্স্যুরেন্স খাতে এফডিআই নীতিমালা শিথিল করতে যাচ্ছে সরকার। ইন্স্যুরেন্স ইন্টারমিডিয়ারিদের জন্য সরকার শতভাগ এফডিআই অনুমোদন করবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। পুরো বিশ্বে যখন এফডিআইয়ে শ্লথগতি চলছে, সেখানে গত অর্থবছরে ভারতে এফডিআই প্রবাহ ৬ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ৪৩৭ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে বলে জানান তিনি।