পদের চেয়ে কর্মকর্তা বেশি

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও চলছে

সরকারি প্রশাসনের তিনস্তর অর্থাৎ অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব ও উপসচিব পর্যায়ে পদের চেয়ে কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি থাকলেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চলছেই। নিয়মিত কর্মকর্তাদের উচ্চস্তরে পদোন্নতি না দিয়ে ও যথাযথ পদে পদায়ন না করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অব্যাহত রাখায় প্রশাসনে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বন্ধ রাখার আশ্বাস দেয়া হলেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

কমপক্ষে ৯ জন সচিবসহ বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রায় দেড়শ’ কর্মকর্তা নিয়মিত চাকরি শেষে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগে আছেন। এমনকি একটি মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিবই বছরের পর বছর চুক্তিতে আছেন। কোন কোন কর্মকর্তা ৮/১০ বছর ধরেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রয়েছেন। তবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মনে করছেন, বর্তমানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সংখ্যা খুবই কম।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, জরুরি ও অপরিহার্য বিবেচনায় নিয়েই কোন কোন সচিবকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রাখতে হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ বর্তমানে সরকারের ৯ জন সচিব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কর্মরত আছেন। কেউ কেউ একাধিকবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও পেয়েছেন। এ কারণে তাদের অধীনস্থ কর্মকর্তারা প্রত্যাশিত পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

তবে রেলওয়ে, শিক্ষা প্রকৌশল, কৃষি গবেষণাসহ বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় দক্ষ জনবল না থাকায় ওইসব জায়গায় অপেক্ষাকৃত নিম্নস্তরের কর্মকর্তাদেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রাখতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বিশেষায়িত ও টেকনিক্যাল ওইসব পদে জনবলও নিয়োগ পাচ্ছে না। এমনকি যোগ্যতা ও দক্ষতার ঘাটতি থাকায় পদোন্নতি দিয়েও ওইসব পদ পূরণ করা যাচ্ছে না।

সরকারের পাঁচজন অতিরিক্ত ও যুগ্ম-সচিবের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নীচের পদে চাকরিরত অবস্থায় সরকারের প্রায় সব কর্মকর্তাই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিরোধিতা করেন। কিন্তু সচিব ও সিনিয়র সচিব হওয়ায় তাদের মনোভাব পাল্টে যায়; কারণ পদের সুবিধার্থে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাদের সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হয়। এ সুযোগে তারা আরও বেশিদিন চাকরি করতে চান। গত ২৩ জুন প্রকাশিত আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইবি’র ‘জনপ্রশাসনে শুদ্ধাচার : নীতি ও চর্চা’ শীর্ষক এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, জনপ্রশাসনে পদায়ন ও পদোন্নতিতে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রাধান্য পাচ্ছে, মেধা উপেক্ষিত থাকছে। এমনকি বিধিমালায় না থাকলেও পদোন্নতিতে গোয়েন্দা প্রতিবেদনকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে টিআইবি।

টিআইবি’র প্রতিবেদনের ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ মনে হয় এই সময়ে সবচেয়ে কম। আমরা অল্প কয়েকজন আছি। খুবই কম, মিনিমাম নাম্বার।’

টিআইবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জনপ্রশাসনে রাজনীতিকরণ উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় পেশাগত উৎকর্ষে ব্যাপক ঝুঁকির সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়লেও দুর্নীতি কমার কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সরকারি সংস্থা ও বিদেশি দূতাবাসে বর্তমানে প্রায় দেড়শ’ কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে চাকরি করছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ে। গত ২৮ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে রেলওয়ের বিভিন্ন জেলার ১৪ জন স্টেশন মাস্টারের চুক্তিভিক্তিক মেয়াদ আরও ২ বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তা ২০১৭ সালের জুলাই ও ২০১৬ সালের আগস্ট থেকেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কর্মরত ছিলেন।

ওইদিন অন্য এক আদেশে রেলওয়ের আরও ৩৬ জন কর্মচারীকে পরবর্তী ২ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়মিত চাকরি শেষে গত বছরের ডিসেম্বর অবসর-উত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার কথা ছিল মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেকের। তবে পিআরএল যাওয়ার আগেই তাদের চাকরি এক বছর বৃদ্ধি করেছে সরকার।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় সিনিয়র সচিবের মর্যাদা দিয়ে ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হককে পুনরায় নিয়োগ দেয় সরকার। চাকরির নির্ধারিত মেয়াদ শেষে প্রথমে ২০১৫ সালের ৩ নভেম্বর শহিদুল হককে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।

একই মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকও ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট দু’বছরের জন্য সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে অবসর-উত্তর ছুটি বাতিলের শর্তে ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট পর্যন্ত আইন ও বিচার বিভাগের সচিব পদে জহিরুল হককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হলো।

নিয়মিত চাকরির মেয়াদ শেষে ২০১৬ সালের ৩০ জুন পিআরএল যাওয়ার কথা ছিল সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার। এর একদিন আগে পিআরএল বাতিল করে এক বছরের চুক্তিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয় মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে। পরবর্তীতে তাকে দু’বছরের চুক্তিতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান (এনবিআর) নিয়োগ দিয়ে ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি আদেশ জারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এছাড়াও সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ভূঁইয়া (সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আহমেদ (অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব), ইতালির রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার (প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কর্মরত আছেন। গত ১ জুলাই পবন চৌধুরীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ আরও দুই বছর বাড়িয়েছে সরকার।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের বিভিন্ন পদে চুক্তিতে থাকা কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই প্রথম শ্রেণীর। তাদের মধ্যে গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-৫ এর কর্মকর্তা বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের কোন নীতিমালা নেই। মূলত সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়া, বিশেষ রাজনৈতিক পরিচিতি ও স্বজনপ্রীতি এই নিয়োগের অলিখিত প্রধান যোগ্যতা। তবে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিলেও সে বিষয়ে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

নিয়মিত যোগ্য কর্মকর্তা থাকার পরও চুক্তিতে নিয়োগ দিলে সরকারের আর্থিক খরচও বেশি হয়। যানবাহন সুবিধা প্রদান, বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য ভাতা ছাড়াই একজন সচিবের মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা। আর সিনিয়র সচিবের মূল বেতন ৮২ হাজার টাকা। মুখ্য সচিবের মূল বেতন ৮৬ হাজার টাকা। বর্তমানে সরকারের সচিব ও সিনিয়র সচিব আছেন ৭৭ জন।

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০১৯ , ২৪ আষাঢ় ১৪২৫, ৪ জ্বিলকদ ১৪৪০

পদের চেয়ে কর্মকর্তা বেশি

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও চলছে

রাকিব উদ্দিন

সরকারি প্রশাসনের তিনস্তর অর্থাৎ অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব ও উপসচিব পর্যায়ে পদের চেয়ে কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি থাকলেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চলছেই। নিয়মিত কর্মকর্তাদের উচ্চস্তরে পদোন্নতি না দিয়ে ও যথাযথ পদে পদায়ন না করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অব্যাহত রাখায় প্রশাসনে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বন্ধ রাখার আশ্বাস দেয়া হলেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

কমপক্ষে ৯ জন সচিবসহ বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রায় দেড়শ’ কর্মকর্তা নিয়মিত চাকরি শেষে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগে আছেন। এমনকি একটি মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিবই বছরের পর বছর চুক্তিতে আছেন। কোন কোন কর্মকর্তা ৮/১০ বছর ধরেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রয়েছেন। তবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মনে করছেন, বর্তমানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সংখ্যা খুবই কম।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, জরুরি ও অপরিহার্য বিবেচনায় নিয়েই কোন কোন সচিবকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রাখতে হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ বর্তমানে সরকারের ৯ জন সচিব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কর্মরত আছেন। কেউ কেউ একাধিকবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও পেয়েছেন। এ কারণে তাদের অধীনস্থ কর্মকর্তারা প্রত্যাশিত পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

তবে রেলওয়ে, শিক্ষা প্রকৌশল, কৃষি গবেষণাসহ বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় দক্ষ জনবল না থাকায় ওইসব জায়গায় অপেক্ষাকৃত নিম্নস্তরের কর্মকর্তাদেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রাখতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বিশেষায়িত ও টেকনিক্যাল ওইসব পদে জনবলও নিয়োগ পাচ্ছে না। এমনকি যোগ্যতা ও দক্ষতার ঘাটতি থাকায় পদোন্নতি দিয়েও ওইসব পদ পূরণ করা যাচ্ছে না।

সরকারের পাঁচজন অতিরিক্ত ও যুগ্ম-সচিবের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নীচের পদে চাকরিরত অবস্থায় সরকারের প্রায় সব কর্মকর্তাই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিরোধিতা করেন। কিন্তু সচিব ও সিনিয়র সচিব হওয়ায় তাদের মনোভাব পাল্টে যায়; কারণ পদের সুবিধার্থে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাদের সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হয়। এ সুযোগে তারা আরও বেশিদিন চাকরি করতে চান। গত ২৩ জুন প্রকাশিত আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইবি’র ‘জনপ্রশাসনে শুদ্ধাচার : নীতি ও চর্চা’ শীর্ষক এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, জনপ্রশাসনে পদায়ন ও পদোন্নতিতে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রাধান্য পাচ্ছে, মেধা উপেক্ষিত থাকছে। এমনকি বিধিমালায় না থাকলেও পদোন্নতিতে গোয়েন্দা প্রতিবেদনকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে টিআইবি।

টিআইবি’র প্রতিবেদনের ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ মনে হয় এই সময়ে সবচেয়ে কম। আমরা অল্প কয়েকজন আছি। খুবই কম, মিনিমাম নাম্বার।’

টিআইবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জনপ্রশাসনে রাজনীতিকরণ উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় পেশাগত উৎকর্ষে ব্যাপক ঝুঁকির সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়লেও দুর্নীতি কমার কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সরকারি সংস্থা ও বিদেশি দূতাবাসে বর্তমানে প্রায় দেড়শ’ কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে চাকরি করছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ে। গত ২৮ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে রেলওয়ের বিভিন্ন জেলার ১৪ জন স্টেশন মাস্টারের চুক্তিভিক্তিক মেয়াদ আরও ২ বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তা ২০১৭ সালের জুলাই ও ২০১৬ সালের আগস্ট থেকেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কর্মরত ছিলেন।

ওইদিন অন্য এক আদেশে রেলওয়ের আরও ৩৬ জন কর্মচারীকে পরবর্তী ২ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়মিত চাকরি শেষে গত বছরের ডিসেম্বর অবসর-উত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার কথা ছিল মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেকের। তবে পিআরএল যাওয়ার আগেই তাদের চাকরি এক বছর বৃদ্ধি করেছে সরকার।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় সিনিয়র সচিবের মর্যাদা দিয়ে ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হককে পুনরায় নিয়োগ দেয় সরকার। চাকরির নির্ধারিত মেয়াদ শেষে প্রথমে ২০১৫ সালের ৩ নভেম্বর শহিদুল হককে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।

একই মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকও ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট দু’বছরের জন্য সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে অবসর-উত্তর ছুটি বাতিলের শর্তে ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট পর্যন্ত আইন ও বিচার বিভাগের সচিব পদে জহিরুল হককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হলো।

নিয়মিত চাকরির মেয়াদ শেষে ২০১৬ সালের ৩০ জুন পিআরএল যাওয়ার কথা ছিল সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার। এর একদিন আগে পিআরএল বাতিল করে এক বছরের চুক্তিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয় মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে। পরবর্তীতে তাকে দু’বছরের চুক্তিতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান (এনবিআর) নিয়োগ দিয়ে ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি আদেশ জারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এছাড়াও সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ভূঁইয়া (সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আহমেদ (অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব), ইতালির রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার (প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কর্মরত আছেন। গত ১ জুলাই পবন চৌধুরীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ আরও দুই বছর বাড়িয়েছে সরকার।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের বিভিন্ন পদে চুক্তিতে থাকা কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই প্রথম শ্রেণীর। তাদের মধ্যে গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-৫ এর কর্মকর্তা বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের কোন নীতিমালা নেই। মূলত সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়া, বিশেষ রাজনৈতিক পরিচিতি ও স্বজনপ্রীতি এই নিয়োগের অলিখিত প্রধান যোগ্যতা। তবে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিলেও সে বিষয়ে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

নিয়মিত যোগ্য কর্মকর্তা থাকার পরও চুক্তিতে নিয়োগ দিলে সরকারের আর্থিক খরচও বেশি হয়। যানবাহন সুবিধা প্রদান, বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য ভাতা ছাড়াই একজন সচিবের মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা। আর সিনিয়র সচিবের মূল বেতন ৮২ হাজার টাকা। মুখ্য সচিবের মূল বেতন ৮৬ হাজার টাকা। বর্তমানে সরকারের সচিব ও সিনিয়র সচিব আছেন ৭৭ জন।