যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে গড়তে হবে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের আহ্বান

যৌন নিপীড়নসহ সব বঞ্চনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন। গতকাল বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনস্থ সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সভায় সংগঠনের নেতারা এই আহ্বান জানান। সংগঠনের সভাপতি জিয়াউদ্দিন তারেক আলীর সভাপতিত্বে সভায় প্রেসিডিয়াম সদস্য পঙ্কজ ভট্টাচার্য, ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, অ্যাডভোকেট এসএমএ সবুর, খুশি কবীর, জয়ন্তী রায়, ডা. অসিত বরণ রায়, সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে আজাদ, সানোয়ার হোসেন সামছী, কাজী সালমা সুলতানা, জহিরুল ইসলাম জহির, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য মামুনুর রশিদ, অ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম, সাজেদুল আলম রিমন, বিপ্লব চাকমা, কেন্দ্রীয় নেতা ড. সেলু বাসিত, আবদুল ওয়াহেদ, সেলিম রেজা, এম. শফিউর রহমান খান বাচ্চু, হানিফ মিয়া, বেলায়েত হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা বলেন, আইনের প্রায়োগিক ব্যবস্থার ত্রুটিজনিত কারণে নারী ও শিশু নির্যাতনের ভয়াবহতায় দেশের মানুষ দিশেহারা। প্রতিদিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত নারী ও শিশু নির্যাতনের বিপরীতে নিপীড়ক ও সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেয়ায় সমাজে নারী ও শিশু নির্যাতনের বহুমাত্রিকতা আজ মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। বিবেকবান মানুষ, অভিবাবক, স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীসহ দেশবাসী এখন শঙ্কিত। এই অবস্থা দেশের সামগ্রীক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করবে। বিশেষ করে ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোমলমতি শিশুদের নিপীড়নের যে ঘটনাপ্রবাহ ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে তাতে করে অভিবাবক মহলে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি নতুন করে আস্থাহীনতা তৈরি হবে। এছাড়াও ঘরে-বাইরে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিভাবকতুল্য শিক্ষক ও সন্ত্রাসীদের দ্বারা ছাত্রছাত্রীদের ওপর নিপীড়ন, ধর্ষণ, হয়রানির ঘটনা সারাদেশের মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। রাষ্ট্রীয় বিধিব্যবস্থায় উপযুক্ত আইন থাকার পরও আইনের প্রায়োগিক দুর্বলতা, স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর হয়রানি, সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার কারণে দিন দিন নারী-শিশু নিপীড়ন, ধর্ষণের ঘটনা বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নিপীড়ন ও দানবীয় সভ্যতা বিবর্জিত, ধর্ষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় জাগরণ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের উদ্যোগে দেশের সর্বত্র ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক, কৃষক, শ্রমিক, বিবেকবান নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষদের যৌন নিপীড়নসহ সব বঞ্চনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান আমাদের।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, যে রাষ্ট্রটি মুক্তিযুদ্ধের বিশাল ত্যাগের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে, তা আজ সময়ের ব্যবধানে তার মূলভিত্তি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি সরকার ও প্রশাসন এখন লুটেরা শ্রেণী, ধর্মব্যবসায়ী, সন্ত্রাসবাদী, কালোবাজারি ও মুনাফালোভী মজুদদারদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কৃষকরা এখন দিশেহারা। তাদের উৎপাদিত খাদ্যশষ্যের উপযুক্ত মূল্য থেকে তারা বঞ্চিত এবং ক্ষুব্ধ ও হতাশাগ্রস্ত। রাষ্ট্রে এখন যুক্তি, মুক্তবুদ্ধি ও বিবেকের শাসন অনুপস্থিত। শুধুমাত্র কথামালার ফুলঝুড়িতে যে সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আসে না তা বুঝার ক্ষমতাও এখন রাষ্ট্রনায়করা হারাতে বসেছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার যে সংস্কৃতি তা থেকে এখনো ক্ষমতাসীনরা বের হতে পারেনি। তাদের আচারণ ও কথাবার্তায় সে বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, স্ব-স্ব ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হওয়া কতটা জরুরি দেশের এই মহাদুর্যোগে তা ফুটে উঠে, নতুবা একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে কি করে ছোটখাটো বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হয়Ñ তা হলে মন্ত্রী পরিষদের বাকি সদস্যদের কেন জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় পুুষতে হয়। এতে করে প্রমাণিত হয় রাষ্ট্রকে অচল ও অথর্ব করার গভীর ষড়যন্ত্র নতুবা অন্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তরা কতটা দায়িত্বহীন তা প্রমাণ করে। এখানে যৌক্তিক কারণ ছাড়া গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে কেন? বিশ্ব বাজারে তেল-গ্যাসের দাম কমে, আমরা কার স্বার্থে দাম বাড়াচ্ছি তার ব্যাখ্যা নেই কর্তৃপক্ষের। নারী-শিশু, সংখ্যালঘু, আদিবাসী নিপীড়নের কার্যকর প্রতিকার যে সমাজে নেই তা যেমন মানবিক সমাজ না তা গণতান্ত্রিক সমাজও হতে পারে না। আমরা কল্যাণ রাষ্ট্র তৈরির জন্য লড়াই করে আজ সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, লুটেরাদের কাছে জিম্মি হতে বসেছি। এই অবস্থার পরিবর্তনে জাতীয় জাগরণ গড়ে তুলতে হবে। অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, নিপীড়ক, ধর্ষক, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, লুটেরা একই সূত্রে গাঁথা। এদের মূল চালিকাশক্তি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার দুর্বলতা। সরকার এই ত্রুটি চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হলে মাফিয়া চক্র দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে, আমরা সরকারের শুভবুদ্ধি উদয় হোক এই কামনা করছি।

বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০১৯ , ২৭ আষাঢ় ১৪২৫, ৭ জ্বিলকদ ১৪৪০

যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে গড়তে হবে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের আহ্বান

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড প্রকাশ্যে কার্যকর করার দাবিতে গতকাল ঢাবি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

যৌন নিপীড়নসহ সব বঞ্চনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন। গতকাল বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনস্থ সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সভায় সংগঠনের নেতারা এই আহ্বান জানান। সংগঠনের সভাপতি জিয়াউদ্দিন তারেক আলীর সভাপতিত্বে সভায় প্রেসিডিয়াম সদস্য পঙ্কজ ভট্টাচার্য, ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, অ্যাডভোকেট এসএমএ সবুর, খুশি কবীর, জয়ন্তী রায়, ডা. অসিত বরণ রায়, সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে আজাদ, সানোয়ার হোসেন সামছী, কাজী সালমা সুলতানা, জহিরুল ইসলাম জহির, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য মামুনুর রশিদ, অ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম, সাজেদুল আলম রিমন, বিপ্লব চাকমা, কেন্দ্রীয় নেতা ড. সেলু বাসিত, আবদুল ওয়াহেদ, সেলিম রেজা, এম. শফিউর রহমান খান বাচ্চু, হানিফ মিয়া, বেলায়েত হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা বলেন, আইনের প্রায়োগিক ব্যবস্থার ত্রুটিজনিত কারণে নারী ও শিশু নির্যাতনের ভয়াবহতায় দেশের মানুষ দিশেহারা। প্রতিদিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত নারী ও শিশু নির্যাতনের বিপরীতে নিপীড়ক ও সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেয়ায় সমাজে নারী ও শিশু নির্যাতনের বহুমাত্রিকতা আজ মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। বিবেকবান মানুষ, অভিবাবক, স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীসহ দেশবাসী এখন শঙ্কিত। এই অবস্থা দেশের সামগ্রীক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করবে। বিশেষ করে ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোমলমতি শিশুদের নিপীড়নের যে ঘটনাপ্রবাহ ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে তাতে করে অভিবাবক মহলে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি নতুন করে আস্থাহীনতা তৈরি হবে। এছাড়াও ঘরে-বাইরে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিভাবকতুল্য শিক্ষক ও সন্ত্রাসীদের দ্বারা ছাত্রছাত্রীদের ওপর নিপীড়ন, ধর্ষণ, হয়রানির ঘটনা সারাদেশের মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। রাষ্ট্রীয় বিধিব্যবস্থায় উপযুক্ত আইন থাকার পরও আইনের প্রায়োগিক দুর্বলতা, স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর হয়রানি, সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার কারণে দিন দিন নারী-শিশু নিপীড়ন, ধর্ষণের ঘটনা বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নিপীড়ন ও দানবীয় সভ্যতা বিবর্জিত, ধর্ষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় জাগরণ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের উদ্যোগে দেশের সর্বত্র ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক, কৃষক, শ্রমিক, বিবেকবান নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষদের যৌন নিপীড়নসহ সব বঞ্চনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান আমাদের।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, যে রাষ্ট্রটি মুক্তিযুদ্ধের বিশাল ত্যাগের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে, তা আজ সময়ের ব্যবধানে তার মূলভিত্তি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি সরকার ও প্রশাসন এখন লুটেরা শ্রেণী, ধর্মব্যবসায়ী, সন্ত্রাসবাদী, কালোবাজারি ও মুনাফালোভী মজুদদারদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কৃষকরা এখন দিশেহারা। তাদের উৎপাদিত খাদ্যশষ্যের উপযুক্ত মূল্য থেকে তারা বঞ্চিত এবং ক্ষুব্ধ ও হতাশাগ্রস্ত। রাষ্ট্রে এখন যুক্তি, মুক্তবুদ্ধি ও বিবেকের শাসন অনুপস্থিত। শুধুমাত্র কথামালার ফুলঝুড়িতে যে সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আসে না তা বুঝার ক্ষমতাও এখন রাষ্ট্রনায়করা হারাতে বসেছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার যে সংস্কৃতি তা থেকে এখনো ক্ষমতাসীনরা বের হতে পারেনি। তাদের আচারণ ও কথাবার্তায় সে বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, স্ব-স্ব ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হওয়া কতটা জরুরি দেশের এই মহাদুর্যোগে তা ফুটে উঠে, নতুবা একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে কি করে ছোটখাটো বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হয়Ñ তা হলে মন্ত্রী পরিষদের বাকি সদস্যদের কেন জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় পুুষতে হয়। এতে করে প্রমাণিত হয় রাষ্ট্রকে অচল ও অথর্ব করার গভীর ষড়যন্ত্র নতুবা অন্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তরা কতটা দায়িত্বহীন তা প্রমাণ করে। এখানে যৌক্তিক কারণ ছাড়া গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে কেন? বিশ্ব বাজারে তেল-গ্যাসের দাম কমে, আমরা কার স্বার্থে দাম বাড়াচ্ছি তার ব্যাখ্যা নেই কর্তৃপক্ষের। নারী-শিশু, সংখ্যালঘু, আদিবাসী নিপীড়নের কার্যকর প্রতিকার যে সমাজে নেই তা যেমন মানবিক সমাজ না তা গণতান্ত্রিক সমাজও হতে পারে না। আমরা কল্যাণ রাষ্ট্র তৈরির জন্য লড়াই করে আজ সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, লুটেরাদের কাছে জিম্মি হতে বসেছি। এই অবস্থার পরিবর্তনে জাতীয় জাগরণ গড়ে তুলতে হবে। অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, নিপীড়ক, ধর্ষক, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, লুটেরা একই সূত্রে গাঁথা। এদের মূল চালিকাশক্তি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার দুর্বলতা। সরকার এই ত্রুটি চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হলে মাফিয়া চক্র দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করবে, আমরা সরকারের শুভবুদ্ধি উদয় হোক এই কামনা করছি।